০৪/১২/২০১৬-ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট

Categories

 

আমি ঠিক জানি না ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মন্তব্য করাটা কতটুকু যুক্তি আছে বা আদৌ কোন যোগ্যতা আমি রাখি কিনা। কিন্তু প্রতিদিন আমার চারিপাশে যা দেখছি, যা ঘটছে, যে ভাবে ঘটছে আর এর বিপরীতে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার, তথা সামাজিকভাবে প্রতিটি স্তর যেভাবে সাফার করছে, তাতে মনে হয়, কোথাও কিছু অসঙ্গতিমুলক রীতি, নীতি এবং সর্বোপরি কিছু বাহ্যিক আচরন কাজ করছে। ফলে প্রতিনিয়ত যারা এর প্লেয়ার এবং যারা এর ভিক্টিম তারা উভয়ই নিজ নিজ চেষ্টায় পরিত্রান পাওয়ার আশা করলেও আশারুপ কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা। আর এ কারনে প্রতিনিয়ত ছোট বালক থেকে শুরু করে প্রবীন বয়স্ক মানুষটিও ক্রমাগত অস্থিরতায় ভোগছেন, সংসারে শান্তি নষ্ট হচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হয়ে যাচ্ছে, আর বাড়ছে ক্রমাগত সামাজিক ক্রাইম এবং জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। এর থেকে কি পরিত্রানের কোনো উপায় নেই? এই আপদ কি তাহলে হুট করে সৃষ্টি হয়েছে? নাকি এই আপদ আগেও ছিলো, তবে তা নিয়ত্রনে ছিলো বিধায় চোখে পড়ে নাই? অথবা এমন কি কিছু যে আধুনিক সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি এটা ধ্বংসের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে?

বিষয়টি আলোকপাত করার আগে আমি “ইমোশনাল” অনুভুতিটি নিয়ে একটু সংক্ষিপ্ত ভাবতে চাই। এই “ইমোশনাল” বিষয়টি আসলে কি? সবাই মাঝে মাঝে কথায় কথায় কাউকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুনা যায়, বলেন যে, লোকটি “ইমোশনালি বায়াসড” কিংবা ছেলেটি একটু বেশী “ইমোশনাল”।  এটা কি এমন যে, নদী দেখলেই উদাসীন হয়ে যাওয়া, কিংবা সবুজ ঘাসের মাঠ দেখলেই অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া, কিংবা এটা কি এমন যে, বাবা তার কোন সন্তানের জন্য একটা উপহার নিয়ে আসলেন তো আরেকজনের জন্য আনতে পারলেন না বলে, যে পেলো না সে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে মন খারাপ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকা? অথবা এটা কি এমন কিছু যে, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করার কারনে মন খারাপ করে আত্তহত্যা করা? অথবা এটা কি এমন কিছু যে, আমার ভালো লাগলো না বলে আমি অন্য কারো মতামতের তোয়াক্কা না করেই উলটা পালটা ব্যবহার করা?

ব্যাপারটা মনে হয় ঠিক এই রকম নয়। আমি ব্যাপারটাকে যেভাবে দেখি সেটা হচ্ছে, “ইমোশনালী বায়াসড” বলতে যেটা বুঝি তা হচ্ছে, যেই বয়সে যে মানুষটি যেভাবে কোনো একটা বিষয় যতটুকু বাস্তবতার সাথে তার বুদ্ধি বিবেচনায় বুঝে তা মেনে নেওয়া দরকার বলে একটা মানদণ্ড থাকে কিংবা সেই মানদণ্ড মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে সবাই মনে করেন, সেটা না করে কেউ যদি যুক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তার স্বার্থের জন্য, লোভের জন্য, আনন্দের জন্য, কিংবা যে কোনো মুল্যেই হোক সেটা তার পেতে হবেই বলে ঘাট বেধে বসে থাকেন, তাহলেই আমি ধরে নেবো সে ইমোশনালী বায়াসড হয়ে আছেন। মানতে চাইছে না, শুনতে চাইছে না, কিংবা বাস্তবতা বুঝতে চাইছে না। তার মানে কি দাড়ালো? এটা কোন বয়সের মধ্যে পড়ে না। এটা যে কারো ব্যাপারে প্রযোজ্য হতে পারে। হতে পারে পাচ বছরের বাচ্চার ক্ষেত্রে, হতে পারে বারো বয়সের কোন উঠতি বয়সের যুবক- যুবতীর ব্যাপারে, হতে পারে প্রবীন কোনো বয়স্ক লোকের ব্যাপারেও। স্থান কাল পাত্র ভেদে এবং বিষয়ের উপাদানের উপর বিভিন্ন বয়সের মানুষদের জন্য এই ইমোশনাল শব্দটি খাটে।

একটা উদাহরন দেই। ধরুন, আপনি একজন মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ। মাসের উপার্জন আপনি প্রতিটি বিষয়ে এমনভাবে হিসাব করে করতে হয় যে, কোন কারনে যদি কখনো তার বাইরে কোন ইভেন্ট চলে আসে, তাহলে আপনার পুরু সংসারের হিসাবে একটা আমুল পরিবর্তন করতে হয়। পরিকল্পনা করেছিলেন, আপনার বারো বছরের ছোট বাচ্চার এ মাসে জন্মদিনের পার্টিটা কিছু খরচ করে কিছু লোক দাওয়াত করে নিজের বাড়িতে খাওয়াবেন। হয়ত একটা নতুন উপহারও দিবেন ভেবে রেখেছেন। এটা আপনার ছোট বাচ্চাটিও হয়ত জানে এবং সে সে মোতাবেক মনে মনে খুশীতেই আছে। কিন্তু হটাত করে আপনার পরিবারে এমন কিছু ঘটনার আবির্ভাব হলো যেখানে আপনার ছোট বাচ্চার জন্মদিনের বাজেটটাই হয়ত সেই অনাখাঙ্গিত খাতে খরচ করতে হতে পারে এবং ওই মাসে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান আর পালন করা হয়ত সম্ভবই নয়। এ ক্ষেত্রে কি কি হতে পারে?

হতে পারে-

(১) আপনার ছোট বাচ্চাটি খুব মন খারাপ করবে। আর মন খারাপ করে এমন গো ধরবে যে, তাকে শান্ত করাই খুব কঠিন কাজ। সে হয়ত ঠিকমতো কারো সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করবে না, নাওয়া খাওয়া করবে না, পড়াশুনা করবে না, কারো সঙ্গে ভালো ব্যবহারও হয়ত করবে না। সারাক্ষন তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকবে ইত্যাদি।

(২) আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এমন একটা পরিকল্পনায় ব্যাঘাত হওয়ায় মন খারাপ করতে পারে। একদিকে নিজেদের মন খারাপ, অন্য দিকে আদরের কনিষ্ঠ সদস্যের মন খারাপ হওয়ার কারনে আরো অধিক মন ভারাক্রান্ত হয়ে যাবে। তারা হয়ত আপনার ফাইনান্সিয়াল ক্ষমতার পরিধি জানেন বলে হয়ত বাস্তবতা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বা করার চেষ্টা করছেন। আদরের ছোট মানুষটিকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন ইত্যাদি।

(৩) আপনার নিজেরও কিন্তু বড্ড মন খারাপ হচ্ছে আপনার আদরের ছোট বাচ্চাটির জন্মদিনটা আপনার সামর্থ্যের মধ্যে করতে না পারার কারনে। কিন্তু বাস্তবতা এইরকম যে, জন্মদিন করতে গেলে ওই আকস্মিকভাবে আবির্ভূত ঘটনা সামাল দেওয়া সম্ভব নয় আবার ওই আকস্মিক ঘটনা সামাল না দিলেও অনেক বড় ক্ষতির সম্ভাবনা। এই অবস্থায় আপনি ভাবছেন, আপাতত আকস্মিক ঘটনাটাকেই প্রথমে সামাল দেওয়া অতিব জরুরী, তাই আপাতত জন্মদিন পালন সাময়িকভাবে বন্ধ কিন্তু মনে মনে আছে, যেভাবেই হোক, অতিদ্রুত অন্য কোনো উপায়ে কিংবা অন্য কোন পরিকল্পনায় কাটছাট করে অচিরেই জন্মদিনটা পালন করার চেষ্টা করবেন।

এইপুরু পরিস্থিতিটা যদি আপামোর সব সদস্যরা (আপনার ছোট বাচ্চা, অন্যান্য সদস্যরা) সবাই খুব পজিটিভলী নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন, তাহলে আমি বলবো, খুবই আউটস্ট্যান্ডিং একটি পরিবার। ইমোসন আছে কিন্তু বাস্তবতার নিরীখে সবাই সবার লেবেলে যথেষ্ট পরিপক্ক।

কিন্তু যদি উল্টোটা হয়? কেউ মানতেই চাইছে না, অস্বাভাবিক ঘটনা কিভাবে টেক্যাল দিবেন আর কিভাবে দিবেন না, সেটা আপনার ব্যাপার, বাচ্চার জন্মদিন পালন করাই চাই। তাহলে বলবো, আপনি অনেক গুলি ইমোশনাল বায়াসড কিছু সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন।

ইমোশনাল বায়াসড পরিবারের লোকজন একে অপরের যুক্তি অযুক্তির পন্থায় মানতে থাকেন। পাশের বাড়ির ঐশ্বর্যকে নিজেদের না থাকার সামর্থ্যকে ছোট করে দেখেন, বিশ্বাসের ঘাটতির সৃষ্টি হয়, কখনো কখনো তা সমাজের নীতির বিরুদ্ধেও কাজ করে। আকাশ দেখে ইমোশনাল হওয়া আর মেঘ দেখে ইমোশনাল হওয়া অথবা কোন একটি সিনেমা দেখে ইমোসনাল হওয়ার মধ্যে হয়ত কোনো বড় রকমের দোষ নাই কিন্তু এই অভ্যাস টা ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় যখন ব্যক্তিত্ব আর বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের একটা কনফ্লিক্ট কাজ করে।