০১/০৭/২০২২-রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী না

কেউ যদি বলে থাকেন যে, রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের দেয়া প্রায় দশ হাজার নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র একটি ফ্যাক্টর অর্থাৎ রাশিয়ার তেল এবং গ্যাসের কারনে ইফেক্টিভ হয় নাই, তাহলে সেটা হবে একটা ভুল ধারনা। হ্যা, এটা অনেকগুলি ফেক্টরের মধ্যে একটা ফ্যাক্টর তো অবশ্যই। তার আগে একটা কথা জেনে রাখা ভালো যে, নিষেধাজ্ঞার কারনে একটা দেশে কি কি ইফেক্ট হয় সেটা।

(ক) সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষজন সাফার করতে থাকে।
(খ) দ্রবুমল্য অস্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। মানুষের সেভিংস কমতে থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোনে জর্জরিত হয়ে যায়। দৈনিন্দিন আয় রোজগার কমে মানুষকে হতাশ করে ফেলে।
(গ) বিভিন্ন খাতে নেগেটিভ প্রভাব পড়তে থাকে। জীবন প্রায় থেমে যেতে থাকে। নতুন প্রজন্মের লেখাপড়া, ভবিষ্যত, পরিবারের জন্য হাউজিং খাত, ব্যবসা বানিজ্যে সাস্থখাতে বীমা সব জায়গায় প্রভাব পড়তে থাকে।
(ঘ) এহেনো অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে ছাটাই শুরু হয়, বেতন কমে যায় মানুষ বেকার হয় ইত্যাদি।
(ঘ) এই রকম একটা দূর্বিসহ পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হয়, নেতাদের ক্রেডিট রেটিং কমে যায়, এবং এক সময় দেশের নাগরিকগন অসহিনষু হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। নেতাদের পতন হয়।

তাহলে দেখি, এবার এই প্রভাবগুলি কিভাবে রাশিয়ার নাগরিকদের জীবনে কি ইফেক্ট হলো। আসলে এদের একটাও কঠিনভাবে ইফেক্ট করে নাই। বরং সেটা উলটোপথে বেগবান হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-কেনো?

রাশিয়ার উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ছিলো লিমিটেড ভার্ষন। এই লিমিটেড ভার্ষন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার নাগরিকেরা তাদের কোনটা প্রাইওরিটি আর কোনটা লাক্সারি, কোনটা জরুরী আর কোনটা না হলেই নয় এই পার্থক্যটা বুঝে গিয়েছিলো। মানুষজন উক্ত নিষেধাজ্ঞায় জীবনপ্রনালী কিভাবে এডজাষ্ট করতে হবে সেটার একটা হোমওয়ার্ক করে ফেলেছিলো, অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলো। আসলে রাশিয়ার মানুষজন ১৯৯০ সাল থেকেই এই এডজাষ্টমেন্টটা শুরু করেছিলো যখন রাশিয়া ভেংগে গিয়ে ১৫ টা রাজ্যে পরিনত হয়। ফলে ২০১৪ তে এসে তারা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় খুব একটা ভোগে নাই। ২০১৪ সালের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ানরা বুঝেই নাই।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার।

রাশিয়ানদের চরিত্রের একটা ভালো দিক হলো, তারা খুব তাড়াতাড়ি লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে কিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো থাকা যায় সেটায় বেশ পারদর্শী। আর এই ক্যারেক্টার বৈশিষ্ট পেয়েছে তারা সোস্যালিজম সরকারের কারনে। বেশীরভাগ নাগরিকগন পুরানো সমাজতান্ত্রিক নিয়মে বেড়ে উঠায় নেতাদের উপর তাদের একটা অলিখিত আনুগত্যের মানসিকতায় বাস করতো। তারা এটাকে সাভাবিক নিয়ম হিসাবেই ধরে নিয়ে বড় হইয়েছে। তারা সবসময় সোস্যালিজমের কারনে আধুনিক ক্যাপিটালিজমের মতো বৈষয়িক ব্যাপারে ধার ধারে না। সারাদিনের খাবার নিশ্চিত থাকলে, দেশে খামাখা হাংগামা না থাকলে, ছেলেমেয়েরা ঠিকমত স্কুল কলেজে যেতে পারলে, অতঃপর রাতে সবাই মিলে নিজেদের তৈরী ভোদকায় মত্ত থাকতে পারলেই ওরা খুশী। ফলে ২০১৪ সালে নতুন নিষেধাজ্ঞায় তারা এটাই ভেবেছে যে, নেতারা আছে, তারাই ব্যাপারটা দেখবেন বরং তারা ন্যুনতম যা দরকার সেটা পাচ্ছে কিনা তাতেই তারা খুশী। যেহেতু রাশিয়া এখন পুরুপুরি সমাজতান্ত্রিক না আবার ক্যাপিটালিমেও না, এটা একটা মিক্সড ব্যবস্থা, ফলে আগে সরকার যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিতসা ইত্যাদি আনকন্ডিশনালী নিশ্চিত করতো, এখন যেহেতু সেটা নাই, ফলে সরকারী সহযোগিতায় আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য দ্বারা তাদের নিজের মুল কাজের বাইরে কোনো না কোনো প্রোডাক্টিভ কাজের মাধ্যমে অর্থনইতিক প্রয়োজনটা নাগরিকেরা মিটিয়ে নেয়। সরকারও প্রায় সেই পুরানো ধাচে সমাজতান্ত্রিক নিয়মে সবাইকে সরকারী চাকুরী, ছোট খাটো ব্যাংক লোন, কমদামে দৈনিন্দিন জীবনের কমোডিটির সহজলভ্যতায় একটা ইকুলিব্র্যামে রাখে। কোনো অসস্থিকর পরিবেশে সরকার কাউকেই সরকারী জব থেকে ছাটাই করে না, বেতনও কমায় না, বরং খুব কম সুদে ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে সরকার তার নাগরিকদেরকে কোনো না কোনো খাতে আরো কিছু এক্সট্রা আয় করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। তাতে যেটা হয় যে,

(ক) কেউ সরকারকে দোষী করে না।

(খ) সরকারের উপর তাদের একচেটিয়া বিরক্ত ভাবটা আসে না।

(গ) সরকারকে পতনের মাধ্যমে নতুন রিজিম পরিবর্তনে আন্দোলন করে না।

এটাই হচ্ছে সেই ট্রাম কার্ডটা যে, ভিনদেশের নেতারা যা ভাবেন যে, নিষেধাজ্ঞায় ইন্টার্নালী দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে উঠবে। নেতাদের পতন হবে, আর তাদের নিষেধাজ্ঞা ছুরির মতো কাজে দিবে। এটা রাশিয়ায় কখনোই সম্ভব না। রাশিয়ায় প্রায় ১ বছরের বেশী আমার থাকার কারনে আমি তাদের চরিত্রে এটা খুব ভালো করে দেখেছি। সাধারন নাগরিকেরা রাজনীতি নিয়ে আলাপই করে না। অনেক পরিবার তাদের বাসায় রান্নাও করে না। যাইই আছে, সবাই মিলে সন্ধ্যা ৬টার পর প্রায় প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে, কফি শপে, বারে, রাস্তায় ছেলে মেয়ে ব্রিদ্ধরা মিলে এক মহাকোলাহলে নেচে গেয়ে সেই দিনটা পার করে। আগামীকাল কি হবে, সেটা দেখা যাবে আগামীকাল। এটাই রাশিয়া। তবে এটা ধীরে ধীরে চেঞ্জ হচ্ছে। কিন্তু এটা এখনো সেই সমাজতান্ত্রিকভাবেই ক্যাপিটালিজম মিক্সড হয়ে আছে।

যাক যেটা বলছিলাম।

এবারের পশ্চিমাদের প্রায় দশ হাজারের বেশী নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমারা প্রথমেই যেটা বলেছিলো যে, এইসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান নাগরিকদের উপরে নয়। কিছু কিছু রাশিয়ানরা বিশ্বাসও করেছিলো, আবার ভয়ও পেয়েছিলো। আশ্বাস পেয়েছিলো এই কারনে যে, পশ্চিমারা রাশিয়ান নাগরিকদের ভালো চায় এবং তারা তাদের পক্ষে। কিন্তু রাশিয়ানরা তাদের ভুলটা কিছুদিনের মধ্যেই ভেংগে গিয়েছিলো যে, পশ্চিমারা মিথ্যা কথা বলেছে। কারন, পশ্চিমারা ক্রমাগত দেশের বনিক শ্রেনীর উপরে, তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে, দেশের বিভিন্ন অলিগার্দের উপরে, স্পোর্টসম্যানদের উপরে, ছাত্রদের উপরে, এমনকি বিদেশে অবস্থানরত রাশিয়ানদেরকে কিংবা রাশিয়ান কালচারকে পুরুপুরি বয়কটের মাধ্যমে যেভাবে কোণঠাসা করে অপমানিত করছিলো তাতে রাশিয়ান নাগরিকেরা পশ্চিমা এবং ইউরোপের কথায় এবং কাজে মিল খুজে পাচ্ছিলো না। একদিকে তারা রাশিয়ানদের যেটা ভালো সেটাই করার চেষ্টা করছে বলে গলা ফাটাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়ানদের সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এই কর্মটি রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে তাদের জনগনের কাছে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, পশ্চিমারা বা ইউরোপিয়ানরা রাশিয়ানদের অতীত ধংশ করতে চায়, বর্তমানকে কঠিনতর করতে চায় এবং ভবিষ্যতকে অন্ধকারময় করতে চায় যার আরেক নাম ধংশ। যেহেতু রাশিয়ানরা সেটাই বাস্তবে দেখছিলো যেটা তাদের রাশিয়ান নেতারা বলছে, ফলে রাশিয়ানরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতধর্ম, শ্রেনী বিভেদ ভুলে নিজেরা নিজেরা এক হয়ে যায়। তারা এটা পরিষ্কার বুঝে যায় যে, পশ্চিমারা তাদেরকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে, এবং তারা এখন পশ্চিমাদের প্রতিটি কথা কুটকথা হিসাবে ভাবছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছিলো যে, কিভাবে পশ্চিমারা তাদের কারেন্সীকে দূর্বল করার চেষ্টা করছে, কিভাবে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় কঠিন করে দিচ্ছে, এবং তারা এটা বুঝতে একটুও বাকী ছিলো না যে, তাদেরকে জিম্মি করে এশিয়ান দেশ লিবিয়া, আফগানিস্থান, ইয়েমেন, ইরান কিংবা আফ্রিকান দেশগুলির ন্যায় তারাও শেষ হয়ে যাবে যদি তারা পশ্চিমাদের কথায় সায় দেয়। তাই এই অবস্থায় তারা একটা কথাই ভেবেছে, যে, সমুলে ধংশ থেকে বাচার জন্য তাদেরকে আরো সুসংঘটিত হয়ে, নেতাদের উপর আরো গভীর বিশ্বাসে অবিচল থাকতে হবে। ফলে রাশিয়ার ভিতরে যে কোনো প্রকার আন্দোলন সংঘটিত হবে না এটা রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে নিশ্চিত হয়ে যায়। যে কোনো একনায়কত্ত ডিকটেররের সবচেয়ে বেশী ভয় থাকে নিজের দেশের জনগনকে মোকাবেলা করার। রাশিয়ায় এই আন্দোলন হবে না আর সেটা সম্ভব নয় এটা তারা বুঝে গিয়েছিলো। আর ঠিক এ কারনেই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের লিডারশীপের ক্রেডিট রেটিং ৫২% থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে এখন সেটা দাড়িয়েছে প্রায় ৮৩%। অন্যদিকে জোটের নেতাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ সবার বর্তমান ক্রেডিট রেটিং অনেক নীচে চলে এসছে। এর কারন তাদের দেশের জনগনও এবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, নেতারা সুসংঘটিত নন, এবং সুচিন্তিত নন। যার ফলে রাশিয়ার উপরে প্রদেয় নিষেধাজ্ঞায় এবার এই সব নেতারাই ফাদে পড়ে গেছেন, তাদের জীবনযাত্রা এখন অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে, নিজের দেশের ভিতরে তিনি নিজেই সমালোচিত হচ্ছেন। যেটা হবার কথা ছিলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। এই অবস্থা থেকে তারাও বেরিয়ে যেতে পারছেন না।

যেহেতু আভ্যন্তরীন আন্দোলনের ভয় থেকে রাশিয়া মুক্ত, ফলে, রাশিয়ার নেতাদের এবারের মনোযোগ ছিলো, সাধারন নাগরিকেরা যেনো নিজ দেশে সাভাবিক জীবন যাপনে কোনো প্রকার অসুবিধায় না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া। আর এই হোমওয়ার্ক গুলি রাশিয়ার নেতাদের আগেই করা ছিলো, কখন কোন পলিসি তারা এপ্লাই করবে ইত্যাদি। রাশিয়া যেহেতু নিজে অনেকগুলি সেকটরে নিজেই সয়ংসম্পুর্ন, অন্যদিকে চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকান দেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্য সবাই কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ অপ্রকাশ্যে রাশিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে, ফলে যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে গেছে তার জন্যে।
দাবা খেলায় প্রতিপক্ষ একটা ভুল চাল দিলে অন্য প্রতিপক্ষ দুটূ লাভ পায়। একটা লাভ হচ্ছে, ভুলের কারনে নিজের ক্ষতি যা প্রতিপক্ষের লাভ, আরেকটা হচ্ছে ভুলের মাশুলের ফল হিসাবে আরেকটা কঠিন পরিস্থিতি যা তার প্রতিপক্ষ চালতে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে কোনো একটা ভুলে প্রতিপক্ষ দুইটা লাভ পায়। এখানেও তাইই হয়েছে।

সেটা কিভাবে?

রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বাদ দেয়া, ইউএন হিউম্যান রাইটস থেকে বাদ দেয়া, আন্তর্জাতীক মহলে (যেমন স্পোর্টস, ভ্রমন, ব্যাংকিং) ব্যক্তি শ্রেনীকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া, সুইফট থেকে বাদ দেয়া, রিজার্ভ আটকে দেয়া, যুদ্ধটাকে প্রক্সিওয়ার হিসাবে আখ্যায়িত করা, এই যুদ্ধের মধ্যেও যে কারনে যুদ্ধ (ন্যাটোর এক্সপানসন) সেটা সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে যোগ করার পায়তারায় রাশিয়ার নেতাদের কথাকেই অন্যদের কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলায়,, কালিনগ্রাদকে ব্লকে ফেলানো, এবং অবুঝের মতো নিজের প্রয়োজনীয় কমোডিটি যেমন তেল, গ্যাস, খাদ্য, ফার্টিলাইজার, লোহা, ইউরনিয়াম, ইত্যাদির উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ইত্যাদি সব কিছু ভুল ছিলো। অন্যান্য দেশের উপরে অতীতে হয়তো এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটা কতটুকু কার্যকিরী হবে এটার কোনো হোমওয়ার্ক করা হয়নি। রাশিয়া একটা সাভাবিক দেশ নয়। এটা নিজেই একটা ক্ষমতাশীল দেশ। একই প্রেস্ক্রিপসন যা অন্য দেশের উপর শতভাগ কাররযকরী হয়েছে বলে ফলাফল পাওয়া গেছে, এখানে সেটা কাজে লাগবে কিনা সেটা ভাবা দরকার ছিলো। ল্যান্ডলিজ, প্রক্সিওয়ার, নিষেধাজ্ঞা এসবই সেই পুরানো কৌশল। সেই একই কৌশল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে নিউকসমৃদ্ধ একটা গ্রেট পাওয়ারের বিরুদ্ধে কাজ করবে কিনা এটা ভাবার দরকার ছিলো। এসব নিষেধাজ্ঞা কাজে লাগে নাই বরং নিজেরাই ফাদে পড়ে যাওয়ায় আবার সেটা আবার অবমুক্ত করতে দ্বিধায় পড়ে গেছে পশ্চিমা সহ ইউরোপিয়ানরা।

লাভ হয়েছে শুধু রাশিয়ার। জি-৭ এর বিকল্প হবে ব্রিক্স, চায়নার গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি, আফ্রিকার সাথে রাশিয়া-চায়না-ইন্ডিয়ার মার্জিং, মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা থেকে সরে আসার প্রবনতা, ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন কারেন্সীর আবির্ভাব, ট্রেড ফরমালিটিজে আমুল পরিবর্তন ইত্যাদি পৃথিবীকে এখন মনোপলি থেকে বের করে মাল্টি পোলার ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য।

অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, ন্যাটো তো রাশিয়ার দোড়গোড়ায় এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ইত্যাদির মাধ্যমে ছিলোই, সেখানে ইউক্রেনকে টেনে পশ্চিমাদের প্রক্সীওয়ারের কোনো দরকারই ছিলো না। বরং রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ত করে পশ্চিমাদের আসল শত্রু যারা, চীন, তাদের বিরুদ্ধে একটা জোট করার দরকার ছিলো। এখন আবার ন্যাটোতে সুইডেন, ফিনল্যান্ডকে আমন্ত্রন জানিয়ে আসলে কোনো লাভ হলো কিনা জানিনা, অন্যদিকে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়ায় তাদের কতটা লাভ হলো সেটাও এখন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে। ন্যাটোর জোটে থাকা মানেই হলো, যে যাইই কিছু করুক, সেখানে একটা বড় বাধা আছে। কিছু হইলেই সারা ইউরোপ দায়ী, ন্যাটো দায়ী। আবার ইউরোপের সবাই তো ইইউতে নাই। সেখানেও আরো ১৪ টা দেশ এই ব্লক থেকে মুক্ত। একটা সময় আসবে হয়তো যে, সেইসব মুক্ত ইউরোপিয়ান দেশসমুহ ইউরোপের বিরুদ্ধেই সংঘটিত করবে এই রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া আফ্রিকানরা বা মধ্য প্রাচ্যরা একটা জোট হয়ে।
একটা কথা উজ্জ্বল দিবালোকের মতো সত্য যে, ন্যাটো কখনোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না কারন যখনই অস্ত্র ধরবে, তখন রাশিয়া তার সেই কথাটা রাশিয়া প্রমান করেই ছাড়বে যে,

যদি রাশিয়াই এই পৃথিবীতে না থাকে, তাহলে এই পৃথিবী থাকার দরকারটা কি?

-------------------------------------------------------

(এখানে একটা কথা জানার জন্য লিখছি যে, আমিও রাশিয়ার এই আগ্রাসন ইউক্রেনের বিপক্ষে সাপোর্ট করি না, আবার ইউক্রেনেরও বড় গার্জিয়ান মাথার উপর আছে এইভেবে রাশিয়াকে হুমকীর মধ্যে ফেলানোর দরকার ছিলো না। সেটা আরেক চাপ্টার)