০২/০১/১৯৮৭-কোর্স শেষে যশোর ফেরত

শুক্রবার যশোর ক্যান্টনমেন্ট-

কোর্স শেষ করে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আবার ফিরে এসেছি। এই গ্যারিসনে আমাদের ১৩ লং এর অনেকগুলি অফিসার আমরা। লেঃ আকবর, লেঃ ইকবাল, লেঃ মাহফুজ, লেঃ ভাওয়ালি, লেঃ বারি, লেঃ এনাম, লেঃ শাহিন। লেঃ মইন, লেঃ আশফাক, লেঃ রুসদ, লেঃ আমির, লেঃ ইসা, এরা তো শুধু আমার ১৩ লং কোর্সের দোস্তরা।  কিন্তু বেসিক কোর্স করার পর ১৪ কিংবা ১২ লং কোর্সের অফিসাররাও এক রকমের কোর্সমেটদের মতোই হয়ে গেছে। ভালো সময় কাটছে কোর্সের পর থেকে ইউনিটে।

নতুন ব্যাটরী কমান্ডার মেজর ইশহাক স্যার। তার সাথে লুতফুল স্যার অন্য ব্যাটরী কমান্ডার। ওয়ালি স্যার হচ্ছেন ইউনিটের টুআইসি। সারাক্ষন সিগারেট খান। আর ইউনিটের সিও হচ্ছে কর্নেল মামুন স্যার। বেসিক কোর্সে যাওয়ার সময় অধিনায়ক ছিলেন লেঃ কর্নেল আনিস স্যার, এখন লেঃ কর্নেল মামুন স্যার এসেছেন। কোনো কিছুতেই ভালো জ্ঞ্যান নাই। ফলে টুআইসি এবং ব্যাটারি কমান্ডারগন যার যার মতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কমান্ডার স্ট্রং না হলে বা কমান্ড স্ট্রং না হলে এমনই হয়। নতুন অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মামুন স্যারের প্রথম দরবারের কথা আমার মনে পড়লে কেমন যেনো লাগে। তাহলে একটু বলিঃ

লেঃ কর্নেল মামুন স্যার দেখতে ললিপপের মতো। খুব রুচীশিল বলে আমার ধারনা কিন্তু আর্টিলারী খাতে ওনার জ্ঞ্যান খুব সীমিত। অবশ্য উনি এই ব্যাপারে কারো উপর মাষ্টারী করতেও চান না। উনি দরবারে বললেন, আমি রংপুর সেনানীবাসে ডিকিঊ থাকার সময় আমার উপর একটা গুরুদায়িত্ত ছিলো প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের মাকে দেখভাল করা। এরশাদ সাহেব আমার এই কাজে অনেক সন্তুষ্ট এবং এই সন্তুষ্টির কারনেই আমার মেজর থেকে লেঃ কর্নেল পদে প্রমোশন। ফলে আমি আর এর বেশি হয়ত প্রমোশন পাবো কিনা জানি না, তবে আমি খুশী যে, অন্তত অধিনায়ক হিসাবে আমি একটা সুযোগ পেয়েছি। আমি আমার কোরের উপর যে খুব ভালো জ্ঞ্যান রাখি, তাও না। তবে আমি যা চাই, আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমি আমার উপরের কমান্ডারদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়। টাইম মতো প্যারেডে আসবেন, অফিসে আসবেন, ব্রিগেড বা ডিভিশন থেকে যে কাজ দেয়, সেগুলি আমি সবাইকে ভাগ করে দেবো, টু আই সি সাহেব ভাগ করে দেবেন, আপনারা সবগুলি কাজ ভালোভাবে করবেন, তাহলেই আমি সফল হতে পারবো। চুরি ডাকাতির কোনো কাজ যেনো না হয়, ছুটিতে গেলে সময় মতো ফিরে আসবেন, কারো কোন আকামের জন্য আমি কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আমি জানি আমার আর কোনো প্রমোশন হবার সম্ভাবনা নাই, তাই আমি কাউকে পরোয়াও করি না। 

যাই হোক, এই ছিলো অধিনায়কের প্রথম দরবারের ম্যাসেজ। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বেশী পছন্দ করেন, এই ব্যাপারে কোনো ছাড় নাই। তার একটিই ছেলে, মুনতাসির মামুন। তিনি এবং তার স্ত্রী খুব ভালো একজন পরিবার। এই জাতীয় অনেক কথা। কতটা প্রোফেশনাল আর কতোটা পারিবারিক সে কথা অধিনায়ক সাহেব এই দরবারে বলার মাপকাঠি জানেন না। তারপরেও অধিনায়ক, বলতেই পারেন।

সামনের সপ্তাহে শীতকালিন অনুশীলন শুরু হবে। ৫৬ দিনের অনুশিলন। খারাপ লাগে না। ইউনিটে অনেক মজার মজার অফিসারগন আছেন। ক্যাপ্টেন গনি স্যার (এইট লং কোর্সের), নাইন লং কোরসের আছেন রাজ্জাক স্যার, সারাক্ষন অফিসার হিসাবে তিনি অনেক ভালো এবং তার অনেক কোয়ালিটি আছে এইটা প্রমান করতেই ব্যতিব্যস্ত। তিনি সৈনিক র‍্যাংক থেকে পরবর্তীতে অফিসার পদে এসেছেন বলেই হয়তেটা তার কাছে একটা বাতিক কিন্তু আমরা যারা রেগুলার অফিসার হয়ে আর্মিতে এসেছি, সেটা নিয়ে কেউ মাথাও ঘামায় না। দশ লং কোর্সের লেঃ আমিন স্যারের জুরি নাই। মেয়েলী গলায় সুন্দর কথা বলতে পারেন আর মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ত করার ঊনার কোনো জুরি নাই। কিন্তু মানুষটা চমৎকার। লেঃ নিজাম স্যার হচ্ছেন আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ। আমাদের মীরপুরের বাসিন্দা তিনি। আমি বেশীর ভাগ সময় নিজাম স্যারের সাথেই কাটাই। তিনি আমাদের কোয়ার্টার মাস্টারের দায়িত্তে আছেন। ১২ লং কোর্সের আমার ক্যাডেট কলেজের বন্ধু হচ্ছে লেঃ লুতফর। আপাতত এডজুট্যান্ত হিসাবে কাজ করছে। আমার রুমমেট।

৩য় লং কোর্সের মাহবুব স্যার মাই ডিয়ার লোক। দারুন মানুষ। ভালো মানুষ। পিচ্চি পুচ্ছি দু একটা ২ লেঃ আছে তার মধ্যে ১৪ লং কোর্সের আলমগীর, আমাদের মানিকগঞ্জের ছেলে। ভালো ছেলে, লাজুক গোছের। আর বরিশালের হেমায়েত করিম এই কয়দিন আগে কমিসন পেয়ে ৪ মরটারে এসেছে। এখনো পুব পশ্চিম কিছুই চিনে না। চিনে যাবে। 

একটু ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। সামনে শীতকালিন অনুশিলনের কারনে সবাই বেশি খাটাখাটি করাচ্ছে এবং করছে। আমাকে এডজুট্যান্ট বানানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমার এই সময় বেশি আগ্রহ নাই। দেখা যাক সিও সাহেব কি করেন।

মিতুলকে সময় দিতে পারছি না। তবে চিঠি লিখা অব্যাহত আছে।