১৪/০৮/২০১৬- ৯/১১ এর ফল রাইস ভুইয়া

Categories

 

৯/১১ এর আসল হোতা কে বা কারা, এই তথ্যটা আজো পর্যন্ত জানা না গেলেও বিশ্ববাসী জানে যে, এটার পিছনে মুল পরিকল্পনাকারি যিনি তিনি একজন মুসলমান নামধারি ব্যক্তি। ফলে, ৯/১১ এর পরে হতাৎ করে সারাবিশ্ব মুসলমানদের প্রতি একটা খারাপ ধারনা করে নেয়। কেউ এটাকে কিছু বিচ্যুত ধার্মিক লোকের কাজ বলে মনে করেন, কেউ আবার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এটাই ইসলাম সমর্থন করে বলে মনে করেন ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, ৯/১১ এ যারা প্রান দিয়েছেন, তারা আর যাই হোক, তারা নিরীহ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। তারা তাদের নিজের ধর্ম নিজের মত করেই পালন করতেন, সেখানে কারো সঙ্গে কারো বিরোধ ছিলোনা। ওইসব নিরীহ মানুষগুলুর অসময়ের প্রানত্যাগ আমাদের সবাইকে অনেক অনেক ব্যথিত করে তুলেছিল এবং এখনো ব্যথিত করে। যারা ওইসব মানুগুলুর নিকটাত্মীয় ছিলেন, বন্ধু বান্ধব ছিলেন, যাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিলো তাদের কাছে ওইসব মানুসগুলুর প্রানত্যাগ তো কোনোভাবেই সহ্য করার মত ছিলো না। ফলে কারো মনে ঘৃণা, জিদ, আক্রোশ যে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আর এই আক্রোশ, ঘৃণা, কিংবা জিদ যাইই বলি না কেনো, তার থেকেই ঘটনা পরবর্তী অনেক কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে। যেমন, মার্ক স্ট্রুম্যানের কিলিং মিশন।

৯/১১ এর ১০ দিন পর, রাইস ভুইয়া মার্ক স্ট্রুম্যানের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকেন। এখানে রাইস ভুইয়া সম্পরকে কিছু না বললে ভুল হবে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে বাংলাদেশ এয়ার ফোরসেও যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কম্পিউটার টেকনোলোজি পড়ার জন্য আমেরিকার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। প্রথমে তিনি নিউইয়র্ক পরে তুলনামূলকভাবে কম খরচের স্ট্যাট ডালাসে চলে যান এবং সেখানে তিনি তার এক বন্ধুর গ্যাস স্ট্যাসনে পার্টনারশিপ ব্যবসায় যোগ দেন।

এবার আসি, মার্ক স্ট্রুম্যান সম্পরকে কিছু কথা। মার্ক স্ট্রুম্যান একজন দৈনিক শ্রমিকের কাজ করতেন ওই ডালাস শহরেই। ৯/১১ ঘটনার পরে মার্ক স্ট্রুম্যান এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন মুসলমানদের উপর যে, তিনি আরব বংসোউদ্ভুত কিংবা মধ্যপ্রাচ্য, কিংবা মুসলমান যে কোনো দেশের অধিবাশিই হোক, তাদেরকে খুন করাই ছিলো তার নিশানা।

এই কিলিং মিশন এর এজেন্ডা হিসাবে মার্ক স্ট্রুম্যান ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে ডালাসের এক শব্জি দোকানে ওয়াকার নামে এক পাকিস্থানিকে এবং তার ৬ দিন পর রাইস ভুইয়াকে সরাসরি গুলি করেন। ভাগ্য চরম ভালো যে, জনাব রাইস ভুইয়া প্রানে মারা যান নাই কিন্তু তার ডান চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায় এবং এখনো তার দেহে প্রায় ৩৫টি প্যালেট বিদ্যমান যা অস্ত্রপ্রচারেও বের করা সম্ভব হয় নাই। অবশেষে মার্ক স্ট্রুম্যানকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং বিচারের সম্মুখীন করে।

