Categories
অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। মনটার চেয়ে শরীরটা আরো বেশি খারাপ বলে মনে হচ্ছে। অধিক পরিশ্রমের চেয়ে মানসিক টেনসনের কারনেই শরীরটা বেশি খারাপ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সারাদিনই ক্ষুধা থাকে, কিন্তু ভালো খেতে পারছিনা, সিগারেট খাওয়ার পরিমানটা অনেক অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
জীবনের এতোগুলো বছর চারি পার্শের সমস্ত কুরুক্ষেত্র জয় করে যখন একটা জায়গায় স্থির হয়েছি, ঠিক সেই সময়ে ইদানিং মাঝে মাঝে কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে এমন কোনো জায়গায় হারিয়ে যাই, যেখানে আমাকে কেউ চিনবেনা, আমিকে, কোথা থেকে এসেছি, কেউ জানবে না আমার আসল পরিচয় কি। আমিও আমার আগের সব স্মৃতি, পজিসন, জীবনধারা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সব ভুলে গিয়ে কোথাও একদম একা একা বাকি সময়টা কাটিয়ে দেই। না থাকুক আমার চাকুরি কিংবা ব্যবসা, না থাকুক আমার এসিরুম, না থাকুক আমার বসগিরি, কি যায় আসে? হয়ত কারো বাসায় দিন মজুর হিসাবে খেটে দেওয়ার বদলে তিনবেলা খাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলেই হলো। অন্তত রাতে মানসিক যন্ত্রনা ছাড়া ঘুমাতে পারবো। নাহোক সেটা কোন খাট অথবা তোষকেমোড়ানরম বিছানা। হোক না সেটা পরিত্যক্ত কোনো গ্যারেজের অংশ। হয়ত মনিব জান্তেই পারবেনা, কি মানুষটি কি অবস্থায় কি কারনে কেনো এইভাবে দিনযাপনে জীবনটাকে বেছে নিয়েছেন। কোন দুঃখ নাই। কারন, কোনো দায়িত্ব নাই মনে করে আমি পরেরদিনের শুধু আকাশটাতো নিরিবিলিতে বিকালের কোন এক মেঘলা দিনে দেখতে পারবো। তৃতীয় নদীর ধারে বসে আমি অন্তত “নদীর তৃতীয় তীরের” ওপারের নীলদিগন্ত তো দেখতে পাবো। আমার কোনো কিছুই মনে পড়বেনা যে, কেউ আমার জন্য বসে আছে, কেউ আমাকে মিস করছে ইত্যাদি। এই ভাবনা থেকে আমি যখন অনেক দূরে বসে কচিকচি পাতার শিশির বিন্দুর ছোঁয়ায় পায়ের পাতা ভিজিয়ে দেবো, কিংবা উত্তরের হাওয়ায় ভেসে আসা ছাই রঙের মেঘ যখন আমার মুখাবয়ব ভিজিয়ে দিয়ে যাবে, আমার অতিতের কথা মনে করে গড়ে পড়া চোখের পাতার জল আর কারো চোখে পড়বে না। আমার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আমার কাছে মানুষের চাহিদা, আর ঐ চাহিদাপুরনে আমার ব্যর্থতার জল আমাকেও আর পীরা দিবেনা যে, কেনো আমি এতোকিছুর পরে হেরে গেলাম। মানুষ নিজের কারনেই শুধু হেরে যায় না, মাঝে মাঝে নিজের সামর্থ্য থাকাসত্তেও মানুষ হেরে যায়। আর তার এই হেরে যাওয়া যখন শুরু হয়, তখন নিজের চোখের সামনে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। এই অসহায়ত্ব একটা শাস্তি। নিজের কাছে নিজের শাস্তি। ছায়ার মতো সারাক্ষন লেগে থাকে। যার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া বড় কঠিন।
ইচ্ছে ছিলো, অনেক বড় হবো, ইচ্ছে ছিলো আমার চারপাশের আপনজনদেরকে নিয়ে হৈ হুল্লুর করে নেচে গেয়ে শ্রাবনের বৃষ্টিতে কাক ভেজায় ভিজবো, ইচ্ছে ছিলো শীতের কোন এক সকালে দল বেধে পিঠে ব্যাগ নিয়ে কোন এক পাহাড়ের চুড়ায় বসে প্রাকৃতিক বনজংগলে বসে গরম গরম পিঠা খাবো। এতা একটা স্বপ্ন। কিন্তু এই সপ্নটা একা সপ্ন দেখলেই হবেনা। এই সব সপ্ন দলবদ্ধ সপ্ন। এই সব স্বপ্ন একে অপরের সাথে একটা চেইনের মতোবাধা। কোথাও ছিড়ে গেলে এর আর কোনো বাস্তবায়ন থাকেনা। পুরুটাই শিশিরবিন্দুর মতো উবে যায়। তখন আর বুঝা যায় না এইখানে কোনো একজলের বিন্দু থেকে কখনো শিসির জমে ছিলো কিনা।
জীবনটা এতো ছোট যে, এক জিবনে মানুষ তার কোনো কিছুই শেষ করতে পারে না। কিন্তু মানুষ যখন হেরে যায়, তখন সে আরেকটি জীবনের জন্য আশা করেনা। উত্থানের থেকে পতনের গতি সবসময় বেশি। ফলে জীবনের অধিকাংশ সময় ধরে যখন কেউ শুধু উত্থানের দিকে যেতে থাকে, পতনের সময় তার তখন কোন কিছুতেই ভারসাম্য থাকে না। একদিকে ভারসাম্য রক্ষায় চেষ্টা তো, আরেক দিকে ভারসাম্য হারিয়ে যায়। ওইদিকে নজর দিলে, অন্যদিকে আবার ভারসাম্য হারিয়ে যায়। আর এভাবেই দ্রুত ভারসাম্য হারাতে হারাতে হটাত নিজেকে খাদের অনেক নীচে দাঁড়িয়ে আছি বলেই আবিস্কার করে। তখন আশেপাশে যারা থাকে, তারা হয় সবাই অচেনা, নয় প্রানিকুলের কেউনা। নিজের আপনজনদেরকেও তখন বড় অপরিচিত বলে মনে হয়। উত্থানের ভারসাম্য আর পতনের ভারসাম্য একনয়। তাদের মিলিত বিন্দু একজায়গায় নয়। তাদের ভারসাম্যের কেন্দবিন্দুও একনয়। উত্থানের কেন্দ্রবিন্দু যদি হয় আকাশের চুরায়, পতনের কেন্দ্রবিন্দু হয় পাতালের নীচে।