০১/০১/২০০৮-রিভার সাইড সুয়েটার্স লিমিটেড

রিভার সাইড সুয়েটার্স লিমিটেড একটি ১০০% রপ্তানীমূলক সুয়েটার্স তৈরির প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সাথে আমি প্রথমে ২০০৫ সালে ৩০% শেয়ার নিয়ে জনাব নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে পার্টনারশীপ ব্যবসা শুরু করি, যদিও অত্র প্রতিষ্ঠান টি ২০০৩ সালে গঠিত হয়। অতঃপর ২০০৬ সালে নাজিমুদ্দিনের কাছ থেকে বাকী ৭০% শেয়ারও ক্রয় করিয়া জনাব নাজিমুদ্দিনকে অব্যাহতি দেই। এই সময়ে জনাব নাজিমুদ্দিনের সাথে আমার হাসনাবাদ সুপার মার্কেটের ভবনের যে স্থানে গার্মেন্টস অবস্থিত, তা ৩ বছরের মেয়াদে ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ একটা চুক্তি হয়। এবং তাহাকে বেশ কিছু বড় অংকের টাকা অগ্রিম প্রদান করি। অতঃপর, ১০০% শেয়ার নেওয়ার সময় আমি বিনা টাকায় জনাব মোহসীন শাহীন নামে এক ভদ্রলোককে আমার পার্টনারশীপ দেই, আর সেটার পরিমান ছিলো ৩০%। তাকে আমি এই ৩০% শেয়ার এইমর্মে বিনা টাকায় দিয়েছিলাম যাতে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসাটি সুন্দরভাবে চালান এবং এর উন্নতি করেন। এখানে বলা বাহুল্য যে, জনাব মোহসীন আগে থেকেই এই সেক্টরে কাজ ছিলেন এবং অভিজ্ঞ ছিলেন।

কিন্তু আমার এক্সপেক্টেশনের সাথে জনাব মোহসীন সাহেব গার্মেন্টস এর উন্নতি করতে না পারায় আমি ধীরে ধীরে লস টানতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হবার উপক্রম হয়। একদিকে নিজের সব সঞ্চিত টাকা, স্ত্রীর যত সঞ্চিত টাকা, এবং অনেক আত্তীয় স্বজনের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ টাকার দেনার মধ্যে পড়ি। কোনো উপায়ন্তর না দেখে শেষ অবধি আমি ডিসিশন নেই যে, আমি আর অত্র রিভার সাইড ফ্যাক্টরীটি চালাবো না। এতে যেটা হবে তা হচ্ছে, আমি ব্যাংকের লোনটা (প্রায় ৩ কোটির মতো) আপাতত সামাল দিতে পারবো, কিন্তু আমি যে আমার আত্তীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি, সেটা দিতে পারবো না। তারপরেও আমি এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। কারন, যদি আমি ফ্যাক্টরী চালাই, তাহলে প্রতিমাসে লস হচ্ছিলো প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো। আর যদি না চালাই, তাহলে এই লসটা থেকে বেচে যাই। আর আমার পক্ষে লস দিয়ে টাকার যোগা দেওয়াও আর যাচ্ছিলো না। মোহসীন সাহেব যেহেতু কোনো কন্ট্রিবুসন করেন না বা করতে পারবেনও না, ফলে তার কোনো চিন্তাও নাই আবার ফ্যাক্টরী বন্ধ হোক এটাও তিনি চাচ্ছেন না। কিন্তু আমি বুঝতেছিলাম, আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে।

এমন সময় মিষ্টার মূর্তজা এবং মিষ্টার প্রিয়ান্থা (শ্রীলংকার) এই দুইজন আমাদের ফ্যাক্টরি মাত্র ২ কোটি টাকার বিনিময়ে কিনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। শর্ত থাকে যে, তারা ব্যাংকের লোন রি-সিডিউলিং করে নেবেন, এবং কিস্তিতে তা পরিশোধ করবেন। আমাদের যতো আউট স্ট্যান্ডিং বকেয়া আছে (যেমন শ্রমিকদের বেতন, গ্যাস বিল, কারেন্ট বিল, এবং অন্যান্য) এর বিপরীতে প্রায় ৭০/৮০ লাখের মতো হবে তা দিয়ে দেবেন। আমার যেহেতু এই ফ্যাক্টরী চালানোর কোনো সক্ষমতা ছিলো না, আর চালাইতেও চাচ্ছিলাম না, ফলে যেই রকম ডিলই হোক, তাতে আমি মেনেই গেলাম।

তারা ধীরে ধীরে ফ্যাক্টরীকে তাদের মতো করে সাজাতে শুরু করলেন, আমি মুটামুটি বেকার। বাসাতেই বেশীর ভাগ সময়কাটাই, কিংবা আশেপাশে ঘুরি। অনেক চিন্তায় ছিলাম, কি করা যায় এটা নিয়ে।