সবশেষে মার্ক স্ট্রুম্যান এর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু জনাব রাইস ভুইয়া এই মৃত্যুদণ্ডের বিপরিতে আপীল করেন যাতে মার্ক স্ট্রুম্যানকে হত্যা না করা হয়। জনাব রাইস ভুইয়া টেক্সাস এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর ডেথ পেনাল্টি আবোলিসন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে, কোর্টের মাধ্যমে, এমনকি নিজে সশরীরে আদালত প্রাঙ্গনে হাজির হয়ে মার্ক স্ট্রুম্যানের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করানোর জন্য দাঁরে দাঁরে ঘুরেছেন। এইভাবে প্রায় ১০ বছর পার হয়ে গেছে মার্ক স্ট্রুম্যানের বিচার কার্যকরী করতে।

বিশ্বের সবাই অবাক হয়ে শুধু একটা প্রশ্নই জনাব রাইস ভুইয়াকে করেছেন, কেনো তিনি তার ঘাতককে ক্ষমা করে দিচ্ছেন, শুধু ক্ষমাই না, তাকে মুক্তজীবন দান করতে চাচ্ছেন? জনাব রাইস ভুইয়া যা বলেছেন তা আমি হুবহু লিখছি যাতে কোনো কিছু ব্যত্যয় না ঘটে।

Q: Mr. Stroman has admitted trying to kill you. Why are you trying to save his life?

A: I was raised very well by my parents and teachers. They raised me with good morals and strong faith. They taught me to put yourself in others’ shoes. Even if they hurt you, don’t take revenge. Forgive them. Move on. It will bring something good to you and them. My Islamic faith teaches me this too. He said he did this as an act of war and a lot of Americans wanted to do it but he had the courage to do it — to shoot Muslims. After it happened I was just simply struggling to survive in this country. I decided that forgiveness was not enough. That what he did was out of ignorance. I decided I had to do something to save this person’s life. That killing someone in Dallas is not an answer for what happened on Sept. 11.

প্রশ্ন ছিলোঃ মার্ক স্ট্রুম্যান স্বীকার করেছেন যে তিনি আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আপনি কেনো তাকে বাচাতে চাইছেন?

জনাব রাইস ভুইয়ার উত্তর ছিলো; আমি আমার পিতামাতা এবং শিক্ষকদের দ্বারা অতি উত্তম শিক্ষায় মানুষ হয়েছি। তারা আমাকে নীতির মধ্যে এবং শক্ত বিশ্বাসের উপর মানুষ করেছেন। তারা আমাকে অন্যের জায়গায় বসিয়ে তাদের দিকটা বিবেচনা করার শিক্ষা দিয়েছেন। তারা আমাকে শিখিয়েছেন, কেউ যদি তোমাকে দুঃখ দেয়, প্রতিশোধ নেওয়ার দরকার নাই, এবং নিও না। তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। সামনে এগিয়ে চলো। এতে তোমার এবং অন্যের উভয়ের মঙ্গল হবে। আমার ধর্ম ইসলামও তাই শিক্ষা দেয়। মার্ক স্ট্রুম্যান যা করেছে, তা একটা যুদ্ধের পরিস্থিতির মতো মনোভাব এবং এই মনোভাবটা অনেক আমেরিকানরাই মনে মনে পোষণ করে যা স্ট্রুম্যান করেছে। হয়ত তারা (আমেরিকানরা) করার সাহস পাচ্ছিলো না কিন্তু মার্ক স্ট্রুম্যান করার সাহস পেয়েছিলো। এই ঘটনা ঘটার পর আমি শুধু নিজেকে এই দেশে বেচে থাকার জন্য সামলে নিয়েছি, অনেক কস্ট করেছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, শুধু তাকে ক্ষমা করাই একমাত্র সমাধান নয়, মার্ক স্ট্রুম্যান যা করেছে তা সে তার নির্বুদ্ধিতার কারনে করেছে, সে বুঝে নাই। এখন আমার কাজ তাকে বাঁচানো। ডালাসে বসে কাউকে খুন করাই সেপ্টেম্বর ১১ তে কি হয়েছে তার সমাধান হবে না।

শেষ পর্যন্ত আদালত মার্ক স্ট্রুম্যানের পূর্বের রেকর্ড, তার চরিত্রের বৈশিষ্ট সবকিছু চুলচেরা বিস্লেসন করে মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন এবং ২১ জুন ২০১১ তে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করেন। মৃত্যুর আগে মার্ক স্ট্রুম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ

Q: How are you doing, Mr. Stroman?

