পৃথিবী ঘুরলে বুঝা যায় যে, সত্যিই এই পৃথিবী একদিন চরম অশ্লীলতায় ছেয়ে যাবে, মানুষের মধ্যে কোনো হায়া, লজ্জা কিংবা একে অপরের প্রতি সম্মানবোধটুকু সম্ভবত আর রাখতে পারবে না। আজ থেকে ২৫ বছর আগেও মানুষের এতো অধোপতন ছিলো না এখন যতটুকু দ্রুত অধোপতনের দিকে যাচ্ছে। কথাগুলি কেনো বললাম? নিতান্তই নিজের রিসেন্ট অভিজ্ঞতা থেকে।
পরিবার নিয়ে (অর্থাৎ আমি, আমার স্ত্রী, উম্মিকা এবং উম্মিকার স্বামী আবির) এই কয়জন মিলে একটা ব্রেক নেবার জন্য থাইল্যান্ড ঘুরতে গিয়েছিলাম গত ৯ জানুয়ারী থেকে ১৬ জানুয়ারী পর্যন্ত।
প্রথমেই আমরা সুবর্নভুমি এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে আরেকটা কানেক্টিং ফ্লিয়াটে চলে গিয়েছিলাম ফুকেত। বেষ্ট ওয়েষ্টার্ন হোটেলে আমরা উঠেছিলাম। ১৯০ প্যাংমুয়েং সাই গর রোডে এটার অবস্থান। একেবারেই ফুকেট বীচের পাশে। আমার পায়ে ব্যথার কারনে খুব বেশী হাটাহাটি করতে [পারি না তাই আমি খুব বেশি ঘুরাঘুরীও করি না। বাইরে খাওয়ার জন্য বা আশেপাশে টুকটাক কোথাও যাওয়ার জন্য আমি আমার পরিবারের সাথে বাইরে যাই। বেশীর ভাগ সময় ওরাই বাইরে বাইরে শপিং কিংবা ঘুরাঘুরি করে।
১ম দিন শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ২য় দিন ফুকেত থেকে ফিফি আইল্যান্ডে রিভার ক্রুজ করতে গেলাম। বেশ দূর। ফিফি আইল্যান্ডটা হচ্ছে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে যেতে হয়। এটা মালাকাত দ্বীপ এবং কোকোট দ্বীপের মাঝে অবস্থিত। খুব চমৎকার লোকেশন এবং যেতেও বেশ আরামদায়ক। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে-এখানে প্রচুর ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশের নাগরিকগন ভ্রমনে আসেন। তাদের ড্রেস এতোটাই নগ্ন যে, মাঝে মাঝে আমার ঘেন্নাও হচ্ছিলো না। প্রায় শতভাগ কোন নগ্ন রমনী গলা ছোলা মুরগীর মতো দুই ঠ্যাং প্রসারিত করে আমার পাশে সান-বাথে বসে যায়, তখন মনে হয় শিপে মাছি থাকলে তারাও উরে যেতো।
যাই হোক, ফিফি তে গিয়ে বীচে গয়ে কিছুক্ষন বসে থেকে আর আমার পরিবারের সবাই বীচে নেমে কিছু ছবি টবি তুলে আমরা চলে এলাম ফিফি আইল্যান্ডের হোটেলে লাঞ্চের জন্য।লাঞ্চ করেই আবার ব্যাক করলাম ফুকেটে।
সন্ধ্যার ফুকেট বড্ড নোংরা। বিশেষ করে বীচ এলাকা। এটা কোনো সভ্য জগতের মানুষের রুচীর মধ্যে পড়ে না। ওরা নগ্ন উদোম গায়ে যেনো বন্য শুয়রের দল। যাই হোক, পরেরদিন গেলাম টাইগার পার্কে। জায়গাটা সালং মুএং এ অবস্থিত। ওখানে গিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। প্রতায় ৮/৯ টা বাঘ আছে যেগুলি সারাদিন মাটিতে শুয়ে ঘুমুচ্ছে। নেশার মতো ঘুমুচ্ছে ওরা। আর কিছু পর্যটক ওদের লেজ ধরে, গায়ে হাত বুলিয়ে পাশে বসে বাঘের সাথে ছবি তুলছে। আমার স্ত্রী সাথে সাথেই আমাকে বল্লো-বাঘগুলিকে শক্তিধর কোনো নেশার ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম না পারালে এভাবে একতা বাঘ মাটিতে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। ঘটনাটা আসলেই তাই। এতা ভাবতেই মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো। বাঘকে এভাবে দিনের পর দিন নেশাজাতীয় মেডিসিন দিয়ে জিম্মি করে খাচায় বন্ধি করে একটা ব্যবসা করা অপরাধ যেমন, তেমনি পাপও। এরা নীরিহ না হোক, এদের সুস্থ্যভাবে বেচে থাকার অধিকার আছে। আমার আর খাচার ভিতরে গিয়ে ওদের সাথে ছবি তুলতে ইচ্ছে করলো না। মনতাই আমার খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
২ রাত ফুকেটে থেকে আমরা চলে এসেছিলাম পাতায়ায়। থাইল্যান্ড পর্যটকের দেশ। প্রচুর পরিমান দেশী বিদেশী পর্যটক। আমরা সেখানে গোল্ডেন বীচ হোটেলে উঠেছিলাম। একেবারেই বীচের পাশে। হাটা ডিসট্যান্স। এখানে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। কিন্তু ওই একই পরিস্থিতি বীচের। এই পাতায়ায় প্রচুর পরিমানে ইন্ডিয়ান আসে, আর লোকাল লকজনের মধ্যে প্রচুর পরিমান সাউথ ইন্ডিয়ান এবং বার্মিজ কাজ করে। চারিদিকে ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট আর বাজার। থাইল্যান্ডের রাস্তাঘাট পরিষ্কার, নোংরা নয়। পাতায়ায় আমরা ডলফিন শো দেখতে গেলাম। সুন্দর একতা সময় কেটেছিল সেখানে। পাতায়া ডলফিনারিয়াম।
গ্রান্ড প্যালেস, বৌদ্ধ মন্দির, রিভার ক্রুক টার্মিনাল ২১
১৬ তারিখে ব্যাক।
চলবে......।।