০১/০৯/২০২৪-যুদ্ধ একটা হবেই, সেটা যেভাবেই হোক

আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে আমি যেটা বুঝতে চেষ্টা করছি সেটা হচ্ছে-বাংলাদেশটা যাচ্ছে আসলে কোথায়? কোনো কিছুতেই যেনো দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। অবশ্য খুব বেশিদিন যায়ও নাই এই ইন্টেরিম সরকারের। একটা কথা আছে-জনতা আর ক্ষমতা যখন এক কাতারে থাকে, তখন ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিগুলি সম্মানের সাথে ক্ষমতার মজাটা পায়। কিন্তু যখনই ক্ষমতা আর জনতার মাঝে ফারাক থাকে, ব্যবধান থাকে তখন জনতা ক্ষমতার মানুষগুলিকে অপ্রিয় ভাবে। তখন তারা ক্ষমতার মানুষগুলিকে খুবই অপছন্দ করতে থাকে। এক সময় এই অপছন্দ বাড়তে বাড়তে দেশে একটা বিস্ফোরন ঘটে। ফলে অতিপ্রিয় ক্ষমতাবান লিডাররাও এবংপ্রিয় লিডারগনও মানুষের কাছে খুবই অসহ্য হয়ে মারমুখী হয়ে উঠে। শুরু হয় অভ্যুত্থান অথবা গনহত্যা।

বর্তমানে দেশ যেভাবে উপদেষ্টারা চালাচ্ছেন, তাতে একটা বিভীষিকাময় অনুভুতি আমার ভিতরে কাআজ করছে যে, উপদেষ্টা যারাআ আআছেন, তাআদের মধ্যে মাত্র ৩ জন ছাত্র বা সমন্নয়ক ছাড়া আর কেউ জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন নাই। এমন কি তারা জুলাই বিপ্লবের সময় বিপ্লবের পক্ষেও কোনো কথা সাহস করে বলেন নাই। তারা সারাক্ষনই চুপ ছিলো। এমন কি প্রধান উপদেষ্ঠা নিজেও জুলাই বিপ্লবে আসলে কি হয়েছিলো, কিভাবে হয়েছিলো, কারা কারা সক্রিয় ছিলেন, কিভাবে সক্রিয় ছিলেন এগুলির কিছুই উনি জানেন না। কিন্তু তাকে প্রধান উপদেষ্ঠা বানানো হয়েছে একটি মাত্র ক্রাইটেরিয়া থেকে- নোবেল বিজয়ী।

নোবেল বিজয় কোনো উপ মহাদেশ বিজয় নয় আসলে। যদি সেতাই হতো, তাহলে হাজার হাজার নোবেল বিজয়োরাই সব দেশের রাষ্ট্র প্রধান হতেন। রাষ্ট্র প্রধান হতে হলে সর্ব প্রথম যা দরকার তা হচ্ছে “দেশ প্রেম”। আমার কাছে কেনো জানি মনে হয় প্রধান উপদেষ্ঠা দেশ প্রেমিক নন। আমিও ইউনুস সাহেবের খুব ভক্ত একজন মানুষ। কিন্তু সেই ভক্তিটা কেনো জানি আমার ভিতর থেকেই ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে আর কোরআনের একতা আয়াতের কথা বারবার মনে পড়ছে-“ আমি কাউকে সম্মান দেই সম্মান দেয়ার জন্য, আবার কাউকে আমি সম্মান দেই তাকে অসম্মান করার জন্য। আমি কাউকে রাজা বানাই আর তার সিঙ্ঘাসন থেকে টেনে হিচড়ে নামাই......।। “

ইউনুস সাহেবকে বিধাতা যেন এই রকম একটা টেষ্টে না ফেলেন। কিন্তু আমার প্রতিনিয়ত বারবার ভয়ই হচ্ছে- তিনি সেদিকেই ধাবিত হচ্ছেন।

দেশকে রিফর্ম করার যে চেষ্টা সেটা কয়েক বছরের মধ্যেও সম্ভব নয়। আর কি রিফর্ম করা হবে? ১৯৯১ সালে প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন কি এই একই সংবিধান নিয়ে, এই একই নির্বাচনী আইন নিয়ে, এই একই সেনাবাহিনি নিয়ে, এই একই পলিটিক্যাল দল নিয়ে কি সুষ্ঠ নির্বাচন দেন নাই? দিয়েছেন তো। তখন কোনো কিছুরই রিফর্ম করার দরকার ছিলো না। দেশের ইতিহাসে প্রথম ফেয়ার ইলেকসন হয়েছিলো। কিন্তু তারপরেও দেশে অরাজকতা কেনো সৃষ্টি হয়েছিলো? জানেন?

কারন সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই কিন্তু সুষ্ঠু লিডার নয়। রাজনৈতিক দলগুলি সঠিক ক্যান্ডিডেট দেন নাই। সব লোভী, অশিক্ষিত, বা অর্ধ শিক্ষিত, মাসলম্যান জাতীয় লিডার চয়েজ করে ক্যান্ডিডেট দিয়েছিলো যারা পরবর্তীতে সব আইন কানুন ভেংগেই অপরাধ, দুর্নীতি ইত্যাদিতে নিমজ্জিত হয়েছিলো। সুতরাং কাকে রিফর্ম করবেন? আইন? কানুন? সংবিধান? নাকি মানুষ?