A: “I ’ve only 25 days left until Texas Straps me to a gurney and pumps me full of toxic bug juice, But then again, we all face an ending at some time or another. All is well, Spirits are high, I sit here with a cup of coffee and some good ole classic rock playing on my radio, how Ironic, the song ‘Free Bird’ by Lynyrd Skynyrd…”

Q: What do you think of Rais Bhuiyan’s efforts to keep you from being executed? A: “Yes, Mr Rais Bhuiyan, what an inspiring soul…for him to come forward after what I’ve done speaks volume’s…and has really touched my heart and the heart of many others World Wide…especially since for the last 10 years all we have heard about is how evil the Islamic faith can be…its proof that all are Not bad nor evil.”

Q: Tell me what you are thinking now, a few weeks before your scheduled execution.

A: “Not only do I have all my friends and supporters trying to save my life, but now I have The Islamic Community Joining in…Spearheaded by one very remarkable man named Rais Bhuiyan, who is a survivor of my hate. His deep Islamic beliefs have gave him the strength to forgive the un-forgiveable…that is truly Inspiring to me, and should be an example for us all. The Hate, has to stop, we are all in this world together. My jesus faith & Texas Roots have deepened my understanding as well. Its almost been 10 years since the world stopped turning, and we as a nation will never be able to forget what we felt that day, I surely wont, but I can tell you what im feeling today, and that’s very grateful for Rais Bhuiyan’s efforts to save my life after I tried to end his. A lot of people out there are still hurt and full of hate, and as I sit here on Texas Death watch counting down to my own death, I have been given the chance to openly express whats inside this Texas mind and heart, and hopefully that something good will come of this. We need more forgiveness and understanding and less hate.” Mr. Stroman signed off, “Texas Loud & Texas proud…TRUE AMERICAN…. Living to Die – Dying to Live.”

বাংলায় অর্থঃ

মৃত্যু পথযাত্রি মার্ক স্ট্রুম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,

(১) আপনি এখন কেমন আছেন?

উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “টেক্সাস আদালতের রায় অনুযায়ী বিষ প্রয়োগ করে আমাকে মেরে ফেলার আর মাত্র ২৫ দিন বাকি আছে। সবাই মরবে, আজ অথবা কাল। সব কিছুই ভাল, বিধাতাও ভালো। আমি এখন এখানে এক কাপ কফি আর কিছু খেলার সরঞ্জামাদিসমেত কিছু কিছু রক মিউজিক শুনছি রেডিওতে। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে একটা গানের কলি শুনি, আর তা হচ্ছে, পাখিকে মুক্ত করে দাও……”

(২) মার্ক স্ট্রুম্যানকে ২য় প্রশ্ন করা হয়েছিলো যে, আপনাকে বাচিয়ে রাখার জনাব রাইস ভুইয়ার আপ্রান চেস্টা আপনাকে কি মনে করিয়ে দেয়? বা আপনি কিভাবে ভাবছেন জিনিষটা?

উত্তরে মার্ক স্ট্রুম্যান বলেছে, “হ্যা, সত্যি কি স্পিরিচুয়াল (আধ্যাত্মিক) একজন মানুষ। আমি যা করতে চেয়েছিলাম তা তিনি জেনেও কি অবাক যে তিনি আমাকে বাচানোর জন্য আপ্রান চেস্টা করে যাচ্ছেন যা আমাকে এবং আমার মত অনেক আমেরিকানদের তথা বিশ্বাসীর হৃদয় পর্যন্ত ছুয়ে যাচ্ছে। এই গত দশ বছরে আমরা যত খারাপ খবর কিংবা মিথ্যা দর্শন শুনেছি ইসলাম সম্পরকে এবং ইসলাম ধর্ম পালনকারীদের সম্পরকে, তা আসলেই সঠিক নয়। এখন এটাই প্রমান হয় যে, সবাই খারাপ না, সবাই শয়তান নয়।

মার্ক স্ট্রুম্যানকে ৩য় প্রশ্ন করা হয়েছিলো যে, তিনি মৃত্যুর এই কয়েক সপ্তাহ আগে কি ভাবছেন?

