১১/০৮/১৯৮৭-ক্লার্ক এডজুটেন্ট

এই কয়মাস ইউনিট স্থানান্তরীত হলো মীরপুর থেকে সাভার সেনানীবাসে। কি যে একটা ঝামেলা হয় এই ইউনিট ট্রাস্ফারের সময়। সব কিছুই তো নিতে হয়। তারমধ্যে আমি কোয়ার্টার মাষ্টার। এতো সৈনিক, এতো অফিসার, এতো সরঞ্জামাদি। সাভার সেনানীবাসে রাখার মতো জায়গাও নাই। শুনেছি যে, আমরা নাকি ব্রিগেডের অনেক কিছুই ঠিকমতো পালন করতে পারছি না আবার আমরা দূরে থাকায় আমাদের অনেক কর্মকান্ড নাকি ব্রিগেডের অফিসাররা ঠিক মতো মনিটর করতে পারেন না, তাই যতো অপ্রতুলই হোক, আমাদেরকে সাভার ৯ আর্টিলারী ব্রিগেডের কাছে নিতে হবে, তাই সাভার সাপোর্ট ব্যাটালিয়ানের কিছু বিল্ডিং এর অংশ আমাদের সৈনিকেরা থাকবে আর একেবারে সর্বশেষ বিল্ডিং এ আমাদের অফিস করা হবে। তাই হলো। আজ কয়েকদিন যাবত অমানষিক পরিশ্রম হচ্ছে। দিনরাত সমানে। ইউনিটেই খাই, ইউনিটেই ঘুমাই।

এর মধ্যে নতুন অফিসার এসেছে ২ লেঃ শেখ মুনিরুজ্জামান। মেহেরপুর বাড়ি। রেজিমেন্টেশন চলছে ওর। কমান্ডার কর্নেল মুনসুর ইউনিট ভিজিটে আসবেন। সে মোতাবেক যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কমান্ডারের ভিজিটের জন্য ইউনিট রেডি করতে হবে। এই যে ভি আই পি দের দ্বারা ভিজিট, এটা একটা ভোকাস মনে হয় আমার কাছে। তিনি যখন আসেন, তিনি দেখেন, আহা, ইউনিট কি সুন্দর, ঝকঝকে তকতকে। সবাই যেন ঈদের মতো নতুন জামা কাপড় পড়ে সেজেগ্যজে থাকেন, কমান্ডার বা ভি আই পি এসে কতো সুন্দর বলে যান, আবার এতো সুন্দরের পরেও তার মন জয় হয় না, হাজার হাজার পয়েন্ট দিয়ে যান। ভাবখানা এই রকম যেনো, উনি মোঘল বংশের লোক। তার স্ট্যান্ডার্ড আরো বড়। যেই তিনি চলে গেলেন, আবার ফকিরা বানুর চেহারা। এর কোনো মানে হয়? অতচ এটা কমান্ডার নিজেও জানেন। তাহলে এই রকম লুকুচুরী কেনো?

আমাদের ইউনিটে হেড ক্লার্ক হিসাবে এসেছে ৪ মর্টারের হাবিলদার ক্লার্ক (জেসিও হওয়ার পর) মজিদ। আমার সাথে ৪ মর্টারে কাজ করেছে। অনেক কথা বলে অধিনায়কের ব্যাপারে কিন্তু শুধু আমাকে বলে। আমি তাকে সাবধান করে দেই কিন্তু তার উপদেশ দেওয়া বন্ধ হয় না।

অধিনায়ক সাহেব এখন আমাদের সব অফিসারের উপর ১০০% ক্ষেপা। একরাতে তিনি মিটিং ডেকে বললেন, যেহেতু আমি যে কোন কাজের ফিডব্যাক চাইলেই দেখি তোমরা হেডক্লার্ক, ব্যারাক এনসিও কিংবা অন্য কোনো স্টাফদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই আমাকে জানাও, তাই ইউনিটের এডজুটেন্ট আর কোয়ার্টার মাষ্টার হিসাবে দায়িত্তো পালন করবে হেড ক্লার্ক্সগন। জি ব্রাঞ্চের হেড ক্লার্ক এডজুটেন্ট, আর কিউ ব্রাঞ্চের হেড ক্লার্ক কোয়ার্টার মাষ্টার। মাই গড। তাইই হলো। আমরাও অধিনায়কের কথা মেনে নিলাম। সকালে প্যারেড স্ট্যাট দিতে হবে মজিদ সাহেবকে যেহেতু মজিদ সাহেব জি ব্রাঞ্চের হেড ক্লার্ক। আমরা বা এডজুটেন্টরা আর এই কাজে সামিল নই। ঘটনাটা কয়েক মূহুর্তের মধ্যে সারা ডিভিশনে ছড়িয়ে একটা মুখ রোচক কাহিনীতে পরিনত হলো। মেসে আমরা কারো সামনে মুখ দেখাতে পারি না। আমরা যাই বলি না কেনো, এটা আসলে একটা ব্রেকিং নিউজ ছাড়া আর কিছুই না।

যদিও হেড ক্লার্ক গন ইউনিটের এডজুটেন্ট আর কোয়ার্টার মাষ্টারের দায়িত্ত পালন করছেন কিন্তু তাদের নামে সামরীক নিয়মে কখনো কোরো বা 'আদেশ' করা যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে এটা নিয়ে একটা কানাগুঞ্জন চলছে কেনো দায়িত্ত পালন করে কিন্তু তার বিনিময়ে তারা স্টাফ পে পাবে না? অধিনায়ক আসলে সামরিক নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই এই কাজটি করেছেন যেটা আইনত একটা অপরাধ। কিন্তু অধিনায়ক তারপরেও কোনো তোয়াক্কা নাই। কমান্ডার ফেডআপ, বিএম মেজর সাকিল আর ডিকিউ মেজর বদ্রোজ্জাও ব্যাপারটা নিয়ে খুব বিব্রত। কোনো রিপোর্ট চাইতে গেলে তাদেরকে সাধারনত ইউনিটের এডজুটেন্ট অফিসার আর ইউনিটের কোয়ার্টার মাষ্টার অফিসারদের কাছেই চাইতে হয়। কিন্তু আমাদের ইউনিটে দুইজনই হচ্ছে জেসিও। তাদের না আছে ফোন না আছে সরকারী প্রোটকল। কি এক পরিস্থিতি করে রেখেছে অধিনায়ক আমাদের ইউনিটের।

পাশেই ১৫ ফিল্ড আর্টিলারী, অত্যান্ত সুন্দরভাবে চলছে ইউনিট। ১৫ ফিল্ডের উপ অধিনায়ক মেজর মজিদের সাথে মাঝে মাঝে আমার কথা হয়। ইউনিটে আসার সময় তিনি হোন্ডায় আসেন, আমাকে মাঝে মাঝে লিফট দেন। সেই সুবাদে অনেক কথা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *