এক যুগের অধিক কোনো একটা স্থানেও যদি কেউ বসবাস করে, সেই জায়গার গাছপালা, রাস্তাঘাট, আশেপাশের চেনা পথচারী, বাড়িঘরকেও মানুষ ভালোবাসতে শুরু করে। হোক সেটা কোনো ভাড়াটে জায়গা বা কোনো বিদেশভূমি। আর কেউ যখন এক নাগাড়ে কারো সাথে যুগের অধিক মারামারি, কাটাকাটি করেও একসাথে এক ছাদের নীচে বসবাস করে, তাকে তো দূরে সরিয়ে দেয়া আরো সহজ হবার কথা নয়। আর যদি সেই যুগল বন্ধন হয়ে থাকে কোনো এক সময়ের উজ্জিবিত ভালোবাসার কারনে, তাহলে এই বিচ্ছেদে সেটাই হবার কথা যেনো নিজের অনিচ্ছায় নাড়ির ভিতর থেকে সমস্ত অনুভুতিকে টেনে হিচড়ে জীবন্ত কেটে ফেলার মতো। যদি এরুপ ঘটনা আপনার চোখের সামনে ঘটতে দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, হয় (ক) সম্পর্কটা কখনোই নিজের ছিলো না এবং এই সম্পর্কের মধ্যে পারষ্পরিক ভালোবাসা আর মহব্বতের পাশাপাশি এমন কোনো সার্থ ছিলো যা বৈষয়িক এবং অনেকটাই লোভের। সেই লোভ হতে পারে দৈহিক, হতে পারে কোনো সম্পদ বা সম্পত্তি, হতে পারে কোনো সিড়ি যা কিনা নিজের ব্যবহারের জন্য শুধু একটা অবলম্বন হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিলো। অথবা (খ) আরেকটা হতে পারে যে, সম্পর্কটাকে কেউ সম্মানই করেনি। তিলেতিলে গড়ে উঠা ছোট ছোট বিদ্বেষ, ছোট ছোট অবহেলা, কিংবা নির্যাতন পুরু সম্পর্কটাকে এমন স্থানে নিয়ে গেছে যেখানে কেউ কাছে আসার জন্য আর কেউ চেষ্টাই করে নাই। তারা সব সময় এক সাথে থেকেও আলাদাই ছিলো। অথবা আরেকটা হতে পারে (গ) এই সম্পর্কের মধ্যে এমন আরেকজন ঢোকে পড়েছে যা অতীতের সব মোহ, সব ভালোবাসা, সব আবেগকে মিথ্যা প্রমানিত করে বর্তমানের সাময়িক মোহ, অনুভুতি কিংবা তার পারিবারিক পরিস্থিতির উপর ভর করে বসেছে। সবচেয়ে করুন যেটা হতে পারে সেটা আমাদের কারো হাতের মধ্যে থাকে না। আর সেটা হলো (ঘ) সম্পর্কে জড়ানো কারো যদি হটাত অসময়ে ম্রিত্যুর মতো কোনো ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো পরিস্থিতির আলোকে বলছি- যদি এমন কোনো সম্পর্ক-বিচ্ছেদের মধ্যে কেউ আবর্তিত হয়েই যায়, মনে রাখা উচিত, নতুন সেই সম্পর্কটাও একদিন এমনভাবে ফিকে হয়ে যাবে, যা আজকের দিনের ফিকে হওয়ার চেয়েও খারাপ। তাই, একবার কখনো যদি কোনো সম্পর্কের মধ্যে কেউ ঘোলাজলের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, তাকে নতুন আরেকটা সম্পর্কে জড়ানোর আগে উভয়ের আদিপান্ত সব কিছু চুলচেরা বিশ্লেষন করে অতঃপর সম্পর্কে জড়ানো উচিত। বিশ্লেষন করা উচিত কিসের ভিত্তিতে আসলে নতুন এই সম্পর্কটা তৈরী হচ্ছে। সব সময় এর অন্তর্নিহীত কারন হয়তো বের করা সম্ভব হবে না কিন্তু যথেষ্ঠ পরিমানে সময় নিয়ে, আবেগের স্থানটুকু, মোহের কারনগুলি নিঃশেষ হতে দিন, তারপর নির্যাস টুকু বুঝার চেষ্টা করুন। হয়তো কিছুটা হলেও আচ করা সম্ভব। কেননা, উপরের যে তিনটা কারনের কথা বলছি, সেটা যে আপনার জীবনেও ঘটবে না, তা আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। হতে পারে, আপনার থেকেও তার মতে উত্তম আরো কেউ চলে আসবে এই সম্পর্কের ভিতর যেখানে আপনি তার কাছে, তার মোহের কাছে, তার লোভের কাছে, তার ভাবনার কাছে কিছুই না। হয়তো বা নতুন মানুষটি তাকে আবারো কোনো এক নতুন সপ্ন দিয়ে হাতছানী দিচ্ছে। হতে পারে আপনার কাছ থেকে যতটুকু সে আশা করেছিলো তার হয় প্রাপ্তি শেষ অথবা আর কিছু পাবার সম্ভাবনা নাই বা হতে পারে সেই পুরানো অভ্যাস, অবহেলা, কুরুচী ইত্যাদি আবার তার মধ্যে জাগ্রত হয়েছে যা আপনি কখনো ভাবেনই নাই।
এটা শুধু মানুষের বেলাতেই ঘটে। এরুপ ঘটনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে মানুষ এক সময় এতোটাই অভিজ্ঞ হয়ে উঠে যে, তখন কাউকে শুধু উপদেশ দেয়া ছাড়া নিজের জন্য আর কোনো কিছুই করার থাকে না। মানুষ আবারো একাই হয়ে যায়।
মানুষ সবসময় একাই ছিলো। পারিপার্শিক দায়বদ্ধতার কারনে, নিজেদের একা থাকার বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষার কারনে আর কিছুটা মোহের কারনেই মানুষ দলবদ্ধ হয়, সংসারী হয়। পৃথিবীতে হাজার হাজার উদাহরন আছে যেখানে মানুষ লোকারন্যে থেকেও একাই জীবন যাপন করেছে এবং করছে। এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এর সংখ্যা ধীরে ধীরে আরো বেড়ে যাবে, কেউ কারোই থাকবে না তখন।