উত্তরে মার্ক স্ট্রুম্যান বলেছিলেন, ” এখন শুধু আমার আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধু বান্ধবই আমাকে বাচানোর চেস্টা করছে না, বরং আমার ঘৃণার কারনে আমার দ্বারা গুলিবিদ্ধ এবং গুলিবিদ্ধ মৃত্যু থেকে বেচে আসা জনাব রাইস ভুইয়ার মাধ্যমে পুরু ইস্লামিক কমিউনিটিকে সঙ্গে পাচ্ছি যেনো আমি আমার জীবন আবার ফিরে পাই। তার(জনাব রাইস ভুইয়ার) ধর্মের পরম যে শিক্ষা যে, ক্ষমা করো এমন কি তাকেও যে ক্ষমার জন্যও যোগ্য নয়, তার এই বিশ্বাস আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে এবং এটা পৃথিবীর কাছে একটা উদাহরন হয়ে থাকবে। এখন আর ঘৃণা নয়, এটাকে থামাতে হবে। আমরা সবাই একই পৃথিবীর লোক। যীশুর এবং টেক্সাস রুটের উপর আমার বিশ্বাস আরো গভির হয়েছে। আজ থেকে ১০ বছর আগে যা ঘটেছিলো তা আমি এবং আমার দেশ কেহই হয়ত কখনো ভুলে যাবে না। এটাও ঠিক যে, ওই সময় আমরা নাগরিক হিসাবে কি ভেবেছি তা এই মুহূর্তেও বলা কঠিন কিন্তু এটা ঠিক যে, আজ এই মুহূর্তে আমি জনাব রাইস ভুইয়ার কাছে কৃতজ্ঞ যাকে আমি ঘৃণার কারনে মারতে চেয়েছিলাম। আমি এটাও জানি যে, আজো অনেক দেশবাসীর মনে কষ্ট আছে, দুক্ষ আছে, যন্ত্রনা আছে, ঘৃণাও আছে। কিন্তু এই ঘৃণা কমাতে হবে, আমাদের আরো সহনশীল হতে হবে। আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমি মৃত্যুর আগে অন্তত আমার মনের কথাগুলি এই টেক্সাসবাসিকে বলতে পারলাম। আমি চলে যাচ্ছি। Living to Die – Dying to Live.”

জনাব রাইস ভুইয়ার সঙ্গে আমার কয়েকবার ফেসবুকে কথা হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে তার এই মনোভাবের জন্য। তিনি একটা ওয়েব পোর্টাল খুলেছেন, নামটাও সুন্দর, WORLD WITHOUT HATE. আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার ওই ওয়েবপোর্টালের পাচ আঙুলের আইকন দিয়ে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন। মিনিংটা আরো সুন্দর। আমি অবশ্য এখন তার ওয়েব পোর্টালের একজন সদস্য বটে। সবশেষে তিনি গত রোজায় ওভাল অফিসে দাওয়াত খেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামার দাওয়াতে। বিশেষ ইফতারির আয়োজন করা হয়েছিলো জনাব রাইস ভুইয়ার সম্মানে। শুনেছি এখন তাঁকে নিয়ে এই প্রেক্ষাপটে একটা বিশ্বব্যাপি ম্যাসেজ দেওয়ার জন্য ছবি বানানো হবে যেখানে আমাদের রাইস ভুইয়া নিজেই থাকবেন। আমি তার একজন প্রাক্তন সিনিওর ক্যাডেট ভাই হিসাবে নয়, বাংলাদেশী হিসাবে বড় গর্ববোধ করি। আমি তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

(নোটঃ রাইস ভুইয়াকে বলছি, তোমার অনুমতি ছাড়াই আমি এই কথাগুলি আমার ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। আশা করি অপরাধ মার্জনীয়। আর তুমি এটাই করো)।