লিথুনিয়ার ভেলনিয়াসে ন্যাটোর সর্ববৃহৎ সম্মেলন শেষ হয়ে গেলো। এই সম্মেলনে ইউক্রেন চেয়েছিলো তাদেরকে যেনো একটা টাইমফ্রেম দেয়া হয় কবে নাগাদ তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু সম্মেলনের প্রথম দিনে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারটার অফিশিয়াল ডকুমেন্ট যখন প্রকাশিত হয় তখন রাগে ক্ষোভে জেলেনেস্কী তার যাত্রার প্রাক্বালে টুইট করেছিলেন- “We value our allies, Ukraine also deserves respect. It’s unprecedented and absurd when time frame is not set, neither for the invitation nor for Ukraine’s membership. Uncertainty is weakness. And I will openly discuss this at the summit.”
আমার কাছে এটা মনে হয়েছে জেলেনেস্কীর রাগ এবং ক্ষোভ দুটুই ঠিক। কিন্তু তার এই রাগ কার উপরে? ক্ষোভটা কার উপরে? প্রশ্নটা সেখানে। আর এর উত্তরগুলি এসেছে স্বয়ং ন্যাটোতে যোগদানরত আমেরিকান ডেলিগেশনের রান্ড পল থেকে এভাবে-
“Audacious. There’s an old English adage he might need to become aware of: Never look a gift horse in the mouth, we’ve given them $100 billion and he has the audacity to be so brazen as to tell us we’d better speed it up? I’d say that’s audacious. I’d say it’s brazen, and that's not very grateful for the $100 billion that we’ve given him so far. As long as we continue to supply unlimited arms to Zelensky, I think he sees no reason to have any negotiations. So I think we’re putting off negotiations, but ultimately, the losers are the Ukrainian people.”
ঠিকই তো। যুদ্ধটা তো ইউক্রেনের। এটা না ন্যাটোর, না ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের, না আমেরিকার। যুদ্ধটা তো রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের। অন্যের প্রোরোচনায় আর শক্তিতে কেনো একটা দেশ যুদ্ধের মতো সংঘাতে জড়াবে যেখানে পুরুটাই অন্যের বাহুর শক্তির উপর নির্ভরশীল? নেতা কেনো এই সিম্পল ইকুয়েশনটা মাথায় নিলো না?
কি প্রয়োজন ছিলো প্রতিবেশীর সাথে তাও আবার এমন প্রতিবেশী যাকে তারা সকাল হলেই দেখা হয়, একে অপরের ভাষা বুঝে, কালচার এক, ব্লাডও এক, এমন প্রতিবেশীর সাথে শত্রুতা করে এবং প্রতিবেশীর শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব বজায় রেখে কি কখনো সুখে থাকা যায়? কোনোভাবেই উচিত হয়নি।
যাক সে কথা, অবশেষে ভিলনিয়াস সম্মেলনে ইউক্রেনকে কোনঠাসা করে বিবৃতি দেয়া হলো-ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে হলে এলায়েন্সের সবার গ্রহণযোগ্যতা লাগবে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর স্টান্ডার্ডে আসতে হবে এবং রাশিয়ার সাথে প্রয়োজনে নেগোশিয়েশন করতে হবে, নতুবা নয়। তবে ইউক্রেনকে অস্ত্র এবং সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু সেটা কতটুকু?
কি দরকার ছিলো এসবের? তারা কি এতোই রাশিয়ার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলো? নাকি ওরাই রাশিয়ান ভাষাভাষী মানুষগুলিকে ইথিনিক ক্লিঞ্জিং এর মাধ্যমে নিঃশেষ করার পায়তারা করছিলো? সেই ক্রিমিয়া, ডনবাস, খেরসন, এরা তো ইউক্রেনের মধ্যেই বসবাস করতো। তারা তো ইউক্রেনের নাগরিকই ছিলো। তাদেরকে নিয়ে কি একসাথে থাকা যেতো না? এখন তাহলে কি দাড়ালো? সেই ডনবাস, সেই জেপোরিজিয়া, সেই মারিউপোল, সেই খেরশন ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেলো। ইউক্রেনের নিজের ঘরের ভিতরেই অথবা চৌকাঠের সীমানায় বিভীষণদের বসবাস। ন্যাটোতে গেলেও তো ইউক্রেনের ঠিক পাশেই এসব অঞ্চলের মানুষগুলির বসবাস চলমান থাকবে। প্রতিবেশী হিসাবে, ঘ্রিনা আর ক্ষোভ নিয়ে।
ভিলনিয়াসের ডিক্লেয়ারেশনের মাধ্যমে আমার কেবলই মনে হচ্ছে-ইউক্রেন এখন প্রায় একা হয়ে গেলো। যুদ্ধ চলবে যুদ্ধের মতো, অস্ত্র আসবে ব্যবসায়িক লাভের জন্য, মাঝখান দিয়ে নীরিহ জনগনগুলির দূর্ভোগের আর সীমা রইলো না। একটা ভুল সাইডে দাঁড়িয়ে জেলেনেস্কী তার দেশের মানুষের কাছে আজীবন ঘৃণার পাত্র হয়ে রইবে, রাশিয়া কখনোই আর ইউক্রেনকে বিশ্বাস করবে না, পশ্চিমারা যখন কাউকে আর দরকার নাই মনে করে তাকে একাই ছেড়ে দেয়। এই শিক্ষাটা কেউ নেয় না। ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, কাতার, ইউগোস্লাভ, সিরিয়া কিংবা অন্য দেশের লেসন থেকেও কেউ শিক্ষা নিলো না।
ইতিহাস কখনোই কারো ইতিহাস মুছে ফেলে না। রাশিয়ার এই আগ্রাসন, জেলেনেস্কীর এই ভুল সাইডঃ নির্ধারন, পশ্চিমাদের এই রকম আচরন বংশ পরম্পরায় মানুষ ইতিহাস থেকে জানতেই থাকবে যেমন মানুষ এখনো ২য় মহাযুদ্ধের কথা, আনা ফ্রাংকের ডায়েরীর কথা, নরম্যান্ডি ল্যান্ডের কথা, হিটলারের নির্বুদ্ধিতার কথা, কিংবা মুসুলিনি এদের সবার কথা আজো আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষনা করি এবং জানি কত হিংস্র সময় কাটিয়েছে সেই দিনের মানুষগুলি।
শান্তির কোনো বিকল্প নাই। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। স্রষ্টা কোনো দেশকেই নিজ থেকে বাউন্ডারী ভাগ করে দেয় নি। না রিসোর্স কাউকে তিনি একাই সব দিয়েছেন কাউকে।