১৭/০৬/২০২২-সেন্ট পিটসবার্গে পুটিনের ভাষন

সেন্ট পিটসবার্গে পুটিন তাঁর বিখ্যাত ভাষনটি দিয়েছেন। মোট ৭টি এরিয়া সে কাভার করেছে। আমি সেটাইই অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। আসলে হুবহু অনুবাদ করা অনেক কঠিন। বিশেষ করে থিম ঠিক রাখা। আমার বন্ধু আসাদ এ ব্যাপারে অনেক পারদর্শী। যাই হোক, ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।  

The old world order is gone with the wind

নতুন ‘সেন্টার অফ পাওয়ার’ ইতিমধ্যে দুনিয়ায় প্রসব করেছে। ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড আর কখনোই ব্যাক করবে না। না ‘কলোনিয়াল’ ধারনার আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে। যেদিন নিজে নিজে “কোল্ড ওয়ার” এ আমেরিকা জিতে গেছে বলে নিজেকে ডিক্লেয়ার করলো, সেদিন থেকেই তারা তাদেরকে মনে করেছে, “ম্যাসেঞ্জার অফ গড”। তাদের সব চিন্তা চেতনা, তাদের সুবিধাভোগী ভাবনাই শুধু সঠিক এবং পবিত্র। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নাই অন্য কারো। পাশ্চাত্যের এই ধ্যান ধারনা সবাই না মানতে পারলেও ঠিক সেদিন থেকেই অন্যান্যের মধ্যে নিজেদের রাষ্ট্রীয় সিস্টেম, আর্থিক মডেল এবং সার্বোভোমত্তকে প্রোটেক্ট করার জন্য সুপ্ত নতুন সেন্টার অফ পাওয়ারের জন্ম হোক সেটা ভাবছিলেন। সেই ভাবনায় লুকিয়ে ছিলো সত্যিকারের একটা রেভুলেশন, জিওপলিটিক্সে টেক্টোনিক পরিবর্তন এবং বর্তমান টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে সার্বিক গ্লোবাল অর্থনীতির পরিবর্তন ও তাঁর বিকাশ। অন্যান্য সবাই জানে যে, এটা একটা মৌলিক পরিবর্তন যাকে এতোদিন পশ্চিমারা অস্বীকার করেছে। আজকের যে নতুন সেন্টার অফ পাওয়ার তৈরী হতে যাচ্ছে, এটা আজ না হয় হয়, কাল হতোই। কেউ এতো লম্বা সময় ধরে এই টার্বুলেন্ট পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে চায় নাই। সবকিছু আবার নরম্যাল হোক এটাই সবাই চেয়েছে। আর সেটাই এখন হতে যাচ্ছে।

Anti-Russian sanctions backfired on the West

যখন আমেরিকা এবং তাঁর মিত্ররা ইউক্রেনের অপারেশনকে সামনে রেখে একসাথে রাশিয়াকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলো, তাতে তারা মনে করেছিলো রাশিয়া দ্রুতগতিতে এর ঐতিহ্য হারাবে এবং নতজানু অর্থনীতিতে ভেংগে পড়বে। কিন্তু সেটা না হয়ে যেটা হয়েছে- বুমেরাং, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মিত্রদের মধ্যে পারষ্পরিক হতাশা আর বিভেদ। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান মিত্রদের মধ্যে যারা একটা অদৃশ্য জালের মধ্যে আটকে গেছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং পশ্চিমারা তাদের পলিটিক্যাল সভরেন্টি সম্পুর্নভাবে আস্থা হারিয়েছে। ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটিক্সগন অন্যের বাজনার সুরে, সেটা যে সুরই হোক, নৃত্য করতে গিয়ে তারা তাদের নিজেদের মানুষগুলির উপর এবং চালিকাশক্তি অর্থনীতির  চরম ক্ষতি এবং ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এহেনো অবাস্তব অবিবেচক সিদ্ধান্তে প্রতিবছর তাদের কম করে হলেও ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সম্মুখিন হতে হবে। এটা একটা ক্লিন হিসাব।

‘Elite change’ awaits the West

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আমেরিকা নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মধ্যে যথেষ্ট পরিমান ফারাক রয়েছে। কারো কারো আর্থিক বা সামরিক দুর্বলতার কারনে কিংবা সামাজিক মানদন্ডের পার্থক্য থাকায় কেউ কেউ সিদ্ধান্ত পার্টিসিপেশনে কোন প্রকারের প্রাধান্যই পায় না। প্রাধান্য না পাওয়ার সেইসব দেশের নাগরিকেরাও নিজেদেরকে অন্য মিত্রদের কাছে হেয় অনুভুতিতে ভোগছেন। তারা তাদের ভ্যালু, অরিয়েন্টেশন, ঐতিহ্য যেনো এই ইউরোপিয়ান কোয়ালিশনে এসে হারাতে বসেছেন। এই যে অলিখিত কিন্তু প্রকাশ্য বাস্তবিক দুরুত্ত যা প্রতিটা মিত্রের মধ্যে বিদ্যমান, সেটা তলে তলে আগ্নেয়গিরির মতো ফুলে ফেপে উঠছিলো। এটা আরো প্রকট হয়েছে এই ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আরো বেশী। তারা নিজেরাই এখন বুঝতে পারছিলো কে কার কোথায় অবস্থান কিংবা কে কাকে কতটুকু সুরক্ষিত দেখতে চায় এবং সেটা কিভাবে। এই প্রেক্ষাপট তারা নিজেরা নিজেদের অনুভুতি দিয়ে এবার বুঝার চেষ্টা করছে বলে সেখানে একটা রেডিক্যাল মুভমেন্ট, সোস্যাল এবং অর্থনীতির পরিবর্তন, এবং মোদ্দাকথা একটা ‘এলিট পরিবর্তনের আন্দোলনের আভাষ সামনে হাজির হচ্ছে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।  

Economic development is an expression of sovereignty

২১ শতকে দাঁড়িয়ে সার্বোভোমত্তকে একটা আংশিকখাত হিসাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই। সার্ভোবোমত্তের যতগুলি উপাদান আছে, তার প্রতিটি উপাদানকে সমানভাবে জরুরী এবং প্রয়োজনীয় মনে করতে হবে। কারন প্রতিটি উপাদান একে অন্যের সাথে জড়িত। রাশিয়া আর্থিক উন্নতির উপাদানে পাচটি মৌলিক নীতি অনুসরন করবে-(ক) ওপেননেস (খ) ফ্রিডম (গ) সোস্যাল জাষ্টিস (ঘ) ইনফ্রাষ্ট্রাকচার (চ) টেকনোলোজিক্যাল সভরেন্টি। রাশিয়া কখনোই সেলফ আইসোলেশন এবং অটার্কীতে বিশ্বাস করে না এবং করবেও না। তাই রাশিয়া যে কোনো কারো সাথে যখন খুশী, বন্ধুত্বপুর্ন মর্যাদা রেখে একে অপরের সাথে বোঝাপড়ায় আন্তরিকতার সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যা যা আছে তা আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, প্রাইভেট ব্যবসা বানিজ্যে রাশিয়া আপ্নাদেরকে সাহাজ্য করবে, সামাজিক বৈষম্য দূরিকরনে রাশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টেকনোলোজি পর্যন্ত আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করবো। একটা কথা আমি নিশ্চিত দিয়ে বলতে চাই যে, স্বাধীন দেশসমুহ ইকুয়াল পার্টনারশীপে কাজ করার কথা। সেখানে কে কোন দিকে দূর্বল আর কে কোন দিকে সবল সেটা কোনো বিবেচ্য বিষয় হওয়া কখনোই উচিত না। পুতিনের কথাটা ঠিক এ রকমের-

“Truly sovereign states are always committed to equal partnerships,” while “those who are weak and dependent, as a rule, are busy looking for enemies, planting xenophobia, or finally losing their originality, independence, blindly following the overlord,” he said.

 Reasons for the Ukraine conflict

গত ফেব্রুয়ারীতে ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশনের একটাই কারন যে, পশ্চিমারা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই মানতে অস্বীকার করছিলো বারবার এবং তাদের সাথে আর কোনোভাবেই কোনো প্রকারের সমঝোতা করার কোনো স্কোপই ছিলো না, আবার নতুন করে কোনো সন্ধি করার ব্যবস্থাও ছিলো না। কারন তারা এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথাই শুনতে নারাজ ছিলো।

ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশন চালানোর ব্যাপারে আমার উপরে বলতে পারেন বাধ্য করেছিলো এবং এটার খুবই দরকার ছিলো। কারন, রাশিয়ার নিরাপত্তা এমনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিলো যে, আমরা শংকিত হয়ে পড়েছিলাম। আর এটার বাহ্যিক উদাহরন ছিলো দনবাসে রাশিয়ানপন্থি মানুষগুলিকে কিংবা রাশিয়ান ভাষাভাষি নাগরিকদেরকে গনহত্যা করা হচ্ছিলো। আর এর পিছনে মদদ ছিলো পশ্চিমাদের। যারা নব্যনাৎসি বাহিনী তৈরী করে সেই ২য় বিশ্ব যুদ্ধের তরিকায় নির্বিঘ্নে এবং খুবই অমানবিক কৌশলে গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলো। পশ্চিমারা বছরের পর বছর অস্ত্র দিয়ে, ট্রেনিং দিয়ে, এবং সামরিক যতো প্রকারের উপদেষ্টাগত পরামর্শ দিয়ে এই ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছিলো এই নিধনে। এই অবস্থায় ইউক্রেনের মানুষগুলির কি হবে, ইউক্রেনের অর্থনীতির কি ক্ষতি হবে, বা ইউক্রেনের সার্বিক কি হতে পারে সেটায় পশ্চিমারা একটুও মাথা ঘামায় নাই। তাদের শুধু লক্ষ্য ছিলো রাশিয়াকে কিভাবে বাতিল করা যায়। ফলে ইউক্রেনকে এক তরফা ভরষা দিয়ে রাশিয়ার দারপ্রান্তে পশ্চিমাদের  সামরীক শক্তি ন্যাটোকে রাশিয়ার নাকে ডগায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলো। আর এই কাজটা একদিনে ওরা করে নাই। ইউক্রেনিয়ানদের মনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা ঘ্রিনা এবং রাগের মতো মনোভাব তৈরীতে সক্ষম হয়েছিলো, বিশেষ করে শাসক গোষ্টির মধ্যে।  স্কুল কলেজ, গির্জা, কালচার, ধর্ম কিংবা আচার আচরনে সর্বক্ষেত্রে ইউক্রেনের নাগরিকদের মনে, মাথায় ধ্যানে কার্যকলাপে এতাই শিক্ষা দেয়া হচ্ছিলো যে, রাশিয়ানরা খারাপ যাকে রাশিফোবি বলা চলে। আমাদের কোনো উপায় ছিলো না। এবার রাশিয়া তাঁর এজেন্ডা মোতাবেক সবগুলি নির্মুল না করা পর্যন্ত আমাদের আনকন্ডিশনাল এই অভিযান চলতেই থাকবে, এটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

Energy prices and inflation are self-inflicted

এনার্জি প্রাইস এবং ইনফ্লেশন যদি বলেন, পশ্চিমারা এর জন্য দায়ী করছে রাশিয়াকে।  তারা যেটা বলেছে- “Putin’s price hike is a “stupidity” and “designed for people who can’t read or write,”  পশ্চিমাদের এই অপবাদ কোনোভাবেই সত্য নয় এবং গ্রহনযোগ্য নয়। দাম বাড়া এবং ইনফ্লেশনের জন্য আমাদেরকে দায়ী করতে পারেন না, দায়ী আপ্নারা। দায়ী আপনাদের অবিচকের মতো অবাস্তব সিদ্ধান্তসমুহ।  কভিডের কারনে ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকা অগনিত ইউরো আর ডলার ছাপানোর কারনে যেমন এখন ইনফ্লেশন তৈরী হয়েছে, তেমনি অন্ধভাবে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের বিকল্প তৈরীতে আরো এতো লম্বা সময় লাগবে যে, ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের অর্থিনীতিতে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। সেই ইনফ্লেশন তারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

If there’s a famine, it won’t be Russia’s fault

পশ্চিমা দেশ এবং ইউরোপের নিষ্রধাজ্ঞার কারনে খাদ্যশস্য এবং সার এর সল্পতার কারনে যদি দূর্ভিক্ষ হয়, তাঁর জন্য তো দায়ী তারা। দুনিয়ার অনেক দরিদ্র দেশসমুহ কোনো অপরাধ না করেও তারা দূর্ভোগ বহন করবে। তারা এই জরুরী খাদ্যপন্য এবং পরবর্তী বছরের জন্য সার পন্য না পেলে তাদেরও অনেকদেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এর জন্য দায়ী শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটস এবং পশ্চিমা নেতাদের অবাস্তব সিদ্ধান্ত এবং নিষেধাজ্ঞা।

আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য, এশিয়ার সর্বত্র রাশিয়া এই জরুরী পন্যসমুহ সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু পশ্চিমাদের দেয়া ট্রান্সপর্ট ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞার কারনে এই সরবরাহ অনেক অংশে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেটা তো রাশিয়ার দোষ নয়। আমরা সবাইকে সব কিছু দিতে প্রস্তুত আছি।

পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান নেতাদের অদুরদর্শীতার কারনে তারা নিজের সমস্যা যেমন সমাধান করতে অপারগ, তেমনি তাদেরকে যারা অন্ধ্যের মতো অনুসরন করে, তারাও এখন সমস্যায় নিমজ্জিত। আর এই পুরু অকৃতকার্যতার দোষ শুধুমাত্র রাশিয়ার উপরে বর্তায়ে তারা পার পেতে চাচ্ছেন। কিন্তু সময় বলে দিচ্ছে- বাস্তবটা কি। শুধু তাইই নয়, অপরিকল্পিত predatory colonial policy,”  র মাধ্যমে অগনিত