Categories
আমি একটা জার্নালে একবার একটা আরটিক্যাল লিখেছিলাম, “জেনারেশন গ্যাপ” এর উপর। আজ মনে হচ্ছে, এই জেনারেশন গ্যাপটা আমাদের অনেকদূর নিয়ে যাচ্ছে এবং খুব দ্রুত। আমি আমার সেই আরটিক্যালটার কিছু চুম্বক অংশ আজ আমাদের বন্ধু ফোরামে তুলে ধরতে চাই।
…… জেনারেশন গ্যাপটা আসলে হচ্ছে আধুনিক সময়ের ইয়াং বয়সের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমাদের ওল্ড জেনারেসনের মানুষগুলুর মধ্যে চিন্তাধারা, জীবনযাত্রা, অভ্যাস, এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যগুলি। এই জেনারেশন গ্যাপ থাকবেই, আগেও ছিল এবং এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু ভয়ংকর বিষয়টি হয়ে দাড়ায় যখন এই জেনারেশন গ্যাপটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কালচার, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, এবং সাধারন দৃষ্টিভঙ্গিটায় একটা বিস্তর জাম্প করে। তখন যেটা হয় তা হচ্ছে প্রতিনিয়ত যুবক বয়সের জেনারেসনের সাথে ওল্ড জেনারেশনের মধ্যে মিসম্যাচ, এডজাস্টম্যান্ট, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইত্যাদির সবকিছুতেই কনফ্লিক্ট করে। অতিতে এই গ্যাপটা ছিলো এবং মাঝে মাঝে যে বিস্তর জাম্প করে নাই তা কিন্তু নয়। সেই পরিস্থিতিতেও জেনারেশন গ্যাপটা কোনো না কোনোভাবে সহনীয় পর্যায়ে সামাল দেওয়া গেছে কারন তখন দুইপক্ষই একটা জায়গায় এসে এডজাস্টমেন্টের মধ্যে সহঅবস্থান করতে চেয়েছিলো এবং পেরেছিল।
এখানে আরো একটা তথ্য সহজ করে বলা ভাল যে, এই জেনারেশন গ্যাপটার মানে কি দাদাদের বয়সের সঙ্গে নাতীদের বয়সের যুগের পার্থক্য? অথবা এইটা কি ৩০ বছর সময়ের কোনো পার্থক্য? কিংবা ৫০ বা ৭০ বছরের সময়ের? আসলে তা না। এটা পিতামাতার এবং সন্তানের তাতক্ষনিক সময়ের মধ্যেও হতে পারে আবার দাদাদের বয়সের সঙ্গে নায়-নাতকুরের বয়সের ফারাকের মধ্যেও হতে পারে। এটা একটা স্পেসিফিক জেনারেশন থেকে আরেকটা স্পেসিফিক জেনারেশনের মধ্যেও হতে পারে।
যেমন উদাহরনসরুপ যদি বলি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পরে এবং রিপাবলিক অব জর্জিয়া যখন স্বাধীনতা পেলো, তখন সোভিয়েত আমলের বাবামায়ের সঙ্গে তাদের ঘরের সন্তানদের মধ্যে বিশাল একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর তফাত সৃষ্টি হলো। জর্জিয়ার উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা পুরুটাই পাশ্চাত্য ধাঁচের আদলে বদল হয়ে গেলো কিন্তু তাদেরই পিতামাতারা আগের দিনের সোভিয়েত কালচার, সভ্যতা নিয়ে ধরে থাকলো। এদের মধ্যে সময়ের পার্থক্যটা ছিলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধান। হয়ত ৫ থেকে ১০ বছরের। অথচ কিন্তু এতো অল্প সময়ের ব্যবধানের দুই জেনারেশনের মধ্যে একটা বিস্তর জেনারেশন গ্যাপের সৃষ্টি হয়ে গেলো। এবং দেখা গেলো, একই পরিবারের মধ্যেই এই ঘটনাটা ঘটে গেলো। এই দুই জেনারেশনের মধ্যে তাদের চিন্তাধারা, জীবনযাত্রার দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষাদীক্ষার লেবেল, আচরন, ভবিষ্যৎ চিন্তাধারা, আর্থসামাজিক ভাবধারা সবকিছুই আমুল পালটে গেলো। বর্তমান জেনারেশনের জীবন যাত্রায় চলে এলো মুক্তধারার স্বাধীনতার শক্তি, স্বাধীন চলাফেরা, নাইট ক্লাব, ইন্টারনেট, কম্পিউটার গ্যাম, বিনোদন, মুক্ত-রাজনীতির চর্চা এমন কি বিয়ে সাদির ব্যাপারেও আধুনিক কালের যুবকদের চিন্তাধারা অনেক পার্থক্য। তাদের চাকুরী পছন্দের বিষয়ে, চাকুরি ছাড়ার বিষয়ে, এমন কি অবসর প্লানের বিষয়ে কোনো কিছুই ঘরের পিতামাতাদের সহিত মিলছে না। অন্যদিকে পুরানো দিনের অভ্যাসে গড়া বাবা মায়েরা ধরে থাকলেন ট্র্যাডিসনাল সমাজ ব্যবস্থা। তারা বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েদের অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গেই একমত হতে পারছে না, তাদেরকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে চাইছেন না কিংবা দিতে চাইছেন না বলে বললে ভুল হবে, তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, তাদের সন্তানেরা ঠিক হ্যান্ডেল করতে পারবেন কিনা, কিংবা শেষতক আবার তাদের সন্তানেরা দিশেহারা হয়ে যায় কিনা ইত্যাদি।
এর ফলশ্রুতিতে যা হচ্ছে তা হলো বিশাল এক গ্যাপ। আর এই গ্যাপের কারনেই একই পরিবারের মধ্যে যুবক এবং মধ্যবয়সী সদস্যদের মধ্যে বিশাল গ্যাপের সৃষ্টি হচ্ছে। আর সৃষ্টি হচ্ছে ফাটল, সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ, তিক্ততা ইত্যাদি। ফলে কিছুতেই সুতা এক জায়গায় আবদ্ধ হয়ে নতুন জাল তৈরি না করে শুধু নৈরাজ্যসরুপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবারে কোনো কিছুই অভাব নাই আবার কোনো কিছুতেই ইয়াং বয়সের সদস্যদের মন টানছে না। তারা সস্থিতে নাই। তারা বিসন্ন। যাদের কাছ থেকে সহযোগিতার হাত পাওয়ার কথা তাদের সাথেই তাদের বিরোধ। যাদের কাছে তারা অসহায় মনের ভাব শেয়ার করবে, তারাই তার অসহয়ের কারন। সে কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? ফলে একই মানসিকতার বন্ধু, বান্ধবি, কিংবা তাকে বুঝতে চেস্টা করছে এমন কেউ, সেখানেই সে পায়ে পায়ে হেটে চলে যাচ্ছে তার অভাবহিন ঘর ছেড়ে, তার নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে কোনো একটা জায়গায় যেখানে সে আর কিছুই না পাক, পাচ্ছে মানসিক শান্তি। সেটা ভুল না ভালো না শুদ্ধ, তা তার জানার অপেক্ষা করছে না। আমরা বারবার বলছি পরিবারের সচেতনার কথা, বারবার বলছি কিছু একটা করা দরকার, বারবার বলছি সরকার কেনো দেখছে না, বারবার বলছি কেনো এই রকম এয়াবনরমাল অবক্ষয় হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটার ভিতরে কেউ প্রবেশ করছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সমস্যাটা আসলে কোনো রাজনৈতিক কিংবা পার্শ্ববর্তি দেশ, কিংবা কোনো একটা বিশেষ মতবাদের উপর দোষ চাপিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। কিংবা চাপিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না যতক্ষন না পর্যন্ত এই সুক্ষ কিন্তু বিস্তর গ্যাপটা সমাধান হচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে এই জেনারেশন গ্যাপটাই এখন আমাদের অত্যান্ত বুদ্ধিমানের সহিত হ্যান্ডেল করে পরিস্থতি আয়ত্তে আনা সম্ভব। এখন কথা হচ্ছে কি কারনে এই জেনারেশন গ্যাপটা হচ্ছে আর কিভাবে এই দুই জেনারেশনের গ্যাপ কমিয়ে এনে সার্বজনীন মতাদর্শ, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ, ইত্যাদি একটা প্লাটফর্মে আনা যায় তার হিসাব করা। বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা আসলে আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে যার যার আওতায় বাধতে হবে। কিছু পরিবারের পক্ষে, কিছু সরকারের, কিছু সমাজের কিছু আমাদের চারিপাশের জনগনের। কেউ দায়িত্ব এরাইয়া যাওয়ার কোনো স্কোপ নাই। (চলবে…)