১০/০৫/২০১৩-এ জার্নী বাই কার  

“এ জার্নি বাই কার ফ্রম মিরপুর টু পোস্তগোলা“।

তাহলে আমার জার্নি বাই কার ফ্রম মিরপুর টু পোস্তগোলা লিখে ফেলি. এই মাত্র পাসপোর্ট অফিস ক্রস করলাম, খুব একটা জ্যাম মনে হচ্ছে না। রাস্তা ফাকা ফাকা মনে হচ্ছে। রাস্তা ফাকা ফাকা দেখলে আবার মাঝে মাঝে ভয় করে, এমন ফাকা ক্যান? হরতাল মরতাল নাই তো? অথবা সামনে কোন অঘটন>?ফৌজি মানুষ তো!! বেশি ভয় পাই। সাধারন পাবলিকের একটা ভুল ধারনা আছে, সবাই ফৌজকে খুব সাহসি মনে করলেও আসলে ফৌজ কিন্তু খুব ভিতু। এই গোপন রহস্যটা জানে খালি ফৌজ নিজে আর কেউ না। যাক, এখন একটু জ্যাম দেখতে পাচ্ছি, মনে শান্তি লাগলো, কোন হরতাল মরতাল নাই মনে হয়। গুড। অন্তত হরতালের থেকে জ্যাম ভাল। আমার পাশে একটা ছোট এক্স করলা গাড়ী দারিয়ে আছে। জ্যাম সবাইকে দারাতেই হবে। ভিতরে একটা অবুঝ এক দেড় বছরের বাচ্চা। একটু একটু দারাতে পারে মনে হয়। গারির বাইরে উকি ঝুকি দিচ্ছে।খুব সুন্দর তার আচরন। মনে হয় সব কিছুতেই তার চিত্তাকর্ষণ। কিছুই বুঝে না। আর কি যে বুঝতে চাচ্ছে তাও বুঝে না। ওর মা মাঝে মাঝে কোন কারন ছারাই একটা করে চুমু দিচ্ছে। ব্যাপারটা মজার। একটু হাত নাড়বো নাকি? বাহ, ভালই তো। হেসে দিল। একখান দাতও উঠে নাই। ছোট বাচ্চাদের দন্ত বিহিন হাসি খুব মজার কিন্তু বুড়াদের দন্ত বিহিন হাসি অন্য রকম। বাহ বাচ্চাটা আমার হাত নারাতে মনে হয় একটা খেলনা পেয়ে গেল, ও কিন্তু আমারে চিনে না। কিন্তু ভাবখানা এই রকম, আমি আরও অনেক দিনের চেনা। কেন যে আমরা বাচ্চাদের মত হই না। আহারে জ্যামটা কেটে গেল। একটানে চলে এলাম  র‍্যাংস। আমি প্রাইম মিনিস্টার অফিসের সামনে দিয়ে পার হয়ে যাব কারন এই রেংসের ভিরটা অনেকক্ষন ধরে রাখে পুলিস। পুলিশ তো আর মানুষ না। ওরা বুঝে না কোনটা মানুষের গাড়ী আর কোনটা প্রাইম মিনিস্টারের গাড়ী। ওরা খালি বুঝে প্রাইম মিনিস্টারের পথ ক্লিয়ার রাখতে হবে সে যেই যাক। আমার সামনে একটা লেগুনা। প্রায় সবগুলো পুরুষ মানুষ, একজনকে দেখা যাচ্ছে মহিলা। বেচারির অনেক অসুবিধা হচ্ছে বলে আমার ধারনা, আর সব পুরুষ গুলো কিন্তু সবাই এখন মনে মনে নিজেকে রুমিও ভাবতাছে। এই মুহূর্তে কোন গারমেন্টের কর্মীকে রাস্তায় পাওয়া যাবে না। এটা তোমার ভুল।

