১১/০৮/২০২১-কনিকার যাওয়ার সময় উপদেশ

নতুন জায়গায় নতুন দেশের নতুন নিয়মে তুমি সম্পুর্ন আলাদা পরিবেশে একটা নতুন জীবন ধারায় নতুন ক্যারিয়ার তৈরী করার জন্য দেশ ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় যাচ্ছো। তুমি এদেশের কোন চাপ, কোনো বিরহ নিয়ে ওখানে বাস করবে না, না কোনো কারনে মন খারাপ করবে। একদম ফ্রেস মাইন্ডে যাবে আর ফ্রেস করে শুরু করবে সব। মন দিয়ে নিজের সপ্ন পুরু করার চেষ্টা করবে কিন্তু সব সময় শরীরের দিকে যত্ন নিতে হবে। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে পারি কিন্তু লড়াইটা তোমার, তোমাকেই লড়তে হবে। এটা বিজনেস নয়, এটা তোমার লাইফ। গল্পটা তোমার, সপ্নটা তোমার। এই আজ থেকে তুমি একটা জার্নি শুরু করলে যার একমাত্র যাত্রী তুমি নিজে। জীবনের মজাটা হচ্ছে- কিছু কিছু জিনিষ এমন হয় যেটা অবিশ্বাস্য লাগে কিন্তু তুমি বুঝতে পার- হ্যা এটা হয়েছে। তখন নিজের থেকেই বিশ্বাস হয়ে যায়। 

নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলো না। কেউ চলে যাবার পর হয়তো কিছু পরিবর্তন নজরে আসে। তুমি চলে যাবার পর হয়তো আমাদের এখানে অনেক কিছুই পালটে যাবে। পালটে যাবে কোনো এক সন্ধ্যায় পিজা খাওয়ার কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত, পালটে যাবে কোনো এক ছুটির দিনে দল্বেধে বাইরে গিয়ে খেতে যাওয়ার আসর কিংবা পালটে যেতে পারে আমাদের অনেক দইনিন্দিন কিছু কর্ম কান্ড ও। আমাদের এই পরিবর্তন কোনো নতুন কিছু হয়তো নয়, এটা একটা এডজাষ্টমেন্ট, যা তোমার অনুপস্থিতিতে আমাদের আনন্দের সাথে বেচে থাকার নিমিত্তে। কিন্তু তোমার বদলে যাওয়া অন্য রকম। তুমি বদলাবে সেটা যাতে তোমার ভালোটা হয়।

 আমি তোমাকে কোনো কিছুতেই কখনো আটকাই নাই, না কখনো আটকাবো। কিন্তু তুমি আমার নিজের মেয়ে, আমার বহু আদরের সন্তান। যদি এমন কখনো হয় যে, আমি তোমাদের কারনে দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন হয়তো সমস্ত আবেগ, মায়া আর ভালোবাসা উপেক্ষা করেই হয়তো আমি তোমাকে আটকাবো। সেটা যেনো আমাকে করতে না হয়। প্রাইওরিটি ঠিক করতে হবে জীবনে। সব সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে। জীবনে ব্যস্ততা থাকবে কিন্তু এতোটা না যাতে ফ্যামিলি ডিপ্রাইভড হয়। তুমি যদি ভালো ফলাফল করতে না পারো, এর মানে এই নয় যে, আমার ভালোবাসা তোমার উপর কমে যাবে। তুমি যদি তোমার ডিজায়ার্ড রেজাল্ট না করতে পারো শত চেষ্টা করার পরেও, আমি তোমাকে কখনোই দোষারুপ করবো না। বরং আমি তোমাকে সারাক্ষন সাহস দেবো, সহযোগীতা করবো কিভাবে তুমি সবার থেকে ভালো ফলাফল করতে পারো। আর ওটাই তোমার বাবা।

একটা জিনিষ সারাজীবন মনে রাখবা যে, সোস্যাল মিডিয়া একটা মেনিপুলেটেড মিডিয়া। এর বেজ মোটেই সত্য নয়। বরং এটা সাজানো সত্যি। কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। এই সোস্যাল মিডিয়ায় সেটাই তারা জানাতে চায় যেটা তারা তোমাকে জানাতে চায় কিন্তু তোমার উচিত সেটা জানা যেটা আসল সত্যি। কারন অনেক বড় অপরাধের শিকর অনেক গভীরে থাকে। এই সোস্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিত্তরা সবাই মেনিপুলেটেড চরিত্র। এরা ডিটেইল্ড মিথ্যা কাহিনী খুব নিখুতভবে বানায়। তাই কোনো কিছুর ফেস ভ্যালুতে না গিয়ে ডাবল ভেরিফিকেশন জরুরী। জীবনের নিরাপত্তার জন্য নিজের চারিদিকে সবসময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে। এই কথাটা খুব জরুরী মনে রাখা যে, প্রকৃতির ইশারার প্রতি সর্বদা সেনসিটিভ থাকা। যেদিন সুনামী হয়, তার আগের দিন জংগলের সমস্ত প্রানিকুল সবাই জাত নির্বিশেসে উচু জায়গায় স্থান নিয়েছিলো, কারন তারা প্রকৃতির সেন্সটা বুঝতে পেরেছিলো। যা মানুষ বুঝতে পারে নাই। ফলে সুনামীতে বন্য প্রানীদের মধ্যে যতো না ক্ষতি হয়েছিলো তার থেকে শতগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো মানুষ। ঠিক এই কারনেই  সব সময় মনে রাখা দরকার যে, অপরাধের সুনামী একটা নয়, অনেক সংকেত দেয়, হওয়ার আগে এবং অপরাধ হওয়ার সময়। শুধু সেটা ধরতে হয়।

মানুষের শরীরে একটা জিনিষ থাকে যা পোষ্টমর্টেম করেও পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো সাফল্যে সব থেকে জরুরী হয় সেই জিনিষটার। সেটা “কনফিডেন্স”। এই কনফিডেন্স মানুষকে তৈরী যেমন করতে পারে, তেমনি ভেংগেও দিতে পারে। যখন এটা ভেংগে যায় বা হারিয়ে যায়, তারপরে আর কিছু কাজ করে না। তখন যেটা হয়, তুমি ঠিক করছো নাকি ভুল করছো কিছুই বুঝতে পারবে না। আর যখন কনফিডেন্স চলে যায় বা হারিয়ে যায়, সেই জায়গাটা দখল করে নেয় “কমপ্লেক্স”। এই কমপ্লেক্স যখন গেথে বসে যায় কারো জীবনে, তখন সিম্পল একটা ছবি তুলতেও খারাপ লাগে। কারন কে আপনাকে নিয়ে মজা করবে, কে লেগ পুলিং করবে এই সব ভেবে।

জিবনে এমন কোনো অধ্যায় তোমার থাকা উচিত নয় যা তুমি আর অন্য কেউ শুধু জানো অথচ আমরা জানি না। আমাদের মান, সম্মান, পজিশন, সমাজে মাথা উচু করে বেচে থাকার জন্য শুধু আমাদের গুনাবলীইই যথেষ্ঠ নয়, সেখানে তোমরাও আমাদের সেই জীবনের সাথে জড়িত। ফলে, যেটাই হোক সবকিছুতেই আমাদের কথা মাথায় রাখবে। বাবা মায়ের থেকে বড় ভরষা আর কিছু নাই। আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম আমাদের কর্মফলে কি ফলাফল হয়, তবে কতই না ভালো হতো। কিন্তু সেটা আমাদের স্রিষ্টিকর্তা সুযোগ দেন নাই। তাই সতর্ক থাকাটা খুব দরকার। সতর্ক হওয়া মানে এই নয় যে আমরা শুধু মাত্র পরিনতির বিষয় ভাববো, সতর্ক থাকার অর্থ হলো সঠিক সময়ে নেয়া সেই পদক্ষেপ যা আগামী সমস্যাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। বিশেষত এটা জানা সত্তেও যে আমাদের আগামী কর্মফল খারাপ।

