১২/১১/২০২০-আনিস চৌধুরীকে মেইল

প্রিয় আনিস (নেভাল অফিসার)

যখন নিজের কেউ সারারাত বাড়ি ফিরে আসে না, তখন সেই কালো রাত জীবনের থেকেও লম্বা হয়। তখন হরেক রকমের ভয়, দুসচিন্তা, আর অনিয়ন্ত্রীত ভাবনা কিংবা সব অশুভ সম্ভাবনা নিজের মনকে আকড়ে ধরে। যার নিজের লোক সারারাত বাড়ি ফিরে না, তার শান্তিতে দম নেবারও কোনো অবকাশ থাকে না। প্রাত্যাহিক জীবনের রুটিন থেকে বিচ্যুত হয়ে ছিটকে পরা এই মানুষটার জন্য তখন প্রতিদিন সকাল থেকে তার পরেরদিন অবধি চারিদিকে একটা শুন্যতাই বিরাজ করে। আর এই শুন্যতা এমন কিছু আশংকার স্থান তৈরী করে যার নাম - অমিবশ্যার কষ্ট।  এই অমাবশ্যা কবে কাটবে, আদৌ কাটবে কিনা সেটা একটা আগামীকালের বিবেচনা। অনেক সময় মানুষ এই অমাবশ্যা কিভাবে কাটবে তারজন্য হয়তো জজ্ঞের আয়োজন করে, কিন্তু অমাবশ্যা কাটবে কিনা সেটা কোনোভাবেই এই জজ্ঞ নিসচয়তা দেয় না। অনেক সময় ছোট ব্যাপার অনেক বড় সড় ব্যাপার হয়ে দারায়। আর সেই ছোট থেকে বেড়ে উঠা বড় ব্যাপারটা সারাটা জীবনের জন্য ঝামেলার কারন হয়। একটা জিনিষ সর্বদা মনে রাখা দরকার যে, সবসময় গরম গরম পরোটাই যে খেতে মজা তা নয়, অনেক সময় এই গরম গরম পরোটার চেয়ে বাসী রুটির অনেক কদর বেড়ে যায়। কারন হাওয়া যখন কারো নামে গরম হয়, তখনই এটা হয়। আর আমরা এটাকে বলি শনির দশা। শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, এই হাওয়ার সাথে আরো অনেকের নামও গরম হয়। আর এই হাওয়া সবসময় চলমান। মুদি দোকানে এর উৎপত্তি, আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এর বিনাশ। এই শনির হাওয়ায় অনেকেই বলীর পাঠা হয়। আর কেউ যখন বলীর পাঠা হয়, সেই বলীর পাঠাকে সবাই বিষাক্ত খাবারই মনে করে। ফলে, যতো দামি পাঠাই হোক, বলীর পাঠার কোনো দাম হয়না। এটা তখন হয় একটা বর্জ্য। আর বর্জ্য কেউ নিজের কাছে রাখে না। সবাই এটাকে বিষাক্ত মনে করে ফেলেই দেয়।

একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, ক্ষমতাশীল রাজত্তে দেওয়ালের শুধু কানই থাকে না, চোখও থাকে। আবার এটাও ঠিক যে, রাজনীতিতে কোনো কিছুই সারা জীবনের জন্য হয় না। কোনো না কোনো সময় এর একটা শেষ আছে। ওই শেষের অধ্যায়টার জন্য অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। রাজনীতির সবচেয়ে বড় দূর্বল পয়েন্ট হচ্ছে- রাজনীতিতে ভরষা আর বিশ্বাস যেমন ছেলেখেলার মতো হয়, তেমনি এই একই রাজনীতিতে হুমকীও অনেকটা হাচির মতো হয়। কিন্তু এই হাচিস্বরূপ হুমকী যখন সবল হয়, তখন পুরু রাজনীতিটা একটা বেওয়ারিশ বোমের মতো আত্মপ্রকাশ করে। তখন কেউ জানে না, ওটা কখন কিভাবে কোথায় ফাটবে আর কে কে এর মধ্যে মারা যাবে, আহত হবে বা হবে নিখোজ। যদি রাজনীতির এই দূর্বল পয়েন্টটা কেউ ভালোভাবে পর্জবেক্ষন করতে সক্ষম হয়, তখন নিজ দলের রাজনীতি থেকেও মানুষকে সাবধান থাকতে হয়। কারন, বিপদজনক জল যখন মাথার উপর উঠে যায়, তখন যা দরকার, তা হচ্ছে বহির্শক্তির। যদি এই বহির্শক্তি সময়মতো না আসে, তখন যিনি ডুবে আছেন, তিনি তো ডুববেনই, তার সাথে আরো অনেকেই ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে আপনজন। আর এটাই হচ্ছে এখন তোমার বেলায়। তুমি কারো নিজের সার্থের জন্য তোমার নিজের শব্জীক্ষেত জ্বালিয়ে দিতে পারো না। আর যদি একটা ভুলের কারনে তোমার শব্জী বাগানে আগুন লাগে, সেটা তোমার একান্তই নিজের ক্ষতি। রাজনীতি করতে গেলে হয়তো কিছুটা আগুনের ফুল্কী গায়ে লাগতেই পারে, কিন্তু সেই ফুলকী নিভানোর জন্য যথেষ্ঠ উপকরন রাজনীতি থেকেই সাপ্লাই দিতে হয়। যদি সেই সাপ্লাই দল থেকে না আসে, তাহলে সেই ফুল্কী থেকে নির্ঘাত আগুন লাগার সম্ভাবনা অধিক। আগুন থেকেই আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি এটা মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। আগ্নেয়গিরির আগুন থেকে কোনো দমকল বাহিনী আজ পর্জন্ত কাউকে বাচাতে পেরেছে কিনা তার কোনো রেকর্ড নাই।

শোনো ভাই, রাজনীতিতে যদি মানবিকতা আর সচ্চতা থাকতো তাহলে কেহই এই রাজনীতি করতে আসতো না। রাজনীতিতে পূর্নিমা আর অমাবশ্যা যেমন একসাথে চলে আবার জোয়ারভাটাও একসাথে চলে। এই রাজনীতিতে আবার কোনো কোনো সময় কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই বাস্তব, এটাই সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। বড় বড় রাজনীতিবিদরা তাদের সার্থ হাছিল করার জন্যই কর্মী বাহিনীর জন্য শুধু ভরসার স্থান তৈরী করে আর নাটক বানায়। আর এই চরিত্রগুলির মধ্যে কেউ কেউ মূল আবার কেউ কেউ ইচ্ছে করেই সহযোগীর ভুমিকায় থাকতে পছন্দ করে। এটা সময়ের পরিস্থিতি বুঝেই তারা নিজ নিজ পছন্দের এই চরিত্রগুলি বেছে নেয়। অথচ যারা ডেডিকেটেড, তারা বুঝতেও পারে না সত্যিকারের পরিস্থিতিটা কি। এই মেকী ভরষার স্থান যখন উম্মোচিত হয়, যখন সামনে বড্ড ভয়ংকর এবং আসল চেহারাটা বেরিয়ে আসে কিংবা কেউ যখন আসল চেহারাটা দেখে বা বুঝে ফেলে, তখন ডেডিকেটেড কর্মীগুলি নিজেদেরকে নিজের কাছে বড় অসহায় মনে করে, নিজেকে বোকা মনে করে। কারন মিথ্যা ভরষায় ভর করে যখন কেউ সামনের দিকে নিজের ইচ্ছায় এগিয়ে আসে, তখন সেই জায়গা থেকে আর কারো ফিরে আসার পথ খোলা থাকে না।

