০৫/০৯/১৯৮৩-হাবীব ভাইয়ের বিয়ে

ডঃ মোহামেদ হাবীবুল্লাহ আমার বড় ভাই। ওনাকে আমার বড় ভাই বললে ওনার উপর সঠিক মুল্যায়ন হবে না। উনি একাধারে আমার বড় ভাই, পিতার সমতুল্য এবং আমার সকল কিছুর গার্জিয়ান। শুধু আমার নয়, আমাদের পুরু পরিবারের সবার গার্জিয়ান। আমি আমার সমগ্র ধ্যান ধারনা আরোপ করেও কখনো আমার বাবা কেমন ছিলেন, তার কোনো অবয়ব আমি আমার কল্পনায় আনতেও পারি নাই। কারন আমি আমার বাবাকে কখনোই দেখি নাই। আমার বয়স যখন সম্ভবত দুই কিংবা আড়াই, তখন তিনি মারা যান। ফলে ওই বয়সের একটা বাচ্চার কাছে কোনো মুরুব্বী মানুষের চেহারা কেমন ছিলো, কে আমার কি হতো এসব তো মাথায় যেমন থাকার কথা না, তেমনি আমার মাথায়ও নাই। যাই হোক, সে প্রসংগ এখন না টানি।

আমি সবেমাত্র ইন্টার পাশ করে গ্রামে এসেছি। পড়তাম ক্যাডেট কলেজে। সেই ১৯৭৭ সালের ১৯ শে জুন থেকে ১৯৮৩ সাল নাগাদ এক নাগাড়ে ক্যাডেট কলেজে পরাশুনা করে ইন্টার পাশ দিয়ে সবেমাত্র গ্রামে এসেছি। হাবীব ভাই থাকেন আমেরিকা। তিনিও ১৯৭৮ সালে আমেরিকায় গিয়েছিলেন পড়াশুনা করতে, অতপর পরাশুনা শেষে তিনি সেখানেই থেকে গেলেন। প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেছে ভাইয়ার আমেরিকার জীবন। তিনিও দেশে এসেছেন। এই লম্বা সময়ে হাবীব ভাই আর কখনো দেশে আসেন নাই। এবার দেশে এসেছেন প্রধানত বিয়ের উপলক্ষে। হাবীব ভাইয়ের অবর্তমানে আরো একজন মানুষ আছেন যিনি একাধারে হাবীব ভাইয়ের মতোই আমাদের গার্জিয়ান আবার হাবীব ভাইয়ের ও একাধারে  উপদেষতা কাম বন্ধু কাম ভাই কাম গার্জিয়ান বলা চলে। উনার নাম বদ্রুদ্দিন তালুকদার। এই দুজন মানুষকে আমাদের বাড়ির প্রতিটি সদস্য শুধু ভয়ই পায় না, বরং তাদের সামনে কোনো প্রকারের ব্যক্তি স্বাধীনতা আমাদের কারোরই চ্ছিলো না। তারা যদি কোন এক সোমবার কে বলেন আজ রবিবার, তাহলে সেটা রবিবারই।

আমার পাচ বোন, আর আমরা দুই ভাই। এর মধ্যে আমাদের সবার বড় বোন যার নাম সাফিয়া খাতুন, সে ১৯৭৯ সালেই সন্তানহীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। ফলে এখন বর্তমানে দেশে আছি আমরা চার বোন আর আমি, এবার হাবীব ভাই দেশে আসাতে সবাই এক সাথেই গ্রামে রয়েছি। বোনদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। যে যার যার যোগ্যতায় যেমনই হোক সংসার পেয়েছে এবং বাংলাদেশের আরো হাজার হাজার পরিবার যেমন থাকে তারাও অভাব কিংবা প্রাচূর্য নিয়া ভালই আছে। বোনদের সবারই বাচ্চা কাচ্চা আছে। আমাদের ভগ্নিপতিরাও এই দুই জন মানুষকে (হাবীব ভাই এবং বদি ভাই) আমাদের মতোই যেমন মুরুব্বি মানেন তেমনি তাদের ও কোনো সাহস নাই যে, মুক্ত বাক স্বাধীনতার। অনেকতা সমীহ করেই সবাই চলেন। আর এতার আরেকটা কারন ছিলো যে, তারা দুজনে শিক্ষিত এবং সময়ে অসময়ে অনেক কাজেই লাগে, হোক সেতা কনো অর্থক্রী সাহাজ্য কিংবা অন্য কোনো বিশয়ে।

