০২/০৪/২০২১-কামুক সিরিয়াল কিলার

একটা ইংরেজী মুভি দেখছিলাম। মুভিটা ছিলো একটা কামুক সিরিয়াল কিলারের উপর। আমি এই জাতীয় মুভি খুব একটা দেখি না। কিন্তু ট্রেইল দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলাম, পরে পুরু ছবিটাই দেখলাম। ছবিটা দেখে কিছু লিখতে ইচ্ছে করলো। তাঁরই উপর ভিত্তি করে আজকে আমার এই লেখাটা।

কামুক সিরিয়াল কিলারের লোকগুলি এক ধরনের পাগল, খানিকটা অবসেসড। এদেরকে কোনোভাবেই এবনরম্যাল ভাবা যায় না। এরা সমাজে সব খানে খুব স্বাভাবিক গতিতে এবং নীতিতে সবার সাথে বসবাস করে। ওদের দেখে পাশের কোনো ব্যক্তি কখনোই বুঝতে পারবে না, তার মনের ভিতরে কি চলছে আর তার পরবর্তী মুহুর্তে কি পরিকল্পনা। এরা সারাক্ষন ওদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্যই বাচে। এদের নির্দিষ্ট একটা প্যাটার্ন থাকে। খুব যত্ন করে এরা নিখুত কাজ করে। ওদের পরিকল্পনায় একটা ধরন হচ্ছে, এরা সব সময় চায় প্রোটেক্টেড সাইট, যেমন নিরাপদ কিলিং জোন, কিংবা সেক্সের সময় নিরাপদ থাকার নিমিত্তে কন্ডোম ব্যবহার। ওদের টার্গেটেও বিশেষ ধরনের প্যাটার্ন থাকে। ওরা একটা নির্দিষ্ট প্রোফাইলের টার্গেটকে বেছে নেয়। ওদের টার্গেট করারও একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট আছে। এইসব বৈশিষ্টগুলি কেউ খুব সুক্ষভাবে পর্যালোচনা না করলে তাদের এবনরমালিটিগুলি চোখেই পড়ে না। তাই সিরিয়াল কিলারদের ব্যাপারে ছোট একটা লিড থাকলেও তা গুরুত্তের সাথে বিবেচনা  করা উচিত।  

এই সিরিয়াল কিলাররা বা কামুক সিরিয়াল কিলাররা কিছু কিছু ড্রাগের ব্যাপারে খুব নলেজে রাখে। যেটা ওরা সব টার্গেটের উপর ইউজ করে। আর বারবার ওরা একই ড্রাগস ইউজ করে। খুব কদাচিত তারা তাদের এই ড্রাগস পরিবর্তন করে। আবার এই ড্রাগসটা পরিবর্তনের নিমিত্তে কিছু নীতিও ফলো করে, যেমন, যখন পরিচিত ড্রাগসটা আর তার কাছে থাকে না বা পাওয়া যায় না বা তার হাতে টার্গেটকে খতম করার সময় খুব কম থাকে, তখন ঐ একই কাজ করে এমন কিছু নতুন ড্রাগস সে ব্যবহার করে।  

সিরিয়াল কিলাররা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় চিন্তা করে। তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ওরা টার্গেটকে খতম করে দেয় বটে কিন্তু এটাও দেখা গেছে যে, সবসময় এরা সব টার্গেটকে মেরে ফেলে না। যদি সরিয়াল কিলার অতিরিক্ত কামুক হয়, তাহলে খুনটা হয় শুধু ওর বেচে যাওয়ার জন্য একটা পন্থা। কিন্তু এই কামুক সিরিয়াল কিলারের অব্জেক্টিভ থাকে শুধু সেক্স। এটা তো সার্বোজনীন যে, সেক্সের চাহিদা একটা বদ অভ্যাস, বিশেষ করে যখন অনঅনুমোদিত সেক্সের উৎস হয়। আর এটাই ওদের অবসেসন। এটা একটা লাগামহীন ঘোড়ার মত। কিন্তু এখানেই ওদের চাহিদাটা মিটে না। ইনভেষ্টিগেশনকে বিভ্রান্ত করার জন্যেও ওদের একটা প্যাটার্ন থাকে। ওরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা আশেপাশের লোকগুলিকেও বিভ্রান্ত করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই সিরিয়াল কিলারকে কোথায় কোথায় খুজবে সেটা তারা আগে থেকেই জানে বা সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করে রাখে।

এটা একটা নিশ্চিত যে, এরা নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় নিয়ে থাকে না। তারা নাম বদল করে, তারা পোষাক বদল করে, তারা পেশা বদল করে। এরা একটা স্প্লিট পারসোনালিটি। এরা সব সময় আইডেন্টিটি লুকিয়ে রাখে প্রতিটি টার্গেটের কাছে। ফলে কোনো একটা টার্গেট যদি বেচেও যায়, সেই টার্গেটের বর্ননা দিয়ে খুব সহজেই এই সব কামুক সিরিয়াল কিলারের পর্যন্ত সহজে পৌঁছানো যায় না।

