১৬/০৮/২০২৩-আমার গিন্নির সংক্ষিপ্ত কথা  

আমার গিন্নী শিক্ষক, তাও আবার যেনো তেনো শিক্ষক নন, পুরা অর্থনীতির ডিপার্ট্মেন্টাল হেড। এখন তিনি ভাইস প্রিন্সিপ্যাল।

কোথায় যেনো কোন এক মনিষী বলিয়াছিলেন, কর্মক্ষেত্র অনুপাতে নাকি মানুষের অনেক কিছু জীনগত বেশ পরিবর্তন আসে। যেমন সব ডাক্তাররাই ভাবেন তাদের আশেপাশের সবাই রোগী, সব উকিলরা কাউকে পেলেই কিছু উকালতি বুদ্ধি দিয়া দেন, আবার কেউ পুলিশে চাকুরী করিলে নাকি সবাইকে সন্দেহই করিতে থাকেন, হোক সেটা তাহাদের বউ কিংবা স্বামী অথবা পাড়াপ্রতিবেশী। তো শিক্ষক যাহারা তাহারাও ব্যতিক্রম নন। সবাইকে ছাত্রই মনে করেন। আমার বউ টিচার হিসাবে আমি ছাত্র হিসাবেই নিজেকে মনে করি। উপদেশ তিনি যাহাই আমাকে দেন, আমি শিরধার্য মনে কইরা শান্তশিষ্ট সুবোধ বালকের মতো তা পালনে চেষ্টা করি। এতে লাভ দুইটা। সংসারে অশান্তি হয় না আবার আমার মাথাও ঠান্ডা থাকে।

কিন্তু টিচারদের বড় সমস্যা হচ্ছে-উনারা সংক্ষিপ্ত কথা সংক্ষিপ্ত আকারে কইতে পারেন না। কথার মধ্যে ভূমিকা থাকিবে, যাহা বলিবেন তাহার ব্যাকগ্রাউন্ড ইতিহাস থাকিবে, তারপর মুলকথায় আসিলেও পথিমধ্যে আবার কোনো ইতিহাসের কথা আসিয়া পড়িলে সেইটাতেও ছাড় দিতে নারাজ। উদাহরণ দেই-

আমার গিন্নি কয়েকদিন আগে আমাকে বিমানের একটা টিকেট হোয়াটস আপে পাঠাইয়াছিলেন। পরে বিস্তারীত দেখিবো দেখিবো করিয়া আর সেইটা ভালোমত দেখা হয় নাই। তো গতকাল রাতে খাওয়ার সময় হটাত বলিয়া উঠিল-আমি তো পরশু যাচ্ছি, জানোতো?

আকাশ হইতে পড়িলাম, মুখে পড়োটা ছিলো, চিবাইতেছিলাম, তাহাও বন্ধ হইয়া গেলো, তাহার দিকে অসহায়ের মতো তাকাইয়া বলিলাম, কোথায় যাইতেছো?

তাহার মুখের অভিব্যক্তি দেখিয়া বুঝিলাম, কোথাও আমার এমন কোনো স্মৃতিশক্তি হারাইয়াছে যাহাতে এখুনি বুঝি ১৪ স্কেলের একটা ভূমিকম্প অথবা রুমকম্প হইবার সম্ভাবনা। বুঝিয়াই বলিলাম, উহ হ্যা, তো কিভাবে যাচ্ছো?

বুঝিলাম, তাহাতেও আমার ডজ করিবার উপায় ঠিক ছিলো না। বাহানা করিলেই আমি ধরা খাই, এটা আবারো প্রমানিত। যাক, ভূমিকম্প বা রুম কম্প কিছুই হইলো না।

তিনি বলিতে থাকিলেন, তোমাকে না আমি টিকেটের কপি পাঠাইছিলাম!!

বলিলাম, ওরে, ভুলেই তো গেছিলাম। পড়েছিলাম তো......

তারপর তিনি বলিতে লাগিলেন, তাহার এক কলিগের মেয়ে কিংবা ছেলের বিয়া, তাহাকে নেমন্তন্ন করিয়াছে, যেতে হইবে সেই সুদুর বগুড়া। বিমানে যাইবেন তিনি। তো আমি আবার জিজ্ঞেস করিলাম, কবে আসিবা?