শোনো ভাই, যখন কেউ কাউকে আঘাত করার জন্য চেষ্টা করে থাকে তখন সে এটা ভুলে যায় যে, সে আঘাতের ব্যথা চিরকাল থাকে। আর এই ব্যথা থেকে উৎপত্তি হয় রাগ। আর সেই ব্যথা, সেই রাগ আমদের একটা কথা বলে দেয় যে, সতর্ক থাকো। কেননা অনেক সময় সেই আঘাত বা রাগ নতুন রুপ নিয়ে তোমার আমার কাছেই ফিরে আসে। তুমি বা আমি হয়তো সে শব্দটা শুনতে পাই অথবা জেনে বুঝে এড়িয়েও যাই। আবার উলটো দিকে যদি বলি, এই রাগ উঠার মুহুর্তে আমাদের মনে যদি এই অনুভুতি জাগে যে, প্রতিশোধই হচ্ছে এর একমাত্র আসল চিকিৎসা, তাহলে আরো মারাত্তক ভুলের দিকেই ঢোকে যাই আমরা। আমাদের এই রাগ, অভিমান, প্রতিশোধ, ক্রমশই ধংশের পথকে এগিয়ে নিয়ে চলে। আমরা নিজেদের রাগ আর সেই রাগের বশে যে সব পদক্ষেপ নিতে পারি তার ফলাফলের বিশয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কেননা ক্ষোভের বশে নেয়া পদক্ষেপের ফল কখনোই বদলনো যায় না। আর পিছনে পরে থাকে শুধুই উপলব্ধি। আরম্ভ হয় সেই “যদি”। "যদি" অমুকটা না করতাম,, "যদি" অমুকটা করতাম, "যদি" তার সাথে আমার দেখা না হতো, "যদি" অমুকের সাথে আমার আগে দেখা হতো, "যদি" ওই সময়ে আমি ওইটা না করতাম, "যদি" সময়টা পিছিয়ে নেয়া যেতো, "যদি" এটা না করে ওটা করতাম ইত্যাদি।

- তারপরেও একটা কথা থেকেই যায়- তাহলে কি ফেরার কোনো পথ নাই?

- আছে। তাহলে সেটা কি?  

ভিত্তিহীন আর অকারন গুরুত্তহীন কথা শুনবার সময়ে আমাদের সর্বদা নিজের বুদ্ধিমত্তা, নিজের অভিজ্ঞতা আর মেধাকে ধীরেসুস্থে নিকটস্থ ভালো কিছু মানুষের সাথে, কিংবা পরীক্ষিত ভরষা করা যায় এমন কিছু গুনীজনের পরামর্শে নিজের মৌলিক চেতনাকে বাচিয়ে জীবনে কাকে কতটা জায়গা দেবো সেটা ঠিক করে ফেলা। তাহলে জীবনে আর কোনো সমস্যাই থাকে না। আর কার সাথে কি কমিট্মেন্ট করা দরকার তার যদি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তখন জীবনের স্রোত সবসময় একই থাকে বলে আপাতত মনে হয়। তখন পিছুটানের আর ভয় থাকে না। আর যখন পিছুটানের ভয় থাকে না, তার সামনে দ্রুতগতির শক্তিটাও ধীরগতি বলে মনে হয় না। যতোক্ষন যেটা নিজের কাছে ভালো লাগবে, ততোক্ষন সেটা সে চালিয়েই যায়, আর সেখানেই শুরু হয় জীবনের সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছনা। কারন মিথ্যের বোঝা যদি বুদ্ধিমত্তার উপর চেপে বসে তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে চোরাবালির বাকেই আটকে পড়ে। যেখানে আফসোস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আমরা একা নই, সাথে পরিবার আছে, সন্তান আছে, আমাদের বাবা মা অন্যান্য আত্মীয়স্বজন আছে। যদি সে সবকে আমি মানি, ভালবাসি, বিশ্বাস করি, তাহলে কোনো কিছুই আমি একা একা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না। হোক সেটা রাজনীতি কিংবা অন্য কিছু। তাই সব কিছু পরিহার করো। শুধু আকড়ে রাখো সেতা যেটায় তোমার নিজের লাভ, যেটায় তোমার পরিবারের লাভ।

