১০/০২/২০২১- অসহায় সিনিয়র সিটিজেন

Categories

একজন অভিভাবক, কিংবা পিতামাতা তার জীবনের সমস্ত আনন্দ, আরাম, আয়েস, শখ আহলাদ বিসর্জন দিয়ে তার সন্তান মানুষ হোক এটাই মনে প্রানে চায় এবং সে মোতাবেক তার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সব কিছুই করে। কিন্তু যখন এই সন্তান বড় হয়, যোগ্য হয়, সমাজের বড় পরিসরে উঠে আসে, গর্বে পিতামাতার বুক ফুলে উঠে ঠিকই কিন্তু সেই সন্তান অনেক সময়ই বাবা মার এই ত্যাগ, এই বিসর্জন সঠিকভাবে মুল্যায়ন করেন না। এটা সব সন্তানের বেলায় যদিও সত্য নয় তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আজকাল এটা যেনো প্রায় একটা রীতি হয়ে যাচ্ছে। এই রীতির আবর্তে পড়ে দেখা যায়, প্রায়শই সেই বৃদ্ধ বাবা মা সন্তানবিহীন একাই দূর্বিসহ জীবন যাপন করেন। তারা একাই থাকেন, কিংবা তাদের কারো কারো আশ্রয় হয়ে যায় সেই নতুন রীতির আবর্তে গড়া ব্রিদ্ধাশ্রম। যারা বৃদ্ধাশ্রমে যান, তারা হয়তো কারো পরোক্ষ যত্নে কিছুটা ভালো থাকেন, কিন্তু যারা সেই ভাগ্য নিয়েও আসেন নাই, তারা পরিপূর্ন একা জীবন যাপন করেন। কেউ তাদের অনেক সময় খোজখবরও নেন না। ফলে একাকীত্ব দূর করার লক্ষ্যে অনেক বয়ষ্ক মানুষেরা এমন কিছু মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেন যারা কষ্মিঙ্কালেও তাদের বংশের কেউ ছিলো না কিংবা তারা তাদের কেউই না। তারপরেও মরুভূমির মধ্যে শুষ্ক কোনো পাতাবিহীন গাছকেও একটা অবলম্বন মনে করে এই অসহায় মানুষগুলি জীবনের তাগিদে সেই অপরিচিত আপাত বন্ধুসুলভ মানুষগুলিকেই আপন ভাবতে থাকেন। একটা কথা ইদানিংকালের জন্য ঠিক যে, শহরের মধ্যে যতো দ্রুত মানুষ বাড়ছে, ততো দ্রুতই মানুষের মধ্যে মানুষের দূরত্ব বেড়ে চলছে। আমরা প্রায়শই জানতে পারি না যে, আমাদের পাশের বাড়িতে কি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেইসব বয়ষ্ক মানুষেরা যারা একা থাকেন তারা অপরাধীদের কাছে সহজেই শিকার হয়ে যান। আর যদি সেই অপরাধী কাছের কোনো মানুষ হয়, কিংবা কাছের মানুষের মতো মনে হয়, তাহলে বিপদ আরো বেড়ে যায়। আমাদের একাকী বয়ষ্ক মানুশেরা হয়তো তাদের হতাশা আর একাকীত্বের কারনে তারা তাদের সুখ বেদনার কথা যে কোনো অচেনা মানুষের সাথে ভাগ করে নেয়, কাউকে আপন করে নেন, এটা তাদের দোষ নয়। কিন্তু এত অন্ধবিশ্বাস মাঝে মাঝে খুবই প্রানঘাতিও হয়। ফলে দেখা যায়, সিনিয়র সিটিজেনরাই সমাজে ইদানিং সবচেয়ে বেশী অপরাধের শিকার হচ্ছেন। সমাজের এই অবক্ষয় দ্রুত বেড়ে চলছে আমাদের দেশে।

আমরা যে কথাটা প্রায়ই ভুলে যাচ্ছি যে, যে মা বাবা আমাদের জীবন তৈরী করার জন্য তারা তাদের সারাজীবন উজার করে দিয়ে, সমস্ত আনন্দ, শখ বিলিয়ে দিয়ে জীবনের এই পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছেন। সন্তানরা যখন বায়না ধরেছে, জেদ করেছে, আরএইসব মা বাবা সেটাকে পুর্ন করার জন্য দায়িত্ত হিসাবে আপ্রান চেষ্টা করেছেন, তাদের জীবন দেখভাল করা কি আমাদের সন্তানদের কর্তব্য নয়? আমরা যেনো এটা না ভুলে যাই যে, জীবনের এই অধ্যায়ে একদিন না একদিন আমাদেরকেও দাড়াতে হবে।