০৫/০৭/২০০৪-৪ ফিল্ড এডভান্স পার্টি

মিটুল মালয়েশিয়া ট্রেনিং করে দেশে ফিরে এসছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে ছিলাম মিটুলের এই দীর্ঘ সময়ে অনুপস্থিতির কারনে। তারপরেও কোনো রকমে মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। আমার মেয়েরাও লক্ষী মেয়ের মতো ওরাও বুঝতে পেরেছিলো কিভাবে মাকে ছাড়া চলা যায়। শুধু মাকে ছাড়া নয়, বাবাকে ছাড়াও। এর মধ্যে আমার আরেকটা ভালো খবর ছিলো যে, ৪ ফিল্ড খোলাহাটি থেকে মীরপুর পোষ্টিং হয়ে আসবে এই সুবাদে আমি এডভান্স পার্টি নিয়ে আর কোয়ার্টার মাষ্টার রাকিবকে নিয়ে মীরপুর এসছি কয়েকদিন যাবত। তাতে যেটা হয়েছিলো যে, অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও আমার মেয়েরা আর আমি একসাথে বাসায় থাকতে পেরেছিলাম। মিটুল এখন দেশে চলে আসাতে আমি হয়তো এই বাসাটা ছেড়ে মীরপুর সেনানীবাসের একটা অস্থায়ী অফিসার্স ফ্যামিলী কোয়ার্টারে চলে যাবো। বাসা পেতে অনেক দেরী হবে কিন্তু মীরপুরের যেখানে অফিসারগন পরিবার নিয়ে থাকে সেটা ও একটা অফিসার্স মেস কিন্তু সেখানে কিছু কিছু অফিসার দুইটা মাত্র রুম নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে স্থানীয় কমান্ডার। ৪ ফিল্ড ১২ ফিল্ড রেজিমেন্টকে প্রতিস্থাপন করছে। আমরা সমস্ত কিছু হস্তান্তর করছি। ১২ ফিল্ড চলে যাচ্ছে হিল ট্র্যাক্সে। ১২ ফিল্ডের সিও হিসাবে আছে ১২তম লং কোর্সের লেঃ কর্নেল বশীর। আমরা এক্সাথেই বেসিক কোর্স করেছিলাম। একটু কনফিউজড টাইপের অফিসার। কিন্তু মানুষ হিসাবে খারাপ না, সৎ বটে।

মীরপুরের ফিল্ড আর্টিলারী ৪৬ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্রিগেডের অধীনে। এর আগেও আমি একবার এই মীরপুর সেনানীবাসে ৭ ফিল্ডের সাথে চাকুরী করেছিলাম। তখন কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমামুজ্জামান। তাঁর সাথে আমি আরো একবার কাজ করেছিলাম বগুড়ায়। আমি আমার জিএসও-২ (অপ্স) এর শেষ প্রান্তে আর তিনি বগুড়ায় পোষ্টিং হয়ে আসলেন। আমি তাঁর সাথে মাত্র সপ্তাহ খানেক কাজ করেছিলাম। তারপর চলে গিয়েছিলাম গানারী ষ্টাফ কোর্সে। এবার ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার আছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোশাররফ স্যার। বিএনপির বনমন্ত্রীর ছোট ভাই বলেই সবাই জানে।  আমার সাথে প্রায়ই ইউনিটের হ্যান্ডিং টেকিং নিয়ে কথা হয়। খুব ঝামেলা হচ্ছে বশীরের সাথে আমার। আমরা যদিও ১২ এবং ১৩ লং কোর্সের অফিসার কিন্তু আমি বশীরকে তুই বা তুমি সম্বোধনই করি কারন আমরা ক্যাডেট কলেজের একই ব্যাচ। তবে বশীর ফৌজদার হাট ক্যাডেটের আর আমি মীর্জাপুর ক্যাডেটের। বশীরের ইউনিটের অনেক কিছুই বিশেষ করে হস্তান্তরযোগ্য আইটেমের সঠিক ইনভেন্টরী নাই। এর কোথায় কি তাঁর ও সঠিক ব্যাখ্যা নাই। আমি আবার সব কিছু বুঝে না নিলে পরবর্তীতে সব কিছুর ব্যাপারে আমাকেই জবাব্দিহি করতে হবে বিধায় কোনো ছাড় দেওয়ার ও কোনো অবকাশ নাই। ফলে নিত্য নৈমিত্তিক একটা খারাপ সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছিলো। তারপরেও আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যে করেই হোক কন্ট্রোল আইটেম গুলি ছাড়া অন্যান্য আনকন্ট্রোল আইটেমে ছাড় দেয়ার। ১২ ফিল্ড যাওয়ার পরেই আমরা ওদের খালী হ ওয়া ব্যারাক গুলি এবং অফিসার্স কোয়ার্টার গুলিতে উঠতে পারবো। তাঁর আগে আমি ওই কচুক্ষেতেই পরিবার রাখতে হবে।

আমি প্রতিদিনই কউক্ষেত বাসায় যেতে পারি। সকালে অফিসে চলে আসি আর সন্ধ্যায় আবার কচুক্ষেত বাসায় চলে যাই। এর মধ্যে কমান্ড নেটে আমি খোলাহাটিতে ফেরদৌস স্যারের সাথে কথা বলে তাকে প্রায়ই আপডেট দেই। ৪৬ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ব্রিগেডের কমান্দার থেকে শুরু করে বিএম, ডিকিউ সবাই আমাকে যথেষ্ট পরিমান সমীহ করেন। সময়টা ভালই যাচ্ছে।

সামনে আরো একটা প্রোমোশন বোর্ড আছে। আমার মনে এবারো একটা সন্দেহ জাগছে যে, এই বি এন পির আমলে আমাদের হয়তো আর প্রোমোশন হবে না। একটা বোর্ডে তো প্রোমোশন হয় নাই, এবার যে হবে সেতার ও কোনো নিশ্চয়তা নাই। তবে যেটাই হোক, যদি এবার প্রোমোশন না হয়, আমি ৩য় বারের জন্য কোনো চান্স নেবো না। এই চিন্তায় আমার কয়েকটা কাজ খুবই বাস্তবায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছিলো। তাঁর প্রথম কাজতা ছিলো, আমার একতা স্থায়ী বাড়ি বানানো যেখানে আমি সেনানীবাস থেকে বেরিয়ে গেলে নিজের বাড়িতে থাকতে পারি। দ্বিতীয় কাজটি ছিলো যে, যদি আর্মির চাকুরী ছেড়েই দেই, আমি কনো প্রাইভেট চাকুরী করতে চাই না। ফলে চাকুরীর বাইরে কি কি ব্যবসা করা যায় সেটা ভাবা। এই দুটু বিষয় আমার মাথায় সর্বক্ষন ছিলো।