এখানে আরো একটা পরামর্শ তোমার জন্য আমার দেয়া দরকার, যে, এয়ারপোর্টের লাউঞ্জই হোক আর ফাইভ স্টার হোটেলই হোক। এগুলি যতো সুন্দরই হোক সেটা আমার তোমার  নিজের ঘর নয়। তার উপর মায়া জড়াতে নেই। তাতে শুধু কষ্টই বাড়ে। নিজের হয় না। ঠিক সে রকম হলো রাজনীতির দলনেতা বা তার ভালোবাসা। সেটা আমার পরিবার নয়, না আমার বংশ। তার উপরেও আমার মায়া জড়াতে দেয়া উচিত না। তাই এয়ারপোর্ট কিংবা ফাইভ স্টার হোটেল থেকে চেক আউটের সময় যেমন মন খারাপ করা মানে নিজেকে বোকা মনে করা, তেমনি এই রাজনীতি বা দলনেতাদের উপর থেকে আস্থা ফিরিয়ে নেয়ার সময়েও মন খারাপ করা উচিত নয়। সব সময় আমি ভাবি যে, বেশীর ভাগ মানুষের দুটু মুখ থাকে। একটা মুখ যেটা সে সারা দুনিয়াকে দেখায়। আরেকটা আসল মুখ যেটা সে লুকাতে চায়। কিন্তু দেখো মজার ব্যাপার হলো, সত্যিটাকে কেউ লুকাতে পারেনা, কারন সত্যিটাকে লুকানো যায় না, সত্যি লুকিয়ে থাকে না। হয়তো সত্যিটা মিথ্যার চাপে কিছুদিন আত্তগোপন করে কিন্তু সত্যি একদিন বেরিয়ে আসেই। আর এটাই হলো সত্যির আসল চেহাড়া। রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশী হয় এটা। সবসময় মানুষের দুমুখো চেহারাটা অথবা আসল চেহারাটা অনেক সময়ই ধরা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে তখন যখন সে খুব কাছের মানুষ হয়, হোক সেটা রাজনীতির দল বা নিজের গোত্র।। তাই এসব দলনেতা বা লিডারদের কাছ থেকে যতোটা দূরে থাকা যায়, ততোটাই ভালো। এটাও সঠিক নয় যে, সবাই দুমুখো। কিন্তু এটা সত্য যে, কখনো যদি একটু আভাষও পাওয়া যায় তাহলে তার থেকে সতর্ক হওয়াটা খুবই জরুরী। নিজের প্রান, মান বাচানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

এখন যেমন তুমি নিজেই দেখছো, তুমি আসলেই একা। কাউকে দেখতে পাও চোখের দ্রিষ্টির সীমানায়? কাউকে না। কিন্তু যাদেরকে দেখতে পাও, তারা সবাই খুব অসহায়। এইসব প্রিয়জনেরা কোনো প্রিয় মানুষের আসার অপেক্ষায় যখন অধীর আগ্রহে বসে থাকে, দিন গুনতে থাকে, আর সে যখন ফিরে আসে না তখন পৃথিবীর যত দুসচিন্তা আর অমংগল চিন্তাগুলিই শুধু তাদের মাথায় চড়ে বসে। আর প্রতিটি দুশ্চিন্তার কোনোটাই তখন আর ফেলনা মনে হয় না। ভাষার আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না কষ্টকে বহির্প্রকাশ করার। তখন ভিতর থেকে তাদের সবকিছু শুন্য মনে হয়। একটা জিনিষ খুব ভালো করে জেনে রাখো যে, শুন্য অন্তরে শক্তি কম, চেলেঞ্জ কম। এই সময়ে যেনো সময়টাই কাটতে চায় না। কষতের সময়টা বা দিনটা অনেক লম্বা মনে হয়। মনে হয়, যেনো কষ্টটা পিছু ছাড়ছেই না। তারপরেও সময় ভালো হোক আর না হোক, সময় কেটেই যায়। নতুন সময় সামনে আসে। সেটাও কেটে যায়, আবার আরেকটা সময় সামনে আসে। আর প্রতিটা সময় সবার জন্যই কিছু না কিছু রেখেই যায়। এই রেখে যাওয়া সময়ের সাক্ষি একদিন ইতিহাস হয়ে যায়, আবার কারো কারো সময়ের এই ইতিহাস এমন কিছু দিয়ে যায় যা সারা জগতময় চারিদিকে অনেক লম্বা সময় ধরে ভেসেই বেড়ায়। তাই, আজকের দিনের কষ্টের সময়টাকে মনের ভিতরে স্মরণ রেখে বাকী সব কিছু ভুলে যাও। আবার নতুন করে নতুন ভাবনায় সবাইকে নিয়ে জীবন শুরু করো। এই দুনিয়ায় আপনজন ছাড়া আসলেই আর কারো কেউ না।

