আমরা যে বেসিক কোর্ষটা করছি, তার নাম হচ্ছে AOBC-4 (Artillery Officers' Basic Course-4). বেসিক কোর্সের যা নমুনা দেখছি তাতে মনে হয় না আমি খুব ভালো করছি। স্টাফরা (যারা এআইজি অর্থাৎ এসিস্ট্যান্ট ইন্সট্রাকটর গানারী, নামে পরিচিত) ইউনিটের অফিসারদের জন্য পক্ষপাতিত্ত করেন, আইজি (ইন্সট্রাক্টর গানারী) অফিসারগনও মনে হচ্ছে তার একটু একটু ছোয়া আছে। আমাদের সাথে কিছু অনেক সিনিয়র অফিসাররা আবার বেসিক কোর্স করতে এসেছেন কারন তারা তাদের বেসিক কোর্সের সময় চার্লি (অর্থাৎ সি গ্রেড) পেয়েছেন বিধায় আবার ইম্প্রোভমেন্ট কোর্সের জন্য এসেছেন। তাদের মধ্যে ১ম লং কোর্সের মেজর মোজাম্মেল স্যার, মেজর শওকাত স্যার, মেজর জামাল স্যার। এরা সবাই আমাদের অনেক আইজির থেকেও সিনিয়র। কয়েকজন সিনিয়র আইজি আছেন তারা (যেমন মেজর জাকির, মেজর আশরাফ, মেজর রফিক, মেজর হাসান নাসির) ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন অফিসার। ক্যাঃ লতুফুল হায়দার একেবারেই বাচালের মতো ক্লাশ নেন। তবে ক্যাঃ তারেক ভালো ক্লাশ নেন।
আমি পারতপক্ষে এইসব স্যারদেরকে এড়িয়ে চলি। আমার ভালো লাগে না তাদের ব্যবহার। ছোট ছোট লেফটেন্যান্টদের সাথে কোর্স করতে এসে যেনো তারা আবার লেফটেন্যান্টই হয়ে গেছেন এমন ভাব কিন্তু আবার তারা যে মেজর সেটাও দেখাইতে কার্পন্য করে না। সার্থ এমন জিনিষ যা শুধু নিজের জন্যই কাজ করে, এর বাইরে কিছু নাই। আমি জানি, এইসব বাচলামী বা গা ঘেষানোওভ্যাস কোনো এক সময় তাদেরকে অনেক মুল্য দিয়ে বুঝিয়ে দেবে যে, সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে যে গ্যাপটা থাকার দরকার ছিলো বা রাখার দরকার ছিলো সেটা আজকে পালন করা হচ্ছে না বলে ভবিষ্যতে মুল্য দিতে হতে পারে।
বেসিক কোর্সে আমরা যারা আছি, তাদের মধ্যে আমার এমসিসি এর ব্যাচম্যাট লেঃ জাহিদ (১২ লং), লেঃ ইশা রুহুল করিম, এবং লেঃ লুতফর (১২ লং), অন্যান্যদের মধ্যে আছে লেঃ মোটা জাহিদ স্যার (সিরিয়াল ১৪ নামেই সবাই তাকে ডাকেন), লেঃ এনায়েত (১২ লং), লেঃ কাদের (১২ লং), লেঃ সিদ্দিক (১২ লং) , লেঃ বশীর (১২ লং), লেঃ জাহাঙ্গীর (১২লং), লেঃ মোমেন (১২ লং), লেঃ কাদের (১২ লং), লেঃ মাহফুজ (১২ লং), ১৩ লং এরও লেঃ মাহফুজ একজন আছে, লেঃ জাহাংগির (১৩ লং), লেঃ ফেরদৌস ((১৩ লং), লেঃ আলমাস (১৩ লং), লেঃ শহিদুল আলম (১৩ লং), লেঃ মাসুদ ইকবাল (১৩ লং), লেঃ সাকির (১৩ লং), লেঃ সাবির (১৩ লং), এই কয়েকজনের সাথেই আমার বেশ খাতির বেশী। আমার কোর্সম্যাট লেঃ জাহাঙ্গীর (জাহাঙ্গীর চা নামে পরিচিত) যেভাবেই হোক, তাকে বি প্লাস পেতেই হবে এই নীতিতে সে মুটামুটি আদাজল খেয়ে লেগেছে। লেঃ সাকির আছে খালি গান আর বাজনা নিয়ে। আর সাবির তো মুটামুটি একটা ব্যবসা সেন্টার খুলে ফেলেছে গোপনে গোপনে। খুলনার ছেলে, বুঝাই যাচ্ছে, বয়সের তুলনায় মাথা বেশি পাকা। লেঃ আকবরকে রীতিমতো ভয় পায় আমার আরেক কোর্সম্যাট লেঃ এটিএম হাসান (দাদা নামে সবাই তাকে মেনেই নিয়েছে)।
