প্রথমদিকে যেভাবে পুরু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো এবং পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, রিফুজি একোমোডেশন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে সাহাজ্য করেছিলো, সেটা অনেকাংশেই এখন ভাটা পড়েছে। যে কোনো টেনশন কিংবা এখানে যুদ্ধ নামক উত্তেজনাটা যদি ধরি, দেখা যাবে যে, প্রতিটি দেশ এখন তাদের নিজস্ব সার্থ নিয়ে ভাবছে। এটা কোনো দোষের না। লম্বা সময় ধরে কেউ নিজের দেশের সার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে অন্যকে এমনভাবে সহায়তা করে না যেখানে নিজেরাই নিঃস্ব হবার মতো অবস্থা। ফলে ইউরোপিয়ান দেশসমুহের একে অপরের মধ্যে সহায়তা না দেয়ার মনোভাবে একটা টক্কর লাগছে। উদাহরন-বুলগেরিয়া। সেতো সরাসরি বলেছে যে, তার রিজার্ভ নষ্ট হয়, ঝুকির মধ্যে পড়ে এমন সহায়তা সে কখনোই করবে না কারন যুদ্ধটা তার নয়, যুদ্ধটা ইউক্রেনের। ব্রাজিল বলেছে-১২০০ মেইল দূরের কোনো যুদ্ধ তাদেরকে কেনো প্রভাবিত করবে? প্রয়োজন নাই।
ঠিক এভাবেই যত সময় পার হচ্ছে- বিভিন্ন ইউরোপিয়ান এবং পশ্চিমা দেশের জনগনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধটা এখন যেনো গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। যেই ন্যাটোর স্বপ্ন ইউক্রেন দেখে আসছে ২০০৮ সাল থেকে, সেই ন্যাটোই এখন খোলাখুলি বলছে যে, যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হয়, আর যদি ইউক্রেন সভ্রেন কান্ট্রি হিসাবে এক্সিষ্ট করে, তাহলেই প্রয়োজনীয় রিফর্মের পরে ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য করবে। এর আগে নয়।
প্রশ্ন এখানে ৩ টা (ক) যুদ্ধ শেষ হতে হবে (খ) যুদ্ধ শেষে যদি ইউক্রেন দেশ হিসাবে আদৌ টিকে থাকে (৩) অতঃপর ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড মোতাবেক ইউক্রেনকে কোয়ালিফাই করতে হবে। তিনটা অপশনই ইউক্রেনের জন্য যথেষ্ট কঠিন।
আমি রাশিয়া বা পুতিন প্রেমিক নই। কিন্তু একক দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশী (আমেরিকার থেকেও বেশী) নিউক্লিয়ার ধারী রাশিয়া যার রিসোর্সের কোনো কমতি নাই, (গ্যাস তেল, খাদ্য সামগ্রী, লোহা, গোল্ড, সার ইত্যাদি), সেই রাশিয়া এই যুদ্ধকে রীতিমত টেনে লম্বা করা কোনো ব্যাপারই না। তারমানে হচ্ছে- যুদ্ধটা এখনি শেষ হচ্ছে না। যুদ্ধটা যদি লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে ইউক্রেনকে সহায়তাকারী দেশ সমুহের মধ্যে একটা ফেটিগ চলে আসবে। আর এই ফেটিগ থেকে ধীরে ধীরে যুদ্ধটাকে জনগন একটা বোঝা মনে করবে তেমনি সাহাজ্যের পরিমানও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, কমছেও। আর তাদের সাহাজ্যে ভাটা পড়া মানেই ইউক্রেন আরো বিপদে পড়ার সম্ভাবনা। যুদ্ধটা না চালিয়ে নিতে পারবে, না হারানো টেরিটরী পুনরুদ্ধার করতে পারেবে, না নেগোশিয়েশনে বসতে পারবে।
