০৩/১২/২০২২-কোকো, আমাদের প্রথম জার্মান শেফার্ড

কুকুর পালার শখ আমার কখনোই ছিলো না। বরং মানুষ কেনো কুকুর পালে, সে ব্যাপারে আমার অনেক নেগেটিভ মতবাদ ছিলো। অথচ এখন আমি নিজেই কুকুর পালা শুরু করেছি। কেনো এমনটা হলো, সে ব্যাপারটাই এখন বলছি।

সম্ভবত গত বছরের প্রথম দিকে হটাত করে কোথা থেকে একটা কুকুর আমাদের বাসায় এসে হাজির। কথা নাই বার্তা নাই, সে আর কোথাও যেতেও চায় না। সারাদিন আমাদের বাসার সামনেই বসে থাকে, গেটে বসে থাকে, কোথাও যায় না। মাঝে মাঝে আমি বা আমার পরিবার ওকে কিছু খাবার দেয়া শুরু করে। খুব যে খায় তাও না। যতটুকু লাগে ততটুকুই খায়, আর কিছু খাবার রেখেও দেয়, পরবর্তী সময়ে আবার সেটা ক্ষুধা লাগলে খায়। ব্যাপারটা খুব অবাক লাগছিলো।

সারারাত বিশেষ করে রাত ১১ টার পর আমরা যখন মেইন গেট লাগিয়ে দেই, তাকে আমরা জোর করেই গ্যারেজের ভিতর থেকে বের করে দেই, কিন্তু খুব সকালে আবার এসে হাজির হয়। এভাবে প্রায় ৬/৭ মাস পার হবার পর একদিন শুনি ওর নাম রাখা হয়েছে ‘রকি”। সম্ভবত এই নামটা দেয়া হয়েছে আমার বড় মেয়ের দ্বারা। এখন সবাই ওকে ‘রকি’ নামেই ডাকে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, কুকুরটাও মনে করে আমরা ওর মালিক, আমাদের কথা শুনে, ডাকটাও সে রেস্পন্স করে। এখন ওকে আমরা সবাই একটা মায়ার মধ্যে বেধে ফেলেছি। অফিস থেকে বাসায় আসার পরই দেখি, আমার গাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়, সকালে গেট খুললেই মাথা দিয়ে গেট ধাক্কা দিতে শুরু করে কখন সে গ্যারেজে ঢোকবে।

এর মধ্যে আমার ফ্যাক্টরীর ছাদে হটাত দেখি জার্মান শেফার্ডের পাচটি বাচ্চা। পিচ্চি পিচ্ছি, চোখ ফুটে নাই। জরীফ নামে এক লোক যে আমাএ ফ্যাক্টরী বিল্ডিং এর ভাড়া নেয়। দেখে ভালো লেগেছে। মনে হলো, একটা বাচ্চা পালা যায়। সেই থেকে জার্মান শেফার্ড পালার শখ হয়েছে।

গত ১২ অক্টোবর ২০২২ থেকে আমি এই জার্মান শেফার্ডের বাচ্চাটা আমি নিয়ে এসেছি। ওর সেদিন বয়স হয়েছে একেবারে তিন মাস। আমি যখন ওকে গাড়িতে করে নিয়ে আসি, দেখেছিলাম, ওর শরীরের হাড্ডিগুলি পর্যন্ত দেখা যায়। আমি জানি না কিভাবে কুকুর পালতে হয়। কিন্তু অন লাইনে গিয়ে বা ইউটিউবে গিয়ে এ ব্যাপারে বেশ কিছু ধারনা পাওয়া গেলো।

পরেরদিন ওর একটা নাম দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। আমার ছোট মেয়ে (যে আমেরিকায় থাকে) সে তো কুকুর পালবো এটা শুনেই আনন্দে আত্তহারা। বড় মেয়েও তাই। কিন্তু বউ একেবারে নারাজ। কিছুই যায় আসে না। কুকুরের জন্য ঘর বানিয়েছি ২টা। একটা গ্যারেজে আরেকটা ছাদে।

ওর নামটা দিলো আমার ছোট মেয়ে।

নাম কোকো।

এখন আমরা ওকে কোকো নামেই ডাকি। এই এক মাস হয় নাই, এর মধ্যে কোকোর ওজন বেড়েছে প্রায় ২ কেজি। প্রচুর খায়, মাশ আল্লাহ, খেলে, আমাদের ঘরে আসে। আমার কেয়ার টেকারের সাথে ওর বেশী শখ্যতা মনে হয়। কারন সারাদিন তো কোকো ওর সাথেই থাকে, খেলে, বেড়ায়।

আমাকে একটু ভয় পায় কারন মাঝখানে আমি ওকে কিছু কথা না শোনার কারনে লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, কোকো কাউকে ভয় পাক এটাও দরকার আছে।

কোকোকে সব গুলি ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। ডি-ওয়ার্মিং করার জন্য একটা কৃমির ট্যাবলেট ও খাওয়ানো হয়েছে। আরেকটা খাওয়াতে হবে। আমি ওকে প্রতি শুক্রবারে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালো করে গোসল করাই।

কুকুর পালা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। একটা বোবা প্রানীকে বশ মানানো, কথা শোনানো সহজ ব্যাপার না। তবে কুকুর অত্যান্ত প্রভুভক্ত প্রানী। দেখা যাক কোকোর বেলায় কি হয়। এটাই কোকো।