০৬/০৩/১৯৯৬-ডমিনিকান ভ্রমন

Categories

হাইতিতে জাতী সংঘের অধীনে মিশন করতে এসে আশে পাশের অনেক গুলি দেশ বেরানর ইচ্ছা প্রথম থেকেই আমার ছিলো। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে ছিলো ডমিনিকান দেশটি ঘুরে দেখার। এর প্রধান কারন হলো, এতা হিসপানিওয়ালার একটি দেশ। অনেক ছোট বেলায় পড়েছিলাম ইবনে বতুতার কথা, তারপর সেই আমেরিকা আবিষ্কারের কথা। আমেরিকা আবিষ্কার যিনি করেছিলেন যেই জাহাজতা দিয়ে তিনি এসেছিলেন, এটা নাকি এই ডমিনিকানে এখনো আছে। এই রকম আরো অনেক কাহিনী ছোট বেলায় পরেছিলাম। স্বাভাবিক কারনেই এতো কাছে এসে ডমিনিকানে যাবো না, এটা হবে একতা অন্যায় বা অপরাধ। 

যাই হোক, আমরা একতা গ্রুপ করে ফেললাম ডমিনিকানে যাওয়ার জন্য। গাড়ির পথ। হাইতির পাশাপাশি দেশ। আমাদের নিজস্ব গাড়ি আছে। ইউ এন এর গাড়ি। কোনো ভিসার দরকার নাই। ডমিনিকানের চেক পোষতে গিয়ে আমাদের জাতীসংঘের স্টাফ হিসাবে পরিচয় দিলেই আমরা ঢোকতে পারবো এতাই আমাদেরকে জানানো হয়েছিলো কন্সুলেট অফিস থেকে।

আমি, মেজর ইশতিয়াক (৯ম লং কোর্ষ), মেজর মোসাদ্দেক (১১ তম লং কোর্ষের), মেজর ফরিদ (১১তম লং কোর্ষের), মেজর ইলিয়াস (১৭ তম লং কোর্ষের) মেজর ফারুক (১০ম লং কোর্শগের) আর নেভীর একজন অফিসার মিলে আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম ডমিনিকানের উদ্দেশ্যে।

আকাবাকা পাহাড়ি সরু রাস্তা, আশেপাশে কোনো গ্রাম চোখে পড়লো না খুব একটা। মাঝে মাঝে কিছু লকের আনাগোনা দেখা গেছে আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মতো কিন্তু তারা কোথা থেকে কই যায় বা কোথায় থাকে এ ব্যাপারে খুব একটা জানা হলো না। আমরা ছুটে চলছি তো চলছিই। ক্যারিবিয়ান পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূরা এখানেই অবস্থিত যার নাম পিকো ডুয়ার্তো। সেন্ট ডমিনিকের নামানুসারেই এই দ্বীপ টির নাম হয়েছিলো। এর রাজধানির নাম সেন্ট ডমিনিগো। বর্তমানে ডমিনিকানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে আছেন লিওনেল ফার্নেন্দেজ।

প্রায় ৪ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে প্রায় সকাল ১১ তার দিকে আমরা ডমিনিকান চেক পোষ্টে পৌঁছে গেলাম। খুব একটা সুরক্ষিত বর্ডার বলে মনে হলো না। আমাদের দেশের কিছু বিডি আর সেনাদের মতো লেথাজিক কিছু সৈনিক দিয়ে ডমিনিকা বর্ডারটার চেক পোষ্ট পাহাড়া দেয়া আছে। তবে মেইন গেটে কাতা তারের বেড়ায় কোনো লোক ঢোকতে পারে না এটা ঠিক। আমরা ইউ এন এর গাড়ি গেটের সামনে থামতেই গুটি কয়েক ডমিনিকান সৈনিক আমাদের কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের আসার হেতু কি। হাইতি এবং ডমিনিকানের সাথে যে কমন শহর, তার নাম আসলে মন্ট ক্রিষ্টি। যদিও মন্ট ক্রিষ্টি ডমিনিকানেরই একটি শহর কিন্তু আমরা সেখানকার কো-বর্দার দিয়েই ডমিনিকানে ঢোকেছি।

এখানে একতা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে, হাইতিতে প্রায় ৯০% মানুষ কালো আর ডমিনিকানের প্রায় ৯০% লোক সাদা চামড়ার। পাশাপাশি দেশ কিন্তু বিস্তর তফাত। হেসিয়ান লোকগুলি অনেক অস্থির, চালাক আর ফ্রড জাতীয় কিন্তু ডমিনিকানের লোকগুলি ধীর স্থির, কো-অপারেটিভ, ভদ্র বলেই মনে হলো। গেটের সৈনিকগুলি আমাদের সবার পাস পর্ট নিয়ে চলে গেলো ভিতরে। প্রায় ৪০ মিনিট পর এসে জানালো যে, তারা আমাদের পাস্পোর্ট এখুনি ফেরত দিবে না, যখন আবার ব্যাক করবো, তখন গেট থেকে নিয়ে গেলেই হবে। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, যে, যেহেতু আমরা ইউ এন এর গাড়ি নিয়েই ভিতরে যাবো, তখন যদি কোনো প্রশাসন কিংবা আইন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা আমাদেরকে কিভাবে ডমিঙ্কানে প্রবেশ করলাম জিজ্ঞেস করে, তাহলে কি বল্বো? আমাদের কোনো সমস্যা হবে কিনা। ব্যাপারটা তারা বুঝতে পারলেন। ফলে আমাদের সাথে তাদেরই একজন একোম্পানি করবেন বলে রাজী হলেন। এতে আমাদের লাভ হলো দুটু। একজন বিনে পয়সায় গাইড পাওয়া গেলো আবার কোনো ঝামেলা হলে সেইই ব্যবস্থা নিবে।

আমরা ঢোকে গেলাম ডমিনিকানে। খুব সাজানো গুছান একতা দেশ। গরমের সিজন। দেখলাম, ছেলেমেয়েরা খুব নিরাপদেই গাছের ছায়ায় কেউ ঘুমাচ্ছে, আবার কেউ কেউ আড্ডা মারছে। সবাই খুব ভদ্র। আমাদেরকে দেখে অনেকেই এগিয়ে এলেন, হাত মিলালেন, হাসিখুসিতে অনেকে আবার ছবিও তুল্লেন/ ব্যাপারটা খুব মজার। অনেকেই ইংরেজী বলতে পারেন কিন্তু তাদের প্রধান ভাষা হচ্ছে স্প্যানিশ।

ডমিনিকানের প্রধান ধর্ম হচ্ছে রোমান ক্যাথোলিজম। এদের মুদ্রার নাম ডমিনিকান পেসো। আমাদের কাছে ডলার ছিলো, এদেশে ডলার চলে। কিন্তু কোনো কিছু কিনতে গেলে ডলার নেয় ঠিকই কিন্তু দেয় পেসো। আর এক ডলার সমান প্রায় ১৫০০ পেসোর সমান। হাইতিতে অবশ্য ওদের এক হেসিয়ান ডলারের সমান প্রায় ৫ হেসিয়ান ডলার। এদিক দিয়ে ডমিনিকান দের কারেন্সীর অবমুল্যায়ন ধরা যায়। ডমিনিকানে হেসিয়ান ডলার ও চলে। তবে বেশী আগ্রহী অয় তারা। আমরা খুব বেশী মার্কেটিং করার ইচ্ছায় এখানে আসি নাই, তাই এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথ ব্যথাও নাই।

আমরা আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখলাম। আমরা আসলে মন্টি ক্রিষ্টি শহরের মধ্যেই ছিলাম। এর বাইরে যাওয়া সম্ভব হয় নাই কারন আমরা আবার সেদিনই হাইতিতে ফিরে যেতে হবে আর আমাদের রাত থাকার অনুমতি ছিলো না। দুপুরের দিকে আমরা একতা দোকান থেকে কিছু ড্রাই ফুড খেয়েই আবার বিকাল দুইতার দিকে হাইতির উদ্দেশ্যে র ওয়ানা দিয়ে চলে এলাম হাইতিতে।

আমাদের সেই হিস্পানিওয়ালার জাহাজ দেখা হয় নাই। কিংবা আরো বড় বর যে ইতিহাস পড়েছিলাম, তার কিছুই দেখা হয় নাই। এ জীবনে আর কখনো এদেশে আসা হয় কিনা আমার জানা নাই তারপরেও ভাবলাম, ডমিনিকান এর বর্ডার টা তো ছুয়ে গেলাম।