সকালে ফেসবুক ব্রাউজ করতেই হটাত একটা পোষ্ট নজরে এলো। পোষ্টটা নিম্নরূপঃ
প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম আরো অনেক অফিসারেরই তো মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি, কিন্তু এবার শুধু মজিদের মৃত্যু সংবাদে আমাকে কেনো আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিখতে হলো? এর একটা অতীত ইতিহাস আছে। সেটাই বলছি।
এটাই সে আর্মি অফিসার যার কারনে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে অকালীন অবসর নিতে হয়েছিলো। আমি ১৩ লং কোর্ষের কিন্তু মজিদ ১৪ লং কোর্ষের। মেজর থেকে লেঃ কর্নেল প্রোমোশন বোর্ডে শুধুমাত্র মজিদকে আনুকল্য দেয়ার জন্য আমাকে প্রোমোশন থেকে বাদ দিয়ে এই অফিসারকে প্রোমোশন দেয়া হয়। পাশাপাশি যদি আমাদের দুইজনের কোয়ালিফিকেশনকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবোঃ
আখতার (আমি) | মজিদ | |
কোর্ষ সমুহের গ্রেডিং | আমার সব আর্মির কোর্ষ গ্রেডিং কমপক্ষে বি প্লাস আবার কখনো কখনো আ ছিলো। শুধু কয়েকটি বেসিক কোর্ষে বি ছিলো। | মজিদের সব গুলিই বি ছিলো। তাঁর ক্যারিয়ারে এ বা বি প্লাস গ্রেডিং প্রায় ছিলোই না। |
ষ্টাফ কলেজ | ষ্টাফ কলেজে সম্পন্ন করেছি | মজিদ ষ্টাফ কলেজ করেনি |
পদাতিক ডিভিশন এবং আর্মি হেড কোয়ার্টারে নিয়োগ | আমি পদাতিক ডিভিশন এবং সেনাসদরে জি এস ও-২ (অপারেশন) , জি এস ও-(ট্রেনিং) উভয়েই কাজ করেছি। | মজিদ এরুপ কোনো পদে কখনো কাজ করেনি। |
স্বাস্থ্যগত বিবরন | আমি ক্যাটেগরি এ ভুক্ত ছিলাম | মজিদ ক্যাটেগরি সি ভুক্ত ছিলো। এবং ডায়াবেটিসের রোগী। |
অভিজ্ঞতা | আমি মাইনর ইউনিটে উপ অধিনায়ক/ অধিনায়ক এবং ্মেজর ইউনিটে উপ অধিনায়কের দায়িত্ত পালন করেছি। | মজিদের এরুপ কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। |
মিশন | আমি পর পর দুইটা ইউ এন মিশন সম্পন্ন করেছিলাম। | মজিদ সম্ভবত একটা ইউ এন মিশন করেছে। ক্যাটেগরি সি হ ওয়াতে নাও করতে পারে। এ ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত নই। |
শিক্ষাগত যোগ্যতা | আমি শিক্ষাগত যোগ্যতায় মাষতার্স, এম বি এ, এম এস সি, এবং ততকালীন ডক্টরেট করতে নিয়োজিত ছিলাম। | মজিদ এম বি এ করেছিলো। |
মজিদের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট ছিলো ওর বাবা। ওর বাবা ছিলো আমাদের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসার মালি অতবা কর্মচারী। আর এই সুবাদেই খালেদা জিয়া মজিদের বাবার অনুরোধে তিনি মজিদকে তাঁর এ ডি সি করেন। সমস্ত আইন ভেংগে, আর্মির রুলস ভেংগে তিনি এ কাজটি করেন। যা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ছিলো না।
সেই মজিদের এখন প্রোমোশন দরকার। তাই প্রোমোশন বোর্ডের তিন দিনের ফলাফলে আমার নাম চুড়ান্ত হবার পরেও শেষ দিনে এসে হটাত করে মজিদ উড়ে এসে জুড়ে বসলো, আর আমি ঝড়ে পড়ে গেলাম। মজিদের প্রোমোশন হলো আর আমার হলো না। আমি কখনো কারো কাছে আমার ব্যাপারে তদবির করতে পছন্দ করিনি। এবারো করলাম না। আমি সিনিয়ার হ ওয়া সত্তেও মজিদ আমার ৭ ফিল্ডের সি ও (অধিনায়ক) হয়ে গেলো। জুনিয়ারের অধীনে সিনিয়ারের কাজ করা জে কত দূর্বিসহ, এটা যারা করেছে তারা জানে। যদিও মজিদ কখনো আমার ফ্রিডম নষ্ট করেনি, আমার কোনো কাজে বাধা দেয়নি, অথবা আমার প্রতি তাঁর কোনো খারাপ আচরন করেনি, তারপরেও আমার প্রতিটি দিন কেটেছে মনের কষ্টে। কেনো আমাকেই বলি হতে হলো?
আমি শেষ পর্যন্ত আর্মি থেকে অকালীন অবসর গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেই। আর ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় আমি ২০০৪ সালের নভেম্বরে আমি আর্মি থেকে ভলান্টিয়ারিলি অবসরে চলে আসি।
আর্মিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি তুলনা করি, দেখা যাবে, ৫০ টি অফিসারের মধ্যে হয়তো আমি ১০ এর মধ্যে আছি। আমার কাজের প্রশংসা সব জেনারেকরাই করতো কিন্তু শেষ অবধি খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় মজিদেরই জয় হয়েছিলো। প্রধান মন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়ার এটা করা উচিত হয় নাই।
সেই মজিদ খালেদা জিয়ার পলিটিক্যাল দল খমতাচ্যুত হবার পর নিজেও আর্মি থেকে অবসরে যায়, বলতে পাতেন তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। পুনরায় মজিদ সেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধান্মন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথেই সে ছিলো। কেউ বলে বডি গার্ড, কেউ বলে এমনিতেই।
আজ মজিদের ম্রিত্যুর সংবাদ পেলাম। রাগ ছিলো, গোস্যা ছিলো, অপছন্দ করতাম, কিন্তু আজ আর মজিদের উপর আমার কোনো ক্ষোভ নাই, রাগ নাই। সে কি করে গেছে, কি করা উচিত ছিলো, এর ফলাফল এখন নির্ধারিত।
আমি ভালো আছি। আর্মি থেকে বের হয়ে আর কোনো চাকুরীর সন্ধান করিনি। সরাসরি একটা গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছিলাম। প্রথমে সেই গার্মেন্টস ছিলো একটা মৃত প্রতিষ্ঠান, আজ সে গার্মেন্টস বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে একটা মডেল নাম। রিভার সাইড সুয়েটার্স। প্রায় ২ হাজার লোক কাজ করে, বছরে টার্ন অভার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। আল্লাহ যা করেন সব ভালোর জন্যই করেন।
মজিদের জন্য, খালেদা জিয়ার জন্য এবং সেই সব দূর্নীতি পরায়ন চাটুকার জেনারেলদের জন্য ও আমি দোয়া করি কিন্তু তারা আজ কেহই ভালো নেই। কেউ কারাগারে, কেউ ফাসির রায়ে দন্ডিত, কেউ পালিয়ে আছে আবার কেউ কেউ এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলেও গেছে।