আমার ছাদ বাগান
আমার ছোট ছাদ বাগানটা আমার একটা প্রান আর নিঃশ্বাস। অফিসে যাওয়ার আগে আর অফিস থেকে ফিরার পর যেনো আমার মন ছুটে যায় এই বাগানে যাওয়ার জন্য। এটা আমার প্রেমিকের মতো। সর্বদা মন পড়ে থাকে এর জন্য। গাছের প্রান আছে। এরা মানুষকে সত্যি ভালোবাসা দেয়। কখনো কখনো এরা অসুস্থ হয় আর সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারি। এর পাতায় রং পরিবর্তন হয়, এরা ফলন দিতে পারে না, মন মরা হয়ে থাকে, পাতাগুলিও বেশী দোলে না। আমারো মন খারাপ হয়। মাঝে মাঝে সারাদিন বাগানে থাকি কারনে অকারনে। এক অফুরন্ত শক্তি আছে এই গাছ গুলির মধ্যে।
Touch-13 Album
১৩ তম বিএমএ লং কোর্ষের সাথে আমি আর্মীতে কমিশন লাভ করেছিলাম। ভাগ্যে যা যখন লেখা থাকে, এর বাইরে কারো কোনো হাত থাকে না তাঁকে পরিবর্তন করার। এ জন্য হয়তো অনেকেই বলে থাকেন যে, ভাগ্য বা নিয়তি হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্ক্রিপ্ট রাইটার। আমার বেলাতেও হয়তো সেটাই হয়েছিলো। আমি ১২ তম লং কোর্ষে চান্স পেয়েও যেতে পারিনি। যেতে পারিনি আমার পরিবারের কারনেই। তারা রাজী ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তী কয়েক মাসের ঘটনাবলী আর পরিস্থিতির কারনে শেষ মুহুর্তে আমি নিজেই ১৩তম কোর্ষের সাথে জয়েন করার সিদ্ধান্ত নেই। তার পরের কাহিনী তো এই ডায়েরীর প্রতিটি পাতায় পাতায় আমার আর্মীর জীবনের অনুভুতি আর বাস্তবাতা লিপিবদ্ধ করেছি। সব কিছু বলা সম্ভব হয় না। কিন্তু তারপরেও ওইসব দিনের কি অনুভুতি আমার হচ্ছিলো তার একটা হয়তো স্যাম্পল পাওয়া যাবে।
আমার গ্রামের বাড়ি
গ্রাম আর শহরের মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাত যেটা সেটা হচ্ছে সমুদ্র আর নদীর মধ্যে যে তফাত সেটা। কেনো বললাম এটা? গ্রাম এমন একটা পরিবেশ যেখানে নির্ধিধায় সকালে ঘুম থেকে গ্রামের কোনো এক মেঠো পথে হারিয়ে গেলেও ভয় লাগে না, সারাদিন কারো কারো না কারো সাথে দেখা হয়ই যারা আমাদের পরিচিত মুখ। কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করবেই কেমন আছি, কোথায় যাচ্ছি, কি করছি ইত্যাদি। স্কুল, স্কুলের মাঠ, দুপুরের বৃষ্টি, সন্ধ্যার কোলাহল কিংবা গ্রাম্য কোনো এক মেলার যে মাদকতা সব যেনো একটা অন্য রকম। জীবনের সাথে মিশে থাকে সব কিছু। কোনো কিছুই ক্রিত্তিম নয়। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর মধ্যে লাফালাফি, গরু বাছুরের সাথে মানুষদের এক সাথে স্নান, মুরুব্বীদের মুরুব্বীয়ানা, মাষ্টারদের শাসন সব কিছুতেই একটা আলাদা নেশা ছিলো। এই সেই গ্রাম যেদিন ছেড়ে আসি আমি শহরে, আমি শহরের যে একটা গন্ধ পেয়েছিলাম সেটা গ্রামের গন্ধ থেকে অনেক আলাদা। শহরের এই গন্ধটা আমাকে ভীত করে তুলেছিলো প্রথম দিন। তারপরেও গ্রামের কাছে সব কিছু থাকে না বিধায় আমাকে শহরেই আসতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি যখন রাতে ঘুমাতে যেতাম, আমার চোখ ভরে আসতো আমার বাড়ির উঠোনে সেই বরই গাছ, হাইছার পিছনের সেই মেঠো পথ, স্কুলের মাঠ, বর্ষায় মেন্ডা দিলে মেকী ফুটবল বানিয়ে সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা। খুব মিস করতাম, মন খারাপ হতো। আজো খুব মিস করি আমার সেই গ্রাম, আমার সেই বাড়ি। এখন বাড়িটাতে কেউ থাকে না, অথচ গ্রামটা আমার মনের খুব গভীরে গেথে আছে। এই ছবির বাড়িটাতেই আমার কেটেছে প্রথম জীবনের একচ্ছত্র ১২ টি বছর।
আমার পরিবার
