সাইফুলের বাসায় আমার যাওয়ার কথা ছিলো জুম্মা নামাজ পড়ে বাসা থেকে খাওয়া দাওয়া করে বিকেল ৪ টার মধ্যে। কিন্তু আমার স্ত্রীকে আমি নিয়ে যাবো (আমিই বলেছিলাম সে গেলে হয়তো ভাবীর পার্টটা জানার জন্য আমার সহায়ক হবে) বলে সেইই বল্লো যে, আমরা বিকেল ৫ টার পর রওয়ানা দিয়ে ওখানে গিয়ে মাগরেবের নামাজ পড়ে গল্প করতে পারবো। আর যেহেতু সাইফুলের বাসায় ডিনার করবো তাই সে মোতাবেক একটু দেরী করেই রওয়ানা হয়েছিলাম। মাগরেবের পর পরই আমরা সাইফুলের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম।
সাইফুল খুবই ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। অনেক বছর পর ওর সাথে আমার আবার দেখা। সেই ক্যাডেট কলেজের পুরানো গল্প, আমি কিভাবে এক্ট্রোজেন হয়ে গেলাম সেই মজার মজার গল্প হলো। আমি আমার গল্প, আর সাইফুল সাইফুলের গল্পে সাথে ভাবীরা একেবারে দারুন একটা সন্ধ্যা কেটে গেলো আমাদের। কথার ফাক দিয়ে আমি আর সাইফুল আলাদা ওর নিজের রুমে বসে আরো কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। সেখানে আসলে ওর চিকিতসা সংক্রান্ত বিশয়েই আলাপ হলো। যেহেতু সাইফুল এখনো সিগারেট খায় (যদিও খুব অল্প নিকোটিনযুক্ত) ফলে আমার কোনো অসুবিধা হয় নাই। আমাদের ব্যাচের প্রায় সবার খোজ খবর নিলো আমার কাছ থেকে। যতটুকু আমার কাছে ছিলো, সেটা ওর সাথে শেয়ার করেছি। মিজানের কথা, বাবলার কথা, কব্বর আলীর কথা, ফরিদ, ডন, বারী, লিংকন, সাগর, মাকসুদ, জুলু, ফিরোজ, সালু, জাহেদ, জাহিদ, এভাবে একে একে মুটামুটি ক্যাডেট নাম্বার ধরে ধরে সাইফুল সবার কথা জিজ্ঞেস করলো। মাহমুদের সাথে সাইফুলের প্রায়ই কথা হয় সেটাও জানালো। খুব ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজেও সবাইকে মিস করছে বুঝতে পারলাম।
অনেক কথার মধ্যে আমার টার্গেট ছিলো সবসময় সাইফুলের সাস্থ্যগত ব্যাপারে গভীরভাবে জানা এবং সেটার ব্যাপারে ওর পরবর্তী পদক্ষেপগুলিকে পজিটিভভাবে উৎসাহ দেয়া। খুব ভালো লেগেছে যে, সাইফুল আগামী ঈদের পরে সে ইন্ডিয়া যেতে ইচ্ছুক (ইনশাল্লাহ)। আয়মানের স্কুলের সিডিউলটা জেনে হয়তো ঈদের পরে ইন্ডিয়ান এম্বেসী খুল্লেই সে ভিসার জন্য এপ্লাই করবে। আয়মানকে সাথে নিয়ে যাবে। আর যাবেন ভাবী। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আয়মান দারুন দায়িত্তশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। দেবী শেঠির কাছে সাইফুল ইনশাল্লাহ অপারেশন করাবে। আর এরজন্য সে মানসিকভাবে রাজী হয়েছে এবং প্রস্তুত হচ্ছে (আলহামদুলিল্লাহ)।
সংগত কারনেই সাইফুল মাঝে একটু বেশ মানসিকভাবে আপ্সেট ছিলো। এটা আমি হলেও হয়তো আপ্সেট থাকতাম। তাই ওকে বললাম, বন্ধুদের মাঝে থাকলে মন ভালো থাকে, সময়টা ভালো কাটে, আর এই বয়সে এসে বন্ধুরাই আসলে পরিবার। একটু ফান, একটু সিরিয়াস টক, সব কিছুই ভালো। ওকে যত দ্রুত সম্ভব এমসিসি ১৫ তে এড হতে বলেছি, সে রাজী হয়েছে। আমাদের এমসিসি ১৫ এর এডমিন কে বা কারা আমি জানি না। প্লিজ এড সাইফুল। আমিও ট্রাই করবো ওকে এড করতে। আমি সাইফুলকে সোস্যাল মিডিয়াতেও থাকতে বলেছি, কারন ফেসবুকে ওর একটা বিশাল ফেনগ্রুপ ছিলো, তারাও আমাকে অনেকবার নক করেছে সাইফুলের ব্যাপারে। তাই ওকে ফেসবুকেও আবার সাভাবিক থাকতে বলেছি। সাইফুল আবার আগের ফর্মে ব্যাক করবে ইনশাল্লাহ। সাইফুল অনেক ঝরঝরা আছে এখন মাশআল্লাহ। সাইফুল খুবই ভালো আছে এখন।
ওর সাথে সময়টা কাটাতে আমার যেমন ভালো লেগেছে, সাইফুলেরও অনেক ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজের থেকেই ওর বাসায় দাওয়াত দিয়েছে সবাইকে। যে যখন পারো, সময় করে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারো, অথবা ওকে ফোনও দিতে পারো। ওর কাছে অনেকের ফোন নাম্বার এখন নাই। তাই হোয়াটসআপে এড করলে সাইফুল আবার সবার নাম্বারগুলি পেয়ে যাবে। তবে করোনা ওর জন্য বিপদজনক। ফোনে ফোনে টাচে থাকাই এই মুহুর্তে নিরাপদ বলে আমি মনে করি।
ভাবী আমাদের জন্য চমৎকার চমৎকার রান্না করেছিলেন। আমরা সবাই একসাথে খেয়ে অনেক গল্প করেছি। ভাবীও খুব খুশী হয়েছেন। আমাদের এমসিসি বন্ধুরা ওর জন্য যে সবসময় দোয়া করছে এবং ওর ব্যাপারে জানার জন্য খোজ খবর নিচ্ছে, সে ব্যাপারে জানিয়েছি। বেশ অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিলাম। তাই আর আপডেট দিতে পারিনি।
সাইফুল, ভাবীর আর আয়মানের সাথে কয়েকটি ছবি দিলাম।
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার যাওয়া উপলক্ষ্যে নাকি সাইফুল একেবারে ক্লীন সেভ করেছিলো, তাই ওর খোচা খোচা দাড়ি নাই ছবিতে। চুলও নাকি কালো করতে চেয়েছিলো, আমি বললাম সাইফুলকে, চুল কালো না করলেও কিংবা ক্লীন সেভ না করলেও এমসিসির বন্ধুরা আজীবন ১২ আর ১৮ এর মধ্যেই আমাদের বয়স থাকবে, দারুন হাসাহাসি হয়েছিল ভাবীদের মধ্যে এটা নিয়ে, এটা একটা ফান নোট)
বন্ধুরা, তোমাদের সবার জন্য ঈদ মোবারক রইলো, সবাই ভালো থাকো ইনশাল্লাহ। Love you always.