০৫/০৪/১৯৮৭-এডজুট্যান্ট নিয়োগ

লেঃ লুতফর এডজুট্যান্ট থেকে রেলিংগুইসড হয়ে আমি এডজুট্যান্ট হয়েছি। নতুন অধিনায়কের আমলে নতুন এডজুট্যান্ট। অধিনায়কের অফিসের ওয়ালের সাথে আমার অফিসের দেওয়াল। একটা ফুটো করে দুই অফিসের মাঝে একটা লাল লাইট লাগানো আছে যাতে সি ও সাহেব লাল লাইট জালাইলেয়ামার এখানেও লাল বাতি জলে। এর মানে সিও সাহেব আমাকে ডাকছেন। এই ডাকাডাকি যে কতবার হয় দিনে মধ্যে, আমার আর সকালের পিটি করার দরকার হয় না। কিন্তু এডজুট্যান্ট বলে কথা, সব জায়গায় আমাকে প্যারেড স্ট্যাট দিতে হয় বিধায় অন্য কারো  ফাকি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমার নাই।

আমাদের এসএম (সুবেদার মেজর) হাসেম সাহেব, খুবই কর্মঠ এবং ফাদারলি এসএম। লোকটারে আমার খুব ভালো লাগে। সে আমার কাজের পরিধির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ন ব্যাক্তি। বলা চলে যে, অধিনায়ক পুরু ইউনিটের বাবা মা হলে এস এম সাহেব হচ্ছেন পুরু সৈনিকদের বাবা মা।

আমি এডজুট্যান্ট হওয়াতে রোমিও ব্যাটারি খুব খুশী কিন্তু আমি জানি এখন রোমিও ব্যাটারী হোক আর পাপা বা কিউবেক যেই ব্যাটারীই হোক সবাই আমার কাছে সমান। আমি চেষ্টা করছি সারাক্ষন কাজে থাকতে। একদিকে ইউনিটের কর্মকান্ড, অন্যদিকে ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজরলুতফুল স্যারের চাপ, আর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার বাশার স্যার তো এক রকম ভীবিষিকা। ব্রিগেড কমান্ডারের বাড়ি সিলেটে। তাদের দেখলেই মনে হয় এতো বড় অফিসার?

সন্ধ্যায় রোল কল হয়। আমাকে আসতেই হয়। মাঝে মাঝে কিছু কিছু অফিসারগন ফাকি দেন। কোনো রকম ছুতা দিয়ে প্যারেড স্ট্যাট মিলিয়ে দেই।  আমার হেড ক্লার্ক নায়েব সুবেদার সামাদ সাহেব। কাজের চেয়ে অকাজ বেশি করেন। তবে আরেকজন ক্লার্ক আছে হাবিলদার মজিদ, সে চালাক চতুর। ম্যানেজ মাষ্টার।

প্রতিটি ব্যাটারীর প্রতিটি সৈনিকের ব্যক্তিগত ট্রেনিং পরিকল্পনা, এবং সারা বছরের পরিকল্পনা ব্রিগেডে জমা দিতে হয়। আর এই কাজটি বেশ স্টুপিড টাইপের কঠিন। এর মধ্যে ছুটি ছাটা, পি লিভ, এডমিন, আবার ট্রেনিং সব মিলিয়ে আসলে সেনাবাহিনীর এই ট্রেনিং কারিকুলামটা আসলে একটা ধাধা। দেখা গেলো যে, একটা সৈনিক ট্রেনিং করছে কিন্তু ক্লাশে নাই, সে হয়ত রেশন কালেকশনে গেছে। আবার কমান্ডার সাহেব ভিজিটে আসবেন, পুরু ক্লাশ মাঠের ঘাস কাটছে অথচ সেই সময় চলার কথা উইপন ট্রেনিং ক্লাশ। আমরাও নম্বর দিয়ে দিয়ে ক্যাডারগুলি পাশ করিয়ে দিচ্ছি সৈনিকদের। সৈনিকগন সব বুঝে, মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়, হাসে, ক্রিটিসাইজ করে। জুনিয়র অফিসারদের কাছে ওরা অনেক কথা বলে।

সৈনিক রা জুনিয়র অফিসারের কাছে যতোটা ওপেন। ততোটাই চুপ সিনিয়র অফিসারদের সাথে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। একটা সৈনিক যদি তার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলি বিনা দ্বিধায় তার উপরস্থ অধিনায়কের কাছে খোলাখুলিভাবে বলতে অপারগ হন, একটা সময় আসবে যে, এইসব সৈনিকেরা তাদের প্রানটা দিয়ে অফিসার এবং অফিসার বর্গের পরিবারের জন্য ১০০% ডেডিকেটেড থাকবে না। জোর করে বশ্যতা হয় না। এখন যেটা চলছে, জোর করে বশ্যতা চলছে। কোন একটা সময় আসবে যে, এখন সৈনিকেরা অফিসারদেরকে জমের মতো ভয় পায়, আগামীতে অফিসাররা এইসব সৈনিকদেরকে ভয় পাবে। আর এর কারন অফিসারগন নিজেরাই।