Categories
(সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট) এ একদিন
আজ গিয়েছিলাম ব্রাক এর সিডিএম (সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট) এ। আমার জানা ছিলো না যে, এতো কাছে এতো সুন্দর একটা জায়গা। চারিদিকে সবুজ বনায়ন, এক পাশে মস্ত বড় একটা পুকুর। পুরু ক্যাম্পাসটা ওয়াল দিয়ে ঘেরা একটা সুরক্ষিত চত্তর। নামাজের জায়গা, থাকার জায়গা, খাওয়ার জায়গা, শরীরচর্চা, সবকিছুই একটা পরিকল্পনায় করা। কোনো কোলাহল নাই, পরিবার নিয়ে বেড়ানো যায় এমন জায়গায়ই এটা। খুবই ভালো লেগেছে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির ১৫ তম ব্যাচের কয়েকজন (আওলাদ ভাই, মুস্তাক আহমেদ রিজভী ভাই, আফরোজা আপা, রোজ, হাসান ভাই, নেসার) ভাইদের সাথে বড্ড একটা ভালো সময় কাটালাম।
আমি জাহাঙ্গীরনগরের কেউ না, কিন্তু আমার স্ত্রীর সুবাদে মূটামুটি তার সব বন্ধুদের সাথেই আমার একটা আলাদা বন্ধুত্ত তৈরী হয়ে গিয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা অনেক বছর পর কোনো অনুষ্ঠানে আসে আর আমাকে হতাত তাদের কোন অনুষ্ঠানে দেখে, প্রায়ই বলে শুনি, দোস্ত তোমার চেহারা আমার মনে নাই কেন? কি জানি তোমার নাম ছিলো ইউনিভার্সিটির লাইফে? আমি মুচকি মুচকি হেসে বলি, আমি তো ফিজিক্সে ছিলাম। আর অন্য বাকীরা যারা আমাকে চিনে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে। মন্দ লাগে না।
যাই হোক, আজকে খুব বেশী বন্ধু বান্ধব এই অনুষ্ঠানটায় আসে নাই। গোটা পাচ ছয় জনার একটা দল। সবার সাথে আমি খুব ফ্রি ভাবেই মেশার চেস্টা করি। চেস্টা করি যাতে কেউ না ভাবে যে, প্রথমত আমি একজন সামরীক বাহিনীর অফিসার, এবং দ্বিতীয়ত আমি একজন ব্যবসায়ী। আর ভালো মানুষদের সাথে ভালো থাকাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। জাহাঙ্গীরনগর এর অনেকেই ব্যবসায়ী, কেউ কেউ ব্যাংকার, কেউ কেউ আবার প্রোফেসর। সব সেক্টরেই আছে। এটা একটা ভালো মিশ্রনের গ্রুপ। প্রায়শ ই যেহেতু আমি এই সব বন্ধুদের সাথে বেড়াতে আসি বা তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান গুলিতে আমি পারটিসিপেট করি, ফলে ব্যক্তিগত অনেক ভিউজ এবং মতামত আদান প্রদান করা হয়। সে রকমই আজো তার ব্যতিক্রম হয় নাই।
আজকের দলটির মধ্যে বেশীরভাগ সময়ে কথাবার্তা হলো হাসান ভাইয়ের সাথে। হাসান ভাই ইঞ্জেক্সন মোল্ডিং এর ব্যবসা করেন। প্লাস্টিক লাইনে। তারও দুটি মেয়ে। একটির বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর হলো। হাসান ভাইয়ের সাথে একান্ত সময়ে অনেক কথাবার্তা হলো। বেশ ভালো লেগেছিলো তার সাথে অনেক বিসয়ে কথা বলে। আমি যে জিনিসটা নিজে সাফার করে বুঝেছি বা কেউ বুঝে, হাসান ভাই সেটা আগে থেকেই সাফার না করে বুঝেছেন। খুব ইন্টারেস্টিং। কথা হল মেয়েদের নিয়ে, সংসার নিয়ে, ব্যবসা নিয়ে, বুড়ো বয়সের অভিজ্ঞতা নিয়ে, আত্মীয়তার প্রসঙ্গ নিয়ে। অনেক বাস্তবসম্মত চিন্তা ভাবনা হাসান ভাইয়ের। তার সাথে আমার অনেক কিছুই মিলে যাচ্ছিলো এবং আমার মনে হয়েছে তার কথাগুলির মধ্যে কোনো রকমের ভনিতার আশ্রয় নাই। আমাদের আলাপের কিছু চুম্বক অংশ আজ আমার ডায়েরীর পাতায় লিখে রাখার চেস্টা করছি।
তার বক্তব্যটা আমি তুলে ধরিঃ
মেয়ের জামাই (Son in Law) বা তাদের শশুড় বাড়ির প্রসংগে হাসান ভাইয়ের বক্তব্যঃ
…শুনেন আখতার ভাই, মেয়ের জামাই যাকে সান ইন ল (Son in Law) বলা হয়, সে কখনোই সান (Son) হতে পারে না। সে সান (Son) বাই (By) ল (Law)। আমার মা বলতেন, এক গাছের বাকল আরেক গাছে কখনোই লাগে না। এটা যেমন চিরন্তন সত্য, তেমনি সান এবং সান ইন ল কখনোই এক হতে পারে না, এটাও চিরন্তন সত্য। আমি আমার মেয়েদেরকে প্রায়ই বলে থাকি যে, শোন মা, আর যাই হোক, অন্তত আমি আমার কোনো ব্যবসায় আমার কোনো মেয়ের জামাইকে অংশীদার করবো না। না তার কাছে ব্যবসার কোনো কর্তৃত্ব ছেড়ে দেবো। আমার যদি ১০০টি বাড়িও থাকে তারপরও আমি আমার কোনো কিছুই আমি আমার সান ইন ল (Son in Law) কে দিবো না বা দিতে চাই না। আমার নামেই সব থাকবে, বা আমার অবর্তমানে আমার মেয়েদের নামে সব থাকবে। যদি আমার মেয়েরা সব নস্টও করে ফেলে, তারপরেও আমার একটা সান্তনা থাকবে যে, আমার মেয়েরাই নস্ট করেছে। যদি আমার আবার সামর্থ্য থাকে, আমি তাদের জন্য আবার গড়ে দিবো। কিন্তু আমার সান ইন ল (Son in Law) এরা কখনোই আমার তিলে তিলে গড়ে উঠা সম্পদের মাহাত্য বুঝবে না। কেনো বুঝবে না সেটার ব্যাখ্যাও তিনি দিতে ভুলে গেলেন না। আমি যে পরিশ্রম করে, আমার সমস্ত মেধা আর ইমেজ দিয়ে আমার ছোট ব্যবসা আজ একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি, সেখানে হটাত করে বিনা পরিশ্রমে অন্য বাড়ির একজন অপরিপক্ক মানুষ না বুঝবে এর দরদ না বুঝবে এর বেড়ে ঊঠার ইতিহাস। ফলে চুন থেকে পান খসলেও ব্যবসার প্রয়োজনীয় কিছু কিছু ব্যক্তি বা এলিমেন্টকে তার নিজের ইগোর কারনে নিমিসের মধ্যেই বহিস্কার করতেও বুক কাপবে না। কাকে দরকার, কাকে দরকার নাই, কোন কাজ টি করলে ব্যবসার বা প্রতিষ্ঠানের মংগল হবে সে ধার বা বিচার তার কাছে থাকে না। ফলে পরের ধনে পোদ্দারীর মতো বা স্ত্রী কপালে ধন পাওয়ার কারনে এইসব সম্পত্তির উপর তার শুধু আরামের স্থানটি রচিত হয়, তাকে ধরে রাখার প্রবনতা খুব কম ছেলের থাকে। এক সময় যদি বেশী চালাক হয়, স্বার্থের কারনে নিজের নামে সব পাকাপোক্ত করার বাহানা খুজে। এতে সবচেয়ে যারা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা হচ্ছে যার নিজের ব্যবসা তার এবং তার পরিবারের। ইতিহাস সেটাই বারবার প্রমান করেছে। ব্যতিক্রম যে নাই তা নয়। কিন্তু সেটাও খুব চোখে পড়ার মতো নয়।
আমিঃ আপনার অবর্তমানে তো মেয়েরাই তথা মেয়ের জামাইরাই মালিক। তাহলে ওদের দিতে অসুবিধা কই?
হাসান ভাইঃ সাথে সাথে তিনি একটা বাস্তব একটা উদাহরন দিলেন। নামটা এখানে গোপনীয়তা রক্ষা করার কারনেই উল্লেখ করছি না। ধরুন তার নাম মিস্টার এক্স। ভদ্রলোক বেশ নামীদামী ব্যবসায়ী। তার দুটি মেয়ে ছিলো। অতি আদর করে মিস্টার এক্স তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেন এক সুন্দর রূপসী ছেলের সাথে। ছেলে নাই। আর তিনি নিজে দেশের প্রতিষ্ঠিত একজন মস্ত বড় ব্যবসায়ী হবার কারনে সম্পদের কোনো অভাব নাই। অন্য আরেক কথায় বলা চলে যে, তিনি দেশের অর্থনীতি কন্ট্রোল করে যারা তাদের মধ্যে একজন। ছেলে নাই, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যেনো তিনি একজন ছেলে পেলেন। ভালোবাসায় তাকে এমন সিক্ত করলেন যে, শ্বশুরের অর্ধেক ব্যবসার মালিক হয়ে রীতিমত বড় বড় দৈনিক পত্রিকা গুলিতে নিউজ হয়ে গেলেন। শ্বশুর মহাশয় তার মুল ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা হস্তান্তর করে নিজের সাথে যোগ করে দিলেন। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, চালাক ছেলে। ধীরে ধীরে ছেলেটি শ্বশুরের ব্যবসায় বসে বসে সুযোগটা কাজে লাগাতে শুরু করেন। মেয়ের জামাইও তার মেধা কাজে লাগিয়ে পৃথকভাবে আরো একটা ব্যবসা শুরু করলেন। শশুড়ের তাতে কোনো আপত্তি ছিলো না। তার মেয়ের জামাই আআরো বড় হোক সেটাও তিনি চান। সাথে শ্বশুরের সাথে তো অংশীদারিত্ত আছেই। মাস ঘুরে বছর যায়, দিন পালটাতে থাকে। টুকটাক ছোট খাটো খুনসুটি লাগতে থাকে স্বামী স্ত্রীর মাঝে। সময়ের স্রোতে এই খুন্সুটি আরো জোরালো পর্যায়ে পৌঁছে যায়। মনমালিন্য থেকে এক সময় মুখ চাওয়া চাওয়ি পর্যন্ত দেখা বন্ধ হয়ে যায়। একটা সময় আসে যখন সম্পর্কটা যেনো আর টিকানোই যাচ্ছিলো না। এতো আদরের মেয়ের জামাইকে যেনো শশুড় আর চিন্তেই পারছেন না। তার ব্যবহার, আচরন, কথা বলার হাবভাব এতোটাই বেপরোয়া যে, তাকে আদর তো দুরের কথা সহ্যই করতে পারছিলেন না তার নিজের মেয়ে এবং শশুড়। এদিকে শুরু হয়েছে আরেক যন্ত্রনা যে, শশুড় তো ইতিমধ্যেই তার মেয়ের জামাইকে তার ব্যবসার অর্ধেক শেয়ার হস্তান্তর করে পাকাপোক্ত করে মালিক বানিয়ে দিয়েছেন, ফলে তার নিজের ব্যবসার মধ্যে সব সিদ্ধান্তে এখন তার মেয়ের জামাইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে যেখানে তিনি একা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখেন না। ধীরে ধীরে তার ব্যবসার অধোপতন শুরু হতে লাগলো। অন্যদিকে মেয়ের জামাইয়ের নিজস্ব যে ব্যবসা তিনি ইতিমধ্যে বিস্তার করে ফেলেছেন, তা ধীরে ধীরে শশুড়ের টাকাতেই দেশের নামীদামি একটা প্রতিষ্ঠানে রুপ নিতে শুরু করেছে। এখন শশুড় মহাশয় না পারছেন জামাইয়ের কাছ থেকে তার দেওয়া শেয়ার ট্রান্সফার করে ফিরিয়ে আনতে না পারছেন জামাইকে বশে আনতে। বছর ঘুরতেই যা হবার তাই হলো। মেয়ের সাথে জামাইয়ের তালাক হয়ে গেলো। অথচ জামাই তখনো তার নিজের ব্যবসার একজন অংশীদার এবং জামাইয়ের নিজের ব্যবসাও রমরমা। না পারছেন জামাইকে নিয়ে একসাথে ব্যবসা করতে, না পারছেন তাকে তার থেকে আলাদা করতে। অতি আদরের জামাই তার চিরশত্রু হয়ে গেলো। এ যেনো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে নিজেকে ধংশ করে দেওয়ার মতো অবস্থা।
এই পর্যায়ে হাসান ভাই বললেন, দেখেন, যদি আদরের বশে শশুড় এই ব্যবসার অংশীদার না করতেন, তা হলে আজ শ্বশুরের এই অবস্থা হতো না। হ্যা, জামাইকে জামাইয়ের জায়গায় ভালোবাসেন, তাকে তার নিজের যোগ্যতা দিয়ে বড় হতে দিন। সাহায্য করবেন কিন্তু এই রকম নয় যে, শেষতক নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানিতে পড়েন। জামাই আরেকটা বিয়ে করেছে, অথচ এখনো সে প্রাক্তন শশুড়ের সব ব্যবসায় সমান অংশীদার অথচ জামাইয়ের কোনো কিছুই এখানে ছিলো না। হাসান ভাই আরো বললেন, হ্যা এটা যদি নিজের ছেলে এমনটা করতো, তাহলে কোনো দুঃখ ছিলো না। নিজের ছেলেই তো। আর বাবার অনুপস্থিতিতে নিজের ছেলেই তো এইসব সম্পত্তির মালিক হতো। দুক্ষটা অনেক কম হতো।
হাসান ভাই বলতে থাক্লেন, এই ঘটনা থেকে তিনি শিখেছেন যে, পরের ছেলে কখনো নিজের ছেলে হয় না। আর শশুড় যতো ভালো মানুসই হোন না কেনো, জামাই তাকে নিজের বাবা মনে করে না। যদি কেউ এই সত্য অস্বীকার করে প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যায়, তাদের পরিনতি এই রকমই হয়। হ্যা, এটা ঠিক, যে, কোন বাবা চায় না যে তার মেয়ে সুখি হোক? কোন পিতামাতা চায় না তার সন্তানের জন্য এই পৃথিবীকে আরামদায়ক হোক? আর এই কারনে জামাইদেরকে অতোটুকু দিতে হয় যতোটুকু সে প্রাপ্য। এর মানে এই নয় যে, শশুড় তাকে ভালোবাসবে না। জামাই জামাইয়ের জায়গায়, ব্যবসা ব্যবসার জায়গায়, মেয়ে মেয়ের জায়গায়। সব কিছুতে তার নিজের জায়গায় রাখতে হয়। লিমিট অতিক্রম করলেই প্রচন্ড রকমের একটা ভারসাম্যতা হারিয়ে যাবার ভয় থাকে। আর ভারসাম্যহীন যে কোনো জিনিসই খারাপের দিকে যায়।
আমিঃ (আমি হাসান ভাইয়ের কথাগুলি শুনছিলাম। তারপর আমি বললাম), হাসান ভাই, আমার জীবনেও আমি এমন একজন মেয়ের জামাইকে দেখেছি যিনি তার শশুড়কে নিজের বাবার চেয়েও বেশি মহব্বত করেন। শ্বশুরের অনেক সব এমন করে ধরে রেখেছে যেনো সব কিছু তার সম্পদ, আবার কোনো কিছুই তার নয়। ঢাকা শহরেই তার বাড়ি আছে এই রকম ৭/৮ টা, ব্যবসা আছে, উত্তরায় অনেক জমি আছে যার দাম কয়েক কোটি টাকা। তার একটা মাত্র মেয়ে। ছেলে ছিলো দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ছেলের দুইটা বাচ্চা আছে। মেয়ের জামাই পুরু পরিবারটাকে এক করে ধরে রেখেছে। আমি নিজে দেখেছি যে, এই জামাই তার শহুড়কে গোসল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়, সারাক্ষন সংগি দেয়। পেপারটা পড়ে পড়ে শুনায়। জামাইয়ের নিজস্ব ব্যবসা ছিলো, স সব কিছু ছেড়ে এই বুড়া বয়সে শশুড়কে দেখভাল করে। তাহলে এইগুলা কি মেকী?
হাসান ভাইঃ (হাসান ভাই এবার আরো বললেন), না আখতার ভাই, এইগুলা মেকী নয়। তবে এই ধরনের মানসিকতার জামাই লাখেও একটা পাবেন না। আর যেটা স্বাভাবিক নয়, সেটা উদাহরন হতে পারে না। হাসান ভাই বলতে থাকলেন,
…আখতার ভাই, আমি বা আপনি মেয়ের বাবা বলে এমন তো নয় যে, ছেলে বা জামাই বা শশুড় বাড়ির লোক এমন কোন পুন্য করে ফেলেছে যে, আমরা ছোট আর তারা আমাদের পুজনীয়। হ্যা, পুজনিয় হবে তাদের ব্যবহারের কারনে, মানসিকতার কারনে, এই কারনে নয় যে, ছেলের বাবা বা জামাই হবার কারনে। ঈদ পরবনে আমি মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে প্রথমেই গরুর রান টা পাঠাতে চাই না। অডেল গিফট আর পন্য নিয়ে তাদের খুশী করতে চাই না। আমি চাই এতা দুই পক্ষ থেকেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী হোক। আর এই করার মধ্যে সবচেয়ে বেশী থাকতে হবে মানসিকতা আর রিস্পেক্ট। একটু এদিক সেদিক হলেই সতর্ক হওয়া খুব জরুরী। যদি সম্পরকটা লম্বা সময়ের জন্য টেনে নিতে হয়, সেখানে ধীরে ধীরে এগুনোই মংগল। আবেগের কোনো স্থান দেওয়া উচিত নয়। বেশী আবগে সম্পর্ক নষ্ট করার চেয়ে বাস্তব্বাদী হয়ে সুখে থাকা মংগলজনক। নিজের করপোরেট অফিসে মেয়ের জমাইকে ঘরে তোলার আগে সে করপোরেট কালচার শিখেছে কিনা তা যাচাই করা অনেক বেশী জরুরী। একটা করপোরেট কালচার এক্তা প্রতিষ্ঠানের স্তম্ভ। আর এই স্তম্ভকে ভেঙ্গে ফেলার জন্য একটা মানুষই যথেষ্ট। যদি বেশী আবেগী হয়ে থাকেন, তাহলে সেই এক ই ব্যক্তিকে অন্য আরেক টি করপোরেট কালচারে অধিষ্ঠিত কনো অফিস থেকে তাকে শিখিয়ে নিন। কিন্তু কখনোই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নয়। একবার ছাপ লেগে গেলে তার থেকে বের হয়ে আসা যায় না। বের হতে গেলেই পরিবারে, নিজের জিবনে এবং নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমন ভাবে আচড় কাটবে যেখানে জায়গায় জায়গায় ভাঙ্গনের রেখা দেখতে পাবেন। সৃষ্টি কর্তা যখন আপনাকে নিজের ছেলে দেন নাই, তাহলে নিজের ছেলে পাবার জন্য অন্য আরেকজনের কাছ থেকে ধারে নেওয়া ছেলেকে নিজের ছেলে বানিয়ে নিয়ে বিরম্বনায় পড়তে চান কেনো?
আমিঃ (ভাবিয়ে তোলেছে আমাকে। আমি খেয়াল করে দেখেছি, হাসান ভাই অনেক বাস্তব মানুষের মধ্যে একজন। আপাতদৃষ্টিতে হাসান ভাইয়ের কথাগুলি অত্যান্ত নিষ্ঠুর মনে হতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তবতা।) তারপরেও আবার প্রশ্ন করলাম, আপনি ও তো কারো না কারো সান ইন ল, তাহলে সেক্ষেত্রে যদি আপ্নার শশুরের ও ঠিক আপনার মতো এই আইডিয়া থাকে বা এক ই পলিসি অনুসরন করেন, তাহলে জামাই হিসাবে আপনার কাছে খারাপ লাগবে না?
হাসান ভাইঃ না আখতার ভাই, আমার খারাপ লাগবে না কারন, আমিও যেহেতু সেই এক ই পলিসি সেই ছোট বেলা থেকে অনুসরন করছি, ফলে আমার খারাপ লাগার কোনো কারন আমি দেখি না। আমি আজ পর্যন্ত কখনো শশুর বাড়ির থেকে আমাকে কি দিলো বা কি দিলো না, বা কি দেওয়া উচিত ছিলো আর কি দেওয়া উচিত ছিলো না, অথবা কোনো পরবনে আমাকে তারা কি দিয়ে খুশী করলো বা করলো না, এই চিন্তাটা কখনো আসে নাই। আমি তাদের কোনো যৌতুক বা উপঢৌকন দিতে চাইলেও নিতে চাই নাই বা নেইও নাই। কারন আমি মনে করি, আমার সংসার আমি আর আমার স্ত্রী মিলে সাজাবো। এর প্রতিটি জিনিস হবে আমার এবং আমাদের। এতে আমার এক্তা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে। কেনো আমি ছট লোকের মতো আরেকজনে দেওয়া গাড়ী, বা ফ্রিজ, বা টিভি, বা অন্যান্য সামগ্রি নেবো? যদি নিজেই এইসব নিজে করতে না পারি, তাহলে আমার অইসব জিনিস উপভোগ করার মানসিকতা ত্যাগ করা উচিত। পরের ধনে বাহাদুরী যারা করে তারা আর যাই হোক পুরুস নয়। আমি পুরুসের মতো আচরনে বিশ্বাস করি।
আমিঃ তাহলে যদি কোনো শশুড় আদর করে তার নিজের মেয়ের জন্য এইসব জিনিস দিতে চায় যেনো তার নিজের মেয়ে একটু ভোগ করুক, তাহলে?
হাসান ভাইঃ আখতার ভাই, আমি যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি, সে যদি আমাকে ভালোবাসে, তাহলে সে আমাকে ছোট করা উচিত নয়। সে যদি মনে করে আমার পছন্দের চেয়ে তার বাবার বাড়ির জিনিস আমার সংসারে এনে উপভোগ করে সে সুখী থাকবে, তাহলে তো সে আমাকে আমার মতো করে সংসার সাজানোর সুযোগ দিলো না। সংসারে এক্তা না গাড়ি থাকা, এক্তা এসি না থাকা, বা ৪০/৭০ ইঞ্চি এল ই ডি টিভি না থাকার নাম অসুখী পরিবার নয়। অসুখী পরিবার হচ্ছে সেটা যেখানে নিজেদের পারস্পরিক সৌহার্দ না থাকে, পারস্পরিক রিস্পেক্ট না থাকে, এবং যেখানে শসুর বাড়ি থেকে কিছু পেলাম না কেনো অথবা নিজের স্ত্রীর আয় কেনো আমার হাত দিয়ে দেয় না এই সব মানসিকতার স্বামী বা তার পরিবারের মধ্যে যদি থাকে তাহলে বুঝবেন আপনি ভুল নৌকায় উঠে পড়েছেন। আর যদি আপনি নিজে কিছু দিতে চান, সেতাও হতে হবে তারা নিতে চায় কিনা তার সম্মতির উপর। আপনার আছে বলেই তারা কেনো নিবে? এটাই তো ব্যক্তিত্ব!! আমি অন্তত তাই মনে করি। আপনার মেয়েকেও এই একই প্রকার মানসিকতা থাকতে হবে যে, আমি আমার বাপের কোনো জিনিস নিয়ে কেনো শশুর বাড়ীর লোক গুলিকে ছোট করবো?
আমিঃ তাহলে আমি কখন আমার মেয়েদের সুখের জন্য আমার সম্পত্তির কিছু উপহার সুবিধা দিবো? যদি আমার কোনো সম্পত্তি বা আমার আছে সেসবের কোনো কিছুই আমার মেয়েদের কাজে না লাগেবা আমার আছে এমন জিনিসে ওদের উপভোগ ই না করে, সেক্ষেত্রে আমার এতো কিছু করে লাভ কি?
হাসান ভাইঃ আখতার ভাই, আপনি মনে হয় আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি কিন্তু মেয়েদেরকে বা মেয়েদের জামাইক দিতে না করি নাই। একটা জিনিস তো আপনি মানবেন যে, দাম্পত্য জীবন আসলে শুরু হয় বিয়ের পাচ ছয় বছর পর থেকে। যখন স্ত্রী পুরানো হয়ে যায়, তার দেহের প্রতি আর বিশেষ কোনো আকর্ষণ থাকে না। তখন ছোট খাটো জিনিস থেকেই কিন্তু বড় বড় মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। যখন এই সময়টা অবতীর্ণ হয়, তখন আপনি বুঝবেন আসম মানসিকতা গুলি কি। তখ টেস্ট হয় একচুয়ালি সম্পর্কটা কিভাবে এগোচ্ছিলো। আপনার সম্পদের উপর যদি এই সম্পরক গড়ে উঠে, তাহলে পাচ ছয় বছর ও যাবে না সম্পর্ক টা নস্ট হতে। এর আগেই আপনি টের পেয়ে যাবেন। ওয়েট করেন, দেখেন, বুঝেন, তারপর সব দিন। যেদিন দেখবেন, আপনার শরীর খারাপ হয়েছে, তারা দৌড়ে আপনার হাত ধরেছেন, যেদিন দেখবেন, আপনার বাড়ির মেহমান মানে তারা মনে করবে এটা তাদের বাড়ির মেহমান, যেদিন দেখবেন, আপনার দাওয়াতের অপেক্ষা না করে তারা আপনার বাড়িতে ডাল ভাত দিয়ে ভালো একটা সময় কাটাচ্ছে, যেদিন দেখবেন তারা সমস্যায় আছে জেনেও আপনার কাছ থেকে কোনো কিছু নিতে তাদের আত্মসম্মানে বাধছে, যেদিন দেখবেন যে আপনার কোনো ব্যক্তিগত আচরনে কষ্ট পেয়ে তারা তার প্রতিশোধ আপনার মেয়ের উপর নিচ্ছে না বা তাকে এমন কোনো কথা শুনাচ্ছে না যাতে মনে হবে যে, মেয়েটি শুধু আপনারই নয় , তাদের বউ এর আদলে তাদের নিজস্ব সদস্য, সেদিন বুঝবেন, এবার আপনার পালা তাদেরকে বুকে নিয়ে নিজের মানুষ বলে ধরে নেওয়া। ওই পর্যন্ত টেস্ট না করে যাই করবেন, হারবেন। আর একবার হেরেছেন তো আপ্নিই শুধু হারলেন, তারা নয়। আপনার দেওয়া সেই যে উদাহ র ন দিলেন, পরীক্ষা করে দেখেন যে, ওই ভদ্রলোক হয়ত এটাই করেছেন এবং শেষ তক এই টেস্টে তার একমাত্র মেয়ের জামাই এবং জামাইয়ের পরিবার টিক্তে পেরেছে বলেই আজ সেই জামাইয়ের সব নিজের হয়েছে। শশুর মহাশয় নিজেও মনে করেছে তার যোগ্য উত্তরসুরী সে পেয়েছে। আর এটাই ব্যতিক্রম আখতার ভাই।
সারাদিন আমরা একসাথে ছিলাম। খাওয়া দাওয়া করলাম। জীবন নিয়ে আরো অনেক কথাবার্তা হলো। বৃদ্ধ বয়সের কথাও আলাপ হলো।
হাসান ভাই বলতে থাকলেন, চারিদিকে যেভাবে আধুনিককালের সন্তানেরা তাদের বাবা মায়ের প্রতি উদাসীন হয়ে যাচ্ছ, তাতে এই দেশে একটা সময় আসবে, বয়স্ক মানুষের একমাত্র স্থান হবে বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমে গেলে ওই বৃদ্ধ মানুসগুলির জীবনের কাহিনী শুনলে গা শিহরিয়া উঠে। তারা অনেকেই দেশের অত্যান্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন। কেউ সচীব, কেউ বড় বড় ব্যবসায়ী, কেউ বা আবার প্রোফেসর ইত্যাদি। তারা তাদের সন্তানদের মানুস করার জন্য আজীবন পরিশ্রম করেছেন, সম্পদ গড়েছেন, ভাগ করে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, এখন আর সন্তানেরা তাদের জন্য কিছুই করেন না। ফলে শেষ আশ্রয়স্থল ওই যে বৃদ্ধাশ্রম।
হাসান ভাই এই বৃদ্ধ বয়সের পরিনতির রুখে দাড়ানোর একটা বেশ চমকপ্রদ কৌশল বললেন যেটা তিনি করছেন এবং করবেন। আর সে মোতাবেক তিনি তার কাজ অব্যাহত রাখছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কি সেই কৌশল?
হাসান ভাই বলতে লাগলেন,
-শোনেন আখতার ভাই, বৃদ্ধ বয়সে আপনার আসলে কি দরকার? আপনার দরকার কেউ আপনার খাবারটা সময়মত রান্না করে আপনার সামনে দিক, মেডিসিনগুলি সময়মত আপনাকে খাইয়ে দিক, বাইরে যেতে হলে একটা গাড়ি আর একজন ড্রাইভার থাকুক, রাতে শোবার সময় আপনার মশারীটা টাংগিয়ে দিক। ময়লা কাপড় চোপড়গুলি সময়মত ওয়াস করে দিক। আর এই কাজগুলি করার জন্য আপনার মাত্র গোটা তিনেক লোক হলেই হয়। একজন রান্নাকারী, একজন ড্রাইভার, একজন কাজের ছেলে যে আপনাকে সংগ দেবে সারাক্ষন। আর গোটা এই কয়জন মানুস রাখতে আপনার সর্বসাকুল্যে মাত্র হাজার বিসেক টাকা হলেই হয়। নিজের যদি একটা বাড়ি থাকে বা ফ্ল্যাট, তাহলে অনেক উত্তম। থাকার জন্য আর টেনশন করতে হয় না। এই রকম একটা আয়ের পথ খোলা রেখে অথবা তার থেকে বেশি কিছু সঞ্চয় রেখে অতঃপর সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করা যেতে পারে। তবে, হাসান ভাইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে, তিনি কোনো অবস্থাতেই তার সম্পদ তার জীবদ্দশায় তাদের সন্তানদের ভাগ করে তিনি নিঃস্ব হবেন না। তাতে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনার শামিল হবে। নিজে আয় করেছেন, নিজে ভোগ করবেন। নিজে ভোগ করার পর যদি অবশিষ্ট থাকে সেটা তার সন্তানরা তার অনুপস্থিতিতে এমনিতেই ভাগ করে নেবে। সন্তানদের উপর তিনি নির্ভরশীল হতে চান না। তার থেকে উত্তম কিছু কাজের মানুষের উপর নির্ভরশীল হওয়া। দিন কাল যা পড়েছে তাতে নিজের সন্তানদের উপর আর ভরসা করা যায় না। এই বুড়ো বয়সে এসে আপনার জীবনে সবচেয়ে ভালো বন্ধু যিনি তিনি হচ্ছেন আপনার স্ত্রী। ওই বুড়ো বয়সেও সে আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। কারন সেও আপনার মতোই একা। আপনাকে ছাড়া তার যেমন কেউ তার পাশে নাই। সে ছাড়াও আপনার জীবনে আপনার আর কেউ নাই।
হাসান ভাইয়ের কৌশলটা আমার ভালো লেগেছে। হাসান ভাইয়ের এই কৌশলটা হয়তো অনেক মধ্যবয়সী মানুষকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাচিয়ে দেবে।
আমার কাছেও তাই মনে হয়েছে যে, (১) নিজের উচ্ছন্নে যাওয়া সন্তানও পরের বাড়ির ছেলে যে মেয়ের জামাই হয়ে নিজের বাড়িতে আসে তার থেকে উত্তম। (২) নিজের কোনো সম্পত্তি নিজের জীবদ্দশায় ভাগ বাটোয়ারা না করাই উত্তম। (৩) আর যদি করাও হয় তাহলে এমন কিছু অংশ নিজের হাতে রাখা উচিত যা নিজেকে সুরক্ষিত রাখবে। (৪) আর বৃদ্ধবয়সে একজনই সবচেয়ে কাছের বন্ধু হোক সে নিজের মতো বয়স্ক, আর সেটা হচ্ছে নিজের স্ত্রী। সেও নিজের মতোই অসহায়।
যেহেতু মুসলমান, ফলে আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আর আখেরাতকেও বিশ্বাস করি। হাসান ভাই বলতে থাকলেন, আমাদের মরনের পরে আমাদের পরবর্তী জেনারেসন কিভাবে আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবে, আদৌ চাইবে কিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। আমাদের মরনের পর তারা আমাদের মনে না রাখলেও কোথায় কোথায় আমাদের সম্পত্তি আছে সেতা খুজে খুজে বের করবে। সেই সম্পদ দিয়ে হয়ত কেউ আমাদের নামে এক্তা মিলাদ ও পরাবেন কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নাই। এই অবস্থায় সারাটি জীবন কস্ট করে সম্পদ উপার্জন করলাম, অথচ আমার নিজের জন্য আমি কিছুই নিতে পারলাম না, এটা বড় অন্যায়। তাই আমি ভাবছি-
এক্তা বৃদ্ধাশ্রম করবো যেখানে অসহায় কিছু বৃদ্ধ মানুষ বাস করবে কিন্তু তাদের খাওয়া দাওয়ার কোন কমতি থাকবে না। আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকবে। নামাজ রোজা করবে, আল্লাহর কাছে তাদের প্রার্থনা করবে। আর পাশাপাশি যদি ছোট ছোট কিছু এতিম ছেলেমেয়ে থাকে যাদেরকে কোর আন হিফজু করানো হবে, হুজুর থাকবে, একটা মসজিদ থাকবে, তাতে বুড়ো মানুসগুলি ছোট ছোট বাচ্চা পাবে, আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলি পাবে বয়স্ক মানুসগুলিকে। একটা পরিবার বনে যাবে। যেহেতু মসজিদ থাকবে, হিফজু করার সুযোগ থাকবে, ফলে ফোর ইন ওয়ান নামে একটা ভালো কাজের প্রতিস্টহান গড়ে উঠবে। এইখান থেকে যদি কোনো সওয়াব আল্লাহ দেন, তাহলে তার কিছু অংশ হলেও আমার মরনের পরে আমার কবরে যাবে। আমার সন্তান কিছু না করুক, এরাই হয়তো আমার জন্য দোয়া করবে। আর এই কাজটি করার জন্য খুব বেশি টাকা পয়সারও প্রয়োজন নাই। প্রায় লাখ পঞ্চাশেক টাকা কোনো একটা ব্যংকে ওয়াকফ করলেই ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট এই কাজগুলি খুব দরদ দিয়ে আজীবনকাল করবে।
– আখতার ভাই, জীবনের অনেক তা সময় পার হয়ে গেছে। আনন্দ করার জন্য ভেবেছেন, হয়ত সময় আছে। আর এই সময় আছে করে করেই কিন্তু জীবনের প্রায় ৫০ বছর পার করে দিয়েছেন। এবার আর সময় আছে সময় আছে বলে সময় নস্ট করার কোনো অবকাশ নাই। বেরিয়ে যান নিজের বউকে নিয়ে। যেখানে খুশী। বিদেশ যেতে হবে এমন না। কোনো এক্তা গ্রামের পুকুরের পাড়ে বসে এক মুঠি বাদাম খেতে খেতে নীল আকাশ দেখুন, মাছের সাতার দেখুন। দেখবেন, বড্ড মিস্টি এই পৃথিবী। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সর্দি কাশি হয়ে যাবে এই বয়স আসার আগেই বৃষ্টিতে ভিজুন, দেখবেন, শরীর শীতল হয়ে আপনাকে ভালো ঘুম পাড়িয়ে দেবে।
বিকাল হয়ে এসেছে। দুজনেই ক্যাফেটেরিয়ায় নাস্তা করতে গেলাম। চারিদিকে কাচের দেওয়ালে ঘেরা একটি কাফেটেরিয়া। ভিতর থেকে সব দেখা যায়,কিন্তু বাইরের কোনো কিছুই ছোয়া যায় না। আমরা এখন একটা কাচের দেওয়াল দেওয়া ঘরে বসে দূরে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ দেখছি। আমি ভাবছি, হাসান ভাই কোনো কথাই অযুক্তিক বলেন নাই। জিবনের মানে বুঝতে বুজতে আমরা এক সময় জীবন থেকেই হারিয়ে যাই। তখন জীবন টা কেমন করে গড়তে চেয়েছিলাম সেই অধ্যায়টা আর মনে থাকে না।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। বাসায় ফিরতে হবে। আমার এক্তা বাসা এখনো আছে যেখানে আমি নিজের মতো করে থাকি।
ধন্যবাদ হাসান ভাই।