তোমার জন্যে আমার একটা উপদেশ থাকলো, এই আমাদের অসমানভাগে ভাগ করা সমাজে প্রতিমুহুর্তে সবার অধিকার ক্ষুন্ন হলেও, এটা নিয়ে কারো কাছেই বিচার চাইবার কোনো পথ নাই। আমি বা তুমি একা এই অসমানভাগে বিভক্ত সমাজকে ভেংগে চুরে সমান করতে যেমন পারবো না, তেমনই সবার জন্য আমি বা তুমিও দায়বদ্ধ নই যেখানে সমাজটাই অসমান। এই অসমানভাগে ভাগ করার কারনে কেউ তো আছে যারা তাদের নিজেদের সার্থ হাসিল করে। ফলে যারা অসমান ভাগে সমাজকে ভাগ করে নিজেদের আরামকে হাসিল করে, তারাই আসলে জুলুমবাজ। এই জুলুমবাজ সব রাজনীতির একটা প্রধান অলিখিত সংবিধান, একটা অলিখিত আইন। তাহলে আমি বা তুমি কার বিরুদ্ধে লড়াই করছি? তোমার এই আন্দোলন বা অসহিস্নুতা ভুল, যদিও তুমিই ঠিক। কিন্তু অসাংবিধানিকভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে রচিত এই অসমানভাগে ভাগ করা সমাজে সবাই জুলুমবাজই হতে চায়। হোক সেটা তোমার দলনেতা, হোক সেটা কোনো ভাই কিংবা তোমার প্রিয় কোনো কর্মী। সবাই লাভ চায়। তাহলে কিসের জোরে তুমি বা আমি এই অসমর্থিত অসমান ভাগে সমাজকে দোষারুপ করে তাকে ক্লিন করার চেষ্টা করছি? কার জন্যে? মাথা থেকে এই ভাবনা একেবারে ছুড়ে ফেলো। আগে নিজের জন্য করো।

পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা খুব সুন্দর। যেমন মায়া, যেমন বন্ধুত্ত, যেমন আদর ইত্যাদি। এই জিনিষগুলি কখনো বদলায় না। আরো কিছু জিনিষ আছে যা বদলায় না যেমন, মানুষের অনুভুতি, রাগ হিংসা, প্রতিশোধের ইচ্ছা। মানুষ যতোই মডার্ন হোক না কেনো এই ফিলিংসগুলি কখনোই যাবে না। আমি পরের জিনিষ গুলিকে অনেক ভেবে চিনতে করি। আমার অনুভুতি প্রখর, রাগও প্রখর কিন্তু অনুভুতিকে কাজে লাগাই, রাগকে নয়। কিন্তু রাগকে আমি ছেড়ে দেই না। এই রাগও একটা সাফল্য আনে। যাদের রাগ নাই, তাদের অনুভুতিতে ধার নাই। কিন্তু বেশী ধারালো রাগ হলে নিজের হাত পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই আমার রাগটাকে আমি একটা খাচায় বন্ধি করে রাখি যাতে আমার অগোচরে হাত লাগলেও হাত পা না কাটে। তুমিও তাই করবা। এখন তুমি যদি আমাকে প্রশ্ন করো- এটা তোমার ভাগ্যে আছে বা লেখা ছিলো। কথাটা আমি অন্তত মানি না। ভাগ্য খারাপের দোষ শুধু এক তরফা হয়, অথচ এই ভাগ্য বলতে আসলে কিছুই নাই। যদি এই ভাগ্য খারাপের ইতিহাস, কিংবা উৎপত্তি থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত অনুসন্ধান করা যায়, দেখা যাবে, আসলে ভাগ্য বলতে কিছুই নাই, যা আছে হয় সেটা কারো পরিকল্পনা অথবা কোনো পরিকল্পনাই নাই। এই পরিকল্পনার "আছে" আর "নাই" এর মধ্যে আসলে ভাগ্য খেলা করে। যখন আমরা এর পুরু ইতিহাস না জানি, তখনই আমরা সেই শুন্যস্থান পুরুন করি ভাগ্যকে দোষ দিয়ে। ভাগ্য একটা "যদি"র মতো। কষ্টি দেখে ভাগ্য মিলানো যেমন একটা মনগড়া শান্তনা, তেমনি কষ্টি না দেখে ভাগ্যকে দোষারুপ করাও একটা মনগড়া বিবেচনা বটে।

তাই তোমার জন্য আমার কিছু উপদেশ রইলো, তুমি সেটা পালন করবে কি করবে না সেটাও তোমার নিজস্ব জ্ঞান বা বিবেচনা।

