১৩/০৮/২০১৯- ঈদের পরের দিন

Categories

কোরবানীর ঈদের পরদিন। আমার বাড়িতে ছোত বড় সবাই এক সাথে যেমন ঈদের দিন আসতে পছন্দ করে, তেমনি কাউকে দাওয়াত দিলে পারতপক্ষে কেউ মিস করতে চায় না এটা আমার সৌভাগ্য। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সেই সকাল থেকেই। মিতুল (আমার স্ত্রী) তাদের ভাইর বোন সবাইকে দাওয়াতের পাশাপাশি আমাদের গ্রামের ভাই বোনদের কিছু ছেলেমেয়েরদেও আজকের দিনের দাওয়াতে হাজির হতে অনুরোধ করেছিলো। গুড়ু গুড়ি বৃষ্টির কারনে গ্রাম থেকে অনেকেই আসতে পারে নাই।

জাহাংগীর নগর ইউনিভার্সিটির মিতুলের বান্ধবী দীপু এবং ওর হাজবেন্ড কমোডর মামুন সহ ওদের পরিবারের সবাইকেও দাওয়াত করেছিলো মিতুল। দাওয়াত করেছিলো উম্মিকার কিছু বন্ধু বান্ধব্দের। আমিন ফাউন্ডেশন এর পরিবারদেরকেও মিতুল দাওয়াত করেছিলো, সবাই এসেছে। বেশ গমগম একটা পরিবেশ।

মুবীন দুপুর থেকেই কাবাব বানানোর সমস্ত আয়োজন করে রেখেছিলো। ইমন আবার রাতে কি আতশবাজী পুরানোর জন্য এক গাদা আতশবাজীও তার স্টকে রেখেছিলো। বৃষ্টি হওয়াতে ছাদে কাবাব বানানোর পরিকল্পনাতা ভেস্তে গেলো কিন্তু নীচে গ্যারেজ বনে গেলো রীতিমত একটা কাবাব ফ্যাক্টরির রান্নাঘর। চারিদিকে কাবাবের মনোরম গন্ধ, লোকজনের সমাবেশ, মন্দ লাগছিলো না।

অনেক লোক যখন এক জায়গায় সমাবেশ করে, এম্নিতেই জায়গাটা শোরগোলের মতো কিচির মিচিরে ভর্তি থাকে। তার মধ্যে আবার চৌধুরী বাড়ির মানুষ, তাদের গলার আওয়াজ সব সময়ই চ ওড়া। তারা আস্তে কথা বলতে পারে না। হয় তারা কানে কম শুনে বলে উচ্চস্বরে কথা বলে অথবা কে কার কথা শুনবে, সেটা সুপারসেড করার কারনে একে অন্যের থেকে চরা ভয়েসে কথা না বলে কোনো উপায়ও নাই। ফলে সেই দুপুর থেকে আমাদের বাসায় একটা অবিরত হট্টগোলের মধ্যে ছিলো। শব্দ দূষনে নিঃসন্দেহে আজকে আমার বাসা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার কথা।

ঈদের দিন সাধারনত আমি ছোট বড় সবাইকে সালামী দেই। এতা আমার খুব ভালো লাগে। সালামী তা লোভনীয় করার জন্য আমি আগে থেকে ব্যাংক থেকে নতুন নতুন নোট নিয়ে রাখি। আর সালামীর পরিমানতাও আমি বাড়িয়ে দেই যাতে সবাই বিশেষ করে ছোটরা এই সালামির লোভেই সবাই আমার বাসায় সকাল সকাল চলে আসে। ছোটরা যখন বায়না ধরে, বড়রা তখন আসতে বাধ্য হয়। ফলে আমি খুব গোপনে এই সালামীর টোপ তা সব সময় দিয়ে রাখি।

সবাই লাইন ধরে দাঁড়ায়, একে একে সালাম করে। সালাম করাতা বা পাওয়া তা আম্র মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে, এই যে সালামীটা পাওয়ার জন্য বাচ্চারা অধীর আগ্রহে বসে থাকে। সবাইকে আমি সম পরিমান সালামি দেই। বড়দের বেলায় অবশ্য বেশী থাকে।

বেশ রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে, আর অবিরত খাবারের, জুসের, আর মিষ্টির ব্যবস্থা থাকে। কখনো ফুস্কা, কখনো হালিম, কখনো অন্যান্য আইটেম তো আছেই। বয়স ভিত্তিক পোলাপান এক এক রুমে আড্ডা দেয়, কেউ কেউ আবার একই রুমে বসে নিজেরা নিজেরা সোস্যাল মিডিয়ায় এত ব্যস্ত থাকে যে, কাছে আছে তবুও যেনো সোস্যাল মিডিয়ায়র মাধ্যমেই হাই হ্যালো করতে পছন্দ করে।

দিনটা আমার বেশ ভালো কাটে এইসব কিচির মিচির করা বাচ্চা আর তাদের বড়দের নিয়ে। বয়স হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি একটা সময় আসবে, তখন হয়তো এটার ভাটা পড়বে। হয়তো অনুষ্ঠান তা হবে, আমার অনুপস্থিতিতে। হয়তো ওরা আমার এই সালামিটাই তখন সবচেয়ে বেশী মিস করবে। কিন্তু পৃথিবীর তাবত নিয়ম মেনেই যুগে যুগে এই রীতি চলতেই থাকবে সেই কফি হাউজের আড্ডাটার মতো।