এক নাগাড়ে ৭৫ বছর যাবত চীন এবং রাশিয়ার বৈরিতার পরে যখন রাজনীতির ভুল চালে এই দুই ভেটো পাওয়ারধারী নিউক্লিয়ার শক্তধর পরাশক্তি চরম শত্রু থেকে চরম বন্ধু বনে যায় এবং কাছাকাছি চলে আসে, তখন আর কোনো বিশ্লেষনের প্রয়োজন পড়ে না যে, বাকি সব পরাশক্তির দূর্দশা একেবারেই দরজার পাশে।
প্রাচীনকাল থেকেই আমেরিকার প্রথম কুটনৈতিক ফর্মুলাই ছিলো যাতে চীন এবং রাশিয়া কখনোই কাছাকাছি না আসতে পারে এবং তারা বন্ধু হতে না পারে। এটা আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টই তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেয় নাই। এমন কি রগচটা ডোন্যাল্ড ট্রাম্পও না। ট্রাম্প নিজেও চীনকে ট্যারিফ, বানিজ্য সীমাবদ্ধতা কিংবা এমন এমন চাপে রেখেছিলো যাতে চীন আর যাইই করুক, আমেরিকাকে একহাত দেখে নিতে না পারে। ট্রাম্পের বিশেষ চোখ ছিলো চীনের বানিজ্যতে। কারন চীনের দরকার পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান মার্কেট। আর সে কারনেই চীনকে সহজে বশ মানানো যাচ্ছিলো। আর চীন নিজেও জানতো ডলার হেজিমনি, ইউনিপোলারিটি ইত্যাদি ছিলো চীনের জন্য মারাত্তক বাধা। সে একা এই বাধাগুলি অতিক্রম করতে পারছিলো না। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে মনে করে একতা “গ্যাস স্টেশন”, চীনকে মনে করে একটা “ক্মুনিস্ট সুইট শপ” যাদের উভয়ের সেনাবাহিনি কোনো ব্যাটল টেষ্টেড না।
পশ্চিমাদের বর্তমান প্রশাসন তাদের এই মিথ্যা বিশ্বাসকে নিজেরাই বিশ্বাস করে ইউক্রেন-রাশিয়া কনফ্লিকটকে কেন্দ্র করে জো বাইডেন প্রশাসন আমেরিকাকে তো অবশ্যই সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে সাথে নিয়ে জোট বেধে রাশিয়াকে বধ করতে গিয়ে এখন দুই রাঘব বোয়াল, চীন এবং রাশিয়া, এমনভাবে এক করে ফেলেছে। সব রোগের এক ঔষধ নয়। আর “নিষেধাজ্ঞা” তো অবশ্যই কোন মেডিসিন নয়। কিছু কিছু দেশের বিপক্ষে এই মেডিসিন সাময়িক কার্যকর হলেও চীন, ভারত, রাশিয়া এদের বিপক্ষে এগুলি কোন এন্টি বায়টিক হিসাবে কখনোই কার্যকর যে হবে না এটা বর্তমান প্রশাসন ভাবেনি। এটাও ভাবেনি যে, এই “নিষেধাজ্ঞা” কার্যকরী না হলে এর পরিনতি কি হতে পারে। ফলে যা হবার তাই ঘটছে এখন। ডলার হেজিমনি, কোনো আইনের বই ব্যতিরেকে রুলস বেজড ইন্তারন্যাশলার অর্ডারের সমাপ্তি, ইউনিপোলারিটি থেকে মাল্টিপোলারিটি এবং আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে এখন। একটা কথা মনে রাখা দরকার-শ্ত্রুর শত্রু হল মিত্র।
পশ্চিমা বিশ্ব নেতাদের মাথা থেকে সম্ভবত একটা কন্সেপ্ট উধাও হয়ে গিয়েছিলো যে, চীন এবং তদানিন্তত সোভিয়েট রি পাব লিকের মধ্যে এই ৭৫ বছরের দন্ধ বেসিক্যালি ছিলো কট্টর কমুনিজমের কারনে। কিন্তু সেই সোভিয়েট ইউনিয়ন এখন আর নাই, এটা এখন রাশিয়ান ফেডারেশন, আধুনিক কন্সেপ্টে বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। একই অবস্থা চীনেরও। সেই পুরানো জের ধরে থাকা বর্তমান প্রজন্ম নয় এরা। সেখানে ওয়াল্মার্ট, জেসি পেনি, ম্যাডোনাল্ডস, সিয়ারস, ম্যাকির মতো পশ্চিমাদের দোকানে যেতে এই প্রজন্মের কোনো বাধা নাই।
রাশিয়া ইউরোপের একটা অংশ হওয়ায় ইউরোপ এখন যতোই অন্যের তালে পড়ে নাচানাচি করুক না কেনো, খুব অচীরেই ইউরোপ তার নিজের প্রয়োজনে আবার রাশিয়ার সাথে একত্রিভুত হতে বাধ্য। রাশিয়ার যতোটা না ইউরোপকে প্রয়োজন, ইউরোপের তার থেকে বেশী প্রয়োজন রাশিয়াকে। কারন পুরু ইউরোপ রাশিয়ার অনেক কমোডিটি, অনেক রিসোর্সের উপর প্রায় শতভাগ নির্ভরশীল। অন্যদিকে চীনের রিসোর্স, সস্তা টেকনোলোজি এবং বিশাল সাপ্লাই সারা দুনিয়ায় এমনভাবে জড়িত যে, যা রাশিয়ার নাই তা চীনের আছে, আবার যা চীনের নাই তা রাশিয়ার আছে। তাছাড়া বর্তমান চীনের বাজার এতো সম্প্রসারিত যে, পশ্ছিমা বা ইউরোপিয়ান মার্কেটের যতো না চীনের দরকার তার থেকে অনেক গুন বেশী দরকার চীনকে তাদের। একটা মুল্যবোধ সর্বদা মনে রাখা দরকার যে, বাজারে গিয়ে কোনো কাষ্টোমার তার দেশ প্রেম দেখায় না। তার কাছে কমোডিটির মুল্যটাই প্রধান, হোক সেটা চীনের, বা রাশিয়ার বা অন্য কোনো দেশের।
এই দুই রাঘব পরাশক্তি নিউক্লিয়ার এবং ভেটো শক্তির অধিকারি দেশকে কখনোই আমেরিকার ভুল রাজনৈতিক চালের কারনে এক হতে দেয়া ঠিক হয় নাই। ফলে পরবর্তী যে কনো বিশ্ব ইস্যুতে আর কখনোই কারো ভেটো পাওয়ারের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এই ভেটো পাওয়ার এখন শুধু ব্যবহৃত হবে যে কোনো সিদ্ধান্তকে নাকচ করার জন্য। ইউনিলেটারাল সিদ্ধান্তের দিন সমাপ্ত।
একটা সময় খুব কাছাকাছি যে, ইউরোপ আবার রাশিয়ার সাথে একত্রিভুত হবেই, ন্যাটো সয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর অবস্থায় অথবা বিলুপ্ত হবে। রাশিয়া, চীন, ইরান, মিডল ইষ্ট, ভেনিজুয়েলা, নর্থ কোরিয়া এশিয়া, আফ্রিকা মিলে একটা গ্র্যান্ড মেরুকরন হবে যেখানে সেকেন্ডারি কিংবা আরো নীচের ধাপে চলে যাবে পশ্চিমা বিশ্ব।
এই বিশাল পরিবর্তিত অধ্যায়ের জন্য একমাত্র দায়ি করা হবে শুধুমাত্র বাইডেন প্রশাসনকে যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাংগার একমাত্র কারন বলা হয় গর্ভাচেভকে।