  • কারো অতীত ইতিহাস যখন কালো অক্ষরে লেখা থাকে, তখন সেটা যতো চেষ্টা করাই হোক তাকে আর সাদা অক্ষর করা যায় না। হ্যা, হতে পারে তার পরের সব ইতিহাস সাদা অক্ষরের। যখন এর সব ইতিহাস সাদা অক্ষরেই লেখা হতে থাকে, তখন অতীতের সেই কালো অক্ষরের ইতিহাস একদিন বর্তমানের সব সাদা অক্ষরের ইতিহাসে একটা ম্লান রুপ নেয়। তখন সেটা হয় পরিবর্তন। এই পরিবর্তন সবাই পারে না। যারা পারে, তারাই হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিজেন্ড। কারন তখন কালো অক্ষরের ইতিহাসধারীর মৃত্যুবরন হয়ে নতুন রুপে আবিরভুত হয়। চেষ্টা করো সব কিছু পিছনে ফেলে দিয়ে আবার তোমার ইতিহাস নতুন করে লেখার। আর সেটা ফেসবুক বা সুধীমহলের কোনো বাহবা দিয়ে নয়, নিজের পায়ের নীচের মাটিকে পাথরের মতো শক্ত অবস্থানে নিয়ে। মানুষ তখন তোমাকে নিয়ে ফেসবুক করবে, তুমি সেই ফেসবুকের কমেন্ট পড়ে আনন্দ নিবে। তুমি কেনো অন্যের জন্য ফেসবুকিং করবে? তাই, ফেসবুকে লেখা একেবারে বন্ধ করো। যদি লিখতে চাও, গ্লোবাল ইস্যু নিয়ে লিখো, একটা পার্টিকুলার জ্ঞানের কথা লিখো। হাসি তামাশার জোক শেয়ার করো। আর যে গুলি বারবার লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু প্রকাশ করা ঝুকিপূর্ন, সেগুলি নিজের ডায়েরীতে লিখো। ইতিহাসে অনেক ব্যক্তিগত ডায়েরী সমাজে অনেক আন্দোলনের রুপ কথার সাক্ষী। হতে পারে কোনো একদিন তোমার লেখা একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরীই হয়তো সময়ের জন্য একটা গাইড হবে! কি দরকার এই মুহুর্তে এমন কিছু করা যা হজমের জন্য প্রজোজ্য নয়?

  • মানুষরুপী শয়তান আমাদের চারিদিকে বাস করে। এরা সবাই তোমাকে আমাকে ব্যবহার করে, তারা চায় তাদের ইচ্ছাগুলি আমার উপর দিয়ে বাস্তবায়িত হোক। এইসব মিডিয়া আর পলিটিশিয়ানরা কারো ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে সেই একই বুলেটের খালি কার্তুজ চালায়, সেটা শব্দ ছাড়া আর কিছুই করে না। তোমাকে এটা বুঝতে হবে আর বুঝলেই তুমি এই পরিস্থিতির বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে।

  • যোগ্যতা আর সাহস মাথায় রেখে কথা বলতে হয়। তোমার সাহস আছে, কিন্তু এখনো সেই যোগ্যতায় আসো নাই যেখানে তুমি নিজেই একটা শক্তি। এই শক্তিটা বাড়াতে হবে। আর এরজন্য এখন যা নিয়ে ব্যস্ত আছো, সেখান থেকে পুরুপুরি বেরিয়ে আসো।

  • এরপর কোনো ভুল করার আগে ১০০ বার চিন্তা করবে। কারন সব ভুলের সম্পর্ক এই ১০০ এর সাথে জড়িত।

  • তুমি জানো না তোমার পরিবার কতটা অসহায় অবস্থায় আছে। কেনো তুমি তাদেরকে এই অসহায় অবস্থায় ফেলছো বারবার? আজ তোমার সন্তান ছোট, কাল তো তোমাকে সে এই প্রশ্নতাই করবে যে, কেনো আমাকে তোমার এইসব বোকামির জন্য আমার বন্ধু মহলে সমালচিত হৈ? কেনো কি আন্দোলন চালাচ্ছো যেখানে তোমার দলের মানুষগুলিই তোমার সাথে নাই যখন তুমি নিজে বিপদে পড়ো? সন্তানের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সব সময় সহজ হয় না। তারপরেও এমন কোনো কাজ আমাদের করা উচিত না যার উত্তর আমার দেয়ার প্রয়োজনই ছিলো না।

যাই হোক আনিস, ভুল না বুঝে তো হতেই পারে, কিন্তু ভুল যদি জেনেশুনে হয়, সেটাকে কি বলা যায়?

ভালো থেকো।