মার্ক পোলো

দুইজন ভিয়েতনামি ধনী ব্যবসায়ী ভাই (একজন নিকোলো আরেক জন মেটিও) পূর্ব থেকে ইউরোপে ১২৬০ সালে ভ্রমনে বের হয়েছিল। তখন তো আর এখনকার মত প্ল্যেন ছিল না অহরহ যে ইচ্ছে করল আর অনলাইনে আরব এমিরাটস এ বুকিং দিয়ে দিল আর অমনি তারিখ মত উরে চলে গেল এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তারা জাহাজে করেই ভ্রমনে বের হত এবং তারা সবাই তাই করতে হয়েছিল। ১২৬৫ এর দিকে তারা কেইফেং (চায়নার এক অঙ্গরাজ্য) পৌঁছাল। কেইফেংটা হচ্ছে বর্তমান হেনান প্রভিন্স এর পাশে) আগে এটা নর্থ সং ডাইনেস্টি নামে পরিচিত ছিল। তারও আগে এটাকে বলা হত ক্যাপিটাল অব কুবলাই খান (গ্রেট খান নামেও ডাকা হয় এটাকে)।  আর গ্রেট খান ছিল তখনকার দিনে মঙ্গল সম্রাট। ১২৬৯ সালে এই দুই ভাই মঙ্গল সম্রাট খানের বেশ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। সম্রাট খান তাদেরকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, একবার এই দুই ভাইয়ের  মাধ্যমে ইউরোপের পোপের কাছে মঙ্গলদেরকে মঙ্গলিয়ান থেকে কনভার্ট করার লক্ষে ১০০ মিশনারিজ পাঠাতে বলেছিলেন যদিও শেষমেশ পোপ ঐ অনুরোধ রাখেন নাই।

পরবর্তীতে নিকোলো যখন একা ইতালির ভেনিসে আসেন তখন সে জানতে পারে যে, তাঁর ১৫ বছরের একমাত্র পুত্র মার্ক পলোকে রেখে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। বেচারা ধনী হলে কি হবে? তখন তো আর সাকিরের স্মার্ট ফনের মত সম্রাটের কোন ফোন ছিল না যে, বাটন টিপলেই রানি পাওয়া যাবে। সুতরাং তিনি ওখানে না আশা পর্যন্ত জানতেন না যে তাঁর স্ত্রী আর জীবিত নেই। কি আর করা, মরা বউয়ের জন্য তো আর নিজের সব কাজ ফেলে সারাদিন কান্নাকাটি করা যাবে না, আর সব কাজ ফেলে তাজমহল ও গড়া যাবে না। আর করেও লাভ নেই এই কারনে প্রেমের নিদর্শন বল আর নামের কারনেই বল তাজমহল বানানর জন্য যে পরিমান অর্থ আর লোকবলের দরকার আমাদের এই পোলো পরিবারের তা ছিল না যদিও তারা অনেক ধনী ছিলেন।

অতঃপর এই দুই ভাই আবারও মার্ক পোলোকে সঙ্গে করে পূর্বের সেই খানের কাছে ফিরে আসেন। এটা সম্ভবত ১২৭৫ সালে।  সম্রাট খান মার্ক পোলোকে খুব পছন্দ করেছিল। আর এই ভাল লাগা থেকেই সম্রাট খান মার্ক পোলোকে রাজকীয় কাজকর্মে নিয়োজিত করেন। পরিবারতন্ত্র আর পছন্দতন্ত্র সবখানেই সবসময়ই ছিল। খামাখা আমরা আজকে বিএনপি অথবা আওয়ামি লিগকে দোষ দেই। আরে বাবা ওরা তো আগের রাজা মহারাজদের পথই অনুসরণ করেন!! যাক, খুব অল্প বয়সেই মার্ক পলো অনেক বড় বড় সরকারি পজিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান, এবং কখন কখন রাষ্ট্রদূত হিসাবেও নিয়োগ পান। শুধু তাই নয়, মার্ক পলো ইয়াঞ্জু শহরের গভর্নর হিসাবেও নিয়োগ পান।

গ্রেট খানের মেয়ে অর্থাৎ প্রিন্সেস তিনি এই পোলো পরিবারের কাছে খুব সেইফ মনে করছিলেন বলে তিনি আস্তে আস্তে তাঁর কন্যাসহ মার্ক পোলো এবং তাঁর বাবা চাচাদের সঙ্গে দক্ষিন চায়না দিয়ে তাদেরকে ইউরোপ পার হয়ে যাবার জন্য একটা বড় জাহাজ দেন (যার নাম ছিল আরমাদা, আরমাদা হচ্ছে একটা যুদ্দ জাহাজ যা আর্মড এবং জাহাজ এর নামের মিশ্রন, আর তাই এর নাম হয় আরমাদা)। এই পার করে দেয়ার কারন হল পার্সিয়ান গালফে গ্রেট খানের আরেক আত্মীয় যার সঙ্গে তিনি তাঁর মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। আর ঐ মেয়ে অর্থাৎ প্রিসেসও ঐ রাজকুমারকে বিয়ে করার জন্য রাজী ছিলেন। ঐ জাহাজে প্রায় ৬০০ সৈন্য ছিল, প্রায় ১৪ থেকে ১৫ তা আরও ক্ষুদ্র নৌকা ছিল। এই আরমাদা ইন্দোনেশিয়া হয়ে শ্রীলংকা দিয়ে ভারত বর্ষ পার হয়ে হরমুজ প্রনালি দিয়ে পার্সিয়ান গালফে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজ কন্যার সঙ্গে আর ঐ রাজ পুত্রের বিয়ে হয় নাই কারন ইতিমধ্যে রাজপুত্র মারা যান। পরিশেষে ঐ রাজকন্যা তাঁরই আরেক ভাইকে বিয়ে করেন।

মার্ক পোলো পরবর্তীতে ভেনিসে এসে আর্মিতে যোগদান করেন জেনোয়া রিপাবলিককে রক্ষা করার জন্য। তখন ওখানে একটা যুদ্ধ হচ্ছিল। ইতালির এই শহরটা তখন তাদের নিজস্ব স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছিল। কিন্তু জেনোয়া স্বাধীনতা পায় এবং মার্ক পোলো বন্দি হন। তাঁর দুই বছরের জেল হয়। আর এই জেলখানায় বসেই তিনি তাঁর বিখাত বই The Travels of Marco Polo বইটি লিখেন। প্রকৃতপক্ষে অনেক বিখ্যাত বই জেলখানায় বসে লেখা হয়েছে। যেমন গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি (নেহেরু), দি ট্রাভেলস অব মার্ক পোলো (মার্ক পোলো), মেইন কেম্ফ (হিটলার), লি মর দি আরথার (Le Morte d'Arthur ) স্যার টমাস মেলরির লেখা, মিগুয়েল দি সারভেন্টেজ এর লেখা "ডন কুইকজট" (Don Quixote), দনেটিন আলফসের লেখা "জাস্টিন, ফিলসফি ইন দি বেডরুম" ইত্যাদি।

বকসি ভাই, তোমার জেল খাটার শখ আছে? না থাকলে তুমি বইও লিখতে পারবা না, মার্ক পোলোও হতে পারবা না। যাক, জেলে মেলে যাবার দরকার নাই।

তিনি তাঁর এই লেখাটা আরেক বন্দি রাস্টিচেলোর কাছে দিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে এই রাস্টেচেলোই ফ্রান্স ভাসায় এই বইটি প্রকাশ করে।  বইটির অনেক চ্যাপ্টারের মধ্যে মানুষ খেকো লেজওয়ালা মানুষের অনেক বর্ণনা আছে, এশিয়ার অনেক ভৌগলিক বর্ণনা আছে। এশিয়ার মানুষেরা কিভাবে বিয়ে করে, সেক্স করে এবং কিভাবে মানুষ মানুষকে কবর দেয় তাঁর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। তাঁর সঙ্গে আছে বিস্তারিত ধর্মীয় আচার ব্যবহারের বিশদ বর্ণনা। সে সেকেন্ড হ্যান্ড রেফারেন্স হিসাবে তাঁর সঙ্গে থাকা অনেক জাপানিজ এবং মাদাগাস্কার বন্দিদের তথ্য নিয়ে তিনি ঐ দেশ সমুহের কিছু তথ্য ও সংযজন করেছিলেন।