মনে রাখবা এক বন্ধুই আরেক বন্ধুর ক্ষতি করে। তাতে তোমাকে সাহাজ্য করতে আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। তুমি শুধু ফোকাস করবে তোমার ক্যারিয়ারে আর সপ্ন পুরনে। তোমাদেরকে নিয়ে আমার সারাটা জীবন অন্য রকমের একটা সপ্ন আছে। আরেকটা কথা মনে রাখবে- ভালোবাসায় অনেক শক্তি থাকে। যদি হতাতই মনের অনিয়ন্ত্রনের কারনে কাউকে ভালোই লেগে যায়, সেখানে নিজের সাথে নিজের বুঝাপড়া করো। সব ভালোবাসার রুপ এক নয়। কেউ ভালোবাসে তোমার শরীরকে, কেউ ভালোবাসে তোমার দূর্বলতাকে, কেউ ভালোবাসে তোমার মেধাকে, আবার কেউ ভালোবাসে তোমার তথা তোমার পরিবারের সম্পদ কিংবা তোমার অস্তিত্বকে। কে তোমাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসলো, এই দৃষ্টিকোণ টা খুব ভালো করে বুঝা তোমার দায়িত্ব। কেউ যদি তোমাকে আসল রুপে ভালোবাসে, কখনো সে তোমাকে জোর করবে না কারন সে জানে যদি তুমি তার হও, তুমি যেভাবেই হোক সেটা বুজতে পারবে আর তুমি তার কাছে বিলম্ব হলেও ফিরে যাবে অথবা সে দেরী করে হলেও তোমার কাছেই ফিরে আসবে। যদি সে ফিরে আসে বা তুমি ফিরে যাও, তাহলে বুঝবে এটা সত্যি ছিলো। নতুবা কিছুই সত্য ছিলো না। যা ছিলো সেটা হলো একটা মোহ। মোহ আর ভালোবাসা এক নয়। একটা বাস্তব আর আরেকটা মিথ্যা। এই মিথ্যা ভালোবাসায় পতিত হয় হয়তো মনে অনেক কষ্ট জমা হতে পারে। কিছু জিনিষ যা প্রতিনিয়ত মনকে কষ্ট দেয়, মানসিক শান্তি নষ্ট করে, সে সব কাহিনী চিরতরে ভুলে যাওয়াই ভালো। তাতে অন্তর মানসিক কষ্টটা আর থাকে না। এটা অনেক জরুরী একটা ব্যাপার। সব কিছুরই প্রথমবার আছে। এটা যেমন ভালোবাসার ক্ষেত্রে তেমনি অপরাধের ক্ষেত্রেও। যৌবন হলো অসহায় এবং শক্তির দ্বিতীয় নাম। অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার হয় কিন্তু যৌবনের ভালোবাসার প্রতারনায় নিজের অসহায়ত্তের বিচার নিজেকে করতে হয়। তখন নিজের বিরুদ্ধে রায় দেয়া সহজ হয় না। তাই আমি সব সময় একটা কথা বলি- টাইম হচ্ছে মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভিলেন। তার কাছে পরাজিত হওয়া যাবে না। আবার এই টাইমই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বন্ধু। তুমি এই টাইমকে কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা তোমার বিবেচনা। একবার মনে কালো দাগ পড়ে গেলে তা আজীবন নিজেকে কষ্ট দেয়। ব্ল্যাক কফি, ব্ল্যাক ফরেষ্ট কেক, ডার্ক চকোলেট, ঘন জংগল অন্ধকার রাত, সবই কালো কিন্তু সে কালো কোনো কষ্টের নয়। কিছু কালো জীবনের অভিশাপ। কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? বিশেষ করে সেই কালো যা জীবনের ধারাবাহিকতায় অভিশাপের মতো রুপ নিয়েছে? তাই, আমি প্রতি নিয়ত তোমাকে নিজের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছেড়ে দিতে ভয় করলেও তোমার উপর আমার আলাদা একটা ভরষা আছে- তুমি পারবে ঠিক সে রকম করে চলতে যা আমি তোমার জন্য করতে চেয়েছিলাম। এই ভরষায় আমি তোমাকে অনেক দূরে পাঠাতেও দ্বিধা করছি না।

আমার আশা, তোমার মায়ের সপ্ন আর আমাদের পরিবারের সব সম্মান তোমার হাতে দিয়ে এটাই বলতে চাই- আমরা তোমাদের পরিচয়ে সমাজে আরেকবার সম্মানীত হতে চাই। বাকীটা আল্লাহ মালিক জানেন।