Categories
মীরপুর গোলারটেক, ঢাকা
শহরের পহেলা বৈশাখ আমার কাছে ভাল লাগুক আর নাই বা লাগুক, যখন দেখি আমার সন্তানেরা তাদের ভাই বোনদের নিয়ে, কাজিনদের নিয়ে কিংবা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এক আনন্দের পরিবেশে হৈচৈ করছে, মনে হয় পহেলা বৈশাখই হোক আর চৈত্র মাসের গরমের অনুষ্ঠানই হোক অথবা কারো জন্ম-বিবাহ কিংবা ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করার উপলক্ষই হোক, খারাপ কি? অন্তত পরিবারের মানুষগুলো তো আনন্দ করছে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। মন ভাল হয়ে যায়, যাই রান্না হোক তৃপ্তির সাথে ভাগাভাগি করে হৈহুল্লুর করে সময়টা কেটে যায়। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সবাই কিছুক্ষন সময়ের জন্য হলেও একসঙ্গে থাকা যায়।
আমাদের এই ব্যস্ত সময়ের মধ্যে তিন চার বছরের বাচ্চাটাও তার লেভেলে ব্যস্ত। অংক কোচিং, বাংলা কোচিং, ইংরেজি কোচিং, ক্লাস পরিক্ষা, ফাইনাল পরীক্ষা, পরাশুনা, রুটিন ক্লাস, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, আহ আরও যে কত কিছু। সবাই ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মাঝে তবুও তো ভেলেন্টাইন্স ডে এর নামে, ফাদারস ডে নামে, মাদারস ডে নামে, যেই নামেই হোক না কেন, কিছু তো সময় পরিবারের মানুষগুলো একটা সময় বেছে নেয় যেন পরিবারের সবার সঙ্গে একসাথে একটা সময় কাটানোর উপলক্ষ নিয়ে ছুটে চলে আসে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, দেশ থেকে অন্য দেশে, নিজের মানুষদের দেশে, নিজের পরিবারের দেশে। আগে তো আমরা বড়দের সালাম করতাম আর সালামের জন্য মনে একটা বাসনা থাকতো সালামি পাব, আদর পাব, আদরটা তখন খুব বেশি বুঝতাম না, সালামিটাই ছিল মুখ্য বিষয়। আজ আমি সালামি কেউ না চাইলেও সালামি দিতে পছন্দ করি। আমি আমার সেই ছোট বেলার অনুভুতি গুলোকে মনে করে বিষণ্ণ হলেও মনে এক আনন্দ পাই।
আজকে আমাকে ‘তুই’ বা ‘তুমি’ করে বলার লোকজনও কমে যাচ্ছে, এক সময় হয়ত আসবে ‘তুই’ করে বলার লোকগুলো আর কাছাকাছি থাকবেই না। হয়ত এই ইলিশওয়ালা পহেলা বৈশাখের জন্যই হোক আর যে কোন ডে এর উপলক্ষেই হোক, এইসব আপনজনগুলো তো একটা সময় করে কাছে আসে। আর এই কারনেই কোন ডে এর বিপক্ষে আমি না। নির্মল আনন্দটাই আমি খুজে নিতে চাই এইসব উপলক্ষগুলোর মধ্য থেকে। কোনটা ক্রিস্টিয়ান আর কোনটা এরাবিক কিংবা কোনটা হিন্দুয়ানী আর কোনটা বাঙ্গালির সেভাবে আমি দেখতে চাই না। আমি চাই এই ছবিগুলোর মধ্যে সবার মনে যে আনন্দ, যে ভালবাসা আর যে তৃপ্তির চেহারা ফুটে উঠেছে, সেটাই সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান আমার কাছে। এরা কেউ বিদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় বেছে নিয়েছে, কেউ পরাশুনা আগে থেকেই শেষ করে নিরঝলা আনন্দের জন্য ভাইবোন, শ্বশুর শাশুড়ি, খালা, খালু, ননদ ননদিনী, দুলাভাই, শ্যালক, সব বয়সের এক অপরূপ পারিবারিক বন্ধনের মধ্যে ছুটে এসেছে। এর থেকে আর বড় কি অনুষ্ঠান হতে পারে? হোক সেটা পান্তা ইলিশের পহেলা বৈশাখ অথবা হোক সেটা ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বেলা শেষে এই আনন্দটুকুই দরকার। সবার জন্য আমার ভালবাসা।