আমি ক্যাডেট কলেজে পরার কারনেই হোক আর আমার চরিত্রের বইশিষথের কারনেই হোক, আমি ছোট বেলা থেকেই একটু এক রোখা ছিলাম। যতোটা মুক্ত বাক থাকার দরকার কনো কোনো ক্ষেত্রে আমি তার থেকেও হয়তো বেশী সোচ্চার ছিলাম। হয়তো এটা ইমোশনাল কারনেই হোক আর যুক্তির ধারেই হোক। আমি অন্যান্য বোনদের মতো কিংবা তাদের পতীদের মতো অতোটা নীরব ছিলাম না।

হাবীব ভাইয়ের বিয়ে কোথায় হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কে সেই মেয়ে যাকে তিনি বিয়ে করবেন তাদের কোথায় বাড়ি কি তাদের স্ট্যাটাস কিংবা কিভাবে কি হচ্ছে এ ব্যাপারে আমরা পরিবারের কোনো সদস্যই কনো কিছু জানতাম না। আর জানলেও এতা কোনো পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিংবা আমাদের কনো মতামতের কোনো দাম বা মুল্যায়নের কোনো বালাই ছিলো না। এখানে হয়তো বদি ভাইয়ের একটা মতামত থাকলেও থাকতে পারে সেতা আমরা কেউ জানিও না। শুধু জানলাম, হাবীব ভাই বিয়ে করবেন, তারিখ ঠিক হয়েছে ৭ আগষ্ট ১৯৮৩।

ঢাকায় আমাদের কোনো বাড়ি নাই। বদি ভাইয়ের একটা স্থায়ী ঠিকানা আছে মীরপুর (৩৮ গোলারটেক) কিন্তু সেতাও একতা টিনের ঘর। মাত্র দুটু রুম, সেতাও আবার মাঝখানে একতা পার্টিশান দিয়ে কোনো রকমে থাকা। নতুন বউ নিয়ে উঠার মতো পরিবেশ নয়।

হাবীব ভাই এবার যখন দেশে এলেন, তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির টি এস সি ৫ নাম্বার রুমটা আগে থেকেই সম্ভবত বুক করে এসেছিলেন। ফলে হাবীব ভাই বদি ভাইয়ের বাসায় থাকার পরিবর্তে টি এস সি র ৫ নাম্বার রুমেই থাকাটা বেশ সাচ্ছন্ধ বোধ করছিলেন। আমি প্রায় প্রতিদিন টি এস সি তে যাই, ভাইয়ার সাথে দেখা করি। অনেকের সাথেই আমার পরিচয় হয়। তারা অনেক অনেক উচু স্তরের লোক। প্রায় সবাই ইউনিভার্সিটির গনমান্য ব্যক্তিবর্গ। একদিন হাবীব ভাই আমাকে নিয়ে ইব্রাহীম মেমোরিয়াল হাসপাতালে গেলেন। সেখানে ডাঃ মাহবুব সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইব্রাহীম মেমোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা সম্ভবত নীলিমা ইব্রাহীম এর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলেন। শুনলাম যে, ভাইয়ার বিয়ের মূটামূটি যা যা ব্যবস্থা করছেন, এই সেই মাহবুব সাহেব এবং নীলিমা ইব্রাহীম।

আমরা হাবীব ভাইয়ের ভবিতব্য বা হবু স্ত্রীকে বিয়ের আগে দেখি নাই, আর এতা যে আমাদের দেখার দরকার আছে সেটার কোনো প্রয়োজন ও ছিলো না। কারন আমাদের দেখায় পছন্দ অপছন্দের কোনো কিছুই নাই। আমরা আছি, আমরা এভাবেই আছি।

গত ৭ আগষ্টে হাবীব ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। এই বিয়েতার ব্যাপারে যদিও আমার অতো নাক গলানো বা আমার কোনো মতামত, কোনো ভুমিকার কোন কিছুই যায় আসে না, এমন কি আমার মায়ের ও কোনো মতামতের কোনো বিশয় ছিলো না,। শুধু তাই নয়, আমাদের বোনদের পতীদের সাথেও কোনো শলা পরমর্শ করা কোনো বিশয় ছিলো না। ফলে আমরা নতুন ভাবীর পরিবারের কাছে কিভাবে উত্থাপিত হয়েছি, আদৌ কোনো আত্তীয় ভাবে উত্থাপিত হয়েছি কিনা সেটাও আমাদের বোধগম্য ছিলো না। তারা আমাদের কোন এংগেল থেকে কি রকম আত্তিয়তার সুত্রে বিবেচনা করেছে সেতাও আমাদের কোনো ধারনা ছিলো না। তবে ধীরে ধীরে আমার কাছে একতা জিনিষ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিলো যে, বদি ভাই কোনো না কোনো কারনে হাবীব ভাইয়ের এই বিয়ের উপলক্ষে খুশি ছিলেন না। কেনো ছিলেন না, সেতা যদিও আমার পক্ষে কিছুতেই গোয়েন্দাগিরি করে বের করা সম্ভব ছিলো না কিন্তু বদি ভাই যেহেতু অখুশি ছিলেন, ফলে কিছু কিছু মনের কষ্টের কথা তিনি আমার সাথে এ সময়ে শেয়ার করতেন।