বর্তমান প্রজন্ম শর্টখাট চায়, দ্রুত সাফল্য চায়, দ্রুত সব কিছুর সমাধান চায়। কিন্তু তারা বাস্তবতা বিবর্জিত অনেকটাই। ঘরে কয়দিনের খাবার আছে, কোথা থেকে খাবার আসবে, কে আনবে, এগুলি তাদের চিন্তার মধ্যে নাই। তাদের চিন্তায় সব কিছু ডিজিটাল, সবকিছু আর্টিফিশিয়াল। এখনই এটা চাই, যেনো আল্টিমেটামেই সব কাজ হতে হবে। এটা বাস্তব নয়। ফলে, পুরানো প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বিস্তর ফারাক, আর এই ফারাকটাই হলো সংঘাত।

রিফর্ম দরকার ঠিক এই জায়গায়। কিন্তু এই রিফর্ম কি সম্ভব? যদি এই রিফর্ম সম্ভব হয় তাহলে ব্যাংক যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলবে, অফিস যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলবে, দূর্নীতি, অপরাধ, গুম, রাহাজানি, বৈষম্য ইত্যাদি থাকার কথা নয়। ইউনুস সরকার কি রিফর্ম করবেন? পুরু একটা প্রজন্মকে খুন করে বীর্য থেকে নতুন জেনারেশন তৈরী করতে হবে পুরু সিস্টেম বদল করার জন্য। এটা কি সম্ভব?

এরমানে খুব দ্রুত আমরা একটা আভ্যন্তরীন সংঘাতের। সংঘাতটা হবেই হবে। এটা হতেই হবে।

অদূর অতীতে সব সময় দেখেছি- বারবার রিফর্ম করার চেষ্টা চলেছে, রিফর্ম হয়েছে কিন্তু সেই রিফর্ম কি স্থায়ী হয়েছে? সংবিধান রিফর্ম করে পাঁচ বছরের জায়গায় ৪ বছর, এক কক্ষ থেকে দ্বিকক্ষ সংসদ, পর পর দুই মেয়াদের বেশী নয় কোনো সাংসদের টেনিউর, এক পরিবারের মধ্য থেকে বারবার কেউ সাংসদ না হতে পারার আইন, এই রকম হাজারটা রিফর্ম করলেই কি দেশের অরাজকতা, দূর্নীতি, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি, পুলিশের হয়রানী, কিংবা মাসলম্যানদের দৌড়াত্ত কমে যাবে? কখনোই না। যদি সেতাই হতো, তাহলে আওয়ামিলীগ পালানোর পরে বি এন পি তার অতীতের সেই চরিত্র যার কারনে সে একবার পালাতে বাধ্য হয়েছিল, সেই একই চরিত্রের রুপ নিয়ে আবার এখন গোংগানি দিতো না। তারা ক্ষমতায় না এসেও যে পরিমান দুর্নীতি, দখল্বাজ, চাদাবাজি, রাহাজানি, শুরু করেছে, সেটা হতো না।

এদেশে রিফর্ম হবে না। মাঝখান দিয়ে ইউনুস সরকার হয়তো প্রান পন দিয়ে গোটা ৩/৪ বছর রাষত্র পরিচালনার সাধ গ্রহন করবেন, আর এর মধ্যে যদি ক্ষমতার মজা তাদেরকে পেয়ে বসে, তাহলে তাদেরকে গদি থেকে নামাইতেও আবার আরেকতা বিপ্লব করতে হতে পারে। আর সেই বিপ্লবের সময় কোনো এক ফাক দিয়ে পুনরায় আওয়ামিলিগ যে ঢোকে পড়বে না, সেটা কেউ জানে না। তখন আবার এই বিএনপি গলিতে লুকিয়ে যাবে, জামাত হারিয়ে যাবে, আজকের দিনের বিপ্লবী ছাত্ররা  সবাই পিছু হাটবেই। তখন যদি আবার বিপ্লব সংঘটিত হতে হয়, তখন ছাত্র বিপ্লব বলতে যেটা হবে লাখ লাখ লাশ আনাচে কানাচে পড়ে থাকবে। সেই লাশ গুলিকে নেবার মত কোনো লোকও থাকবে না। হাসিনা সরকার যেমন দেশটাকে কখনোই ভালোবাসে নাই, ইউনুস সরকারও দেশটাকে ভালোবাসে না।

আমি এখন শুধু সেই যুদ্ধটার জন্য অপেক্ষায় আছি। যদি আজ আমি আমার এই ভয়ের কথাটা প্রকাশ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় লিখি, আমি জানি, আগামীকালই আমার এই লেখাটা ডিলিট হয়ে যাবে, আমার সোস্যাল মিডিয়ার একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে, আমার জীবননাশও হতে পারে। কে বলেছে-বাক সাধিনতা আমি ফিরে পেয়েছি? এটা যারা বলে-তারা আসলে কোন কথাই বলে না, তাই তারা ভাবে তারা যা খুশি তো এখন বলতেই পারে। ব্যাপারটা আসলে একেবারেই এমন না।