পরিবার, এমন একটা শব্দ যার জন্য প্রতিটি মানুষ তাদের সারাটা জীবন উতসর্গ করে, পরিশ্রম করে, তাদের দেখভাল, নিরাপত্তা বিধানের জন্য সর্বদা আগলে রাখে। এই পরিবার সবার কাছে প্রিয় এবং সর্বদা একটা চিন্তার বিষয়। সেরকম আমিও আমার পরিবার নিয়ে সবার মতো একই রকম ভাবে ভাবি এবং তার জন্য সর্বদা পরিশ্রম করি। আমার পরিবারের সদস্য মাত্র চারজন- আমার স্ত্রী, আমি আর আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করে, ইন্টার্নী করে এখন নতুন জবে ঢোকার চেষ্টা করছে। করোনার এই পরিস্থিতিতে যেমন সরকারী কর্ম সংস্থান ধীর গতিতে চলছে তেমনি প্রাইভেট কোম্পানীগুলিতেও। তারপরেও অনেক জায়গা থেকে আমার বড় মেয়ের জবের ব্যাপারে অফার আসলেও দেখেশুনে কোথায় ঢোকা যায় সেই স্ক্রুটিনি চলছে। আমার স্ত্রী মীরপুর সরকারী বাঙলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের হেড অফ ডিপার্টমেন্ট হিসাবে ফুল প্রোফেসর পোষ্টে আছেন। আমার ছোট মেয়ে ইতিমধ্যে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি তে ভর্তি হয়েছে। খুব শিঘ্রই সে আমেরিকায় চলে যাবে (আলহামদুলিল্লাহ)। আমার পেরেন্টাল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জীবিত আছেন তিন বোন-লায়লা, ফাতেমা আর মেহেরুন্নেসা। তাদের সবার সন্তানেরাই কোনো না কোনো জায়গায় ভালোভাবে সেটেল্ড হয়ে গেছে। কেউ জাপানে, কেউ কুয়েত আবার কেউ অন্যত্র। যারা দেশে আছে তারাও কিছু না কিছু করে সংসার ভালোভাবেই চালাতে পারছে। কাউকেই কোনো আর্থিক সাহাজ্য করতে হয় না। আমার পরিবারের বাইরেও এমন কিছু ব্যক্তিরা আছেন যারা আমার পরিবার বা পেরেন্টাল পরিবারের সদস্য না হয়েও তার থেকে বেশী সদস হিসাবে মর্যাদাশীল। তাদের মধ্যে আছে- বদর উদ্দিন তালুকদার, আমার শশুড় বাড়ি লোকেরা, এবং ব্যবসায়ীক পার্টনার মূর্তজা ভাই এর পরিবার। আমি এই সব সদস্যদেরকেই ডাইরেক্টলী বা ইনডাইরেক্টলী সদস্য হিসাবে মেনে নিয়েছি। এরা আমার জীবনে এবং আমার সাফল্যের ভাগীদার। তাদেরকে না পেলে হয়তো আমি আজ যেখানে আছি, সেটা হতোই না। আমি তাদের সবার কাছে ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। আমার এই সব সদস্যদের মধ্যে অনেকেই বেহেস্তবাসী হয়েছেন আবার কেউ কেউ এখনো জীবিত থেকে আমাকে প্রতিনিয়ত আশীর্বাদ করছেন। আমিও তাদের জন্য প্রান খুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেনো তারা আরো দীর্ঘায়ু হন।
পরিবার কি, কারা সমাজের এই ধারনার সাথে আমার নিজের ধারনার মধ্যে বিস্তর তফাত আছে। আমি যেদিন একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম যে, আমার কঠিন দিন গুলির সময় কারা বা কে পাশে দাড়িয়েছে, তারাই আসলে আমার পরিবার। অনেকেই আছেন যারা পরিবার বটে কিন্তু না আছে তাদের শক্তি বা সামর্থ্য কিংবা শক্তি সামর্থ্য থাকলেও অনেকেই সঠিক সময়ে পাশে দাড়ানোর মানসিকতা যখন থাকে না, তাদেরকে আমি আত্তীয় বলতে পারি কিন্তু পরিবার নয়। আমার বোনেরা আমার পরিবার বটে কিন্তু তারা আত্তীয় বলে আমি তাদেরকে ছোট করি না। তারা আসলেই আমার মনের ভিতরে আছে, অন্তরে আছে। ওরা অনেক অসহায়। এখন হয়তো সন্তান সন্ততী হবার কারনে কিছুটা নিরাপদ কিন্তু ওরাও জীবনে অনেক কষ্ট আর দুক্ষের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছে। এই মুহুর্তে আমি আমার নিজসস পরিবার বলতে বুঝি আমার দুই মেয়ে আর স্ত্রী। যতোদিন ওদের সন্তান সন্ততী, স্বামী না হবে, ততোদিন এই চার জনই আমার পরিবার। তবে এর মধ্যে অলিখিত বেশ কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আমি নিজের পরিবার বলেই ভাবি। কিন্তু লিষ্টে তাদের নাম যোগ করে অন্যের ঈর্ষার কারন বানাতে চাই না। এই ছবিতে আমার সেই চারজনের কিছু মিষ্টি ছবি দেখতে পাচ্ছেন।