১২/০৮/২০২৩-মিটুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পোষ্টিং

আমার গিন্নী সরকারি বাঙলা কলেজ, মীরপুরে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কর্মরত। গিন্নীরা চাকুরী করলে স্বামীদের কি হাল হয় সেটা যারা আমার মতো চাকুরীজীবি গিন্নীর স্বামী তারা বুঝতে পারবেন। মাঝে মাঝেই ব্যাচলর মনে হয় কারন ছুটির দিনের দুপুরের খাবারের সময়েও গিন্নীর কর্মস্থলের জরুরী কাজ নিয়ে তিনি মহাব্যস্ত থাকেন। একাই তখন খেতে হয়। আলসেমী করে সকালে একটু ঘুম থেকে দেরী করে উঠলে দেখবেন, গিন্নী নাই, অফিসে চলে গেছেন। আবার আমি অফিস থেকে একটু আগে এলেও দেখি গিন্নী তখনো কলেজের কাজেই ব্যস্ত। উপায় নাই। দেশের কল্যান বলে কথা। স্বামীর কল্যানের জন্য তো আর দেশের অমঙ্গল করা যাবেনা।

এরমধ্যে গিন্নী আবার বিভাগীয় প্রধানের কাজের বাইরে পর পর দুইবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক। কলিগরাও বে রশিক। স্বামীর কথা একবারো ভাবেন না। এতো ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করাবেন তো স্বামীর কি হাল হয় সেটা কি একবারো ভাববে না? যাই হোক, পর পর দুইবারই তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদন্ধি থেকে ৪০% ভোটে এগিয়ে জয়ী হন। তো বুঝতেই পারেন, বেচারা স্বামীর কি অবস্থা। আমিও ভেবে নেই যে, জগত সংসারে স্বামীদের ছাড়াও এসব কালজয়ী গিন্নীদের আরো অনেক জরুরী কাজ আছে। সুতরাং হে স্বামীগণ, হয় নীরবে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখো, অথবা কৃষকের মতো বাগানে কাজ করো না হয় যদি জার্মান শেফার্ড থাকে তাকে নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকো। অভিযোগ কইরা কোনো ফায়দা নাই। নারীরা এখন অনেক প্রতাপ্সহালী। বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধান এখন মহিলা।

আমার গিন্নী এবার আবার কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এতো চাপা কষতের মধ্যে মনটা ভরে গেলো। সুখের খবর তো অবশ্যই। তবে এতে যে আমার আরো কিছু সময় ছাড় দিতে হবে সেটা তাই আর ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছি না। আগে রাতের পরোটা খাইতাম ধরেন ৯ টায়, এখন না হয় খাবো ১০ টায়, এই তো। জীবনে ১ ঘন্টা আর কি আসে যায়। বিয়ের আগে তো এ রকম ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু তাহার চেহাড়া মোবারক দেখার জন্য রাস্তায়, ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে অযথাই সময় নষ্ট করেছি। তাঁর তুলনায় এই প্রতিদিন এক ঘন্টা লস তো কোন ব্যালেন্স শীটেই পড়ে না। অবশ্য সম্পর্কটা এখন মাঝে মাঝে ভাই বোনের মতই হইয়া গেছে। স্বামী হিসাবে রাগ না কইরা ভাই হিসাবেই না হয় ক্ষমা কইরা দিলাম। কি বলেন?

যাক গে, যা বলছিলাম, গিন্নী বাঙলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে নিয়োগ পেয়েছে। খবরটা অনেক গর্বের যেমন, তেমনি আনন্দেরও। তাই সেই সুবাদে বাঙলা কলেজের বেশ কিছু গুনীজন, শিক্ষক এবং কলিগদের নিয়ে গত শুক্রবার একটা ট্রিট দিলেন আমার গিন্নী। (কানে কানে বলে রাখি-বিলটা আবার আমার কার্ডেই গেছে)। আমরাও তাঁর এই সাফল্যের জন্য অতি আনন্দের সাথে তাঁকে একটা সংবর্ধনা দেই। তারই কিছু বিশেষ মুহুর্তের ছবি।

ভালো থেকো আমার গিন্নী, তোমার সাফল্যে আমি সব সময় গর্বিত। তুমি নিশ্চয় আরো উন্নতি করবে এটাই আমার দোয়া।