হালিশহর, চট্টগ্রাম, আর্টিলারি অফিসারস মেস
আজকে সকালেই week-end এ চিটাগাং থেকে ঢাকায় গেলাম। সকালে তারেকের বাসায় গেলাম। ওর আম্মার সাথে, ওর বোনের সাথে দেখা হল। আপা একজন ভীষন ভালো মানুষ। আমাকে ঊনি তাদের বাসার সদস্য হিসাবেই দেখেন। কখনো বুঝতে দেন না যে, আমি অন্য বাড়ির একজন মানুষ। কখনো বকেন, কখনো উপদেশ দেন, কখনো একসাথে মা আর সন্তানের মতো কেরম খেলেন। আপা পান খেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু ওনার জীবনেও একটা দুঃখ আছে। কিছুদিন আগে ঊনি তার স্বামীকে ত্যাগ করেছেন। কেনো করেছেন, কি কারনে করেছেন, কার কতটুকু দোষ ছিলো আমার জানা নাই, কিন্তু তিনি একজন শিক্ষিকা, ফলে তার মানবিক গুন, সাধারন সেন্স সব কিছুই আমার কাছে যুক্তির মনে হয়েছে। যাক সে কথা বিস্লেসন করে হয়ত আমি কিছুই সুখের পাবো না। আপাদের সাথে সময়গুলি খুব আপন জনের মতো কাটছে, সেটাই আমার কাছে বড়।
তবে একটা কথা ঠিক, আমাদের দেশে এখনো ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের মানুষগুলিকে এক প্রকার ইনফেরিওরিটির চোখেই দেখে। ভাবখানা এই রকম যে, মেয়েকে বিয়ে করে যেনো মেয়ের বাড়ির মানুষগুলিকে উদ্ধার করেছে তারা। কেনো এই রকম ধারনা? এটা অত্যান্ত নীচু মনের একটা পরিচয়। আমি এই ভাবটা বেশীর ভাগ পরিবারের মধ্যেই দেখেছি। গরীবই হোক আর বড় লোকই হোক, যাদের এই ভাবটা আছে, আমি হলফ করে বলতে পারি, রাজ্যের হুড়পরি কিংবা এঞ্জেল নিয়ে আসলেও তাদের কাছে মনে হবে, হয়তো আরো ভালো কিছু পাওয়া যেতো। ছেলেটার কি যোগ্যতা, ছেলেটা মেয়েটার যোগ্য কিনা, সেটা নিয়ে এই সব পরিবারের কোনো মাথাব্যথা নাই। সব দোষ যেনো ঐ মেয়ে পরিবারটির। আমাদের দেশে যদি এই ধারা চলতে থাকে, তাহলে একদিন এই সমাজ শুধুমাত্র মেয়েদের কাছেই জিম্মি হয়ে যাবে যেদিন মেয়েরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের দেশের মেয়েরা যেহেতু বেশীর ভাগই স্বাবলম্বী নয়, ফলে তারা এই যুগে এসে অনেক অন্যায় আবদার, অন্যায় আচরন কিংবা এমন কিছু ব্যবহার যা তার প্রাপ্য নয়, সেটাও সে সহ্য করে যাচ্ছে, কিন্তু তারা তাদের পরবর্তী জেনারেশনকে এমনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যাতে তাদের পরবর্তী মেয়ে জেনারেশন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। আর তখন যেটা হবে সেটা হচ্ছে, মেয়েদের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত। তখন ছেলের পরিবারের কর্তৃত্ব আর চলবে না। এখন তো মেয়েরা ছেলের কর্তৃক ডিভোর্সড হয়, তখন ডিভোর্সড হবে ছেলেরা, মেয়েদের কর্তৃক।
ওখান থেকে মিরপুর গেলাম। গিয়ে দেখি ভাইয়া (বদি ভাই) কোরান শরিফ পড়ছেন আর ভাবী ঘর ঝারু দিচ্ছেন। আমাকে দেখেই হটাত আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ছুটি পেয়েছ নাকি?” ভাইয়ার, বৌদির, মান্নার, সাদির সবার ছবি তুল্লাম আমার ক্যামেরা দিয়ে। নতুন ক্যামেরা কিনেছি, খুবই কম দামি কিন্তু শখ মেটানো যায়। ২লেঃ অফিসার, কতো টাকাই বা বেতন, সব মিলে মাত্র হাজারের উপর টাকা। এর মধ্যে সিগারেট, এর মধ্যে যাতায়ত, এর মধ্যে মেসিং, কাপড়- চোপড়, সবইত এর মধ্যে। “ওডী” করেই চলতে হয় সারা মাস।
এমদাদের বাসায় গিয়েছিলাম। গিয়ে এমদাদকে পেলাম। ও আজকেই যশোর চলে যাবে, আজকেই এসছিলো। ওখানে লুনা আর এমদাদের একটা ছবি তুললাম। আজই আবার চিটাগাং চলে যাবো।
আমি বুঝি না, কেনো এই ছোট একটা সময়ের জন্য এলাম, আবার আজই আমি চলে যাচ্ছি। আর এই জার্নিটাও কিন্তু ছোট না। আসা যাওয়া মিলে প্রায় ১১ ঘন্টার একটা ব্যাপার। সম্ভবত এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার যে, আমি বাসায় এলাম, আমার একটা বাসা আছে ঢাকায়। কিন্তু আসলেই কি আমার কিছু আছে এই ঢাকা শহরে? আমার গ্রাম আছে, কিন্তু গ্রাম আমাকে টানে না। বদি ভাইয়ের বাসা আছে, কিন্তু আমি সে বাসাটাকে কখনো আপন করে নিতে পারি নাই। বরং ওরাও আমাকে আপন করে নিতে পারে নাই। আমার মা আছেন কিন্তু তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। আমার বোনেরা তাদের জীবন নিয়ে বেচে থাকতেই সংগ্রাম করছে। তাহলে আমি ঢাকায় কেনো আসি? আমার কাছে ঢাকা যেমন, হালিশহর তো একই। তারপরেও যেনো আমি কিছু খুজি।
কি খুজি?