ওরা যখন সেক্স করে, ওরা এই জন্য কন্ডোম পরে না যে, পুলিশ তার সিমেন ট্রেস করতে পারে। সে আসলে সচেতন থাকে যাতে কোনো ছোয়াচে রোগে সে না ভোগে। এরা পরিষ্কার থাকার একটা অবসেসন থাকে। এরা ততোটাই নিজের খেয়াল রাখে যতোটা ভিক্টিমের। ওরা ক্রাইম সিনে কোনো প্রমান রাখতে চায় না বরং কিছু প্রমান ইচ্ছে করে রেখে যায় যা সবাইকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

সিরিয়াল কিলাররা পরিকল্পনাটা এমন নিখুতভাবে করার চেষ্টা করে যেখানে কোনদিন, কোন জায়গায়, বা কখন কাজটা করবে তার পুরু পরিকল্পনাটা মাথায় রাখে। এমন কি ওরা যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটাবে, সে পুরু এলাকাটা ভালো করে স্টাডি করে। মজার ব্যাপার হলো, ওরা একই শহরে বা এলাকায় একটার বেশী টার্গেট চয়েজ করে না। বিভিন্ন শহর বা এলাকায় তারা এটা করে থাকে। ওদের প্রমান যা ভিক্টিমের পাশে রাখতে হবে এসব দ্রব্যাদি সংগ্রহের জন্য ওরা পরিকল্পনা করে চুরিও করে। ওরা যদি চুরিও করে, সেখানেও একটা প্যাটার্ন ইউজ করে। সে আলাদা আলাদা জায়গায় চুরি করে। ফলে তারা শুধু খুন করার জন্যই ট্রাভেল করে না। এরা চুরি করার জন্যেও ট্রাভেল করে। এরা অনেক দূর দূর পর্যন্ত যায় এই চুরির উদ্দেশ্যে। চুরি করার টার্গেটকেও এরা অনেক জেনে বুঝে বাছাই করে। যাদেরকে সে চুরি করবে তাদের সাথে ওরা ভাব করে, বন্ধুত্ব করে, তারপর চুরি করে। তারা এটা নিশ্চিত করে যে, ঐ সব লোকেরা যাদের কাছে কিছু চুরি করবে, ওইসব লোকগুলি ঐ এলাকায় যাচ্ছে না বা থাকে না যেখানে সে কাউকে খুন করবে বা ভিক্টিম চয়েজ করবে। এখানে আরো একটা মজার ব্যাপার হলো যে, এই সিরিয়াল কিলাররা সবসময় ভিক্টিমের সব কিছু চুরি করে না। তারা সেইসব জিনিষগুলিই ভিক্টমের কাছ থেকে চুরি করে যার দ্বারা সে ডিজিটালী ধরা পড়বে না। যেমন ফোন, ল্যাপটপ, কিংবা এই জাতীয় জিনিষ তারা সাথে করে নিয়ে যায় না। অর্থাৎ ট্রেস হতে পারে এমন সব জিনিষ সে সাথে করে নিয়ে যায় না।

তারা টার্গেট সিলেক্ট করার সময় এমনসব টার্গেট সিলেক্ট করে যাদের আসলে খুব বেশী দূর পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নাই কিংবা একাই থাকে বা ছিন্নমুল মানুষ অথবা পরিবার থেকে আলাদা থাকে। কামুক সিরিয়ালদের চরিত্রের একটা লক্ষনীয় ব্যাপার হলো, তাদের ব্যবহারে, আচার আচরনে এমন একটা প্রকাশ থাকে যেখানে মহিলারা ওর সাথে কম্ফোর্টেবল ফিল করায়। বা ফাসায়। তারপরেও হয়তো অনেক মহিলারা তাদের নিজস্ব চারিত্রিক কারনে অন্তত সেক্সুয়াল এফেয়ার্স থেকে দূরে থাকে। আবার কেউ কেউ সহজেই এসব সিরিয়াল কামুক দের কাছে সহজে ধরা দেয়। ঘটনার বিবরনে দেখা যায় যে, এই কামুক সিরিয়াল কিলাররা ওদের সেক্সুয়াল ডিজায়ারটা সরাসরি বলতে পারে না বা ইঙ্গিত না বুঝার কারনে হয়তো অনেক মহিলারা চট করে সপর্পন করে না। এই সব মহিলাদের জন্যই তারা বেশীরভাগ সময়ে ড্রাগস ইউজ করে, সেক্স করে তারপর মেরে ফেলে।