ক্লাশে কি পড়ছি আর কি পড়াচ্ছে সেটা খুব একটা গরজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু প্রায় প্রতিদিন আমি আর লেঃ ইকবাল শহরে যাচ্ছি, ফিরছি রাত করে। লেঃ সাকিরের ক্যাসেট প্লেয়ার আমার খুব প্রিয় একটা যন্ত্র, আধুনিক গান আর সোলস এর গান শুনতে শুনতেই রাত পার হয়ে যায়।
সবার চরিত্রে এমন সব জিনিষ চোখে পড়ছে যা হাসার উদ্রেক জোগায়। যেমন, আমার কোর্সম্যাট লেঃ ফেরদৌস যখন মেসে চায়ের অর্ডার দেয়, চিৎকার করে বলে- এই কে আছিস রে, আমারে এক কাপ চা দাও, কিন্তু শুধু দুধ। লেঃ মোটা জাহিদ যখন ডিম ভাজির কথা বলে তখন তার ডিম ভাজিতে তেল কম হবে পোড়া পোড়া হবে, একটু আধটু হলুদ হবে , কাচা মরিচ বেশী হবে কিন্তু ঝাল হতে পারবে না। আবার ভাওয়ালী যখন পানি চায়, তখন মোটা গলায় বলবে- ঐ মেস ওয়েটার, এক গ্লাস ঠান্ডা গরম পানি দাও। লেঃ লুতফর সারাক্ষন কার পিছনে লাগা যায়, সেই মেজাজে কার্টুন আকতেই আছে আর মেসের আনাচে কানাচে পোস্টিং করেই যাচ্ছে। আইজি মেজর জাকির স্যার যখন লং ডিসটেন্সে কল করেন, তখন মনে হয় চার তলায় ছাদে গিয়ে কথা বললেই ঢাকার রিসিভার পরিস্কার কথা শুনতে পাবেন। ওদিকে মেজর রফিক এমন করে ইংরেজী বলেন যে, সয়ং ইংরেজরাই তার কাছ থেকে ইংরেজী শেখার জন্য কোচিং করতে হবে বলে আমার ধারনা। কমান্ডেন্ট কর্নেল হারুন যেদিক দিয়ে যান, ঐ এলাকায় একটা ঝড় শুরু হয়, আর আশেপাশে যতো ফিতাধারী সৈনিক আছে তাদের ডিমোশন হতেই থাকে। এআইজি জেসিও জাহাঙ্গীর সাহেব ছাত্র অফিসার দেখলেই ম্যাথ টেবিল দিয়া অংক ধরাইয়া দেন। লেঃ বশীর (১২ লং) কমান্ডান্ট হারুন স্যারের খুব প্রিয় মানুষ, যদিও তাদের বাড়ি একই জায়গায় নয়। কেনো বা কি কারনে মাঝে মাঝে আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ বানী শুনালেই তিনি লেঃ বশীরের বরাত টানেন। আর কোর্সের মধ্যে রিউমার উঠছে, হারুন স্যার নাকি তার মেয়ের পাত্র খুজছেন, বশীর তার মধ্যে এক নম্বর লিষ্টে আছে। তাই ওরে সবাই জামাই বলেই ডাকে। আর বশীর মিয়াও ব্যাপারটা বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক, মিটিমিটি হাসে। আমার আরেক দোস্ত লেঃ রবী (১২লং) সব কিছুতেও খায় ধরা। অথচ ওর মতো ভালো একটা পোলা আর কেউ নাই, লেঃ ইশা রুহুলের মতো।