০৮/০৮/২০২১-সন্ধ্যা ৮ টা ৩২ মিনিট

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

খুব ভালো একটা খবর পেলাম আজ। আমার বন্ধু উইং কমান্ডার মাসুদকে বলেছিলাম, যেভাবেই হোক এয়ারপোর্টের জন্য আমাকে যেনো কয়েকটা ‘পাশ’ এর বন্দোবস্ত করে দেয়। কভিডের কারনে প্যাসেঞ্জার ছাড়া অন্য কোনো দর্শ্নার্থীকে এয়ারপোর্টের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেয় না। কনিকার সাথে যাওয়ার জন্যে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ইউএস এম্বেসী সব ধরনের ভিসা (শুধু মাত্র স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া) বন্ধ রেখেছে, ফলে আমরা কনিকার সাথে যেতে পারছি না। এদিকে আবার কভিডের কারনে এয়ারপোর্টের ভিতরেও প্রবেশের সুযোগ নাই। যাক, শেষ পর্যন্ত আজকে আমার দোস্ত মাসুদ আমাকে ফোন করে জানালো যে, এভিয়েশনের সিকিউরিটি ডাইরেক্টর আরেক উইং কমান্ডার আজমকে বলা আছে সে আমাদের জন্য ‘পাশ’ এর ব্যবস্থা করবে। আজমের সাথে কথা বললাম, আজম খুব সমীহ করেই জানালো যে, আগামী ১০ তারিখের রাত ৯ টায় যেনো আমি ওকে ফোন দিয়ে একটা কন্ট্যাক্ট নাম্বার সংগ্রহ করি যে কিনা আমাদেরকে এয়ারপোর্টে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। এই মুহুর্তে এর থেকে আর ভালো খবর আমার কাছে কিছুই নাই। খুব ভালো লাগলো যে, কনিকাকে আমি আর আমার স্ত্রী (উম্মিকাসহ) এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে পারবো, ওর লাগেজ পত্রগুলি ঠিকমতো বুকিং করে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারবো। মেয়েটা আমেরিকায় চলে যাচ্ছে ৫ বছরের জন্য, পড়াশুনার খাতিরে। ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি) তে যাচ্ছে।

আমার মনে পড়ছে যে, আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগেও আমার ভর্তি হয়েছিলো কার্স্কভাইল ইউনিভার্সিটিতে যেখানে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ চেয়েছিলেন আমি আমেরিকায় গিয়ে পড়াশুনা করি। কিন্তু যে কোনো কারনে হোক, আমার আর যাওয়া হয় নাই, আমি চলে গিয়েছিলাম আর্মিতে। আমার যে আমেরিকায় যাওয়া হয় নাই এটা বল্বো না, আমি তারপরে ১৯৯৫/৯৬ সালে হাইতির জাতিসঙ্ঘ মিশন থেকে একমাসের জন্য আমেরিকায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপরে পর পর দুবার ভিসা পেয়েছিলাম মোট ৬ বছরের জন্য কিন্তু আমাকে আমেরিকা টানে নাই। আগামী ১১ তারিখে আমার ছোট মেয়ে চলে যাচ্ছে সেই সুদুর আমেরিকায়। একটু খারাপ লাগছে কিন্তু সন্তানদের সাফল্যের জন্য তাদেরকে ঘর থেকে ছেড়েই দিতে হয়, এটাই নিয়ম।

কনিকা যাতে কোনো প্রকারের আর্থিক সমস্যায় না থাকে সেজন্য আমি অগ্রিম ওর এক বছরে সমস্ত খরচ (বাড়ি ভাড়া, খাওয়া দাওয়ার খরচ, ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, হাত খরচ, যাতায়ত খরচ, ইন্স্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে দিলাম যাতে আমিও আর এই এক বছর ওকে নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। সাথে সিটি ব্যাংকের একটা এমেক্স কার্ড ও দিয়ে দিচ্ছি ২ হাজার ডলারের মতো যাতে খুবই জরুরী সময়ে সে এটা খরচ করতে পারে। আগামীকাল কনিকার কভিড-১৯ টেষ্ট করাতে হবে। ফ্লাইটে উঠার ৪৮ ঘন্টা আগে কভিড টেষ্ট করে ফ্লাইটে উঠতে হয়। পজিটিভ এলে ফ্লাই করতে পারবে না। দোয়া করছি, আল্লাহ যেনো সব কিছু সহী সালামতে এটাও ইনশাল্লাহ নেগেটিভ করে দেন।

বড় মেয়েকেও ইন্সিস্ট করছি সে যেনো কনিকার মতো দেশের বাইরে (পারলে একই ইউনিভার্সিটি, ইউএমবিসি) আমেরিকায় চলে যায়। কিন্তু কোথায় যেনো উম্মিকার একটা পিছুটান অনুভব করছি। তার শখ লন্ডনে যাওয়া। যদি তাও হয়, তাতেও আমি রাজী। ওরা ভালো থাকুক, সেটাই আমি চাই।

আমি জানি একটা সময় আসবে, আমি আসলেই একা হয়ে যাবো। এমন কি আমি মিটুলকেও ধরে রাখতে পারবো কিনা জানি না। কারন যখন দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকবে, আমার ধারনা, মিতুলও প্রায়ই দেশের বাইরে থাকবে তার মেয়েদের সাথে। যদি দুইটা আলাদা আলাদা দেশ হয়, তাতে ওর বাইরে থাকার সময়টা বেড়ে যাবে, আর যদি একই দেশে হয়, তাহলে এক ছুটিতেই দুই মেয়ের সাথে হয়তো সময়টা কাটাবে। আমি ব্যবসা করি, আমাকে দেশেই থাকতে হবে, আর আমি দেশে থাকতেই বেশী পছন্দ করি।

বাকীটা আল্লাহ জানেন।  

স্পেসাল নোটঃ 

যে মানুষগুলি ১১ আগষ্ট ২০২১ তারিখে এয়ারপোর্টের ভিতরে আমাদেরকে এন্টারটেইনমেন্ট করেছে তারা হচ্ছেন- সার্জেন্ট জুলহাস এবং সার্জেন্ট রাসেল। আমরা সবাই ঢুকতে পেরেছিলাম আর ওরাই আমার মেয়ের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিলো একেবারে প্লেন পর্যন্ত। রাসেল আর জুলহাসকে ধন্যবাদ দেয়ার মতো আমার ভাষা নাই। তাদের জন্য আমার এই পেজে ওদেরকে মনে রাখার জন্য ওদের কয়েকটা ছবি রেখে দিলাম। বড্ড ভালো লাগলো ওদের আথিথেয়তা। 

ওরা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক সহায়তা করেছে। এয়ারপোর্টের গেট থেকে শুরু করে আমার মেয়ে কনিকাকে ইমিগ্রেশন করা এবং ওর সাথে প্লেন পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার পুরু কাজটাই করেছে। আমি আমার পরিবার এবং অন্যান্য সবাই অনেক কৃতজ্ঞ। দোয়া করি ওদের জন্যেও।