Categories
হাসনাবাদ, কেরানিগঞ্জ, ঢাকা-১৩১১
এমডি অফিস, দুপুর- ৩টা ২২ মিনিট-
এই কয়দিন যাবত আমার জীবনের হিসাবটাই পালটে গেছে। নুরজাহান আপা মারা গেলেন মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে। দুলাভাই এখনো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসেন নাই। ঊনি এখন হয়ত আপার মৃত্যুর ধকলটা সামলে উঠতে পেরেছেন কিনা আমি জানি না। তবে যতো বয়সই হোক আর যত কম ভালোবাসাই বিদ্যমান থাকুক স্বামী স্ত্রির মধ্যে, একজনের অনুপস্থিতিতে আরেকজনের উপস্থিতি, যে মুল্যায়ন তা হয়ত বুঝা যায়। যাক যেটা বলছিলাম, আপার মৃত্যুর পর সপ্তাহ দুয়েক পার হতে না হতেই গতকাল শুনলাম আমার বউয়ের একটা আলাপ আলোচনা। যা আমাকে অনেক ব্যথিত করে তুলছে।
আপার ছেলেমেয়েরা তাদের বাড়ির অংশ ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কেচাল শুরু করে দিয়েছে। কে কোন তালা নিবে, কিংবা কার কোন তালার উপর ইচ্ছা ইত্যাদি। হায়রে জগত, এটাই বাস্তবটা। কেউ আপার মৃত্যুর সময়টা মাসখানেকও পার হতে দিলো না। এর থেকে আমি শিক্ষাটা নিচ্ছি, তা হচ্ছে, ঠিক আমার বেলাতেও এটাই ঘটবে। আমার মেয়েরা হয়ত এটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে না কারন তাদেরকে আমি এই রকম করে বড় করি নাই। কিন্তু তাদের স্বামী বা শাসুড়িরা একটা সময় আমার মেয়েদেরকে ধীরে ধীরে পুশ করবেই যে, বাপের ওইটা নাও, ওইটা নাও ইত্যাদি। আমার জন্য কি করা উচিত বা কি করা উচিত না, বা আমার আত্তা মাগফেরাতের জন্য কোনো কছু করার দরকার হবে কিনা সেই বিষয়ে কেউ কথা বলবে না। কথা বলবে শুধু ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে।
এখানে আরেকটা জিনিস লক্ষনীয়। আপার বাড়ির বিপরীতে কিন্তু লোন আছে। এই লোন নিয়ে কেউ কথা বলছে না। তাদের দরকার ফ্লাট, লোনের টাকাতো শোধ করবে আপার স্বামী যিনি এখনো জীবিত আছেন। কোথা থেকে করবে কিভাবে করবে সেটা তাদের জানার দরকার নাই।
তাহলে তো আমার ব্যাপারটা আরো বেশি ভাবা দরকার। আমার ব্যবসায় লোন আছে, আমার ব্যক্তিগত লোন আছে। ওইসব লোনের মধ্যে আবার আমার স্ত্রীর সায় দেওয়া আছে যে, আমার অনুপস্থতিতে আমার স্ত্রী সেইসব লোনের জন্য দায়ি থাকবে। অথচ আমার বউ কিন্তু এর কোনো কিছুই জানে না বা জানলেও তারপক্ষে এইসব লোন শোধ করা সম্ভব নয়। সে সরকারী চাকুরী করে, আরো ১০ বছর বিনা বাধায় সরকারি চাকুরি করতে পারবে। চাকুরীর পর সে প্রায় তিন সারে তিন কোটি টাকা পেনসন পাবে। আমাদের বাড়ি ভাড়া থেকে টাকা আসে প্রায় লাখ টাকার উপর। বাসাবো থেকে আসে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা। ওর বেতন আসে প্রায় লাখ টাকার সমান। আমার কোনো ব্যবসা থেকে টাকা না পেলেও কিন্তু আমার পরিবার এখন যেভাবে চলছে ইনশাল্লাহ সেভাবেই চলতে পারবে। কিন্তু যদি আমার ব্যবসার লোন তাদের ঘাড়ের উপর চেপে বসে আমার অনুপস্থিতিতে, তাহলে না তারা তাদের জীবনকে উপভোগ করতে পারবে, না আরাম করতে পারবে। তাহলে, কেনো আমি এই লায়াবিলিটিজ বাড়িয়ে যাচ্ছি? হ্যা করতে পারতাম, যদি আমার প্ল্যান মোতাবেক রানা (আমার বড় মেয়ের এখন পর্যন্ত স্বামী) যদি লোভি না হতো, চালাক হতো, কর্মঠ হতো। আমার ব্যবসা ধরে রাখতে পারতো। কিন্তু সে নিজেই তো আমার ব্যবসার উপর হুমকি। তাহলে কার ভরসায়, কিসের জন্য, আর কার জন্য আমি আমার সাম্রাজ্য লোনের উপর দাড় করিয়ে যাবো?
তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিঃ
(১) কোন কিছুই রেখে যাবো না কারো জন্য। মেয়েদেরকে সুশিক্ষা দিয়েছি। তারা নিজেদের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের জীবন গড়বে।
(২) নিজের বাড়ি আছে, সেখানে অন্তত মেয়েরা ঠাই করে বসবাস করতে পারবে। অন্য কোথাও থাকার জন্য টেনসন করতে হবে না।
(৩) কোনো লোন নাই মানে কোনো টেনসন ও নাই।
(৪) আমি আমার সব ব্যবসা গুটিয়ে দিয়ে সব লোন পরিশোধ করে দিয়ে আমার পরকালের জন্য কিছু ছদ্গায়ে জারিয়া তৈরী করে দিয়ে নিজের বউকে নিয়ে বাকী জীবনটা একটু আরাম করে কাটাতে চাই। তাতে আমার যতটুকু ব্যবসা রাখা দরকার, যতোটুকু জমি জমা থাকা দরকার সেই টুকুই রাখবো। আমার মৃত্যুর পর যেনো আমার সম্পত্তি লইয়া কেই ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য আর কোনো মানসিকতা না থাকে। এটাই সত্য।
(৫) বর্তমানে রিভার সাইড সুয়েটারস লিমিটেডের নিজস্ব লোন আছে প্রায় ৫০ থেকে ৫২ কোটি টাকা। যা আমাদের পরিশোধ করতে হবে। এই বিশাল লোন খুব সহজ নয়। আমার ৩৫% শেয়ারের বিনিময়ে আমার ভাগে লোন দাড়ায় প্রায় ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকা। আমি এই টাকা পরিশোধ করতে পারবো না যদি কোনো কারনে রিভার সাইডের সমস্যা হয়। অন্য কোনো সোর্স কিন্তু নাই। মুর্তজা ভাইয়ের ৬৫% শেয়ারের বিপরিতে ওনার লোন দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। ঊনি সাহস করতে পারছেন মনোবল আছে কিন্তু আমার মনোবল নাই। তাই আমি ভাবছি, আমার অন্তত ১৫% শেয়ার সম পরিমান শেয়ার আমি মুর্তজা ভাইকে দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে নেবো (যদিও টাকাটা রিভার সাইড থেকেই মুর্তজা ভাই দিবেন তার লভ্যাংশ থেকে, অসুবিধা নাই) এবং ওই নগদ টাকা আমি আমার অন্যান্য লোন পরিশোধ করে ফ্রি হয়ে যাবো। অন্তত ২০% শেয়ার দিয়ে আমি ব্যবসায় থাকবো তাতে মাসিক সেলারী এবং অন্যান্য খরচাদি চলবে। অন্যদিকে মা ইন্ডাস্ট্রিজ যদি লোনবিহিন অবস্থায় নিজেকে নিজে চালাতে পারে, তাতেও লাভ। মাঝে মাঝে ওই খান থেকে প্রয়োজনে আমি টাকা টান দিতে পারবো।
(৬) আমার কিছু জমি আছে, যা আপাত দৃষ্টিতে অনে হচ্ছে বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু আমি জানি, এই সব জমি আমার অনুপস্থিতিতে আমার মেয়েরা কেনো আমার মেয়ের স্বামীরাও এটার ব্যাপারে কোনো প্রোটেক্সন দিবে না। বরং যা পাবে তাইই নিয়ে জমিজমা বিক্রি করে দেবে। যদি তাই হয়, তাহলে আমার জীবদ্দোশায় কেনো আমি তা করছি না? তাই, আমি ভাবছি, আমার যতো জমিজমা আছে, সেই জমিজমার মধ্যে মা ইন্ডাস্ট্রিজ বাদ দিয়ে বাকি জমি বিক্রি করে দিয়ে ক্যাশ করে ফেল্বো, তাতে যাই পাই। কারো জন্য কিচ্ছু রেখে যাওয়ার কোনো দরকার নাই। অন্তত আমি এসেট করেছি, আমি নিজে ভোগ করে যাবো।