গিন্নীর সোজা উত্তর-তোমাকে না টিকেট পাঠাইছিলাম, টিকেটে লেখা ছিলো না?

বললাম, হ্যা তাই তো। টিকেটে তো লেখাই ছিলো। কি যে অবস্থা, আজকাল সব ভুলে যাই।

তারপর আবার আমার গিন্নীর কথা শুরু হইলো। তিনি কিন্তু কবে আসিবেন, সেইটার উত্তর দিচ্ছেন।

এই ধরো আগামীকাল বিকালে আমাদের ফ্লাইট। তাই কলেজ থেকে একটু আগেই ফিরিবো। এরআগে কলেজের সবকাজ সমাপ্ত করিবো। অনেক কাপড় চোপড় নেবো না, বাসায় এসে গোটা কিছু কাপড় নেবো। ড্রাইভারকে আসতে বলেছি একটু আগেভাগে যেনো এয়ারপোর্টে যেতে আবার বিলম্ব না হয়। যেই জ্যাম আজকাল। কেনো যে এতো জ্যাম বুঝতে পারি না। মানুষগুলি নিজেরা নিজেরাই জ্যাম বাধায়। কোনো আক্কেল নাই। হটাত করিয়া এদিক থেকে রিক্সা, ওদিক থেকে “পাঠাও”, আবার কেউ কেউ সিরিয়াল ভেংগে ওভারটেক করতে গিয়া রাস্তার মুখেই জ্যাম বাধাইয়া দেয়। বাজে সব ড্রাইভারের দল। যাক গে, বাসা থেকে রওয়ানা হবো, আপাকেও বলে রেখেছি যেনো উনিও আগেভাগে রওয়ানা দেয়। তা না হলে ওনার জন্য আবার আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।

বললাম, আরে ফিরবা কবে?

গিন্নী বল্লো- এতো অধইর্য কেন? আগে তো যাইই। গেলামই তো না।

বললাম, তাই তো তুমি তো এখনো এয়ারপোর্টেই গেলা না। তারপর?

তারপর গিন্নী বল্লো-বিমানজার্নী প্রায় ১ ঘন্টা। সন্ধ্যার আগেই নেমে যাবো। নেমেই ওখানে আপার হাজবেন্ড গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবেন। তোমাকে তো বলাই হয় নাই, আপার হাজবেন্ড অমুক জায়গায় চাকুরী করতেন। ওরে বাবা, অনেক ভালো চাকুরী। তাঁর চাকুরীর সময় উনি অনেক মানুষের উপকার করেছেন। খুব অমায়িক মানুষ, আপার সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। খুব সংসারী মানুষ। তাঁকে তাদের গ্রামের মানুষ অনেক শ্রধ্যা করে। এখোনো উনি এই সেই করেন (সংক্ষেপে বললাম আর কি)

বললাম, আরে ভাই, তুমি ফিরবা কবে সেটা তো বললে না।

উফ তোমার সাথে কথা বলতে গেলে এতো অধইর্য হইয়া যাও যে, আসল কথাই বলা হয় না।

বললাম- আরে আসল কথা তো জানতেই চাচ্ছি- ফিরবা কবে?

এদিকে হটাত করে তাঁর মোবাইলে কার যেনো কল বাজিয়া উঠিলো। তিনি কল ধরিলেন, সেই আপা যাহাদের বাসায় তাহার নেমন্তন্ন। এখন আপার সাথেই তিনি কথা বলছেন। আমি বসেই রইলাম কবে তিনি ফিরবেন সেটা জানার জন্য।

আমি টেলিভিশনে রাতের খবর দেখি, ফলে খবরের টাইম প্রায় ছুইছুই। আমি খবর দেখিলাম, রাতে ঘুমাইলাম, পরের দিন অফিস করিলাম, এইমাত্র বাসায় ফিরিলাম। আমার গিন্নী আগামীকাল বগুড়ায় যাইবেন। একদিন পার হয়ে গেলো, আমি এখনো অপেক্ষায় আছি তিনি কবে ফিরবেন সেটা এখনো জানিতে পারি নাই।