তুমি সময় মত অফিস কর আর না কর, প্রাইম মিনিস্টার সময় মত অফিস করুক আর নাই করুক, ওরা সময় মত অফিসে যায়।পার হয়ে গেলাম সে বিখ্যাত রেংস। আমি এখন ফার্ম গেটের পুলিস ফারির সামনে। সমরেশ পুলিস আমার পাশে ডিউটি করছে ট্রাফিকের। চোখে একটা নকল রেবনের সানগ্লাস। এখন আমি আনন্দ সিনেমার বরাবর। আসতে আসতে গাড়ীর গতি থেমে গেল। সামনে অনেক হাইলাক্স, পাজেরো, নুহা গাড়ী। আমি এখন ঠিক তেজগাও সরকার বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে।ডানে একটা মিল্ক ভিটার জরুরি শিশু খাদ্য নিয়ে বিপাকে পরেছে মনে হয়। কারন ড্রাইভার ঘন ঘন বিরি ফুকছে। তার ঠিক পিছনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ী। নিশ্চয়ই চারিদিকে গন্ধ ছরাচ্ছে। আশপাশে লোক জনের নাকে ধরা দেখে মনে হয় তাই। অসুবিধা নাই, আমরা এই গন্ধে অভ্যস্ত। গন্ধের শহর ঢাকা শহর। ঢাকা শহরের অনেক বৈশিষ্ট আছে যেমন, গন্ধের শহর ঢাকা শহর, রিক্সার শহর ঢাকা শহর, জ্যামের শহর ঢাকা শহর, ইয়াবার শহর ঢাকা শহর। ১০০% স্বাধীনতার সহর ঢাকা শহর (এখানে যার যা খুশি করতে পারে, কোন আইন মানার দরকার নাই, বাম লেন বন্ধ করলে ট্রাফিক পুলিস ধরে না, উলটা পথ দিয়ে গাড়ী এলে কেউ কিছু বলে না ইত্যাদি)। ঢাকা শহরে অনেক ভবন আছে যারা এক কালে প্রাচ্যর সভ্যতার মত সভ্য কালচার গুলোর যেমন সাক্ষী আবার এই যুগে এসে আধুনিক আইন না মানা যুগেরও সাক্ষী। ভবনের ইটেরা কথা বলে না। তাই অনেক ইতিহাস আমাদের জানা হয় না। যেমন ধর, হোটেল সুপার স্টার (যার পাশে আমি এখন দারিয়ে আছি) ৫০ বছর আগে নিশ্চয়ই এখানে এই হোটেলটা ছিল না। হয়ত বা ডাহুকের পদচরন ছিল এখানে। সেই ডাহুকের হয়তা বা মৃত্যু হয়েছে আরও ৪০ বছর আগে, তার সন্তান সন্ততিরা ইচ্ছে করলেই আর তাদের দাদা নানা দেড় এই জায়গায় পুনর্মিলনের কোন সুযুগ নাই, কারন এখানে এখন কপোত কপোতীর মত জুগল মানব বসে সুপার স্টার হোটেলে সময় কাটাচ্ছে।কিংবা ধর, TK ভবন (যার পাশে এখন আমি দারিয়ে) এটা নিশ্চয়ই ১০০ বছর আগে ছিল না। অথবা আজ থেকে আরও ২০০ বছর পর এটা থাকবেও না। সময় শুধু বয়ে যায়, কি থাকবে আর কি থাকবে না, সময় শুধু বলে দেবে। সময়টা এমন এক অদ্ভুত জিনিস কোথায় যেন পরেছিলাম যে, এটা সবার সঙ্গে হাটে কিন্তু সে কারো বন্ধু নয়। সে কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তুমি তার সঙ্গে যাবে কি যাবে না, তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। সময়ের পিতার নাম সময়, মাতার নাম সময়, সন্তানের নাম ও সময়। এ এক অদ্ভুত পরিবার। তার কোন দিক জ্ঞ্যান নাই, তার কোন বংশ পরিচয় নাই, তার না আছে ক্লান্তি, না আছে অবসর, সে শুধু চলেই যায়, শুধু রেখে যায় কিছু ফুট প্রিন্ট। কেউ তার থেকে কিছু শিখে আবার কেউ এর তোয়াক্কাও করা না। যেমন এই মুহূর্তে আমি কিছু ফুট প্রিন্ট রেখে গেলাম।

