সাভার পোষ্টিং হওয়াতে আমার সবচেয়ে যে লাভ তা হয়েছে তা হলো-আমি প্রায় প্রতিদিন মিতুলের সাথে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিবার্সিটিতে দেখা করতে যেতে পারি। বিকাল হলেই আমি চলে যাই ইউনিভার্সিটিতে। সন্ধ্যা পর্জন্ত ওখানেই সময় কাটাই। মিতুল জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির ছাত্রী। তারসাথে তার বন্ধুদের মধ্যে সুরাইয়া পারভীন তানি, রোজী, রোজ, রোজী দিপু, কেকা, এই মেয়েগুলির সাথেই আমার খুব বেশি ভালো বন্ধুত্ত। আমার এই প্রতিদিনের যাওয়া আসা নিয়ে সম্ভবত কেউ নজর রাখছে। কিন্তু তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। বেসিক কোর্ষ থেকে যখন হালিশহর ত্যাগ করে যশোরে আসার পথে ঢাকায় অবস্থান করছিলাম, তখন মাসুস ইকবাল আমার সাথে একদিন রাত কাটালো মীরপুরে। ওর বাড়ি রাজশাহী। এর মধ্যে ভাবলাম, আমি যেহেতু ছুটিতেই আছি, দেখা করে আসি মিটুলদের সাথে। গত কয়েকদিন আগে আমি মিটুলের সাথে সেই সাভারে গিয়ে সারাদিন কাটালাম। এটাই আসলে আমার আর মিটুলের প্রথম একান্তে সাক্ষাৎকার। আমি না ধনী পরিবারের ছেলে, না আছে আমার কাছে অনেক জমানো পয়সা। যে কয়টা পোষাক আছে সেগুলিও যে খুব একটা সিলেক্টিভ তাও না। কিন্তু আমার মধ্যে এসবের কোনো বালাই ছিলো না। আমি যা, আমি সেটাই। আমি জানি আমার ভিতরে কি আছে, আর বাইরের পোষাক দিয়ে আমার ভিতরের আমিকে না পারবো লুকাতে, না পারবো কিছু বেশী দেখাতে। মিটুলের অবস্থাও যে আমার থেকে অনেক বেশী উন্নত সেটা আমি বলছি না। আসলে আমরা উভয়েই প্রায় একই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। ওর যেমন না ছিলো অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা না সে আমাকে আমার ব্যাপারে কিছু বেশী জানতে চেয়েছে। অনেক দিনের পরিচয় না হলেও যেহেতু পাশাপাশি বাড়িতেই আমরা থাকতাম, হয়তো সে সুযোগে আমার অনেকটা পরিচয় কিংবা ব্যক্তিত্ত সে জেনেই থাকবে।
যেদিন ওর সাথে আমি সাভারে প্রথম দেখা করতে যাই, আসলে আমার পরিকল্পনাই ছিলো কিছুটা সময় কাটানো আর ওর সাথে থাকা। সাভার স্মৃতি সৌধে একটাই রেষ্টুরেন্ট, সে রেষ্টুরেন্টেই আমি আর মিটুল খুব যত সামান্য খাবারই খেয়েছিলাম। এটা নিয়ে না আমার কোনো আফসোস ছিলো, না ওর। আমরা আসলে দুজনে দুজনকেই আজীবনের জন্য পেয়ে গিয়েছি বা আমাদের মধ্যে পৃথক হবার সম্ভাবনার কথা কখনোই মাথায় ছিলো না। এতা আসলে প্রেম ছিলো না। প্রেমটা আগের জনমেই ছিলো, এখন শুধু আবার এক সাথে হয়েছি, ব্যাপারটা এমন।
প্রতিদিন যাই ওর কাছে, না গেলে যেনো দিনটাই সফল হলো না। কি যেনো করা হলো না মনে হয়। অথচ থাকি মাত্র কয়েক হাজার গজ দূরে। এক বিকাল থেকে আরেক বিকাল যেনো কাটে না। আর এর মাঝেই আবার চিঠিও লিখছি মিটুলকে, পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে নয়, ব্যাট্ম্যান আতিয়ারের মাধ্যমেই সব চিঠি আসে আর যায়। ব্যাট্ম্যান আতিয়ারই যেনো হয়ে উঠেছে আমাদের ব্যক্তিগত পোষ্টম্যান। আমাদের এই যুগল সব প্রেম আর গোপন সব কথা, ব্যথা, আনন্দ হাসির সবচেয়ে কাছের যে মানুষটি মিটুলের পাশে ছিলো সেটা সুরাইয়া পারভীন তানি। কবে থেকে যে, তানি আমাকে ‘ছোটদা’ বলে ডাকা শুরু করেছে আমার মনে পড়ে না। তবে আমি ওর আসল না হলেও প্রকৃত একজন ভাই বটে।