যেদিন হাবীব ভাইয়ের বিয়ের অনুশ্তহান হলো ঢাকার প্রেস ক্লাবে, সেদিন বিয়ের ঠিক পরেই ভাইয়া নতুন বউ নিয়ে বাসর করলেন আজীম পুর কলোনীতে ভাইয়ের আরেক বন্ধু আনোয়ার ভাইয়ের বাসায়। সে বাসাটা আমার আগের থেকেই পরিচিত ছিলো কারন আমি যখন প্রথম ঢাকায় আসি এবং ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে ভর্তি হই, তখন এই বাসায় আমি বেশ কিছুদিন থেকেছিলাম। সেখানে জুয়েনা আপা ছিল (আনোয়ার ভাইয়ের ছোত বোন), নিউটন ছিলো (নিউটন আমার সাথে ওয়েস্ট এড হাই স্কুলেই পড়তো), শরীফ নামে আরেকটা ভাই ছিলো নিউটনের। আমাদের সাথেই পড়তো তবে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলে না, অন্য স্কুলে। আনোয়ার ভাই হাবীব ভাইয়ের খুব ভালো বন্ধু ছিলো, আর উনি কাজ করতেন ওয়াপদায়, বদি ভাইও ওয়াপদায় কাজ করতেন।

প্রেস ক্লাব থেকে যখন সরাসরি নতুন বউ নিয়ে হাবীব ভাই আনোয়ার ভাইদের বাসায় উটজলেন, তারপর আমি আর বদি ভাই স রাতে চলে আসি টি এস স্যার সেই ৫ নাম্বার রুমে রাত থাকার জন্য, যেহেতু তখন রুমটা খালি ছিলো। সেই রাতে বদি ভাই আমাকে বেশ কিছু জিনিষ শেয়ার করলেন।

তিনি আমাকে বললেন, আখতার, আমার কাছে মনে হয়, এই বিয়েটা ঠিক হয় নাই। আর আমার ও একেবারে শতভাগ মতামত ছিলো না। কিন্তু হাবীব আমার মতের কোনো মুল্যায়ন ই করলো না। কষ্ট লাগছে।

এ ব্যাপারে যেহেতু আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না কি খারাপ আর কি ভালো হয়েছে , ফলে আমার আসলে কোনো গুরু গম্ভীর মতামত ও ছিলো না। কিছুক্ষন পর আমি এম্নিতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। পরেরদিন একটা জিনিষ খেয়াল করলাম যে, বদি ভাই পুনরায় আজিম্পুর হাবীব ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা প্রকাশ করলেন না। তিনি সরাসরি আমাকে নিয়ে চলে এলেন মীরপুর তার নিজের বাসায়।

এদিকে মা এবং আমার অন্যান্য বোনেরা সেদিনের রাততায় মীরপুরে কাটিয়ে পরদিন সবাই গ্রামে ফিরে ফিরে গিয়েছিলো।

ভাইয়ার শসুর চাকুরী করতেন বুয়েটে। তিনি ছিলেন বুয়েটের প্রোফেসর জনাব আলী আশরাফ। নামকরা লোক। সবাই উনাকে চিনে। তিনি থাকতেন বুয়েট কলোনীতে। কয়েকদন পর ভাইয়া আনোয়ার ভাইয়ের বাসা থেকে সিফট করে উঠে গেলেন বুয়েট কলোনীতে শসুরালয়ে। ভাইয়ার শ্যালক আছে দুজন (একজনের নাম বাবু, আরেক জনের নাম ফার্মি)। ফার্মি আমার জুনিয়র। উনার শ্যালিকা আছেন লুনা আপা। ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্রী। আমি প্রায় প্রতিদিন অই ভাইয়ার শ্বশুর বাড়িতে যেতাম হয় সকাল অথবা বিকালে। এই যাওয়া আসার মধ্যে আমি কন আত্তিয়তার ভালো বন্ধন কখনো দেখি নাই। আমি যে ভাবীর একতা দেবর, এই ভাবতা আমার মধ্যে কখনো তৈরী হয় নাই। মনে হয়েছে যে, আমি ভাইয়ার কাছে যেমন সর্বদা মাথা নীচু করে ছত হয়ে থাকতে হয়, ভয়ে কাচুমাচু হয়ে থাকতে হয়, ভাবীর কাছে আমি ব্যাপারতা এই রকমেরই একটা আচরন দেখতে পাই। শুধু সেতাই নয়, ওই বাড়ির অন্যান্য লোকগুলির মধ্যেও আমরা যেনো একতা সাব স্ট্যান্দার্ড তাইপের কেউ সেতা তাদের চোখে র দিকে তাকালে বুঝা যেতো। ওদের বাড়ির চাকর বাকরেরাও আমাদেরকে মনে হয় সে রকম ভাবেই কাউন্ট করতো। যখন যেতাম, যেনো বহিরাগত কেউ দেখা করতে এসেছে এমন একটা ভাব। হয়তো ড্রইং রুমে বসে আছি তো আছিই। কেউ এক গ্লাস পানি কিংবা চা দিয়ে যে আপ্যায়ন করবে তার কোনো বালাই নাই। নিজের কাছে অসস্থি বোধ করতাম কিন্তু উপায় নাই, মাওতেই হবে। আমরা হাবীব ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল। এতা ওরা জানে। আর হাবীব ভাই আমাদের থেকে বেশী এখন ওদের। ওদের দরকার ছিলো হাবীব ভাইকে, আমাদেরকে নয়। ফলে আমাদেরকে আপ্যায়ন করলেই কি, আর না করলেই কি। বুঝতাম ব্যাপারতা। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। হাবীব ভাইও যেনো অই পরিবারে বিয়ে করে একতা জাতে উঠে গিয়েছিলো এমন একটা ভাব তার মধ্যেও ছিলো। ফলে, আমরা ওখানে গেলে হাবীব ভাই নিজেও খুব একতা সস্থি বোধ করতেন না। বরং আমাদের পরিবারের কেউ না গেলেই উনি খুশী। এমনি একতা ফিলিংস আমার মধ্যে মনে হয়েছিলো। যাই হোক, হাবীব ভাইয়ার বিয়ের কয়েকদিন পরে ভাইয়াও আবার নতুন বউ ঢাকায় রেখে আমেরিকায় চলে গেলেন। শুনলাম, ভাইয়া আমেরিকায় গিয়েই দুই এক মাসের মধ্যে ভাইয়া ভাবীকে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন।

হাবীব ভাই আমেরিকায় চলে যাবার পর ভাবী একদম একা হয়ে গেলেন। ভাইয়া অনেকবার চেষ্টা করেও ভাবীকে নিতে পারছিলেন না। এর মধ্যে দু দুবার আমেরিকার দুতাবাস থেকে ভাবীর ভিসা রিজেক্ট হয়েছে, আরেকবার রিজেক্ট হলে উনার আমেরিকায় যাওয়াই অনিসচিত হয়ে যাবে। আমি ভাবিকে সময় দেই। ভাবী যেখানে যেতে চান, রিক্সায় করে নিয়ে যাই। ফকির দরবেশ, ওঝা যতো কিছু আছে, আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য যেখানে যেখানে যাওয়া লাগে, মানত করা লাগে ভাবী রেগুলার করে যাচ্ছেন, আর আমি ওনাকে সংগ দিচ্ছি।

এরই মধ্যে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা, মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার সবগুলি দিয়ে দিলাম। এখানে আরো একতা কথা বলে রাখা দরকার যে, আমি ক্যাডেট কলেজের ছাত্র বিধায় আমি ইন্টার পাশের পর পরই হাবীব ভাইয়ার ঠিক বিয়ের আগে আর্মিতে কমিশন পদে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরেও যেতে পারি নাই কারন হাবীব ভাই চান নাই যে, আমি আর্মিতে যাই। আমি ১২ লং কোর্ষের সাথে আর্মিতে কমিশন পরীক্ষায় টিকে গেলেঈ ২৭ জুলাই ১৯৮৩ সালে আমার বি এম এ তে যাইয়ার তারিখ ছিলো। কিন্তু হাবীব ভাই আমাকে কিছুতেই আর্মিতে যায়ার অনুমতি দেন নাই। ফলে আমি ১২লং কোর্ষের সাথে আর বি এম এ তে জ্যেন করতে পারি নাই।  

