Categories
সকাল বেলায় অনেকগুলি এসএমএস দেখে নিজেই খুব মনে মনে হাসছিলাম। কোন এক পল্লিগ্রামে আজ থেকে প্রায় ৫১ বছর আগে আমি আমার এক গ্রাম্য মায়ের কোল জুড়ে নাকি মানিকসোনা হয়ে জন্ম নিয়ে সবার মনে হাসি ফুটিয়েছিলাম। আমি কত জোরে কেদেছিলাম, আর কে কত জোরে হেসেছিল, সেটা আমার কস্মিনকালেও মনে নাই, কিন্তু যারা তখন অনেক অনেক খুশীতে খুশিতে আটখানা হয়ে পুরু গ্রাম, সারা বাড়ি মাতিয়ে তুলেছিলেন, তাদের অনুভুতি আজ এতো বছর পরে এসে আমার বুঝতে একটুও বাকি নাই। ওই যে বিখ্যাত মানুষ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম সাহেব বলেছিলেন, “যেদিন তোমার জন্ম হয়েছিল, সেইদিনই নাকি তোমার মা তোমার কান্নায় শুধু হেসেছিলেন”। মায়েরা সন্তানের কান্নায় কখনো হাসেন না, কিন্তু সন্তানের জন্মেরদিন সন্তানের কান্নায় নাকি মায়েরা আনন্দে হাসেন। কি অদ্ভুদ কথা। তাদেরকে আমি আমার অন্তর থেকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাই। দোয়া করি যেনো তারা স্বর্গীয় হন।
তাদের অনেকেই আজ এই মিস্টি পৃথিবীতে নাই, কিন্তু আমার সেইদিনের জন্ম নেওয়াক্ষনটিকে আমার উত্তর সুরীরা, আশে পাশের বন্ধুবান্ধবরা, আমার অনুজ, আমার সন্তান, বা সন্তান তুল্য মিস্টি মিস্টি দুষ্টু পোলাপান গুলু বড় মজা করে পালনের নিমিত্তে কেউ গোচরে, কেউ অগোচরে, কেউ এসএমএস দিয়ে, কেউ কেক নিয়ে বসে থেকে আমার অখ্যাত এইজন্মদিনটাকে এমন করে সাজিয়ে দিল যে, বড় আনন্দ হল। আনন্দ করার জন্য কোনো উপলক্ষ লাগে না, আনন্দ পাওয়ার জন্য অনেক পয়সাও খরচ করতে হয়না। কিন্তু একটা নিছক উপলক্ষ থাকলে মানুষগুলুকে কাছে পেতে সুবিধা হয়। আজ সেটাই হল।
আমি যখন বাসায় ফিরেছিলাম, তখন জন্ম তারিখটা পার হয়ে পরের দিনের তারিখ চলে এসেছিলো। কাজের চাপ ছিলো অনেক। জন্মদিন পালনের চেয়ে বাস্তব কাজের চাপে সারাদিন আর মনেই ছিলো না ব্যাপারটা। অত্যন্ত ক্লান্ত শরিরে, ঘুম ঘুম চোখে যখন রাত সারে বারোটায় বাসায় পৌঁছলাম, দরজা খুলতেই হতাত করে একগুচ্ছ মিস্টি কচিকণ্ঠে সুর বেজে উঠলো, “হ্যাপি বার্থ ডে বাবা”। আমার মেয়েরা আর মেয়ের জামাই। সারপ্রাইজ দেওয়ার চোখের মধ্যে চিক চিক করা একটা ভাব থাকে। আমি সেটাই দেখলাম এই পিচ্চিগুলির মধ্যে। মানুষ যখন একটা ধাপ পার হয়ে অন্য ধাপে বিচরন করে, তখন সেই ছোট বেলায় ঘুড্ডি, লজেন্স, চকলেট, কিংবা ফেলে দেওয়া কোনো নিছক পাথর খন্ড অথবা নিজের জন্ম দিন যা এক সময় নিজের কাছে সম্পদ মনে হত, নিজের কাছে একটা বিশাল আবেগের অনুষ্ঠান মনে হত, সেটা আর মাথায়ও থাকে না। কিন্তু সেই এক ই অনুভুতির যখন পুনরাবৃত্তি ফিরে আসে আমাদের উত্তরসুরী প্রজন্ম থেকে, তা দেখে মনে হয়, আমিও তোমাদের মতো একদিন এই রকম উচ্ছল, আবেগতাড়িত বয়স তা পার করে এসেছি। ভাবতে বড্ড ভালো লাগে। ওরা আজ তাই করলো।
আর রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার বউ, মিটমিট করা চোখে, মোনালিসার হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে বল্লো, “হ্যাপি বার্থডে মনি।” কিছুই না কিন্তু। কিন্তু মনে হলো, বাহ, কি আনন্দ, কি প্রশান্তি।
ক্লান্ত শরীর, চোখ ভর্তি ঘুম, রাত অনেক, পেটে ভীষণ ক্ষুধা, কিন্তু তারপরও মনে হলো, মন ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। এটাই আসলে “পরিবার”। “পরিবার” মানুষের জীবনে বড় একটা আশ্রয়স্থল এবং শান্তির প্রয়াশ।
এই ক্লান্ত শরীরেও ওদের আনন্দটাকে ধরে রাখতে চাইলাম। কেক কাটলাম, কেক পাঠিয়েছেন আমার মেয়ের শাশুড়ি। ব্যাপারটা দেখলে কিচ্ছু মনে হবে না, আবার ভাবলে অনেক কিছু। কোনো বড় কিছু আয়োজন নাই, অনেক মানুষের ভিড়ও নাই, মাত্র দুইমেয়ে, মেয়ের জামাই আর আমার বউ। তাতেই মনে হলো, একটা আয়োজন।
পরেরদিন শুক্রবার। জন্মদিন পেরিয়ে একদিন চলে গেছে। মনে হলো, আরো কিছু মানুষ তো আছে, যাদেরকে নিয়ে এই ছোট আনন্দটা বড় করা যায়। সোমা এসেছে শুনলাম, রাজুও এসেছে। মেয়েটা দেশের বাইরে থাকে। ও আমার মেয়ের ননদিনী আর ননদিনীর স্বামী। আমার পরিবারের একটা অংশ এবং আমার ভাল লাগার মানুষগুলুর মধ্যে একজন। খুব শীঘ্রই ওরা আবার বাইরে চলে যাবে। সুতরাং ওদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে দেখা হওয়ার সুযোগ কম। ভাবলাম, হয়ে যাক না একটা ছোট খাটো গেট টুগেদার। সেই গেট টুগেদারের অংশই হচ্ছে আজকের এই ছবিগুলুর ইতিহাস। এটা আমার জন্মদিনের পার্টি কিনা আমি জানি না, কিন্তু এটা একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার বললেই আমি অভিহিত করতে চাই। দিনটা বেশ কেটেছে।
ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে, আর ধন্যবাদ ওই দুইজন মানুষকে, (আমার বিয়াই আর বিয়াইন) যারা সবসময় আমাকে খুশীতে অনেক আনন্দিত হন। সবাইকে আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা। অনেক অনেক ভাল রাখুক আমার এই অনবদ্য, ছোট পরিবারের সব সদস্য গুলিকে। আমি তোমাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি।