Categories
আমার স্ত্রীর এই কথাটা বড়ই সত্য যে, তাহার মতো বউ আমার কপালে জুটিয়াছিলো বলিয়া এতোদিন সংসার টিকিয়া আছে। অন্য কোনো স্ত্রী হইলে আমার কপালে কত যে বিরম্বনা বাধিত তাহার কোনো ফর্দ থাকিতো না। আমি অনেক হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, ঠিকই তো বলিয়াছে। তাহার কথা একেবারে ভগমানের অস্তিত্তের মতো সত্য। কারন, আমি কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীক হিসাব অনায়াসে করিতে পারিলেও সংসারের চাল, ডালের হিসাব, কিংবা কোন শব্জিতে কতটুকু তেল ঢালিলে কি পরিমান সাধ হইবে, কিংবা ডিমটা কতোক্ষন গরম পানিতে সিদ্ধ করিলে উহার খোষা ছাড়াইতে আর বেগ পাইতে হইবে না, এইসব ব্যাপারে আমার থেকে নাদান মনে হয় আর একটাও এই দুনিয়ায় আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন কিনা আমার জানা নাই। আমি স্রিষ্টিকর্তার কাছে অতিশয় বিনয়ের সাথে কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করি যে, তাহার মতো একজন রুপবতী, গুনবতী এবং মাতৃসুলভ একজন স্ত্রী দান করিয়াছেন। হে ঈশ্বর, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাতৃসুলভ কেন বলিলাম?
এই বয়সে আসিয়া আমরা প্রায় ভাইবোনের মতোই যেনো হইয়া গিয়াছি। আবার তিনি যখন আমাকে কোনো কিছু আদেশ করেন কিংবা কোনো ব্যাপারে জ্ঞান দান করা শুরু করেন, তিনি সেই বিষয় সম্পর্কে এমন করিয়া আমাকে বুঝাইয়া দেন, যেনো তিনি মায়ের মতোই ৭ বছরের কোনো বালককে কিছু বুঝাইতেছেন অথবা ক্লাসে কোনো নির্বোধ ছাত্রকে কঠিন কোনো থিউরী পড়াইতেছেন। কাগজে আকিয়া, হাত নাড়াইয়া, তথ্যবহুল উদাহরনের মাধ্যমে তিনি আমাকে ব্যাপারটা যুতসই জ্ঞান দিয়া একেবারেই সহজ করিয়া আমার ঘিলুতে প্রবেশ করাইয়া দেন। তাহার পরেও যদি তাহার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকিয়া যায় যে, আমার মতো একটা নির্বোধ মানুষ পুরু ব্যাপারটা বুঝিয়াছে কিনা কে জানে? তাই আবার ফোনে কিংবা ডিজিটাল মেসেজেও পুনরাবৃত্তি করেন। আমি সতর্ক মানুষ, তাই একবার বুঝিয়া থাকিলেও যেনো কিছুটা বুঝিবার বাকী ছিলো এই ভান করিয়া অতি মনোযোগের সহিত কানের কাছে ফোনটা ধরিয়া বোবা প্রানীর মতো পুলকিত ভাব দেখাইয়া, “এইবার ব্যাপারটা বুঝিয়াছি” বলিয়া উচ্ছাসিত আবেগ প্রকাশ করি। তিনি খুশী হন। আমিও মনে মনে হাসি যে, ব্যাপারটা বুঝিয়াছি।
আমার মতো সব ভাগ্যবান স্বামীদের জন্য আমার কোনো উপদেশ নাই কিন্তু যাহারা আমার মতো এইরুপ সুপ্রশন্ন ভাগ্য লইয়া জীবন সুখে অতিবাহিত করিতে চাহেন কিন্তু এখনো সেই সোনার হরিন হাতে পাইতেছেন না বা হন্যে হইয়া খুজিতেছেন, তাহাদের জন্য আমার কিছু উপদেশ আছে বৈ কি।
যেমন ধরুন, তিনি আপনার মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতে চান। কোনো দ্বিধা করিতে পারিবেন না। হাসিমুখে দিয়ে দিন। আর তিনি আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহার করিবেন না কেনো? অবশ্যই করিবেন। তাহার বন্ধু বান্ধবীদের সাথে অনেক জরুরী খোশগল্প করার জন্য তাহার মোবাইলের টাকা খরচ তিনি কেনো করিবেন? তিনি তো আপ্নাকেই ফোনে এতো উপদেশ, বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়া থাকেন, তাহাতেই তো তাহার ফোনের ব্যলান্স অর্ধেক হইয়া যায়। আপনার নাদানত্তের কারনেই তাহাকে অনেক মোবাইল বিল ছাড় দিতে হয়। এখন তিনি তাহার বন্ধু বান্ধবীর সাথে এই অল্প কয়েক ঘন্টা কথা বলিয়া মনের ভাবটা পুরন করিবেন, তাহার জন্য তাহার মোবাইলের টাকা খরচ করিবেন কেনো? ইহা বড়ই অন্যায়। ফোনটা তাহার হাতে তুলিয়া দেন। রাগ করিবেন না। আপনার জরুরী ব্যবসায়ীক কথাবার্তার চেয়ে তাহার মন ভালো রাখাটা অতীব আবশ্যক।
যদি রাগ হইয়া থাকে আপনার, ভুলেও উহা তাহার সামনে প্রকাশ করিবেন না। তাহা হইলে যেটুক আরাম করিয়া নাক ডাকিয়া ঘুমাইতে পারিতেন, সেইটুকুও আর আপনার কপালে জুটিবে না। এমনো হইতে পারে, আপনার উপর অসন্তুষ্ঠ হইয়া মনের আবেগী কষ্টে তিনি তাহার ফেসবুক আইডিতে এমন কিছু মন্তব্য করিয়া ফেলিতে পারে, যাহার কারনে তাহার অন্যান্য ফেসবুক বন্ধু বান্ধব্দের অতিরিক্ত ভালোবাসায় আর উদারতার কমেন্টে আপনার জীবন যতোটুকু স্থিত হইয়াছিলো, ইহা আবার অস্থিতিশীল হইয়া আরব বসন্তের মতো আপনার সিংহাসন তো কাপিবেই, আপনার বুকের ভিতরের ছোত হৃদপিণ্ডটাও কাপিয়া উঠিতে পারে। কারন তাহাদের “কিরে কি হইলো আবার?”, “তোর মন খারাপ? আরে দুনিয়াটাই এই রকমেরই, কেউ বুঝতে চায় না রে বইন”, কিংবা এমনো কমেন্ট পাইতে পারেন, “উফ আপু, আপনার কষ্টে আমারো বুক ফাটিয়া যাইতেছে, সব পুরুষ মানুষ এক রকমের” অথবা আরো উচ্ছসিত হইয়া কোনো একসময় বাসে একত্রে যাতায়ত করিতে গিয়া কয়েক মিনিটের পরিচয়ী বান্ধবী এমন কমেন্টও করিতে পারেন যে, “আরে আপু, বেটারে ছেড়ে দিয়ে শিক্ষা দেন, দেখবেন, কত কাঠালে কত বিচি” ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই রাগ দমাইয়া রাখেন। তাহার পরেও যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারার কারনে রাগ করিয়াই থাকেন, তাহা হইলে অতিসত্তর রাগ কমিলে তাহাকে ভাই বোনের মতো আদর করিয়া ইহা বলুন, “আরে, মাথা ঠিক ছিলো না, দোষ তো তোমার না, দোষ ঐ পল্টু মিয়ার। সেইই তো আমার মাথাটা অফিসের সময় বিগড়াইয়া দিয়াছিলো, আর সেই কারনেই তো আমার রাগ হইয়াছিলো”। এই সময়ে কিছু কঠিন কথা শুনিবার জন্য মন প্রস্তুত রাখিবেন। যেমন ধরুন, “তোমার এই সংসারে আইস্যা আমার জীবন তেজ পাতা হইয়া গেলো, কি পাইলাম এই জীবনে হায় ভগবান?, কিংবা আমাত্রে সোজা পাইয়া যা খুশী কইরা গেলা, অন্য কেউ হইলে দেখতা কবে তোমারে ছাইরা যাইতো গা? ইত্যাদি ইত্যাদি। এই পর্যন্ত হইলে আপনি নিছক অতশয় ভাগ্যবান। আপনার চৌদ্দ গোষ্টির কেউ বাচিয়া থাকুক আর নাইবা থাকুক, তাহারা এই সময়ে জীবিত হইয়া আপনার মতো অকর্মন্য লোকের কারনে তাহারাও কিছু কঠিন মধুর কথা শুনিতেও পারেন। ভাগ্যিস, তাহারা এখন বধির এবং পরকালে থাকায় কোনো শক্তি খাটাইতে পারেন না, তাহা না হইলে, এই সময়ে আপনার স্ত্রীর কথায় আপনার কান ঝালাপালা না শুধু, সেইসব চৌদ্দ গোষ্ঠির এক থাপড়ে আপ্নিও বধির হইবার সম্ভাবনা থাকিতো।
(চলবে)