১০/০৩/১৯৮৬-যশোর সেনানীবাসে প্রথম আগমন

গত সপ্তাহে অনুশীলন এলাকা থেকে মেইন সেনানীবাসে আসলাম। এইই প্রথম আমি যশোর সেনানীবাস দেখলাম। বিশাল সেনানিবাস। বড্ড সুন্দর। ৪ মর্টার আর্টিলারী ইউনিট যশোর মেইন সিএমএইচ এর একদম লাগোয়া। ইউনিটের অফিসসমুহ টিনশেডের মধ্যে। ব্যারাকগুলির কয়েকটা বিল্ডিং আবার কয়েকটা টিনশেড। পাশেই ৩৬ ইস্ট বেংগল ইউনিট। ইউনিটের দুইপাশ দিয়েই গাড়ির রাস্তা আছে। একটা রাস্তা (পুর্ব দিকের) দিয়ে ২৬ ফিল্ড, গানার্স ডেন, আর্টিলারী ব্রিগেড অফিস হয়ে ২৭ ইস্ট বেঙ্গলে যাওয়া যায়। আর পশ্চিম দিকের রাস্তা দিরে ৫ লাইট এএ আর্টিলারীতে যাওয়া যায়। এই রাস্তার শেষে আরেকটি রাস্তা মিলিত হয়েছে, যেটা দিয়ে আবার পুর্বদিকের ইউনিট তথা যশোর বিমান বন্দরের দিকেও যাওয়া যায়।

ইউনিটের ক্যান্টিনটা খুব ছোট তবে আসা যাওয়ার পথে পড়ায় যখন তখন ক্যান্টিনের সুবিধাটা পাওয়া যায়। সেনানীবাসের ভিতর বেসামরীক স্টাইলে কোনো দোকান পাট যত্র তত্র পাওয়া যায় না। ফলে ইউনিটের ক্যান্টিনগুলিই একমাত্র ভরসা। আমার রেজিমেন্টেশন চলছে। আমি বিএইচএম সাইদুরের রুমের পাশে একটা সিংগেল রুমে থাকি এখন। অনুশীলন থেকে আসার পর সেই রাতে আমি বি এইচ এম সায়েদুরের রুমেই ওর পাশের বেডে ছিলাম। এই কয়দিনে আমার জন্য আলাদা একটা সিংগেল রুম দেয়া হয়েছে। অফিসার মেসে যাওয়ার এখনো আমার বৈধতা হয় নাই। এই রেজিমেন্টেশন মানে হলো, একজন সৈনিকের মতো ওদের সাথেই থাকা, খাওয়া, ওদের সাথে মেলামেশা করা, ওদের সাথে ঘুমানো, ওদের সাথে রোলকলে যাওয়া, ওদের টয়লেট ব্যবহার করা এবং ওদের সাথে ট্রেনিং করার নামই হচ্ছে ওরিয়েন্টেশন বা রেজিমেন্টেশন। এর মাধ্যমে একজন অফিসার বুঝতে পারে একটা সাধারন সৈনিকের প্রত্যাহিক জীবনধারা কি রকমের, তাদের সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে মেশার এটা একটা বড় সুযোগ।

টিএ (টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট) হাঃ বারেক এখনো আমার ট্রেনিং এর জন্য দায়িত্তপ্রাপ্ত। আর্টিলারির ট্রেনিং এ অংক খুব গুরুত্তপূর্ন। আর এই টিএরাই হচ্ছে অংকের ভালো শিক্ষক। যদিও সৈনিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশী না, কিন্তু যারা যারা যার যার ট্রেডে একটা সার্টেন স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করে। সব অফিসারগন সৈনিকদেরকে তুমি করে বলে, শুধুমাত্র জেসিও যারা, তাদেরকে অফিসারগন আপনি করে সম্বোধন করে। আমারো একই নিয়মে সৈনিকদের  তুমি করে বলার কথা কিন্তু যারা সিনিয়র হাবিলদার তাদেরকে আমি 'তুমি' করে বলতে কেমন যেনো মুখে বাধে। আবার হাঃ বারেক যেহেতু আমার সরাসরি ট্রেনিং এর শিক্ষকের মতো, তাকে আমি 'তুমি' না বলে 'বারেক সাহেব' বলেই ডাকি। হাঃ বারেকের অনুপস্থিতিতে সার্ভেয়ার হাঃ মন্ডল আমার আরেক শিক্ষক। সারাক্ষন পান খায়। মজার লোক।

আমার ব্যাটারী কমান্ডার মেজর লুতফুল হক কেমন যেনো চটাং চটাং ভাবের লোক। কাউকেই তিনি খুব একটা পাত্তা দেন বলে মনে হয় না। আমি তাকে ভয় পাই। আমাদের ইউনিটের এবং অন্য কয়েকজন (মেজর ওয়ালী, মেজর লুতফল হক, মেজর ইশহাক, সাথে আর্টিলারী ব্রিগেড মেজর আহসান উল্লা, ওসি এমপি মেজর মাকসুদ আর ২৬ ফিল্ডের উপঅধিনায়ক কেএবি মাইনুদ্দিন) যখন একসাথে হয়, মনে হয়, এরাই সব, আর কেউ কিছুই না। এইসব অফিসারদেরকে দেখলে মনে হয় ফৌজি অফিসারগন আসলেই স্মার্ট।

আমরা অনেকগুলি কোর্সমেট এই যশোর সেনানীবাসে আছি। ৪ মর্টারে আছি আমি, ২৬ ফিল্ডে আছে ২লেঃ ইকবাল, ২৭ ফিল্ডে আছে ২লেঃ আকবর, ৪ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ানে আছে ২লেঃ এমদাদুল বারী, ৩৮ ইস্ট বেঙ্গলে আছে ২লেঃ মইন, ২লেঃ শাহীন, ৫ এডিতে আছে ২ লেঃ তারক ভাওয়ালী। অন্যান্য ইউনিটেও আছে ২ লেঃ আশফাকুল বারী, ২ লেঃ সালাহ উদ্দিন। আর্মার ইউনিটে আছে ২ লেঃ রাকীব। অনেক কোর্সম্যাট। সন্ধার পর মাঝে মধ্যে কোনো কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হয় কিন্তু যেহেতু সবাই রেজিমেন্টেশনে আছি, ফলে অফিসার মেসের কোনো পার্টিতে আমাদের যাওয়ার কোনো অবকাশ নাই। 

অনেক বড় ক্যান্টনমেন্ট। এখনো পুরু ক্যান্টনমেন্ট আয়ত্তে আসে নাই কে কোথায় কিভাবে আছে।