০২/০৮/২০২৪-বর্তমান প্রজন্মকে না বুঝবার প্রশাসন

বর্তমান প্রজন্মের জন্ম যদি ২০০০ সালের আগে পিছে হয়, তারমানে এই প্রজন্ম ১৯৫২ দেখে নাই, ১৯৬৯ দেখে নাই, ১৯৭১ দেখে নাই, ১৯৯০ দেখে নাই। ওরা যা দেখেছে, শুনেছে সব এই বর্তমান সরকারের মুখ থেকে, এই সরকারের দেয়া বক্তব্য থেকে। তাহলে এই প্রজন্মের তো পুরুটাই আওয়ামীলীগ ঘেষা হবার কথা। তারা তো একেবারে অন্ধ সাপোর্টার হবার কথা এই সরকারের। অথচ আমরা এই ২০২৪ সালে এসে দেখছি এরা প্রায় শতভাগ এই প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছে।

কেন?

তাহলে কি এই প্রশ্নটা করা যায় না যে, গুরু যা বলছেন, শিষ্য তা বুঝলেও কিছুই মেনে নেয় নি। বুঝতে পারা আর মানতে পারা কিন্তু এক জিনিষ নয়।

এই প্রজন্ম দৈনিক পেপার পড়ে না, ওরা টিভি দেখে না, ওদের হাতে সময় নাই, খুব সল্প দৈর্ঘ কোনো রিল না হলে ওরা মুভিও দেখে না। যদিও দেখে, ওরা ৩ ঘন্টার মুভি টেনে টেনে ২০ মিনিটে দেখে শেষ করে দেয়। ওরা শুধু ক্রাক্স নেয়, মুল থিমটা নেয়। কিন্তু ওরা এতো বেশী কানেক্টেড একে অপরের সাথে যা আমাদের আমলে ছিলোই না। আমরা যে কাজটা করতাম ১ মাসে, সেটা ওরা করে এক দিনে। ওদের সাথে হাটতে পারার স্পীড আমাদের নাই। আমরা কোথাও গেলে ব্যাগ ভর্তি কাপড়, সরঞ্জাম নিয়েও ভাবি, আর কিছু লাগবে না তো? কিন্তু ওরা কাধে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে মাসের পর মাস দিব্যি সারা দুনিয়া ঘুরে আসে।

যাদেরকে রাজাকার বলে উল্লেখ করা হল, তারাই সেই মুক্তিযুদ্ধের গান, দেশের পতাকা, সে মুক্তিযুদ্ধের হিরোদের নাম নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এরা কারা? রাজাকার? ওরা রাজাকার দেখে নাই। কিন্তু এই আওয়ামিলীগই ওদেরকে ‘রাজাকার’ শব্দতা একটা অপমানজনক গালি হিসাবে শিখিয়েছে। আর এদেরকে সেই রাজাকার বলে উল্লেখ করা হলো?

দেশের ভাবমূর্তি নষত হচ্ছে বাচ্চাদের এই আন্দলনের মাধ্যমে। কথাতা একেবারেই ঠিক নয়। বরং সরকারের ভাবমুর্তি নষত হয়েছে। দেশের ভাবমুর্তি আর সরকারের ভাবমুর্তি কিন্তু এক নয়।

হাসিনার সবচেয়ে বেশী ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আগে মানুষ ভাবতো, কোনো সমস্যা হয়তো শেখ হাসিনাকে ভালমতো তার পরিশদ ঠিকমতো বুঝাতে পারেনি কিংবা তিনি হয়তো ব্যাপারটা জানেন না। কিন্তু এই আন্দোলনে একটা ব্যাপার সবচেয়ে বেশী স্পষ্ট করেছে যে, হাসিনা জানে, কিন্তু তার আদেশ ছাড়া কিছুই হয় না। এবার হাসিনা আর দেশ মুখুমুখি হয়ে গেছেন। 

মুক্তিযুদ্ধের পর্ব শেষ। ইউরোপের দিকে তাকান, দেখবেন ওখানে ২৮/৩০ বছরের যুবকরা প্রধান্মন্ত্রী হচ্ছে অথচ আমাদের এখানে ৭০/৮০ বছর বয়সেও ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। আমরা এখন কালপর্ব পার করছি। এর পরের পর্ব হচ্ছে ‘উত্তর পর্ব’। কালপর্ব থেকে উত্তরপর্বে যেতে অনেক রক্তক্ষয় হয়। আর আমরা ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে এখন।

বাংলাদেশকে বুঝতে হলে এর ইতিহাস বুঝতে হবে, বাংলাদেশকে বুঝতে হলে এর ভউগলিক পরিবেশ বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের শাশক গোষ্ঠী এটা তো বুঝতেই পারে না বরং তারা অহমিকায় রয়েছে, আপোষের কথা বলে না, মতামত শুনতে চায় না, ভিন্ন মতামত টলারেট করে না। ফলে সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হলো এখন আওয়ামীলীগ। এই দল এখন ‘ভুয়া”র তকমা পেয়েছে। এই নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দিতে হবে। এখন ভয় নামকটা চলে গেছে। সবাই এখন কথা বলছে, সবাই ধর্মীয় উগ্রবাদ আর নাই। জংগীবাদের তকমায় আর কোন সমাধান চলবে না। এ দেশের মানুষের মধ্যে অনেক ক্ষোভ, কথা না বলতে পারার অভিযোগ, রাষত্রের প্রতিষ্ঠান জনতার পক্ষে না দাঁড়ানো এগুলি সরকারকে শেষ করে দিয়েছে।

এবার তরুন সমাজের সাথে সবচেয়ে বেশি যোগ হয়েছে তরুনীরা। মহিলারা। ওরা যেভাবে আর্মির বিরুদ্ধে, পুলিশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে তা চোখে পড়ার মত। এখন সরকার সেই আগের অস্ত্র দিয়ে আর কন সমাধান হবে না।

যখন জনগনবিহীন কোন নির্বাচন হয় তখন অন্য অনেক কিছুই আর সংস্কার করা যায় না। অর্ত্নীতি সংস্কার, ব্যাংকিং সংস্কার, বিনিয়োগ সংস্কার, ট্যাক্স আহরনের সংস্কার কোনো সেক্তরেই পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব না কারন কিছু মুষ্টিমেয় প্রশাসন নিয়ে যখন নির্বাচনে আসে কেউ, তখন গন মানুষের কাছে যাওয়া যায় না।

বাচ্চারা শুধু শিক্ষার কোটা নিয়ে আসে নাই। তারা জীবনের কোটা নিয়ে নেমেছে। আজকাল ৮০ হাজার টাকা দিয়েও সংসার চলে না।