এদের সেক্সুয়াল নিড গুলি নরম্যাল নয়। এরা রেড লাইট এরিয়ায় যায় কারন রেড লাইট এরিয়ায় টাকার বিনিময়েই ওরা সেক্সটা পেয়ে যায়। ফলে ওদের ওখানে ওরা কাউকে খুন করার মানসিকতাই দেখায় না। এরা রোল প্লে করায়, এর মানে এমন হয় যে, এমন কিছু মহিলার প্রতি আসক্ত যাদের জন্য ওরা খুব ছটফট করে, কিন্তু হাতের নাগালের বাইরে। তাই ওরা ওইসব জায়গায় গিয়ে ওইসব আসক্তিওয়ালা মহিলার রোল প্লে করায় যেনো সেই সেক্স ওয়ার্কারই তার আসক্তির সেই মহিলা। এসব কামুক সিরিয়াল কিলাররা ঐসব রোল প্লে করা মহিলাদেরকে সেই আসক্তওয়ালা মহিলার নামেই মাঝে মাঝে সম্মোধন করে। ওদের ফ্যান্টাসিগুলি অবসেসড মাইন্ডে সেক্স ওয়ার্কারদের দিয়ে পুরন করায়।

এসব কামুক সিরিয়াল কিলাররা দেখতে অনেক ভয়ংকর হয় না। এরা মার্জিত, পরিশোধিত এবং ভদ্রভাবে চলাফেরা করে। যাতে মহিলারা দেখে ভয় পায় না বরং কাছে আসে। ধীরে ধীরে সে অনেকের মধ্যে হয়তো একটা দুইটা মহিলাকে টার্গেট করে। একই জায়গায় আবার এরা একটার বেশী মহিলাকে টার্গেট করে না।

কিছু মহিলাদেরকে ওরা মেরে ফেলে আর কিছু মহিলাদেরকে ওরা ছেড়ে দেয়। কেনো? গবেষনায় দেখা গেছে যে, তারা ঐসব মহিলাদেরকেই মেরে ফেলে যারা সিরিয়াল কিলারের কাছে সারেন্ডার করে না। হয়তো সেক্সের বদলে ওরা একটা সম্পর্ক চায়। কিন্তু এরা কোনো সম্পর্কে জড়াতেই চায় না। যদিও জড়ায়, খুব বেশীদিন একসাথে থাকে না।  ওরা কোনো ইমোশনাল রিলেশন চায়ই না। আর এর প্রধান কারন হলো, একবার শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেলে ঐ মহিলা আর তাদের কাছে কোনো গুরুত্তই রাখে না। সেটা তাদের কাছে একেবারেই বর্জ।

মাঝে মাঝে আবার এসব সিরিয়াল কিলাররা কোনো কোনো ভিক্টিমকে সেক্স না করেই মেরে ফেলে। এর ও একটা কারন আছে। এরা মহিলাদেরকে একটা জেতার বস্তু মনে করে। যদি একবার জিতে যায়, তাহলে আরো এগিয়ে যায়। আর ঠিক এ কারনেই তারা সেক্স ওয়ার্কারদেরকে খুন করে না। কারন টাকা দিয়েই তারা তাদেরকে পেয়ে যায়। কোনো চেলেঞ্জ থাকে না। কিন্তু যাদেরকে টাকা দিয়েও পায় না, এক সময় তারাই হয়ে উঠে এসব কামুক সিরিয়াল কিলারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু যেখানে আর সেক্স নয়, ঐ মহিলাদের উপর জিতবার নেশা।

এসব কামুক সিরিয়াল কিলারদেরকে যখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ট্রেক করে, আসলে তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এইসব সিরিয়াল কিলারদের এই উপরোক্ত ভাবনাগুলিকে ট্রেক করে ইনভেষ্টিগেশনে আগায়। অনেক কঠিন একতা কাজ। শেষ মেষ যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এদের কাউকে ধরতেও পারে, ওরা সব কিছু অকপটে স্বীকার করে। এদের মরবার বা শাস্তির ভয় অনেক কম।

এই পৃথিবীতে ঈশ্বর কত প্রকারের মানুষ যে সৃষ্টি করেছেন তার কোনো ইয়াত্তা নাই। আমরা মানুষ রুপী হায়েনাদের সাথেও বাস করি, আবার ঈশ্বরের ভয়ে প্রকম্পিত অনেক ভালো মানুষের পাশেও বাস করি। কার মনে কি পরিকল্পনা রয়েছে, তা আমাদের কখনোই জানা সম্ভব নয়। তাই, আমাদের উচিত, প্রতিটি মুহুর্তে কোন কিছুই উপেক্ষা না করা আর সেটা যতো ছোতই হোক বা তুচ্ছ। মানুষের থেকে ভয়ংকর কোনো প্রানি ঈশ্বর তৈরী করেন নাই।