Categories
একটা সময় ছিলো, ভাবতাম, আহা কবে বড় হবো? কবে নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশী তাইই করবো? তখন আমার বয়স হয়ত ছিলো ১০ কি ১২।
আজ আমার বয়স ৫২ পেরিয়ে গেলো, ৫৩ তে পা রাখলাম। এখন আর ওই প্রশ্নটা করি না, কবে বড় হবো? কবে আমার সব থাকবে? টাকা পয়সা, গাড়ি বাড়ী সব। ভাবতাম, কবে আমি স্বাধীনভাবে যা আমার ইচ্ছে তাইই করতে পারব? সম্ভবত আজ থেকে কয়েক দশক আগে আজকের এই দিনের কথাটাই আমি ভেবেছিলাম।
আজ সেইদিন গুলি আমি অতিবাহিত করছি। কিন্তু!
আমি কি সব আমার ইচ্ছে মতো যা খুশী তাই করতে পারছি? আমার তো এখন আমি যা চেয়েছিলাম, সবই আছে। গাড়ী আছে, বাড়ী আছে, টাকাপয়সা যা আছে তাতে অন্তত আমার ইচ্ছেগুলি পুরন করার মতো সামর্থ্যও আমার আছে। তাঁরপরেও কি আমি স্বাধীন? আমি কি ইচ্ছে করলেই কয়েকদিন উধাও হয়ে যেখানে খুসী চলে যেতে পারি? আমি কি ইচ্ছে করলেই যা মন চায় করতে পারি?
আমি আজকে আরো পরাধীন। এই পরাধী এমন নয় যে, কেউ আমাকে বেধে রেখেছে। এমন নয় যে, আমি জেলখানার চার দেয়ালের মধ্যে বন্ধী হয়ে আছি। অথচ আমি বন্ধী আমার জাগ্রত বিবেকের কাছে, আমি বন্ধী আমার নীতির কাছে, আমি বন্ধী সমাজের নিয়ম কানুনের উপরে। এইখানে যখন যা খুশী সামর্থ্য থাকলেও করা যায় না।
আমি এখন আর বয়স্ক হতে চাই না। আমার ভয় লাগে। আজ যারা আমাকে ঘিরে নৃত্য করছে, যারা আমাকে নিয়ে তোষামোদি করছে, আজ যারা আমাকে স্বপ্নের সিড়ি হিসাবে ব্যবহার করে তাদের আখের গুছাচ্ছে, একদিন হয়ত তারাই আমাকে এমন একটা পরিস্থিতির সামনে দাড় করাবে, যখন মনে হবে, আজকের দিনের এইসব মানুষগুলির চেহারা আমার কাছে কোনোদিনই পরিচিত ছিলো না। তখন সময়টাশুধু আমার, আর আমার অতীতের।
আজ যাকে আমি হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছি, আজ যারা আমার কাধে ভড় করে পাহাড়ের ওই চুড়ায় উঠতে সহযোগিতা নিচ্ছে, আমি যদি আমার বয়সের ভারে আর ওই পাহাড়ের চুড়ায় আর উঠতে না পারি, আমি যত বড় অনুপ্রেরণার ব্যক্তিত্বই হই না কেনো, আমার স্থান আমি নিশ্চিত যে, পাহাড়ের ঢালেই হবে।
তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, ওই পাহাড়ের চুড়ায় নয়, পাহাড়ের ঢালেই হোক আমার একাকিত্তের একটি ছোটনীড় যেখানে আর কেউ না থাকুক, কিছু অপরিচিত পথিক তো আশেপাশে থাকবে। হয়ত তারাই হবে আমার ওই সময়ের কিছু কথাবলার সাথী যারা ইতিহাস না জেনেই হয়ত আমাকে সঙ্গ দেবে।
সময় কাউকে ছাড় দেয় নাই এবং দেয়ও না। আর আগামিতে কখনো সে কাউকে ছাড় দিবেও না।