২য় প্রশ্নে আসি। এই মুহুর্তে ন্যাটোতে ইউক্রেনকে সদস্য পদ দিবেই না। কারন সদস্য পদ দেয়া মানেই ন্যাটোর আর্টিক্যাল-৫ অনুযায়ী রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। এটা কোনো পাগলেও এলাউ করবে না। ফলে ন্যাটর এই প্রক্সী ওয়ারে ন্যাটোর তথা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশ সমুহের সব যুদ্ধাস্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে তারাও সার্বিক ঝুকির মধ্যে পড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন একটা ফাদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুরু ইউরোপ বনাম ন্যাটো বনাম পশ্চিমাদের কাছে। না সরাসরি যুক্ত হতে পারছে, না ছেড়েও দিতে পারছে। যদি এমনই পরিস্থিতি চলতে থাকে যেখানে ন্যাট কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ সমুহ অথবা পশ্চিমারা পর্যাপ্ত মিলিটারী, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারে, তখন রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনকে এমন একটা রাষ্ট্রে পরিনত করতে সুযোগ পাবে যে, ইউক্রেনের স্বাধীন সার্বোভউম মর্যাদা রাষ্ট্র হিসাবে থাকবে কিনা সেটাই সন্দেহ। আর এটাই ন্যাটোর মহাসচীব তার শেষ বক্তব্যে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। ন্যাটোর মহাসচীব স্টলটেন্ট গলা ফাটিয়ে সবাইকে এখন যে যা পারে, সাহাজ্য করতে বলেই যাচ্ছে কিন্তু সেই উচ্চস্বরের চিতকারের সমানুপাতিক সাহাজ্য এখন কোনো দেশই করছে না। শুধু আশ্বাস, শুধু কথা, শুধু স্বপ্ন দেখিয়ে দেখিয়ে কতদিন? তারপর?
তার আর পর নাই।
কিন্তু ইউক্রেনের দোষ কোথায়? ইউক্রেন যদি আসলেই ইউরোপের নিরাপত্তার দরজা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কেনো ২০০৮ সালেই ন্যাটোতে নেয়া হলো না? যদি তাকে ২০০৮ সালে ন্যাটোতে সদস্যপদ করা হতো, রাশিয়া কোনোদিনই ইউক্রেনকে আক্রমন করার সাহস পেতো না। অথচ এখন তারা তাকে ফুসললিয়ে ফুসলিয়ে এমন একটা মরনপন যুদ্ধে জড়িয়ে ফেল্লো যে, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ পুরুই অন্ধকারের মতো। ইউক্রেনের সাধারন মানুষগুলির কি অপরাধ ছিলো? তারা তো ভালোই ছিলো। এখন তারা বিভিন্ন দেশে রিফুজি, কেউ কেউ ধর্ষিতা, অনেকেই এতিম, আবার অনেকেই জানে না তাদের প্রিয়জন কোথায়।
যুগে যুগে কিছু নেতা আসে, যারা নেতার ভূমিকায় জনগনের কল্যানে না এসে জনগনকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে নিজেরা পালিয়ে যায়। সাফার করে আমজনতা।
এসব জেলেনেস্কী, হিটলার, নীরু, মুসুলিনিরা এক সময় চলেই যায়, কিন্তু সাফার করে বংশ পরম্পরায় সেই সব নীরিহ মানুষ গুলি যারা রক্ত দেয়, যারা পরিবার হারায়, কিংবা যাদের সুন্দর ভবিষ্যত দেখার আর কোনো সুযোগ থাকে না।
একটা সবচেয়ে খারাপ শান্তি চুক্তিও একটা যুদ্ধের চেয়ে ভালো। যেদিন জেলেনেস্কী বুঝবে, সব শেষ হয়ে যাচ্ছে- হয় সেদিন সে গায়েব হয়ে যাবে, নতুবা কোনো এক নিরাপদ আশ্রয়ে জীবন জাপন করবে, অথবা এই দুনিয়াই তাকে ছাড়তে হবে। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলো না।
তাই যুদ্ধটা বন্ধ হোক, আর এখুনী।