১৩/১১/২০২৪-হার্ট এটাক

শুনেছি মানুষের হার্ট এটাক হলে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভুত হয়, অনেকে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়, মল মুত্র পর্যন্ত ত্যাগ করে ফেলে। সারা শরীর ঘেমে যায়, আরো অনেক কিছু। আমার এ ধরনের কোনো সিম্পটম্পই ছিলো না। কিন্তু প্রায়ই আমি মাঝে মাঝে অফিসে কিংবা সিরাজ গঞ্জ যাওয়ার পথে প্রচুর অস্থির বোধ করতাম, প্রেসার হুট করে ভীষন বেড়ে যেতো, মনে হতো ঘাড় ব্যাথা করছে আর বুকের মাঝখানে কেমন যেনো জলা জলা অনুভুতি হতো। ব্যাপার গুলিকে আমি খুব একটা আমলেই নিচ্ছিলাম না। যখনই এমন হতো, একতার জায়গায় ২/৩ টা অসারটিল প্রেসারের মেডিসিন কেয়ে নিতাম। মাঝে মাঝে ভালোই কাজ করতো, আবার মাঝে মাঝে অনেক সময় পরে এমনিতেই ঠিক হয়ে যেতো বটে কিন্তু শরীর প্রচুর দূর্বল হয়ে যেতো।

কিন্তু গত ৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের সকাল ৫ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার প্রচন্ড বুক জলছিলো বলে মনে হচ্ছিলো। মাথা ব্যথা করছিলো, চোয়ালেও ব্যথা করছিলো, ঘাড়ে এবং হাতে বেশ ব্যথা অনুভব করছিলাম। আমি একবার তাইলস করা ফ্লোরে শুইলে মনে হয় ভালো লাগবে এতা ভেবে তাইলের উপর শুইতেছিলাম, আবার সেটাও আরাম দায়ক মনে হচ্ছিলো না বিধায় বিছানায় শুয়ে থাকতে চাইছিলাম কিন্তু সেখানেও এতো অসস্থি বোধ করছিলাম যে, কি করলে যে ভালো লাগবে বুঝতেছিলাম না। প্রেসার মাপার যন্ত্রটাও তখন খুজে পাচ্ছিলাম না। অনেক খোজাখুজির পর যখন পেলাম , প্রেসার মেপে দেখি প্রায় ১৬৫ প্লাস। সাথে সাথে ৩ টা ওসারটিল খাইলাম, কিন্তু কোনো কাজ হলো বলে মনে হলো না। পানি খেলাম, একটু চাও মনে খেলাম কিন্তু কোনো সিগারেট খেলাম না।

উম্মিকা, আবির দুজনেই ডাক্তার, তারা বাসাতেই ছিলো। কিন্তু ওদেরকে কিছু জানালাম না। আমি নিজেই ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছিলাম আসলে ঘটছে কি আমার সাথে। কামড় খেয়ে শুয়ে থাকলাম প্রায় ঘন্টা খানেক। অতপর একটু ভালো লাগছিলো। সকাল ৯ তার দিকে পান্তা ভাত খেলাম, তার আগে গসল করলাম। অফিসে যাবো। রেডি হয়ে গাড়িতে উঠলাম। একটা সিগারেটও খেলাম।

আমি অফিসের জন্যই আসলে রওয়ানা হয়েছিলাম কিন্তু র‍্যাংক্স পর্যন্ত যেতে যেতে আমার একবার মনে হলো, অফিসে যাওয়ার আগে একবার স্তাফ সার্জনের সাথে দেখা করে যাই। গাড়ি ঘুরিয়ে সি এম এইচ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ওখানে স্তাফ সার্জন লেঃ কর্নেল আল আমিন বসা ছিলো। আমি সিরিয়াল নিলাম। প্রায় ৪০ মিনিট পর সিরিয়াল পেলাম বটে কিন্তু আমার বুক তখন বেশ ভালো ধড়ফড় করছিলো। স্তাফ সার্জনের কাছে যাওয়ার আগে প্রেসার মাপালাম, একেবারে সুন্দর প্রেসার কিন্তু আমার বুকে ভীষন ধরফড় করছে। আমার ধারনা ছিলো যে, প্রেসারের হেরফের হলেই হয়তো বুক ধড়ফড় করে। কিন্তু স্তাফ সার্জনের কথায় বুঝলাম, প্রেসারের সাথে ধড়ফরের কোনো সম্পর্ক নাই আবার আছেও।

