Categories
লোভ একটা লালসার নাম, লালসা একটা হিংসার নাম। আর এই হিংসা থেকে ভেংগে যায় বন্ধুত্ব, ভেঙ্গে যায় টোটাল সিস্টেম, সৃষ্টি হয় শত্রুতা। শত্রুতা যখন একবার সুপ্ত বীজের মতো রোদ, মাটি আর পানি পেয়ে বসে তখন এই শত্রুতা এক ভয়ংকর বিষবৃক্ষ হয়ে সমাজে চারিদিকে কুকর্মই ফল হিসাবে একের পর এক সর্বোনাশ প্রশব করতে থাকে। আর প্রতিটি কুকর্ম মিথ্যর মুখোশ আর অপরাধের খোলস পড়েই আমাদের চারিপাশে ক্রমাগত চক্রাকারে সংঘটিত হতে থাকে। অথচ যারা এই মিথ্যা আর অপরাধের সাথে গোচরে বা অগোচরে জড়িত তারা জানে না যে, মিথ্যার রঙ যতোই সুন্দর হোক, সত্য তার আসল চেহারা নিয়েই বেরিয়ে আসে, সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। কেউ যখন গল্প বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে, হয় সে সত্য বলছে, না হয় পুরু বানিয়ে সত্যের মতো মিথাকে সত্য বানানোর রুপ দিচ্ছে। এই প্রাকটিস সর্বত্র স্তরেই হয়, ব্যক্তি জীবনে, ঘড়য়া পারিবারিক বা সমাজ তথা রাজ্যের প্রশাসনিক দপ্তরেও। এতোসব কিছু জেনেও মানুষ, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে একটা মিথ্যা বারবার এতোবার বলে যে, মিথ্যেটাই যেনো সত্যি হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে এমন একটা মিথ্যে যা লালসার জন্যে করা হচ্ছে। আর যাকে বলা হচ্ছে সেও হয়তো গভীরে না গিয়ে মিথ্যাতাকেই সত্য বলে মেনে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে একটা ব্যার্থতার পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এটা অপরাধ। আর অপরাধ কখনো খালি হাতেও আসে না আবার কখনো খালি হাতে যায়ও না।
জীবনের অনেক কাহিনী আছে যা রহস্যেঘেরা থাকে। যখন কেউ এই রহস্যঘেরা চাদর উম্মোচন করতে যান, তখন এমন কিছু প্রশ্নের উদয় হয়, যা স্বাভাবিক জীবনের ভীত নড়ে দেয়। এসব রহস্যঘেরা প্রশ্নের উত্তর জানলেও যেমন অসুবিধা আবার নীরব থাকলেও অসুবিধা। কারন নীরবতা অনেক বড় বড় ভয়ংকর অপরাধের জন্ম দেয়। এই সময় যা ঘটে যেতে পারে তা হচ্ছে বিদ্ধেষের আগ্নেয়গিরির উত্থান। আর এই আগ্নেয়গিরির লাভা যখন যখন নিজের ভিতরে ফুসে উঠে, তখন লাভাকে হয় নিজে সামাল দিতে হয়, আর তা না হলে অন্যের ঘাড়ে তুলে দিতে হয়। অন্যের ঘাড়ে তুলে দিতে না পারলে শেষ অবধি সে এমন একটা ভুল জায়গায় গিয়ে ভুল রাস্তায় উদ্গীরন হয় যার নাম 'পতন'।
এই 'পতন' যখন নিজের মন আর বিবেক মেনে নিতে পারে না, তখন সমাজের প্রতিটি স্তরেই কোনো কারন ছাড়াই প্রিম্যাচিউরড বেবি হিসাবে জন্ম দেয় এক অনিয়ন্ত্রিত রোগের, যার না, 'রাগ'। রাগ একটা বিষাক্ত ফল, এটা মনজমিনে পোতা উচিতই না। এটা সবার আগে নিজের অস্তিত্বকেই শেষ করে দেয়। তারপর পথে যাইই পায় সেটাকে পায়ে ঠেলতে ঠেলতে ধ্বংস করতে থাকে। রাগ হচ্ছে একটা রাক্ষস, যে সর্বোনাস করে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সেই রোগের জন্ম দিচ্ছে সময়ের প্রতিটি মুহুর্তে।
সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভিলেন। যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, সে সব সময়ই চায় যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুক্ষটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু সময়ের সুযোগ নিয়ে যখন কেউ এর অপব্যবহার করে, কিংবা শুনেও কিছু না করার প্রত্যয়ে অবিচল থাকে, তখন এই 'সময়'টাই একসময় ভিলেন হয়ে এমনভাবে তার চোখের সামনে আবির্ভুত হয় যে, সবকিছু তখন নাটকই মনে হবে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে 'নাটক' আর 'বাস্তবতা' কখনোই একে অপরের সম্পুরক নয়। তখন "সময়" কিছু নাটক এমনভাবে হাজির হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই কি সব সত্যি অথবা এটাই কি সব মিথ্যা? নিজের উপর নিজের তখন এতোটুকুই অভিসম্পাত দিতে ইচ্ছে করবে, মনে হবে, এই পৃথিবীতে বেচে থেকে কি লাভ? যখন বেচে থাকার মতো লোভ আর কারো থাকে না, তখন সে হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় হিংস্র প্রানিদের মধ্যে একজন।
তাই সময়ের ডায়াল কাটায় যে ঘটনা ঘটে যায়, তাকে আবেগের উচ্ছাসে বা লোভের লালসায় কিঙ্গা মিথ্যার জাল দিয়ে বুনানো উচিত না। কারন, হাওয়া যখন কারো নামে গরম হয়, তখন আমরা অনেকেই বলি, শনির দশা চলছে। কিন্তু শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, এই হাওয়ায় অনেকের নামও গরম হয়ে উঠতে পারে। কে কতগুলু চায়ের কাপের সাথে জড়িত তার উপর নির্ভর করে কতটুকু গরম হাওয়া কার কাপে ঝড় তুলবে।