জর্জিয়ার মিশন শেষ করে ঢাকায় ফিরে এসেছি। ঢাকায় ফিরে এসেই শুনলাম আমাদের প্রোমশন কনফারেন্স হচ্ছে। মেজর থেকে লেঃ কর্নেল। আমি এখনো ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসায় আছি। যখনই কেঊ বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে, তখন অনেকগুলি ফর্মালিটিজ করতে হয়। মেডিক্যাল চেক আপ, ক্লিয়ারেন্স, যদি মিশনে যাওয়ার সময় কোনো কিছু ইস্যু করে থাকি সেতা জমা দেয়া, আবার যদি কোনো পোষ্টিং হয় তাহলে তো আরো অনেক ফর্মালিটিজ। আমরা লগ এরিয়ার আন্ডারে আপাতত সুপার নিউমিরাল স্ট্যাটাসে আছি। প্রোমোশন কনফারেন্সে আমাদের প্রোমশন হবার কথা। অনেক রিউমার শুনছি, কেউ বলছে আমাদের অনেকের প্রোমশন হয়েছে আবার কেউ বলছে এখনো ফাইনাল নয়। টেনসনে তো অবশ্যই আছি কিন্তু আমার প্রোমশন না হবার কোনো কারন আমি দেখিনা। স্টাফ কলেজ করেছি, গানারী স্টাফ করেছি, ভালো ভালো জায়গায় পোস্টিং ছিলো, পদাতিক ডিভিসনের জিএসও-(অপারেশন-২) ছিলাম, আর্মি হেডকোয়ার্টারেও জিএসও-২ (ট্রেনিং) ছিলাম। মিশন করলাম দুইবার, কোথাও কোনো কিছুর ঘাটতি নাই। প্রোমোশন বোর্ডে আমাকে চিনে এ রকম অন্তত বেশীরভাগ জেনারেলরা আছেন। যেমন, জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া (আমি যখন জিএসও-২ অপারেশন পদাতিক ডিভিসনে কর্মরত ছিলাম, তখন তিনি ছিলেন কর্নেল স্টাফ), জেনারেল মুবিন (আমি যখন এমটি ডাইরেক্টরে ছিলাম, তখন তিনি ছিলেন ডিএমটি), জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার (আমার ইউনিটের টুআইসি এবং সিও উভয়ই ছিলেন), জেনারেল সাহাব (আমরা বগুরায় একসাথে পাশাপাশি ইউনিটে কাজ করেছিলাম, তখন উনি ছিলেন ১ ফিল্ডের সিও আর আমি ছিলাম লোকেটিং ইউনিটের টুআইসি, একসাথে হাট হাজারীতে ফায়ারিং করেছি, প্রতিদিন প্রায় দেখা হতো), জেনারেল মইন ইউ আহমেদ (স্টাফ কলেজে উনি ছিলেন আমার ডিএস), সিজিএস জেনারেল ইকরাম (আমি যখন আর্মি হেডকোয়ার্টারে কাজ করেছি, তখন উনি আমার সিজিএস ছিলেন, বহুবার তাঁর সাথে আমার ইনটারেকসন হয়েছে), আছেন জেনারেল মুনিরুজ্জামান (আমার ৪ মর্টারের টুআইসি এবং সিও), মেজর জেনারেল রফিক (সিগ ন্যাল) এর সাথে আমি কাজ করেছি দুবার। একবার আমি স্টাফ কলেজ করার সময় তিনি ছিলেন আমার ডাইরেক্ট ডি এস আবার উনি যখন ৪ সিগ ন্যালের সিও ছিলেন বগুড়ায়, তখন আমি জি এস ও-২ (অপারেশন), এই রকম আরো অনেকগুলি জেনারেলের সাথে আমার ডাইরেক্ট কর্মজীবন পার হয়েছে। ফলে আমাকে বোর্ডে চিনবেন না এমন কেউ নাই। আর যারা চিনবেন না, তারাও আমার প্রোফাইল দেখলে অন্তত ভাববেন যে, আমার কোয়ালিটির কোনো কমতি নাই। ফলে আমি প্রোমোসন পাবো না, এটা আমার মাথায় আনতে চাই না।
কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই নাকি রাত হয়। বিএনপির রাজনৈতিক আমল। আমাদের ১৩ লং কোর্সের অনেক প্রবাব্যাল অফিসারকে টাচ করলো না। প্রোমশন কনফারেন্সের পর প্রায় ২ দিন হয়ে গেল, কিংক্রিত কোনো তথ্য পেলাম না। অবশেষে খবর পেলাম যে, আমাদের প্রোমশন হয় নাই। প্রায় শতভাগ ১৩ লং কোর্সের কারোরই প্রোমশন হয় নাই। এর প্রধান কারন, আমাদের একজন কোর্সমেট আছে মেজর ওয়াকার। সে আগের সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজের মেয়ের জামাই এবং আওয়ামীলিগের ঘরনার। সবার মন খারাপ। কেনো এই পলিটিক্স? যখন ফাইনাল প্রোমোশন তালিকা বের হলো, দেখলাম, আমাদের আর্টিলারীর কেউ প্রোমশন পায় নাই বটে কিন্তু আমাদের জিনিয়র ১৪ লং কোর্সের অন্য আর্মস এর অফিসারদের প্রোমোশন হয়েছে। এর মানে হলো, আমরা এবার সুপারসিডেড হয়ে গেলাম। আমার পোষ্টিং হয়ে গেলো খোলাহাটি, সইদপুর সেনানিবাসে ৪ ফিল্ডের টুআইসি হিসাবে। ওখানে আমার সিও হবেন আমাদেরই ক্যাডেট কলেজের আমার এক বছরের সিনিয়র ভাই লেঃ কর্নেল ফেরদৌস, ১০ম লং কোর্সের। ভালো মানুষ। কিন্তু আমার মেজাজ ভাল নাই। ঢাকার বাসা ছাড়তে হবে। আমি আবার আমার পরিবারকে খোলাহাটিতে নিতে ইচ্ছুক না কারন মিটুলের কর্মস্থল ঘিওর ঢাকার এনসিটিবি (ন্যাশনাল কারিকুলাম টেক্সট বুক বোর্ড) তে।
এমতাবস্থায় নিরাপত্তার খাতিরেই আমাকে আমার পরবারকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে মিটুল বাচ্চাদের নিয়ে একা থাকতে পারে। তাই, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসা ছেড়ে দিয়ে কচুক্ষেতে একটা বাসা ভাড়া করলাম, বাড়িওয়ালা অবসর প্রাপ্ত ফেরদৌস স্যার। আমাকে চলে যেতে হবে খোলাহাটিতে।