আমি এহন হোটেল সোনারগাঁও। এর কত যে ইতিহাস আছে ভিতরে ভিতরে কে জানে। কত মানুষের আশা, হতাশা, সম্ভ্রম, কষ্ট, কত কিছুই না এর ভিতরে জমা হয়ে আছে কে জানে!! কারো কারো ইতিহাস এখান থেকে হয়ত রচনা হয়েছে আবার কারো কারো ইতিহাস এখানেই শেষ হয়ে গেছে। কেউ হয়ত এর পাশ দিয়ে যাবার সময় মুচকি মুচকি হাসে আবার কেউ হয়ত চোখের পানি ফেলে। কিন্তু এই ভবন যে নামেই ডাকা হোক, সাক্ষী সে রয়েই যাবে।আমি এখন প্রধান বিচাপতির বাস ভবনের সামনে । একে বাসভবন না বলে সরাইখানা বললেই যেন ভাল হত।কত বিচারপতি এখানে থেকেছেন, কত বিচারপতিগন আবার এখানে থাকবেন, তার কোন ইয়ত্তা নাই। এই সরাইখানা এমন জিনিস যখন যে আসে সবাই একে নিজের মনে করলে ও এটা তার নয়। তাকে একদিন না একদিন ছেরে যেতেই হবে। কেউ সেটিছফেক সন নিয়ে বের হয় আবার কেউ বের হয় নেক্কার জনক ভাবে। বিচার পতিদের কে নাকি আল্লাহ দুই বার বিচার করবে, আল্লাহ কি করবেন এটা অবশ্য বিচার পতিরা ভাবেন না। তারা ভাবেন, প্রাইম মিনিস্টার কি করবেন। মরার পর কি হবে এটা ভাবার জন্য এখনো কোন আইন করা হয় নাই বলেই হয়ত তারা এটা ভাবতে পারেন না।কবে যে এই আইন টা করা হবে যে মরার পর কি হবে। তাহলে মনে হয় কিছু কিছু আইন আর দরকার পরত না যেমন ঘুস খাওয়ার কারনে শাস্তি, র্যাপ করার কারনে শাস্তি, কারো হোক কেরে নেওয়ার জন্য শাস্তি ইত্যাদি। আচ্ছা আমি এই বিচারপতিদের নিয়ে কেন মন্তব্য করছি? আমি তো লিখছি ঢাকা কাহিনি তাও আবার এ জার্নি বায় কার ফ্রম মিরপুর তো পোস্তগোলা। বিচারপতিরা জানলে আবার কোর্ট অবমাননা করার কারনে আমার এই রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।যাক বিচারপতিদের আবাস স্থল পার হয়ে এসেছি ভাই, এবার আমি কাকরাইল তব্লিক অফিস। বকসির প্রিয় জায়গা।

তবলিক করে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছ নিজে নিজে। তবে শুনেছি এতে ব্যক্তিগত ভাবে উপকৃত হলেও অনেক পরিবার এতে উপকৃত হয় নাই। তারা কিভাবে চলবে, কিভাবে চলছে, এটা অনেকেই ভেবে দেখে না। কোন টা যে কার হক অনেকেই তার সঠিক মানে বুঝে না।যাক এটা আমার গবেষণার বিষয় নয় এখন। আমি চলছি ঢাকার রাস্তায়। আমি ঠিক বকসির অফিসের সামনে। কিন্তু ঘুরে আসার জন্য সাহস পাচ্ছি না । অনেক জ্যাম।

ইশা খা হোটেল। আমি তো ঢাকার রাস্তায় দোস্ত। আমি শুধু রাস্তার চারিপাশের বর্ণনা দিচ্ছি আর মাঝে মাঝে কমেন্ট করছি দোস্ত। এটা কি আঙ্গুল ঢোকানো বলে? তবে তাই হোক। রাজমনি সিনেমা হল, বাহ, বিশাল পোস্টার। “ভালবাসার তাজমহল”। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, দেখলেই ভয় লাগে। এখানে নাকি সব বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে। আচ্ছা বেওয়ারিশ লাশ কি? যার কোন পরিচয় নাই সে? এই পৃথিবীতে কে এমন আছে যার কোন পরিচয় নাই? বাপ মা নাই? ভাই বোন নাই? কে যে কেমন করে কখন বেওয়ারিশ হয়ে যায় বা কেন হয়ে যায়, আমি বুঝতে পারি না।আমি জানি আমার পরিচয় আছে, আমার বাবা ছিল , আমার মা ছিল, আমার পরিবার আছে, আচ্ছা আমি কি কখনো বেওয়ারিশ হতে পারি? হয়তবা…… কারন আমি বেওয়ারিশের সংজ্ঞা এখনো বিঝি না।আচ্ছা কেউ কি এখন ভাইবারে নাই? খালি আমি ই কথা বলে যাচ্ছি!! আমার এখন অফুরন্ত সময়।