এদিকে যখন ভাবীর ভিসা একের পর এক রিজেক্ট হচ্ছিলো, তখন উপায়ন্তর না দেখে হাবীব ভাই আবারো নভেম্বরের প্ররথম সপ্তাহে ঢাকায় চলে আসেন। এবার তিনি ভাবীকে সাথে করে নিয়ে যাবেন এই পরিকল্পনায় ঢাকায় আসেন। হাবীব ভাই কাউকেই আগাম কোনো খবর দিয়ে এবার ঢাকায় আসেন নাই। ফলে হাবীব ভাই ঢাকায় আসার পর আমি প্রথম ভাবীর কাছে জানতে পারলাম ভাইয়া ঢাকায় এসেছেন। আমি খবরটা বদি ভাইকে মীরপুরে গিয়ে দিয়ে এলাম।

সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো, এই যে বিয়ের পর থেকে এবার হাবীব ভাইয়ের ঢাকায় আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত হাবীব ভাইয়ের বউ এক বারের জন্যেও কোনোদিন বদি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ ও করেন নাই, ওখানে ওনার বাসায় যাওয়ার জন্যে কখনো আমাকেও বলে নাই। এর ফলে এম্নিতেই বদি ভাইয়ার একটু রাগ কিংবা গোস্যা ছিলো তাদের উপর, ভাবীর এরুপ আচরনে বদি ভাই আরো মর্মাহত হলেন। তার উপর আবার হাবিব ভাই কোনো আগাম খবর না দিয়ে যখন ঢাকায় এলেন, তখন ব্যাপারতা প্রকাশ্যেই একটা বিরোধের সৃষ্টি হলো।

আমার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রায় সব গুলির আউট হয়ে গিয়েছিলো, আমি বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্ট্মেন্টে চান্স পেলাম, কিন্তু বুয়েটে আমার কাংগখিত ফলাফল এলো না। যেদিন হাবীব ভাই ঢাকায় এলেন, আমার ফলাফলে উনি মারাত্তক রেগে গেলেন যখন আমি তার শ্বশুর বাড়িতে গেলাম। অনেকতা খুব রাগারাগি তো করলেনই এবং কিছুটা অপমানিত ও করলেন। মেডিক্যাল উনি পছন্দ করেন না, ফলে মেডিক্যালে পাশ করে কনো লাভ হলো না। ইউনিভার্সিটিতে ইউনিট আমাকে পরাতে চান না, কিন্তু আমেরিকায় নিয়ে যেতে চান, তাই ক্লার্কভাইল ইউনিভার্সিটিতে ভরতির আয়োজন করা যাবে বলে জানালেন।

আমি খুবই অপম্নিত বোধ করলাম, কারন আমি কিন্তু তখন ছোট একটা শিশু নই। আমার এই অপদস্তের ব্যাপারটায় যেনো বাবু ভাই, ফার্মি, লুনা আপা, মজাই পেলেন সেতাই আমার কাছে মনে হলো। আমি দুপুরে কিছু না খেয়েই চলে এসেছিলাম। অনেকটাআ রাগ করেই।

দিন যায়, সপ্তাহ যায়, প্রায় ১৯ দিন পার হয়। ভাইয়া না গেলো মার সাথে গ্রামে দেখা করতে, না গেল বদি ভাইয়ের বাসায় দেখা করতে। এক নাগাড়ে ১৯ দিন তিনি ভাবিদের বুয়েট কলোনীতে থাকলেন। এদিকে মা অপেক্ষা করছেন কবে তার বড় ছেলে গ্রামে যাবে, আর তিনি দেখবেন। মার রাগ হয়েছিলো কিনা আমি জানি না তবে মা কষ্ট পেয়েছিলেন এটা আমি জানি। মা তো মাই।

আমি তখন অস্থায়িভাবে ঢাকা শহীদুল্লাহ হলের দাইনিং কোয়ার্তারে আগে যেখানে হাবীব ভাই থাকতেন, সেখানে মাসুদ নামে আমার এক আত্তীয় থাকতো, তার রুমেই থাকি আর মাঝে মাঝে হাবীব ভাইয়ার শসুর বাড়ি অইখান থেকেই যাই। ২০ তম দিনে মা আর আমার বোনের প্তীরা বেশ কিছু ফল মুল, নারিকেল নিয়ে ঢাকায় এলেন হাবীব ভাইকে দেখার জন্য। কারন মায়ের আর দেরী করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তারা গ্রাম থেকে প্রথমে আমার ওইখানে শহীদুল্লাহ হ্লে এলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলেন। বিকাল ৫ তার দিকে মাকে নিয়ে আমার দুলাভাইয়েরা হাবীব ভাইয়ের শ্বশুর বাসায় বুয়েট কলোনীতে গেলেন। কোনো কারনে আমার তাদের সাথে যাওয়া সম্ভব হয় নাই। ফলে আমার বোনের হাসবেন্ডরা মাকে নিয়ে হাবীব ভাইকে দেখতে গেলেন।