বাবার মাদবরী স্টাইল-২

Categories

আগেই বলেছিলাম যে, আলী হোসেন সরকার আর আমার বাবা কন টেম পোরারী সময়ে প্রায় একই পর্যায়ের মাদবর ছিলেন। কেউ কাউকে হেয় না করলেও তারা কখনোই এক সাথে কাধে কাধ লাগিয়ে চলতেন না। কে সুপেরিয়র আর কে সুপেরিয়র নন এটা বুঝানো যাবে না আবার কেউ কারো থেকেও কম না এটাই আসলে তাদের মধ্যে ছিলো একতা অলিখিত দন্ধ। আলী হসেন সরকারের বাড়িতে কোনো বড় অনুষ্ঠান হলে হোসেন আলী মাদবরে যেমন দাওয়াত থাকতো তেমনি হোসেন আলী মাদবরের বাড়িতেও কোনো অনুষ্ঠান হলে আলী হোসেন সরকারের ও দাওয়াত থাকতো। কিন্তু তারা কখনোই একে অপরের দাওয়াতে আসতেন না। এটাও এক রকমের গ্রাম্য রাজনীতর একটা বড় ঢং বলা যায়।

তো একবার আমার বাবা আসলেই চেয়েছিলেন যে, আলী হোসেন সরকার যেনো আমাদের বাড়িতে কোনো একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াতে আসেন। আমার বাবা জানতেন যে, তথাকথিত দাওয়াতে আলী হোসেন সরকার না আসারই কথা। তাই বাবা যা করলেন তাতে আলী হোসেন সরকারের না এসেও পারেন নাই। বাবা তার ইগো ঠিক রাখার জন্যেও তিনি নিজে আলী হোসেন সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে দাওয়াত দিলেন না। যদিও তিনি সেটা করতে পারতেন। যাই হোক, বাবা, তার নিজের হাতের লাঠিটা এক পত্রবাহককে দিয়ে তার সাথে একটা চিরকুট লিখলেন-

জনাব আলী হোসেন সরকার, আমার সালাম নিবেন। আমার বাড়িতে আপনার দাওয়াত ছিলো। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করছি আপনি আজ আমার বাড়িতে দাওয়াতে আসবে। আমি আমার হাতের লাঠিটি পাঠালাম, সাথে এই পত্রটি। ধরে নিবেন, লাঠিটি আমি নিজে এবং পত্রটি আমার কথা। আপনি আসবেন।

আলী হোসেন সরকারও সেই লেবেলের বুদ্ধিমান লোক, তিনি বুঝলে এর মর্মার্থ। তিনি বাবার হাতের লাঠিটি পত্র বাহকের কাছ থেকে রেখে দিলেন, সাথে পত্রটিও। তিনি রীতিমত পরিপাটি সাজগোছ করলেন। তারপর ঠিক সময় মতো বাবার হাতের লাঠিটি সাথে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে র ওয়ানা হলেন। আলী হোসেন সরকার যখন প্রায় আমাদের বাড়ির ঘাটে, আমার বাবা হোসেন আলী মাদবর নিজে ঘাটের কাছে গিয়ে আলী হোসেন সরকারকে অভ্যর্থনা জানালেন আর আলী হোসেন সরকার ও তার সেই অভ্যর্থনায় কোলাকুলি করে একটা যুগান্তকারী ব্যাপার ঘটিয়ে দিলেন।

আসলে তাদের মধ্যে সব সময় বন্ধুত্বই ছিলো, কোনো রেষারেসি ছিলো না। তারা কারো সম্পদ হজম করতেন না, গ্রাম বাসী ও তাদেরকে যথেষ্ঠ সম্মান করতেন। তারা জানতেন এই সব মাদবরদের একটা ওজন আছে, তাদের কথার ভ্যালু আছে, তাদের নীতি আছে। হ্যা, একে অপরের সিদ্ধান্ত সব সময় মেনে নেবেন সেটা হয়তো ছিলো না কিন্তু গ্রাম একটা সঠিক নেত্রিত্তের মধ্যে ছিলো।

আজো তারা সবার মুখে মুখে আছেন। প্রায় ৫০ বছর পার হয়ে গেছে, তাদের কথা আজো গ্রাম বাসী মনে রেখেছেন। আমরা আজো তাদের হেরডিটি উপভোগ করি। যখন কেউ জানে যে, আমরা হোসেন আলী মাদবরের বংশধর, মানুষ এখনো অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেন আর বলেন তাদের সেই পুরানো ঐতিহ্যের কথা। ভালো লাগে।