১৬/৮/২০২৩-বিশ্ব রাজনীতিতে একটা অসম সমঝোতা

নিজারের (Niger) অভ্যুথান বিশ্ব রাজনীতিতে একটা অসম সমঝোতার সৃষ্টি করছে বলে আমার ধারনা। ব্যাপারটা এমন যেনো কোনো এক সুতার বান্ডেলের মতো অগোছালোভাবে পেচিয়ে জট পাকিয়েছে। অনেক হিসাব কিতাব এখন আর সহজ সরলীকরনের মধ্যে থাকছে না। তাহলে একটু দেখিঃ

(ক)      নিজারে (Niger) ফ্রান্স এবং আমেরিকার সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিসহ তাদের বেশ কিছু মিলিটারী বেজ রয়েছে। আমেরিকার রয়েছে দুটূ (বেজ ১০১, এবং এয়ারবেজ ২০১)। বর্তমানে নিজার (Niger) ফ্রান্সের সমস্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ তাদের যাবতীয় মিলিটারী বেজকে অপসারনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি অথবা তাদের সামরিক বেজগুলির ব্যাপারে নিজার (Niger) আপাতত কিছুই বলেনি। এখানে উল্লেখ্য যে, সামরিক উপস্থিতি বা সামরিক এই বেজগুলি প্রধানত ওয়েষ্ট আফ্রিকান দেশসমুহের সাথে মিলে ইউএস, ফ্রান্স, ইউএন এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশসমুহ সাহেল রিজিয়নে ইসলামিক এক্সট্রিমিষ্টদেরকে দমনের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম, সার্ভিলেন্স এবং রেকি মিশনসহ যাবতীয় মিলিটারী ট্রেনিং, সামরিক এয়ারক্রাফট লিফটিং এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।

(খ)       পার্শবর্তী দেশ চাঁদ, মালি, গিনিয়া, বারকিনো ফাসুতে মিলিটারী সরকার গঠনের পর সেখানে ফ্রান্স, আমেরিকা, ইউএন এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশসমুহের সামরিক উপস্থিতি বাদ হয়ে যাওয়ায় এবার নিজারেও (Niger) সেই একই ধাচের সরকার আরম্ভ হওয়ায় ধরে নেয়া যাচ্ছে যে, সর্বশেষ দেশ, অর্থাৎ নিজার (Niger) থেকেও যদি তাদের এই সামরিক উপস্থিতি বা বেজগুলি গুটিয়ে আনতে হয়, তাহলে অত্র অঞ্চলে তাদের আর কোনো প্রভাব খাটানোর মত কোনো ফোর্স অবশিষ্ট রইলো না। এই অবস্থায় যদি আমেরিকা নিজারের (Niger) মিলিটারী অভ্যুথানকে অভ্যুথান হিসাবে স্বীকৃতি দেয় তাহলে পশ্চিমাদেরকেও উক্ত অঞ্চল থেকে সমস্ত বেজসহ সামরিক বাহিনীকে গুটিয়ে নিতে হবে। এতে ওয়েষ্ট আফ্রিকায় বা সাহেল রিজিয়নকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের পরিচালিত অপারেশন গুলি আর করা সম্ভব হবে না। 

(গ)       ঠিক এই অবস্থায় আমেরিকা একটি কঠিন পরিস্থির সুম্মুক্ষিন হয়েছে বলে আমার ধারনা। যদি অভ্যুথানকে সমর্থন দেয়, তাহলে তাদের সাথে মিলিটারী টু মিলিটারী চুক্তিসমুহ বাতিল করতেই হবে এবং সর্বপ্রকার এইডস বা সাহাজ্য সহযোগিতা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এই এইডস বা সাহাজ্য সহযোগীতা দেয়া থেকে বিরত থাকলেই নিজার (Niger) আর আমেরিকাকে আলাদা করে দেখার কোনো অবকাশ নাই, ফ্রান্সের মতোই তাদেরকেও নিজার (Niger) ছাড়তে নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। আবার যদি অভ্যুথান কে অভ্যুথান হিসাবে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে আমেরিকাকে এইডস বা সাহজ্য সহযোগীতা প্রবাহ চালিয়ে যেতে হবে যা কিনা আমেরিকার আইনের পরিপন্থি। অন্যদিকে আবার এই এইডস বা সাহাজ্য সহযোগীতা প্রবাহ বন্ধ না করলে আমেরিকার সাথে ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাবে। তাতে ইউক্রেন যুদ্ধ একটা বেমালুম প্রহসনে পরিনত হবে। কারন রাশিয়াকে আটকাতে সবচেয়ে বেশী প্রক্সি ওয়ার পশ্চিমা দেশগুলিই চালাচ্ছে এবং সে মোতাবেক আমেরিকাই সবাইকে চাপের মধ্যে রেখেছে যেনো ইউক্রেনে সবাই পর্যাপ্ত পরিমানে সাপোর্ট দেয়। যদিও আমি কোনো যুদ্ধের পক্ষেই না। হোক সেটা নিজারে (Niger) বা ইউক্রেনে।

এখানে আরো একটা দুশ্চিন্তার কারন রয়েছে আমেরিকার। আর সেটা হলো, নিজার (Niger) আসলে ইসলামিক এক্সট্রিমিষ্টদের কোনো আখড়া নয় কিন্তু রাশিয়ার সমর্থনে ভাগনার গ্রুপ অবশ্যই একটা বড় ধরনের হুমকী যারা রাশিয়ার এজেন্ডা নিয়ে অপারেশন পরিচালনা করে। ভাগনার গ্রুপ অনেক আগে থেকেই মালি, বারকিনো ফুসু, চাঁদ, কিংবা সাধারনভাবে যদি বলি তারা ওয়েষ্ট আফ্রিকায় অপারেশন করে। ফলে রাশিয়ার প্রভাব এই এলাকায় দমনের জন্যে হলেও তাদের মিলিটারী বেজ, সামরিক উপস্থিতি এবং অন্যান্য মিলিটারী কার্যাবলীসহ অপারেশন চালিয়ে নেয়া দরকার।  

ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে (একদিকে ফ্রান্স, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে হাতে রাখা, আবার অন্য দিকে নিজারের (Niger) মিলিটারী অভ্যুথানকেও সমর্থন করা) সামাল দেয়ার থেকে আগে এটা নিশ্চিত করতে চায় নিজা (Niger) আসলে কি চায় সেটা জানা। আর এই কারনেই সবার ইন্টারেস্টকে একদিকে সরিয়ে আমেরিকার নিজস্ব ইন্টারেষ্টকে প্রাধান্য দিয়ে আমেরিকা ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ডকে নিজারে (Niger) আলাপের জন্য পাঠিয়েছেন। সে নিজারের (Niger) জান্তাদের সাথে আলাপ করতে গেলেও কতটা সফল হয়েছে এ ব্যাপারে না ন্যুল্যান্ড না তাঁর প্রধান এন্টনী ব্লিংকেন কোনো মন্তব্য করেছেন। তবে তথাকথিত রীতি অনুযায়ী আপাতত নিজারে (Niger) আমেরিকার এইডসকে স্থগিত (বাতিল নয় কিন্তু) করেছে এবং ‘এটা একটা খন্ডকালীন সামরিক অপারেশন হিসাবে চালিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অভ্যুথান হয়েছে বলেন নাই।

ফ্রান্স এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাই খুবই ক্ষুদ্ধ।