Categories
এক যে ছিল রাজকুমার, আর এক যে ছিল রাজকুমারি। রাজকুমার রাজকুমারিকে আর রাজকুমারি রাজকুমারকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু হটাত করে কোন এক দিন রাজকুমার হারিয়ে যায়। দিন যায়, রাত যায়, মাস যায় বছর আসে, বর্ষা যায় শিত আসে, রাজকুমারি পথ চেয়ে বসে থাকে। কিন্তু রাজকুমারের কোন হদিস মেলে না। চোখের সবগুলো স্বপ্ন নিয়ে আর অশ্রুভরা নেত্রে রাজকুমারি একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে জস্না দেখে, চাদের পানে চেয়ে ঐ চাদের বুরির সঙ্গে একাই কথা বলে। কত রাজ কুমার এলো গেলো। কিন্তু রাজকুমারীর কোন রাজকুমারের প্রেমেই পরতে পারলেন না। তার রাজ্য চাই না, জহরত চাই না, সোনার পালঙ্ক চাই না। তিনি শুধু রাজকুমারের জন্য পথ চেয়ে থাকেন।
একদিন হটাত কোন এক বসন্তের সকালে মাথা ভর্তি এলো মেলো চুল নিয়ে, উসুখুসু খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি নিয়ে রাজকুমার এসে হাজির। রাজকুমারি তার জীবনের সব আনন্দ আর ভালবাসা দিয়ে রাজকুমারকে জরিয়ে ধরে শুধু বললেন, আমাকে একা ফেলে তুমি কোথায় গিয়েছিলে রাজকুমার? আমি তো তোমার পথ চেয়েই এতটা দিন, এতটা সময় পার করে দিয়েছি, একবারও কি মনে পরে নাই আমায়? তুমি কি আমার ভালোবাসার স্নিগ্ধ ঘ্রান কখনোই পাও নাই রাজকুমার? এই বুকে কান পেতে দেখ, কি উত্তাপ আর কি যন্ত্রনা নিয়ে আমি এই এতগুল বছর তোমার প্রতিক্ষায় অপেক্ষা করে আছি! আমাকে তুমি তোমার বুকের ভিতরে একটু জায়গা দাও রাজকুমার। আমি বড় ক্লান্ত, আমি আজ অনেক অবসন্ন। আমাকে জোর করে ধরে রাখ এবার। আমি তোমাকে আর কখনো হারাতে চাই না কুমার।
রাজকুমার তার পকেট থেকে একটি ছোট ঘাস ফুল বের করে রাজকুমারির ঘন কালো চুলের খোঁপায় গুজে দিয়ে বললেন, এই হোক সাক্ষী আজ তোমার আর আমার প্রেমের আলিঙ্গনের। আমাদের সুতীব্র ভালোবাসার।
দিন যায়, রাত যায়, বড় ভাল জীবন কাটছিল রাজকুমারের আর রাজকুমারির। একদিন হটাত রাজকুমারের অন্তর্ধান হয়। রানী আবারো একা বসে থাকেন ঐ বেলকনির রেলিং ধরে। সন্ধায় চিল কাতুরের ডাকে তার মন ভারি হয়ে আসে। জোনাকির ডাকে তার সব অতিতের কথা মনে হয়। মনে হয় রাজকুমার তার পাশেই হাত ধরে বসে আছেন। কিন্তু না। সব আশা, আহ্লাদ, সব স্মৃতি মলিন করে দিয়ে তার গরভের অনাগত সন্তানের নড়াচড়ায় সম্বিত ফিরে আসে।
আজ নতুন রাজকুমার এসেছে তার জীবনে। হাটি হাটি পা পা করে ছোট রাজকুমার বড় হতে থাকে। একদিন সে কথা বলতে থাকে। ছোট রাজকুমার কে মা রাজকুমারি কতই ই না গল্প শুনিয়ে ঘুম পারিয়ে দেন। কিন্তু রাজকুমারি সব সময় একই গল্প বলতে থাকে……… এক যে ছিল রাজা আর এক যে ছিল রানী। তাদের ছিল এক রাজপুত্তর। রাজপুত্রকে নিয়ে রাজা আর রানী বড় ভালবাসায় জীবন কাতাইতেছিলেন। একদিন হটাত করে রাজা হারিয়ে যান কোন এক গহিন জঙ্গলের ভিতর। রাজপুত্র ধীরে ধীরে বড় হয়। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করে, মা আমার বাবা কই? রানী চোখের জল মুছে ছোট রাজপুত্রের কপোলে চুমি খেয়ে বলেন, তোমার বাবা একদিন ঘোড়ায় চরে টকবক করে ঐ গহিন জঙ্গল থেকে আমাদের নিতে আসবেন। তুমি বড় হও। রাজা ফিরে না এলে আমরাই তাঁকে খুজে আনবো। ছোট রাজপুত্র ঐ গহিন জঙ্গলের রহস্য বুজে উঠতে পারেন না। শুধু মাকে জরিয়ে ধরে থাকে আর বলে, মা আমি তোমায় খুব ভালবাসি।