যাই হোক, আমার সকালের অনুভুতি, অবস্থা এবং বর্তমান কন্ডিশন আল আমিনকে বলার পর সে, খুব সহজেই ব্যাপারটা যেনো বুঝে গেলো। সে আমাকে দ্রুত নীচ তলায় ইমারজেন্সিতে রিপোর্ট করার জন্য পাঠিয়ে দেয়।

ওখানে যাওয়ার পর পরি আমার ইসিজি, ইকো এবং প্রেসার ইত্যাদি নেয়া হলো। আর সাথে সাথে একতা ব্লাড স্যাম্পল পাঠান হলো ল্যাবে। ট্রপিরন মাপার জন্য। প্রায় ২ ঘন্টা পর আমার ট্রপিরন পেলাম। রেঞ্জ ভীষন খারাপ। কাট অফ রেঞ্জ থাকার কথা ৪৭, আর আমার রেঞ্জ ২১০০০। একজন মহিলা মেজর ডাক্তার আমাকে বল্লেন-স্যার আপনি কি জানেন যে, আপনি এখনো হার্ট এতাকের মধ্যেই আছেন? আমি এতো ডিলে করে হাসপাতালে কেনো এলেন? আপনার তো অবস্থা খুবই খারাপ। ইসিজি ভাল না, ইকোঅ ভালো না, আবার এদিকে আপনার ট্রপিরন এতো হাই, এই রেঞ্জে তো মানুষই বাচে না।

আমাকে দ্রুত ক্যাথ ল্যাবে পাঠান হল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মালেক, মেজর সানোয়ার, মেজর সর্না এবং আরো এখন মেজর আমাকে দ্রুত ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রাম করতে শুরু করলেন। অদ্ভুত ব্যাপার, আমার তিনটা আর্টারিতেই সিরিয়াস ব্লক। এলএডি তে ১০০%, বাকী অন্য দুটুতে ৯০% এবং ৮০%।

ব্রিগেডিয়ার মালেক খুব অবাক হয়ে বল্লেন-কিভাবে আপনি বেচে আছেন স্যার? আপনি তো এর আগেও কয়েকবার হার্ট এটাকে পড়েছেন। কিন্তু আপনি কি কিছুই বুঝেন নাই? আজকের হার্ট এটাক টা তো খুবই সিভিয়ার। আপনাকে এখনই অন্তত একটা রিং পরাতে হবে।

আমি বললাম, তুমি ডাক্তার, আর সি এম এইচ আমার সংস্থা, এটাকে আমি বিশ্বাস না করলে আর কে বিশ্বাস করবে? তুমি যা করতে হয় করো।

তখনো মিটুল আসে নাই হাসপাতালে, আবির আর উম্মিকা দ্রুত চলে এসেছিলো আমি হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে ভর্তি হয়েছি শুনে। আবির “নো রিস্ক বন্ড”করে দিলো। আমার রিং পড়ানো শুরু হলো।

আমি এম্নিতেই একটু শক্ত মনের মানুষ। গত ২০১৭ সালে পায়ে রিং পড়ানর সময়েও ডাক্তারদের সাথে আমি অনেক মজা করেছিলাম অপারেশনের সময়। এবার ব্যাপারটা আমি ঠিক সেভাবে নিচ্ছিলাম। ভয় হচ্ছিলো না। ফলে ব্রিগেডিয়ার মালেককে বললাম, মালেক, তোমাদের ভিডিও ক্যামেরাটায় আমাকেও একটু দেখাইতে পারো, আমিও একটু মজা নেই।

মালেক ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে একটা মন্তয় করলো যে, ‘স্যার আমরা আছি আপনার লাইফ এন্ড ডেথ নিয়ে চিন্তিত আর আপনি এটাকে মজা নেয়ার কথা বলছেন?”

বুঝলাম, তাহলে খুব সিরিয়াস ব্যাপার হয়তো।

প্রায় আরাই ঘন্টা পর তারা আমার একটা রিং পড়াইতে সফল হলো।

অতপর সিসিইউ।