তুমি আজ হারিয়ে গেলে আমরা তোমারে খুজব, কিন্তু তুমিও কোন একদিন বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যেতে পার,। অথচ আমরা তোমারে খুজছি। তবে বেওয়ারিশ লাশ না থাকলে অনেক অসুবিধা হত। যেমন আমার মেয়ে ডাক্তারি পড়ে, তার একটা কঙ্কাল দরকার। কে দেবে এই কঙ্কাল? বেওয়ারিশ লাশ । কে জানে হয়তবা আমারই কোন এক জেনারেসন আমার কঙ্কাল নিয়েই হয়ত পরাশুনা করবে, সে জান্তেও পারবে না, কোন একদিন আমি ওদের পরিবারের একজন ছিলাম। আমার হাড়ের কোন এক অংশই হচ্ছে সে। মানুষ কখনো মানুষ, কখনো লাশ, আবার কখনো কঙ্কাল , কি আজব না?

আমি এখন প্রেসিডেন্টের বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছি। পাশে নবনির্মিত হানিফ ফ্লাই অভার। অনেক পুলিশ পাহারায় থাকে প্রেসিডেন্ট সাহেবের জন্য। অনেক বড় জায়গা। আচ্ছা কবরের মাপ কি সবার জন্য সমান? তাহলে অনারা ওই ছোট্ট কবরে সখিনার সমান মাপের কবরে কেমন করে ঘুমাবেন? সখিনা, তোমার জন্য সুখবর আছে, তোমার কবরের মাপ আর আমাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের কবরের মাপ নাকি সমান। তখন তোমার উপর কেউও ন্যায্য কাজ করতে পারবে না। না বিচারপতিরা, না দেশের স্বাধীনতা, না সময় না কেউ। আমি এখন “দয়া গঞ্জের” মোড়।

কয়েকদিন আগে এখানে আগুন লেগেছিল, অনেকগুলো বস্তিবাসী মারা গিয়েছিল।পরেরদিন খবর হয়েছিল, “বস্তিতে আগুন লেগে ৫ বস্তিবাসি পুরে ছাই”। আমি ওদেরকে চিনি না। কিন্তু যেহেতু আমি প্রতিদিন এইখান দিয়ে যাই, কে জানে হয়তা বা আমি ওদের কোন একজনের সঙ্গে হয়তবা আমার দেখা হয়েছিল!! এই ইতিহাসটা আমার জানা নাই। কিন্তু তবু মাঝে মাঝে এই স্থানটা পার হবার সময় আমার এই কথাট প্রায়ই মনে পড়ে। হয়তবা কোন একদিন আমিও আর এই স্থানটি দিয়ে আর কখনো আসব না। আমার এই গারিটিতে অন্য একজন বসবে, আমি আর এই রাস্তার উপর দিয়ে যাব না। আমার এই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার অধিকার হারিয়ে যাবে। আমার স্থান হবে এই রাস্তার মাটির নিচে। খুব কস্টের না? আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় আমার “এ জার্নি বাই কার ফ্রম মিরপুর টু পোস্তগোলা”। নাহ বকসি ভাই, আমি শুধু আমার আজকের দিনের পার্থিব কিছু ফিলিংস এর কথা বললাম। এর মাঝে অনেক আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা আছে, অনেক অবিচারের কোথা আছে, অনেক ন্যায্য তার কোথা আছে, অনেক হতাশার কথা আছে। কিন্তু এর প্রতিটি কথার অনেক বিশ্লেষণ আছে যা আমি এই মুহূর্তে করতে চাইনি বকসি ভাই। চলে এসেছি। আমার সেই পুরানো ফ্যাক্টরিতে। এখানে আমি বড় সাহেব। আমাকে হাসতে হয় মেপে মেপে, কথা বলতে হয় অনেক ভেবে চিনতে। আমি এখানে সাধিন নই কন্তু আমাকে কেউ কমান্ড করে না।

দেখা হবে পড়ে আবার। ভাল থেক সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *